বাংলাদেশ আজকে ওয়েস্টইন্ডিজের কাছে খুব সুন্দর ভাবে পরাজিত হয়েছে। মনটা খুব খারাপ লাগছে সবারই মতন। আমার এই লেখাটা আজকের পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষন করবার জন্য নয়, শুধুমাত্র কিছু পূর্বেকার ঘটে যাওয়া কুলক্ষণের সাদৃশ্য তুলে ধরাটাই মূল লক্ষ্য যা অনেকদিন ধরেই মনে উঁকি দেওয়া স্বত্ত্বেও লেখা হচ্ছিল না।
সৌরভ কে ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক বলা হয়, কিন্তু তার পরেও আন্তজার্তিক ক্রিকেট থেকে অবসরের আগে সে তার যোগ্য সম্মান কতটুকু পেয়েছে সেটা কারোর জানবার বাকী নেই। আর তার সেই দুঃসময়ের পিছনে যার হাত ছিল সে ছিল তারই সুবিধা ভোগী কোচ চ্যাপেল মহাশয়। ভারত যখন দলের জন্য কোচ নিয়ে চিন্তিত টম মুডি ও চ্যাপেলের ইন্টারভিউ সম্পন্ন, শুধু মাত্র অধিনায়কের মতামতের অপেক্ষায়। চ্যাপেল ভুল করেনি, জায়গাটা চিনতে। সৌরভকে অস্ট্রেলিয়া থেকে বারংবার ফোন আর মেইল করে অনুরোধ করেছিল মতামত টা যেন তার পক্ষে যায় তার জন্য। চ্যাপেলের সাথে তার বোঝাপড়াটা একটু বেশী ছিল কারণ অনেক সময়ই সে চ্যাপেলের কাছ থেকে অনেক টিপস পেয়েছিল। আর সেই সুবাধেই সে ভেবেছিল ভবিষ্যৎ জুটিটা ভালো জমবে; কিন্তু জমে নাই। কোচ হিসাবে নিয়োগ হবার পর, সৌরভের সামনে দাড়াতে একটু অস্বস্তি লাগতো বইকি। দেখা দিল অহং (ইগোর) সমস্যা চরম আকারে। চ্যাপেল শুধুই সময়ের অপেক্ষায়।
সময় আসতেও বিলম্ব হয়নি। শরদ পাওয়ার,অভিজ্ঞ ক্রিকেট সাংগঠনিক না হওয়া স্বত্বেও কংগ্রেস এর সাথে কোয়ালিশন সরকার গঠনের মূল অভিস্বন্ধি ছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান হওয়া। কেন্দ্রীয় ভাবে সব প্রাদেশিক বোর্ড গুলো নোটিশ পেয়েছিল শরদ কে ভোট না দিলে সকল সাহায্য বন্ধ সহ কোন প্লেয়ারকে জাতীয় দলে নেওয়া হবে না। বেশী কিছু করা লাগেনি, তাতেই ডালমিয়া শেষ। আর বোর্ডের যে একটা ঐতিহাসিক পরিবর্তন হতে চলেছে সেটা বোঝানোর জন্যই ঐতিহাসিক সিদ্বান্ত নেওয়া হয় ডালমিয়ার প্রদেশ পশ্চিমব্ঙ্গের সৌরভ গাঙ্গুলীকে বাদ দিয়ে। সবাই ভেবেছিল হয়ত অধিনায়কত্ত্ব কেড়ে নেবে, কিন্তু না সরাসরি দল থেকে বাদ। অনেকেই খুশী একসাথে, শরদ, চ্যাপেল, রাহুল। আর শরদ এটার জন্য সহযোগীতা পেয়েছিল কিরণমোরে নামক এক নির্বাচকের,আন্তজার্তিক ক্রিকেটে যার মোট রান সৌরভের মোট ছক্কার থেকেও কম। রাহুল ও পরে প্রমান করেছিল- সে ভালো সহঅধিনায়ক হতে পারে কিন্তু অধিনায়ক নয়।হায়রে রাজনীতি আর হায়রে নির্বাচক।
সৌরভ আবার এসেছিল জাতীয় দলে, কারোর সুপারিশে নয় নিজের যোগ্যতায়। কেউ তাকে দয়া করেনি, সে দয়ার জন্যও বসে থাকে নি।
