রাত জাগা সার্থক হলো!
সবার উল্লাস-হতাশা দেখে আমারও কিছু বলতে ইচ্ছে হল।
এবারের এল ক্লাসিকো'র সব চেয়ে বড় আকর্ষণ ছিলো, মরিনহো- গার্দিওলার যুদ্ধ!
সাথে মেসি-রোনাল্ডো ফ্রি।
ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই গার্দিওলা কিছুটা এগিয়ে যান।কারণ,
রোনাল্ডো কে অনেকটা বাধ্য হয়ে খেলতে নামতে হয় ডান উইং এ। বামে ছিলো (বার্সার জন্য ডানপাশে) দানি আলভেজ। দানি আলভেজের ভালোই অভ্যাস আছে সামনের দিকে উঠে যাওয়ার। তাই ডিফেন্ডার দানি আলভেজ কে 'ডিফেন্ড' করাটাও মরিনহোর মাথায় রাখতে হয়।
রোনাল্ডো অবশ্য পরে বামে গিয়ে খেলা শুরু করে।যদিও ততক্ষনে ১ গোল হজম করে ফেলেছে রিয়াল।
রোনাল্ডো অ্যাটাকিং পজিশনের উপর নির্ভর করে পুয়োল-পিকে'র পজিশন পাল্টানো চোখে পড়ার মত। পিকে'র ছেলেমানুষী মানসিকতার কারণে "বড়-ভাই" পুয়োলই রোনাল্ডোকে ডিফেন্ড করতে যায় সব সময়।
[ পিকে: প্রতি ম্যাচে এই দীর্ঘদেহী "বাচ্চা ছেলেটা" হয় নিজে ব্যাথা পায়, নাহলে অন্যকে ব্যাথা দেয়। সেটা যদি নিজের দলের প্লেয়ারও হয়, তাতেও তার অরুচি নেই ]
মরিনহোর মত এত হাই-প্রোফাইল একজন কোচের এমন লজ্জ্বাজনক পরাজয় মেনে নেয়া সত্যিই কষ্টকর!
তার উপর সমালোচকদের জিভে জ্বল এনে দেন প্রথম অর্ধের পরপরই "মেসুত ওজিল" কে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে!
কারণ, যে উদ্দেশ্য সামনে রেখে ওজিলকে নামানো হয়েছে সেটা পুরোপুরি ব্যর্থ! ওজিল-রোনাল্ডো কোন কম্বিনেশনই তেমন দেখা যায়নি।
ওজিলের আর কি দোষ! জাভি-ইনিয়েস্তার মাঝখানে পড়ে কাবাবের হাড্ডি হয়ে থেকেছে বেচারা।
বার্সার গোল গুলো অনেক দৃষ্টি নন্দন
জাভির ফিনিশিং দারুন ছিলো। এমন পরিস্থিতি তে মাথা ঠান্ডা রাখা বেশ কঠিন।
পরের গোলে ভিয়ার মুভমেন্ট অসাধারণ ছিলো। ক্যাসিয়াসের মিসটাও ছিলো দেখার মত । গোলদাতা পেড্রোর পাশে থাকা ডিফেন্ডারের মনে কি ছিলো কে জানে!!
তৃতীয় গোল: টিপিক্যাল মেসি। বলার কিছু নেই। রুটিন ওয়ার্ক।
প্রথম অর্ধে বারবার অফসাইডে পড়া ভিয়া তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগলো।
চতুর্থ গোল:
মেসি মেসি মেসি!
কার সাধ্য থামানো!
দারুন এক থ্রু-পাস। ভিয়ার ফিনিশিং দেখে মনে হল ক্যাসিয়াসকে নিয়ে একটু মজা করছে!
৪-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর বার্সা শুরু করে তাদের আরেক প্রদর্শনী এবং বিপক্ষদলের মানসিক শক্তি যাচাই করার পরীক্ষা।
মোটামুটি শতভাগ সফল ব্যাক-হিল পাস আর ১-২-১ পাসের মহড়া শুরু করলো। রিয়ালের প্লেয়ারদের এ সময়ে দৌড়াদৌড়ি দেখে কষ্টই লাগলো!
বার্সার মোট পাস: ৬৮৪। যার মধ্যে ৮৯% পাসই সফল!
রিয়ালের মোট পাস: ৩৩১। যার মধ্যে সফল মাত্র ৭৪%
প্রশ্ন: সব শেষের গোলটা দেওয়ার কি দরকার ছিলো?
উত্তর: গোল সংখ্যা দেখানোর জন্য হাতের কোন আঙ্গুল যেন ভাঁজ করতে না হয়, সে জন্য!
রেফারির সমালোচনা করা সবচেয়ে সহজ কাজ।
ধুর ব্যাটা ফাউল! টাকা খাইসে!
আরো কত কি!!
এই রকম একটা হেভিওয়েট ম্যাচে রেফারিং করা খুব একটা সহজ কাজ না। তার উপর ৩০ মিনিটের দিকে রোনাল্ডা যা দেখালো! !
স্বভাবতই ম্যাচে তখন আর নমনীয় হওয়ার কোন সুযোগ নেই!
অনেকে দেখলাম রিয়ালের পক্ষে পেনাল্টি দেওয়ার আবদার করছে!
ডি-বক্সে পড়লেই কি পেনাল্টি নাকি!! ভালদেস এর ফুল মুভমেন্ট ছিলো বলের দিকে। মাঝখানে বেয়াদবটা এসে আছাড় খায়! ঐটাকেই বরং তখন লাল কার্ড দিয়ে বের করে দেওয়া দরকার ছিলো।
খেলার সবচেয়ে বাজে মোমেন্ট ছিলো, যখন রামোস পুয়োলকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। বার্সার অন্য আর ১০ জনকে ধাক্কা মারলেও এতোটা দৃষ্টিকটু লাগতো না। তাই বলে পুয়োল!
ওরে হতভাগা রামোস! এটা কি করলি! স্পেন জাতীয় দলের সবচেয়ে বয়জেষ্ঠ্য প্লেয়ার, সবচেয়ে নির্ভরশীল ডিফেন্ডার হলো পুয়োল।
জাতীয় দলে এর প্রভাব না পড়লেই হয়।
পরবর্তী এল ক্লাসিকো ১৭ই এপ্রিল।
দেখা যাক কি হয়
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:২২