"এরিয়া ৫১" মূলত মার্কিন ডিফেন্সের এমন একটা জায়গা যেখানে প্রতিরক্ষার খাতিরে এমন এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয় বা করার চেষ্টা করা হয় যা হয়ত মানুষ শুধু মাত্র চিন্তা করতে শিখেছে। এটা কিন্তু শুধু মার্কিনিদের প্রচেষ্টা না। বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশ আছে যাদের আছে নিজেদের এরকম এরিয়া ৫১ এর মত গোপন জায়গা আছে যেখানে তারাও বিভিন্ন কল্পনার বাইরের জিনিষ বানাবার চেষ্টা করে। আজ আপনাদের এমন কিছু প্রযুক্তির কথা জানাবো যেগুলি বিভিন্ন সময়ে বানাবার উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়েছে ঠিকই কিন্তু তা কোন দিন আলোর মুখ দেখেনি। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
০৭) Lunar Nuclear Bomb:
এই উদ্দ্যোগটি ছিল আমেরিকার, সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন সবার আগে মহাশূন্যে মানুষ পাঠায় তখন আমেরিকার মেলেটারি এই মিশন চালু করে, আর মিশনের নাম দেওয়া হয় ১১৯-এ (119-A)। এই মিশনে তারা এমন এক নিয়ক্লিয়ার বোমা উদ্ভাবন করবেন যা চাঁদে যেয়ে চাঁদকে ধ্বংস করে দিবে। কিন্তু চাঁদের কপাল ভাল যে তারা বুঝতে পেরেছিল যে চাঁদ ধ্বংস করার থেকে চাঁদে সবার আগে মানুষ পাঠানোটাই সোভিয়েতের জন্য মক্ষম জবাব হবে। একারনে এই মিশন বন্ধো করে দেওয়া হয়।
০৬) Iceberg Aircraft Carrier:
২য় বিশ্ব যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ব্রিটিশরা পরিকল্পনা করে যে তারা উত্তর এবং দক্ষিন মেরুতে চিরস্থায়ি ভাবে নৌবহর পাঠাবে। তারা এই প্রজেক্টের নাম দেন "Project Habakkuk"। এই নৌবহর বানানো হবে কাঠের গুড়া আর বরফ দিয়ে, যাতে তা ঠান্ডার কারনে কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। কিন্তু অতিসত্বর এই প্রজেক্ট বাতিল করে দেওয়া হয়, কেননা তারা বুঝতে পারে এটা শুধু মাত্র সময় আর অর্থের অপচয় মাত্র।
০৫) The Flying Dorito:
The Flying Dorito বা A-12 Avenger II এমন এক ধরনের প্লেন যা যে কোন আবহাওয়ায় উড়তে সক্ষম। এটি বানানো হয় আমেরিকার নেভিদের জন্য। এই বিমান মূলত Grumman A-6 Intruder বিমানের বিকল্প হিসেবে ব্যাবহারের জন্য তৈরি করার উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়। এই বিমানের মূল কাজ বোমা ফেলানো এবং কার্গো বিমানের কাজ করা। কিন্তু এই বিমান বানানোর খরচের পরিমান মাত্রা ছাড়িয়ে যাবার কারনে ১৯৯১ সালে এই বিমান বানাবার প্রজেক্ট বন্ধো করে দেওয়া হয়। তবে বন্ধো করার আগেই নেভি এর পিছে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলান নষ্টো করে।
০৪) Soviet Doomsday Device:
