somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ধূসর শহরের গল্প

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেবার বই ছাপার কারখানা থেকে অজস্র রঙ করার বই ছাপা হলো। হু হু করে বাচ্চারা কিনে নিলো সেই বই। শুধু একটা বই দোকানের অসংখ্য বই এর ভীড়ে গেলো হারিয়ে। সেই বই টিতে ছিলো এক শহর। এক সাদা কালো রংহীন শহর। সেই শহরে ছিলো সবকিছু। বড় ছোট, ঘর বাড়ি, বাগান পার্ক মানুষ সব। রঙ এর অভাবে সেই শহরে আলো ছিলো না, অন্ধকার ছিলো যে তাও বলি কি করে! এক অদ্ভুত মরে যাওয়া আলো যেনো চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো, সেখানের সূর্যটাকে এখনো কেউ রঙ করেনি দেখে সে এমনেই বোকার মত ঝুলে থাকতো উপরে। তার ছিলো না কোনো কাজ। মানুষ গুলো ভেবে নিতো হবে কিছু, এত কি ভাবার সময় আছে? ছিলোনা সাতরঙ্গা রংধনু। আসলে ছিলো কিন্তু সে বেরঙ্গা সাদা রঙের সাদটা দাগ হিসেবে সূর্যটার পাশে ঝুলে থাকতো। একটা গুমোট শ্যাতশ্যাতে পরিবেশ থাকতো চারদিকে। কিন্তু মানুষ যে দূঃখে থাকতো তা কিন্তু না!! বেশ আনন্দে ছিলো তারা, ধূসর শহরটাতে তারা বেশ ছিলো। বাচ্চারাও আনন্দে বড় হচ্ছিলো, স্কুলে যেতো, বড়রা যেতো অফিসে কাজে কর্মে। গলির মাথায় মাথায় থাকতো ফেরীওয়ালারা, সবজী বিক্রেতারা। সকাল বিকেলে সেখানে মহিলারা ভীড় করতো কেনাকাটাতে। আপাতদৃষ্টিতে তাদের দুখী মনে হলেও তারা কি তাই ছিলো বলে মনে হয়? উহু...এভাবে আনন্দেই কেটে গেলো কত বছর।

একদিন অন্যান্য বই বের করতে গিয়ে বইটি বের হয়ে আসলো। একটা বাচ্চা তা দেখে কান্না জূড়ে দিলো তার চাই সেই বই। বিরক্ত অফিসফেরত বাবা বাচ্চার কান্না থামাতে বইটি বগলদাবা করে বাড়ি ফিরলেন ছেলেকে নিয়ে। ছেলে বইটি নিয়ে ছুটলো তার ঘরে। ড্রয়ার খুঁজে বের করলো পুরনো রঙ্গগুলো। ঝটোপট রঙ করা শুরু করে দিলো। কিন্তু রঙ করার সাথে সাথে শহরে ঘটতে লাগলো যেনো আজব আজব ঘটনা। বই এর শহরের মানুষরা তো অবাক। এ কি হচ্ছে চারপাশে!??? সাদা কালো রঙ এর বাইরের অন্য রঙ এর সাথে পরিচিত হতে লাগলো তারা। হুরমুর করে ঘটে যেতে লাগলো নানা ঘটনা। সবার বাড়ি হয়ে গেলো রঙ্গীন। পোশাক থেকে শুরু করে গায়ের রঙ হয়ে গেলো পৃথক। গন গন করে সূর্য আলো ছড়াতে লাগলো। রঙ্গধনু ও সাত রঙ্গে রঙ্গীন হলো। এর আগে এই ধূসর শহরে কেউ কোনোদিন কারো চেহাড়া ভালো করে দেখেনি। আজ সবাই সবাইকে ভালো করে দেখতে লাগলো। দেখতে লাগল সবার পোশাক, জিনিসপত্র, বাড়ি ঘর। একজন দুম করে বলে বসলো "আরে ঐ বাড়িটা এত জঘন্য কেনো? নিশ্চয়ই মানুষ গুলোও বাড়ি গুলোর মতোই বাজে দেখতে!" আরেকদিন আরেকজন বলে বসলো অপরজনকে "তোমাদের পোশাকের রঙ বড় বিশ্রী। এই পোশাকে আমাদের সাথে কথা বলতে এসো না!" কদিন আগে যে ছেলে আরেক মেয়ের প্রেমে পড়েছিলো তার হাসির শব্দ শুনে সেই ছেলে কিনা বলে বসলো, তোমার দাঁতগুলো জানি কেমন কেমন। আর চুলের রঙ ও খুব কড়া। আমার সাথে আর কথা বলো না।

