ব্যাক্টেরিয়ার বিশাল, বৈচিত্রময়, বিস্ময়কর ও রহস্যমণ্ডিত জগতে আরো একবার সবাইকে স্বাগতম। এই লেখাতেও সবাইকে বেশ কিছু ব্যাক্টেরিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব যারা মানুষের দেহে বেশ পরিচিত কিছু রোগের সৃষ্টি করে। আরেকবার উল্লেখ করতে চাই, ব্যাক্টেটেরিয়া কিন্তু খালি চোখে দেখা যায় না। এখানে ব্যাক্টেরিয়ার সুদৃশ্য যে সব রঙিন বিবর্ধিত ছবি দেখা যাচ্ছে সেগুলো বিভিন্ন staining procedure এর মাধ্যমে Light micrograph, Electron micrograph বা Digital micrograph এর মাধ্যমে তৈরি করা। তাই মনে রাখতে হবে যে এখানে ব্যাক্টেরিয়াকে অনেক রঙিন বর্ণে দেখা গেলেও এগুলো কিন্তু আসলে ওদের নিজের রঙ নয়। তাহলে চলুন কিছু আরো একবার ব্যাক্টেরিয়াদের সাথে পরিচিত হওয়া যাক।
9. Neisseria gonorrhoeae
Albert Neisser সর্বপ্রথম ১৮৭৯ সালে এই ব্যাক্টেরিয়া বর্ণনা করেন। এটি মানব দেহে গনোরিয়া রোগ সৃষ্টি করে । Sexual contact এর মাধ্যমে এই ব্যাক্টেরিয়া মানবদেহে সংক্রামিত হয়। প্রায় ১০-২০% আক্রান্ত মহিলাকে এই ব্যাক্টেরিয়া Infertile করে ফেলে। গনোরিয়া রোগের Complications গুলোর মধ্যে রয়েছে পুরুষের দেহে Acute & chronic urethritis, Prostatitis, Orchitis, epididymitis, Proctitis, urethral stricture এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে pelvic inflammatory disease(PID), Salphingitis, Oophoritis, Endocervitis, Vulvo-vaginitis, Cystitis, Sterility প্রভৃতি।
10. Neisseria meningitidis
এটি মানুষের দেহে মেনিনজাইটিস এবং সেপটিসেমিয়া(Septicaemia) সৃষ্টি করে থাকে। Anton Weichselbaum 1887 সালে এটি আবিষ্কার করেন। শিল্পোন্নত দেশগুলোতে শিশুবয়সে অসুস্থতা ও মৃত্যুর এটা অন্যতম কারণ এবং আফ্রিকা ও এশিয়ায় মহামারী সৃষ্টির জন্যও এটা দায়ী। যদিও শিশুদের মেনিনজাইটিসের জন্য দায়ী প্রধান ব্যাক্টেরিয়া হল Streptococcus pneumoniae । প্রায় ১০% ক্ষেত্রে মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যায়। কাউকে মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত সন্দেহ করা হলে সেটিকে মেডিকেল এমার্জেন্সি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
11. Proteus
১৮৮৫ সালে জার্মান প্যাথোলজিস্ট Gustav Hauser এটি আবিস্কার করেন। এটি মানুষের দেহে Urinary tract infection(মূত্রনালীতে ইনফেকশন), Septic infection ও Wound infection করে থাকে। এটি মানুষের অন্ত্রে বাস করে। এটি একটি Opportunistic bacteria । সাধারণত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে গেলে এই ব্যাক্টেরিয়া আক্রমণ করে। এই ব্যাক্টেরিয়া ইউরিয়েজ এনজাইম তৈরি করে আর এজন্য মূত্রে ক্ষারকত্ব সৃষ্টি হয় যার প্রভাবে ১০ থেকে ১৫% ক্ষেত্রে কিডনীতে পাথর সৃষ্টি হয়।
12. Pseudomonas
Walter Migula ১৮৯৪ সালে প্রথম এই ব্যাক্টেরিয়ার কথা উল্লেখ করেন। এটিও একটি Opportunistic pathogen । এটিও মানুষের অন্ত্রে কলোনি করে থাকতে পারে। হাসপাতালের পরিবেশে এদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায় যার ফলে সাধারণত সহজেই এরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের আক্রান্ত(Nosocomial Infection) করে ফেলে।
