somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শত ইস্যুর দেশ বাংলাদেশে আজ নতুন ইস্যু, রোহিঙ্গা ইস্যু

২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শত ইস্যুর দেশ বাংলাদেশে আজ নতুন ইস্যু, রোহিঙ্গা ইস্যু। সমস্যাটি যুগের পর যুগ চলে আসছে। নিকট প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এটা নিয়ে তেমন কোন মাথা ঘামায়নি। আর মুসলিম বিশ্বের ন্যংড়া, খোঁড়া সংগঠন ‘ও আই সি’ এ ব্যপারে নিশ্চুপ!

বিষয়টিকে জাতিগত দাঙ্গা বলে কেউ কেউ চালিয়ে দিতে চাইলেও রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমার সামরিক জান্তা ও প্রশাসনের আচরণ পর্যালোচনা করলে পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, এটা নিরেট জাতিগত দাঙ্গা নয়, বরং সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপরে ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যা। এথনিক ক্লিঞ্জিং। মানবতাবিরোধি অপরাধ। নিকট অতিতে বসনিয়া, রুয়ান্ডা এবং হাইতিতে এ বর্বরতা ঘটেছে। ফিলিস্তিনে এখনও তা চলছে। বর্তমান বিশ্ব এ অপরাধ সন্মন্ধে অনেক বেশী সচেতন।

চরম বর্বরতার স্বীকার এসব হতভাগ্যরা প্রাণের মায়ায় নিজেদের বাড়ী-ঘর ছেড়ে সাগর পাড়ি দিয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে আসছেন প্রতিবেশী বাংলাদেশে। আর আমরা বিপদের মহুর্তে আশ্রয় না দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছি।

আজ থেকে ঠিক চল্লিশ বৎসর আগে এই বাংলাদেশ, তৎকালিন পূর্ব পাকিস্থান থেকে লক্ষ লক্ষ নারী পুরুষ সীমান্ত অতিক্রম করে পাড়ি জমিয়েছিল ভারতে, পাকিস্থানি সৈন্যদের বর্বরতার হাত থেকে জান-মাল, ইজ্জত-সম্ভ্রম বাঁচাতে। সেদিন অনেক বাংলাদেশী সাগর পাড়ী দিয়ে আরাকানেও আশ্রয় নিয়েছিল, যদিও সংখ্যায় তা নিতান্তই নগণ্য।

যারা সেদিন আশ্রয়ের সন্ধানে ভারতে পালিয়েছিলেন তাদের মধ্য থেকে লক্ষ লক্ষ লোক এখনও জীবিত, তাদের সেই দু:সহ স্মৃতি এখনও ভাস্বর। যারা ভারতে যাননি, তাদেরও অনেকে বন বাঁদাড়ে পালিয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন। অতএব, কতটা নিরুপায় হলে মানুষ তার ভিটে মাটি, জন্মস্থান ফেলে অনিশ্চিত পথে পা বাড়ায়, তা বাংলাদেশীদের চেয়ে ভাল কেউ জানে না।

সেই ঘটনার ঠিক চল্লিশটি বৎসর পরে এসে বিপদাপন্ন মানুষ যারা অনাহারে-অর্ধাহারে, রোগে-শোকে কাতর, প্রাণ ভয়ে তটস্থ্, জন্মভূমি ছেড়ে খোলা আকাশের নীচে সাগরের বুকে দিন রাত ভেঁসে বেড়াচ্ছে একটুখানি আশ্রয় চেয়ে,, অথচ আমরা দূয়ার বন্ধ করেই রাখলাম। এত সহজেই আমরা অতিত ভুলে গেলাম?

রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্ণধাররা রাষ্ট্র ও সমাজের উপরে বাড়তি চাপের কথা বলছেন, কিন্তু এ চাপ মেটানো কি সত্যিই খুব কষ্টকর,বিষয় ছিল? রোহিঙ্গা ইস্যুটি সেই পাকিস্থান আমল থেকেই একটা ইস্যু। পাকিস্থান আমলে বার্মার জেনারেলরা একবার এরকম চেষ্টা করেও পারে নি। পাকিস্থানের শক্ত কুটনৈতিক চাপের কারণে খুব অল্প দিনের মধ্যেই পূর্ব পাকিস্থানে আগত রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য হয়।

কিন্তু বাংলাদেশ আমলে সেটা হয়নি। তারা জানে বাংলাদেশ সরকারে যারা আসীন, তারা বাঁধা থাকেন অন্যখানে। এখানে কোন ‘বাপের বেটা’ ক্ষমতায় বসে না। বসে একমাত্র তারাই, যারা অপরের তল্পিবাহক, এদের এতটা সাহস থাকে না যে, তারা বার্মার মত একটা বিচ্ছিন্ন দূর্বল দেশকে পর্যন্ত চোখ রাঙ্গিয়ে কথা বলবে। জানে বলেই তাদের আচরণ হয় ভিন্ন।

আজ যদি বাংলাদেশ সরকার বিজ্ঞতার সাথে মানবিক কারণ দেখিয়ে এসব নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশে আশ্রয় দিয়ে জাতিসঙ্ঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক হাই কমিশনারের মাধ্যমে বিষয়টাকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে টেনে আনত, তা হলে মিয়ানমার যতই পিছলে যাবার চেষ্টা করুক না কেন, তাকে আন্তর্জাতিক বিধি বিধান মেনে একটা স্থায়ি সমাধানে আসতেই হত। দেশটাতে রাজনৈতিক সংস্কারের যে ধারা চলছে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে প্রবণতা ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে সে সব বিবেচনার সাথে আরও যোগ হতো আভ্যন্তরীণ রাজনীতির বাস্তবতা।

এসব বাস্তবতা বিচারে যথেষ্ট কুশলতার সাথে মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গা নিধন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিপক্ষে বাংলাদেশ যদি শক্ত অবস্থান নিয়ে যেমন লাভবান হতে পারত, তেমনি দীর্ঘদিনের এ সমস্যাটারও একটা সমাধান হত। কিন্তু বাংলাদেশ সে দিকে পা বাড়াল না। এর সুদূর পরিণতি ভয়াবহ এবং মারাত্বক হতে বাধ্য।

বিগত কয়েকটি দশক ধরে বাংলাদেশে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে আছে। সরকার বদল হয়েছে কিন্তু তাদের ফেরত পাঠানোর বাপারে কোন সাফল্য আসেনি। অর্থাৎ বাংলাদেশ এতদিন যে দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক কুটনৈতিক পদক্ষেপসমূহ নিয়েছে, তাতে তেমন কোন লাভ হয়নি।

অতএব এ সমস্যা সমাধানে তাকে আজ হোক বা কাল হোক।বিষয়টাকে দ্বিপাক্ষিক ইস্যুর পরিবর্তে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত করতেই হবে। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে সমস্যাটির সাথে জড়িয়ে ফেলতেই হবে। এ সুযোগটাই এসেছে বাংলাদেশের সামনে। প্রশ্ন হলো, আমাদের সরকার কি সে সুযোগটাকে কাজে লাগাবেন?
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×