মুরব্বীরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী না থাকলে পাহাড় অনেক আগেই বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। যথার্তই বলেন....... স্বাধীনতার পর থেকে পাহাড়ে বসবাসকারী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী গোষ্ঠিগুলো যখনই গনহত্যা, রক্তপাত, অস্ত্রবাজী ও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে পাহাড়কে অস্হিতিশীল করে রাজনৈতিক ফায়দা লুন্ঠন করতে সচেষ্ট হয়েছে তখনই প্রাণপন চেষ্টায় পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বয়ে এনেছে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। দীর্ঘ চার যুগ ধরে স্বাধীন বাংলার সার্বভৌমত্ব ও মানচিত্র রক্ষা করতে দেশদ্রোহীদের গুলিতে পাহাড়ের অলি-ঝুপলি-ছড়াতে কত সেনা সদস্যর লাস পড়েছে তার কোন হিসেব নেই। আমাদের ভূলে গেলে চলেনা যে, আমাদের জাতীয় পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে এই পাহাড়েই জীবন দিয়েছে স্বাধীনতা উত্তর একমাত্র বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত ল্যাফঃ মুশফিক, ল্যাফঃ আহসান সহ অনেক দক্ষ, সাহসী, সমরকৌশলী ও দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার। কন্টকময়, দুর্গম পাহড়কে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে তোলে সভ্যতা ফিরিয়ে এনেছে সেনাবাহিনীরাই। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেনাবাহিনীরাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে পাহাড়ের আনাচে-কানাচে তৈরি করেছে শত শত কিঃমিঃ রাস্তা। যার ফলে সমতলের সাথে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাহাড় পরিণত হয়েছে সমতল বাংলার অবিচ্ছেদ্য ভূখন্ডে। পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ পরিচালনায় বিভিন্ন স্হানে গড়ে ওঠেছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান। যাতে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে দূর হচ্ছে পাহাড়ের অন্ধকার।এছাড়াও হাসপাতাল ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনার মাধ্যমে পাহাড়ের হাজার হাজার প্রান্তিক জনগোষ্ঠির কাছে চিকিৎসা সেবা পৌছিয়ে দিচ্ছে একমাত্র তারাই। পাহাড়ি যেসব এলাকায় খাবার পানির সংকট রয়েছে সেখানেও বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের ব্যবস্হা করা হয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে।পাহাড়ের ঘাতক ব্যাধি ম্যালেরিয়া-টাইফয়েড নিধন সহ যে কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর ভূমিকাই সর্বাগ্রে।
সেনাবাহিনী আছে বলেই দেশ-বিদেশের লক্ষ লক্ষ ভ্রমন পিপাসু মানুষ পাহাড়ে নির্ভয়ে বেড়াতে আসতে পারে। সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতাই গড়ে ওঠেছে পাহাড়ের অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প। সেনাবাহিনী আছে বলেই পাহাড়ের শত শত কোটি মূল্যর কাঠ,বাশ বন, পশুপাখি ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা পাচ্ছে। আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনী পাহাড় বাসীর আস্হার প্রতীক। মোট কথা সেনাবাহিনী ব্যাতীত সুষ্ঠু, শান্ত পাহাড়ের কথা কল্পনাও করা যায়না।
কিন্তু এতকিছুর পরও পাহাড়ের কতিপয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠি পাহাড়ে সেনাবাহিনীর উপস্হিতি সহ্য করতে পারেনা। যারা খুন অপহরণ, চাঁদাবাজীর মাধ্যমে পাহাড়কে ভয়ানক মৃত্যুপুরী বানিয়ে রেখেছে। যারা বাংলার স্বাধীন ভূখন্ডে অর্ধলক্ষ নিরীহ বিঙালিকে হত্যা করেছে। যারা পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী মদদে পার্বত্য চট্টগ্রামকে এ দেশ থেকে আলাদা করে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে চায়। চারযুগ পরেও যারা আজ পর্যন্ত এদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি। এখনো শয়নে-স্বপনে, ধ্যান জাগরণে আজো দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত।
কাজেই দেশদ্রোহীদের এহেন হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে আগে যে কোন মূল্য পাহাড় থেকে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী বিতাড়ণ করতে হবে। তাই তারা যখনই সুযোগ পেয়েছে তখনই আমাদের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জগণ্য ও নগ্ন অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ ও জমি দখলের কালিমা লেপনের চেষ্টা করা হয়েছে।
গতকাল পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স এর উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী সরিয়ে নেয়ার ঘোষণায় হতাশ হয়েছে পাহাড়বাসী, হতাশ হয়েছে দেশবাসী।
পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বাভাবিক জীবন সচল রাখতে সেনাবাহিনীর কোন বিকল্প নেই। কাজেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পাহাড়বাসীর আকূল আবেদন, পাহাড়ের লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে আর পাহাড়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখতে সেনাবাহিনী সরিয়ে নেয়ার পরিবর্তে সেনা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হোক।।
লেখক
গাজী সালাউদ্দীন