এখানে এক শহীদ ঘুমিয়ে আছে
এখানে এক শহীদ ঘুমিয়ে আছে ,
তাকে শান্তিতে ঘুমোতে দাও,
অজস্র বুলেটের একটানা শব্দে
আজ সে ভীষণ ক্লান্ত ,
এখানে আর একটিও শব্দ করোনা খোকা ,
তার পালঙ্কের কাছ থেকে দূরে সরে যাও ।
খোকা আমার নীরবে চলে যায় ,
আমি ধীর পায়ে এসে বসি ,
মাটির পালঙ্কের কাছটায় ।
একটুও শব্দ হয়নি আমার ,
তবু মনে হল -
এই বুঝি ঘুম ভাঙ্গে আমার বাবার ।
চমকে উঠে অভিমানী গলায় বলব –
এতকাল পরে ঘুম ভাঙল তোমার ?
বাবা হেসে বলবেন – খোকা তোর মনে আছে সেই সেবার
বহুকাল আগে কুয়াশার এক ভোরে
মাছ ধরতে গিয়েছিলাম মুন্সিবাড়ির পুকুরে ?
তোর মনে আছে সেই মতিলালের কথা ?
মুন্সিবাড়ির সেই যে সেই গোফওয়ালা চাকরটা
দুটো মাছ ধরাতে তোকে আর আমাকে মারল অযথা !
আমার একটা পুকুর নেই বলে ,
সেদিন তুই কি কাঁদাটাই না কেদেছিলি খোকা
বলেছিলাম তোকে , কাদিস না বোকা
যা তোকে কিনে দেব এক বিশাল পুকুর !
তুই সারাদিন বসে মাছ ধরবি ,
কেউ তোকে কিচ্ছু বলবে না !
তোকে একটা পুকুর কিনে দিতে যুদ্ধে গেলাম ,
খোকা তুই কি কিছু মনে করেছিস
তোকে একটা পুকুর কিনে দিতে পারিনি বলে?
একটা পুকুর দিতে পারিনি বলে দুঃখ করিসনা
তোকে একটা দেশ দিয়ে গেলাম ,
এই দেশেরই কোন একখানে
আমার বুকের রক্তে এক পুকুর হয়েছে
তুই জানিস না ,
সেই পুকুরটা আমি তোকে দিয়ে গেলাম !
আমার চোখের জল গড়িয়ে পরল বাবার পালঙ্কে
চেয়ে দেখি বাবা ঘুমিয়ে আছেন আগের মতই ।
আমার খোকা কাঁদতে কাঁদতে এ সময় এসে বলে-
বাবা হাত কেটে গেছে আমার,
রক্ত ঝরছে , তাড়াতাড়ি বাঁধ !
আমি বলি - এক ফোঁটা রক্ত ঝরেছে বলে
খোকা কেন তুমি কাদ ?
চেয়ে দেখ এইখানে
এক শহীদ ঘুমিয়ে আছে ,
যার বুক থেকে ঝরেছে –
এক সমুদ্র রক্ত ,
কই ? সে তো কখনো কাদেনি !
বরং হাসি মুখে তোমাকে-
দিয়ে গেছে এক দেশ ।
খোকা তুমি আর কেদনা !
এখানে এক শহীদ ঘুমিয়ে আছে ,
অসহ্য ক্লান্তির পর ,
তাকে একটু শান্তিতে ঘুমুতে দাও !!
***