যা কখনো হবে বলে কেউ কখনো কল্পনাও করেনি তাই ই ঘটে যেতে লাগলো ধীরে ধীরে। শহরের এলাকাগুলো ধীরে ধীরে ভাগ হয়ে গেলো। এক এলাকার মানুষেরা অপরের সাথে দেখা করে না, কথা বলে না। রঙ্গীন শহরটাই অদ্ভুতভাবে আরো বেশি গুমোট হয়ে গেলো। কিন্তু এজন্য তো আর বই এর মালিক ছেলেটাকে দোষ দেয়া যায় না। সে তো আপন মনেই রঙ করেছিলো। কয়দিন পর যখন ছেলেটি আবার আগ্রহ হারালো বইটি পড়ে রইলো অবহেলিত হয়ে অন্যান্য বই এর আড়ালে। এভাবে চলে গেলো আরো অনেক সময়।

একদিন হুড়মুড় করে বৃষ্টি নামলো। কি করে যেনো বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেলো রঙ এর বইটা। রংগুলো পানিতে মুছে গেলো কিছুটা। এতদিনে ছেলেটাও কিছুটা বড় হয়ে গেছে। সে তার ছোটবেলার বই দেখে কিছুটা স্মৃতিকাতর হলো। রঙ এর বইখানা নিয়ে উঠোনে শুকোতে দিলো। উলটে পালটে দেখলো জায়গায় জায়গায় রঙ গুলো উঠে বইটা কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। কি মনে করে ঘরে গিয়ে ড্রয়ারটা খুলে দেখলো যে কোনো রঙ নেই বরং আছে দু-তিনখানা পেন্সিল আর ইরেজার। এবার ছেলেটা পেন্সিলগুলো নিয়ে স্কেচ করতে বসলো। পুরো শহরটাকে সে করে দিলো হালকা গাড় ধূসরে। এরপর আবার রেখে দিলো শেলফের কোনায়। চলে গেলো সে তার নতুন শখ সাইকেল চালানোতে। সেই সাথে পুরনো শহরটাতে যেনো আবার ধীরে ধীরে ফিরে আসতে লাগল আনন্দ।



* হুট করে খুব দ্রুত ভাবনাগুলো তুলে রাখলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাটারি অটো রিক্সা বন্ধ করা কী খুব কঠিন কাজ?

লিখেছেন চোরাবালি-, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৪৮



বাংলাদেশের জন্য বিষফোঁড় হল এখন অটো রিক্সা, স্বল্প পরিশ্রমে সহজ আয়ের মাধ্যম হিসাবে খুবই জনপ্রিয় একটা পেশা। স্বল্প ভাড়ার জন্য অনেক মানুষ এখন পায়ে হাঁটা ভুলেই গেছে আর হাঁটার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জিয়াউর রহমান

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২৪



চাইলে জিয়াউর রহমান ঢাকায় ঝাঁ চকচকে দালান কোঠা রাস্তা বানিয়ে সবার চোখ ধাঁধিয়ে উন্নয়ন করার বাহাদুরি করতে পারতেন। সেটা না করে তিনি ঘুরতে লাগলেন সারা দেশে, গ্রামে গঞ্জে গিয়ে খাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জবাবদিহিতার অনন্য দৃষ্টান্ত

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪৫

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হয় সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে। সেসব পোস্টে তার বিরুদ্ধে বিপুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি যাত্রা করবেন নাকি রাজনীতি করবেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:১১


ইদানীং দেশে রাজনৈতিক দল গজানোর হার দেখলে মনে হয়, দেশের মাটিতে এখন ধান নয়, গজায় দল। ভোট এলেই বুঝি এই দলগুলো দুলে ওঠে, আর না এলেই পড়ে থাকে ফাইলের পাতায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের নেতারা যদি সত্যিই নির্দোষ হতেন, তাহলে তারা পালিয়ে গেলেন কেন?

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:০৯

আওয়ামী লীগের নেতারা যদি সত্যিই নির্দোষ হতেন, তাহলে তারা পালিয়ে গেলেন কেন?

পলায়নপর ছবি কৃতিত্ব এআই

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা দেশ ছেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×