এত সময় অন্য দেশ নিয়ে হল। মনে হতে পারে ইতিহাস দিয়ে কি হবে; মানুষ সমাধান খোঁজে ইতিহাস দিয়ে। এবার আমাদের দেশের দিকে তাকাই। দল ঘোষনাটা হল বিতর্ক নিয়ে। একজন উম্মাদও বোঝে মাশরাফী কে খেলানোর ইচ্ছা থাকলে তাকে দলের অন্তভুক্তি করাটা কোন সমস্যা হত না। কিন্তু না, চ্যাপেলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে সিডন্স। ইগো একটু রয়েছে, কে বড়- ক্যাপ্টেন না কি কোচ। তারা কেউই বোঝে না, দুটার ভূমিকা দুরকম। এটাও পরিস্কার নয়, কি নিয়ে তাদের এত মত বিরোধ।
সিডন্স কোচ হিসাবে অসফল নয়, মানে এটাও নয় সে খুব বেশী সফল। বড় আসরে খেলা আর ছোট আসরের খেলা এক রকম কখনও নয়। কোচের নিজের বিশ্বকাপের খেলা দূরের কথা আন্তজার্তিক ক্রিকেট রেকর্ড বিশ্লেষন করার সময় হয়েছে ক্রিকেট বোর্ডের এ ব্যাপারে সবাই আমার সাথে এক মত হবেন আশাকরি। সিডন্স যে সবাইকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে সেটা সম্ভব হয়েছে নির্বাচকদের সহযোগীতা পাবার জন্য। একজন প্লেয়ারের গুনগত মান আরেকজন গুনী প্লেয়ারই ভালো বলতে পারেন। কোচ নির্বাচন প্লেয়ার নির্বাচনের চেয়েও যে একটা বড় বিষয় সেটা আমাদের ভাবার সময় এসেছে। তাই শুধু মাত্র প্লেয়ার নির্বাচনের দিকে অনুরাগীদের নজর দিলে হবে না, নজর দিতে হবে নির্বাচকদের নির্বাচনের দিকে, সেখানে কতটা ভালো সৎ, অভিজ্ঞ ও যোগ্য নির্বাচক আসলো।
বর প্রতিযোগিতা গুলা কখনও পরীক্ষার ল্যাবটরী হতে পারেনা। আমাদের এই ভ্রান্ত ধারনা থেকে বের হতে হবে। এক বালতি দুধ নষ্ট করবার জন্য যেমন এক ফোটা গোমূত্র যথেষ্ট, একটি পূর্নাঙ্গ দলের টিম স্পিরিট নষ্ঠ হবার জন্য বারংবার ব্যর্থ এক প্লেয়ার যথেষ্টর থেকেও অনেক বেশী। একজন অভিজ্ঞ প্লেয়ার কেন মানুষের দয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে এটা হয়ত সেই ভালো জানে। নিজের উপর আস্থা না থাকলেই এটা সম্ভব। নির্বাচকদের ভাবা উচিত, যার নিজের উপরই আস্থা নেই, গোটা দেশ তার উপর কিভাবে আস্থা রাখতে পারে। দই পাতলে যদি বার বার তা নাড়িয়ে পরীক্ষা করা হয় সেটা জমছে কিনা দেখবার জন্য। সেই দুধের জন্য দই হওয়াটা কখনই সম্ভব না। দুধ টাকে একটু সময় দেওয়া উচিত।
একজন পেশাদার প্লেয়ার হিসাবে মাশরাফীর উচিত আরো বেশী ফিটনেসের প্রতি সচেষ্ট হওয়া। তার মনে প্রশ্ন আসা উচিত কেন সেই ই বার বার ইনজুরীতে পরেন, কিভাবে এটা কাটানো যায়।
আজ জুতার মিছিল বের হয়েছে, আবেগ সামলাতে পারেনি সমর্থকেরা। পারবার কথা নয়, এটাই স্বাভাবিকতা।। এটাকে সাধারণ ঘটনা হিসাবে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াটাই ভালো, কারণ আপনাদের ক্রকেটই খেলতে হবে। সমর্থকদের উচিত জয়ে খুব বেশী উল্লসিত না হওয়া; কারন তাদের উল্লাসই পরবর্তী পতন টেনে আনে।
পরিশেষে, সিডন্স এর শিকড় একটু হালকা করবার সময় হয়েছে। তাকে মনে করিয়ে দিতে হবে সে শিখাতে এসেছে, নীতি নির্ধারণ করতে নয়। সাংগঠনিক ব্যাক্তিদের প্রতি অনুরোধ খেলার মাঠে অন্তত কোন প্রকার রাজনীতিকে টানবেন না। কারণ, ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা একদলীয় নয়, এটা জাতিগত। অন্তত একটা বিষয়ে গোটা জাতিকে আপনারা এক থাকতে দিন।