রাশিয়ার প্রাক্তন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা এবং তৎকালীন সোভিয়েত সরকারের কেন্দ্রীর সরকারের কিছু লোক আমেরিকান প্রতিরক্ষা ঠিকাদার কম্পানি BDM এর কাছে স্বীকার করেন যে, তাদের কাছে এমন এক অস্ত্র আছে যা কিনা সারা বিশ্বকে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। যদিও এটা নিয়ে অনেকেরই দ্বিমত আছে। তারপরেও এখন পর্যন্ত যা জানা যায় তা হল, এটি সম্পূর্ন স্বনিয়ন্ত্রিত একটি ব্যাবস্থা, প্রতিনিয়ত এইটি রাশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্পন, আলোর তীব্রতা, রেডিয়েশন এবং বায়ু মন্ডলের চাপ পরিমাপ করতে থাকে। যদি কোন ভাবে এই সেন্সর গুলি টের পায় যে রাশিয়ার উপর পারমানবিক বোমা হামলা হয়েছে তাহলে তারা আপনা আপনি চালু হয়ে যাবে এবং সারা বিশ্বের সবগুলি মহাদেশকে লক্ষ করে লিউক্লিয়ার বোমা উৎক্ষেপণ করবে। আর যে পরিমান নিউক্লিয়ার বোমা উৎক্ষেপণ হবে তা দিয়ে ৫০ বার পৃথিবীকে ধ্বংস করা সম্ভব।
০৩) The Unlandable Plane:
আমেরিকার নেভি চেয়েছিল এমন এক বিমান যা বিমান বহরের বিমান চলাচলের রাস্তা ব্যাবহার না করেই উড়তে সক্ষম হবে, আর আমেরিকার প্রতিটি নৌজাহজে তারা যুদ্ধ বিমান রাখবে। আর এরই ধারাবাহিকতায় বানানো হল XFV Salmon বিমানটি। এটির ল্যান্ডিং গেয়ার ছিল পিছনের দিকে, যা পাইলটের জন্য বেশ কষ্টোকর বিষয় ছিল। পরবর্তিয়ে এই বিমান বানানোর পরিকল্পনা বাতিল করে দেওয়া হয়, কেননা এটি তৎকালীন সময়ের অন্যান্য যুদ্ধ বিমানের তুলনায় অনেক ধীর গতীর ছিল আর এটি ল্যান্ড করানো পাইলটের জন্য প্রায় অসম্ভব ছিল।
০২) Intruder from the Future:
কল্পনা করুন এমন একটি বিমানের যা এটম বোমা বয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম, একই সাথে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৫ মাইল উপরে দিয়ে শব্দের ৩ গুন গতিতে ছুটতে সক্ষম। কি কেমন লাগছে? এই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেবার জন্য তৈরি করা হয় B-70 Valkyrie, বলা হত Intruder from the Future। কিন্তু এই প্লেনের কপালেও ছিল দূর্ভাগ্য। কেননা তৎকালীন সময়ে ভূমি থেকে নিক্ষিপ্ত মিসাইলের উন্নতি, এই বিমানের টার্গেটে আঘাত হানার ক্ষমতা কম থাকায়, প্লেন বানাবার খরচ অতিরিক্ত হবার কারনে এবং একই সাথে Intercontinental Ballistic Missile (ICBMs) উদ্ভাবনের ফলে এটম বোমা বয়ে নিয়ে যাবার জন্য এই বিমানের প্রয়োজনিয়তাও ফুরিয়ে যায়। ১৯৬১ সালে এই বিমান বানাবার পরিকল্পনা সম্পূর্ন বন্ধো করে দেওয়া হয়। এই B-70 Valkyrie মোট দুটি বানানো হয়েছিল, যার মধ্যে একটি ১৯৬৬ সালে মধ্য আকাশে সংঘর্ষের (midair collision) ফলে ধ্বংস হয়ে যায়।
০১) The Thunder Screech:
আগের দিনে যখন জেট ইঞ্জিন আবিস্কার হয় নাই তখন প্রপেলার বা পাখার দিয়ে বিমান চলত এটি সবাইতো জানেন। তো তখনকার সময়ে এই প্রপেলার দিয়ে এমন একটি বিমান বানাবার পরিকল্পনা গ্রহন করা হয় যা কিনা শব্দের থেকেও দ্রুত গতিতে চলতে সক্ষম। আর এই কাজে তারা সম্পূর্ন সফল হয়েছিল। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় অন্য জায়গায়, এই ইঞ্জিনের শব্দের মাত্রা ছিল অনেক বেশি, প্রায় ২৫ মাইল দূর থেকেও এই বিমানের শব্দ শোনা যেত। এর ফলে বিমান বন্দরের কর্মচারিরা শব্দ দুষনে ভুগতে থাকে। এই সমস্যার কারনে এই বিমান তৈরির পরিকল্পনা থেমে যায়।
লেখাটি প্রথম লিখেছিলামঃ মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৩