13. Staphylococcus aureus
সার্জন Alexanader Ogston সর্বপ্রথম এই ব্যাকটেরিয়া ১৮৮০ সালে সনাক্ত করেন। কিন্তু ১৮৮৪ সালে এটির নামকরণ করেন বিজ্ঞানী Rosenbach । এটি সব সময় রোগ সৃষ্টি করে না। এই ব্যাক্টেরিয়াটি মানুষের স্কিন, শ্বাসনালীতে (respiratory tract) ও অন্যান্য বডি সারফেসে বাস করে। প্রায় ২০% মানুষ এই ব্যাক্টেরিয়ার long-term carrier(বাহক) হিসেবে কাজ করে। এই ব্যাক্টেরিয়া মানুষের স্কিন ইনফেকশন, শ্বাসনালীর অসুখ , ফুড পয়জনিং, টক্সিক শক সিনড্রোম প্রভৃতির একটি কারণ। এটি বেশ সহজেই আন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
14. Staphylococcus epidermidis
এটি সাধারণত ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া নয়। এটি মানুষের স্কিনে বাস করে। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়লে এটি ইনফেকশন করে। যেসব রোগীর শরীরে ক্যাথেটার বা অন্য কোন সার্জিক্যাল ইমপ্ল্যান্ট(যেমন, হার্ট ভালভ, ভাস্কিউলার শান্ট) থাকে তাদের এই ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এটিকেও অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা সহজে প্রতিহত করা যায় না।
15. Streptococcus pneumoniae
এটি বেশ ক্ষতিকর একটি ব্যাকটেরিয়া। এটি কোন লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই সুস্থ মানুষের(healthy carrier) শ্বাসনালীর উপরের অংশে (প্রধানত Nasopharynx এ) বাস করে। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল থাকা অবস্থায় যেমন, বৃদ্ধ বয়সে এবং শিশু বয়সে এটি মানুষকে আক্রান্ত করে। এটি নিউমোনিয়া এবং মেনিনজাইটিস এর প্রধান কারণ। এটি HIV ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যাক্তির দেহে Septicaemia সৃষ্টি করে। এছাড়াও এটি Acute sinusitis, Otitis media, Conjunctivitis, Bacteraemia, Sepsis,Osteomyelitis, septic arthritis, Endocarditis, Peritonitis, Pericarditis, Cellulitis, Brain abscess প্রভৃতি অসুখও সৃষ্টি করে। যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি চিকিৎসক George Sternberg এবং ফরাসি জীবানুতত্ত্ববিদ Louis Pasteur পৃথকভাবে ১৮৮১ সালে প্রথম এই ব্যাক্টেরিয়া সনাক্ত করেন।
16. Streptococcus pyogenes
এটিও মানুষের স্কিনে বাসকারী একটি ব্যাক্টেরিয়া। মাঝে মাঝেই এটি শরীরকে আক্রান্ত করে। প্রতিবছর প্রায় ৭০০ মিলিয়ন স্ট্রেপ্টোকক্কাল ইনফেকশনের হিস্ট্রি পাওয়া যায় যার মধ্যে প্রায় ৬,৫০,০০০ টি কেস গুরুতর এবং মৃত্যুর হার প্রায় ২৫% । শুরুতে রোগ নির্ণয়ে ভুল হলে Sepsis এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
17. Treponema pallidum
এটি মানিষের দেহে সিফিলিস (Syphilis) রোগ সৃষ্টি করে। Sexual contact এর মাধ্যমে এই ব্যাক্টেরিয়া মানুষের দেহে সংক্রামিত হয়। জার্মান জুয়োলজিস্ট Schaudinn এবং ডার্মাটোলজিস্ট Erich Hoffmann ১৯০৫ সালে এই ব্যাক্টেরিয়া প্রথম আবিষ্কার করেন।
চলবে......
প্রথম পর্বের লেখাটির লিংকঃ ব্যাক্টেরিয়ার (Bacteria) বিস্ময়কর জগতে কিছুটা সময় (ছবি ব্লগ)