আমেরিকা নিয়ে মন্তব্য করার যোগ্যতা আমার নেই—এটা প্রথমেই বলে ফেলা ভালো। আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতার কথা বলছি। আমেরিকা তথা উত্তর আমেরিকাতে আমার যাওয়া হয়েছে বেশ কিছুবার। সবগুলো ভ্রমণ যোগ করলে তিন বছর হবে হয়তো। এর মধ্যে মেক্সিকোও আছে, কানাডাও আছে। বেশির ভাগ সময় আমি সাইকেল চালিয়েছি। এ কারণেই আমার অভিজ্ঞতা অভিবাসীদের মতন হয়তো হবে না।
আমেরিকানরা ভীষণ কনজারভেটিভ—এটা আমার উপলব্ধি। আমি যেহেতু বেশির ভাগ রিপাবলিকান রাজ্যগুলোতে ঘুরেছি, সেটাও একটা কারণ হতে পারে। আবার বড় শহর যেহেতু এড়িয়ে গেছি, শহরকেন্দ্রিক সমাজব্যবস্থার চেয়ে রুরাল বা সাবআর্ব যাকে বলে, তার অভিজ্ঞতাই বেশি হয়েছে। এখানকার মানুষ সিনেমার মতন নয়। ছোট ছোট শহরগুলোতে, যেখানে দুই-তিন হাজার বা তার কম মানুষ বাস করেন, তাদের জীবনপ্রণালী আমাদের মফস্বল বা পাড়ার মতনই মনে হয়েছে। যেমন, এক বৃদ্ধ দম্পতি আমাদের ক্যাম্পগ্রাউন্ড থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের বাড়িতে। বেশ খাতির-যত্ন করেছিলেন। খাবার টেবিলে প্রার্থনা, মায়ের মতন করে প্লেটে খাবার তুলে দেয়া, আর সদ্য বিবাহবিচ্ছেদপ্রাপ্ত মেয়েকে নিয়ে বিস্তর চিন্তা—এটা ছিল একটি ঘটনা মাত্র। এমন আরও বেশ কিছু ঘটনা আছে যা আমার পূর্বনির্ধারিত ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল।
যেমন, কৃষিপ্রধান এলাকাগুলোতে টয়লেটে যাওয়ার সময় অনেক দরজায় দেখেছি লেখা ‘ফারমার’ (ছেলেদের জন্য) আর ‘ওয়াইভস’ (মেয়েদের জন্য)। এখানে তারা স্ত্রী লিঙ্গের জন্য আলাদা শব্দ ব্যবহার করেননি। এটা অবশ্য শহরে দেখিনি। মহিলাদের ছোট কাপড় পরার যে চল বা ধারণা ছিল, সেটা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। বড় শহর ছাড়া বা সমুদ্র সৈকত এলাকায় হয়তো দেখা হয়েছে। আমি পর্দাশীল কিন্তু রিভিলিং অ্যাটায়ার সেখানেও খুব দেখেছি তা নয়।
যখন সাইকেল চালানো হয় তখন কম খরচের জায়গা বা রাস্তা খুঁজে নেয়া হয়। বড় শহর মানেই খরচ বেশি।
সুইং স্টেট আইওয়াতে ২৫ হাজার সাইক্লিস্টের সাথে সাইকেল চালিয়েছি। সেখানেও তাই, কনফেডারেট পতাকাওয়ালা বাড়ি থেকে পানি নিয়েছি, কেউ গুলি করেনি। আমেরিকার যত আতিথিয়তা, তার বেশির ভাগই মিডওয়েস্ট বা ওয়াইল্ড ওয়েস্টের রাজ্যগুলোতে।
আমার পরিচিত অনেকে এবার গৎবাঁধা ধারনার বাইরে গিয়ে ভোট দিয়েছেন। তারা অনেকেই দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মের অভিবাসী। তাদের কাছে কারণ জানতে চাইলে সরলভাবে বলেছে—সব ঠিক আছে, শুধু কমলা না আসলেই হলো।
এখানেও কি কনজারভেটিজম দেখা যায় না?
যে কোনো দেশ তার সুরক্ষার জন্য যা তার জন্য ভালো, তাই করতে পারে। আন্তঃদেশীয় দেয়ালের ব্যাপারেও তারা একমত। তারা চান না যে হেঁটে হেঁটে মানুষ তাদের দেশে ঢুকে যাক।
লেখাটা বড় হয়ে যাচ্ছে। শেষে আরেকটা গল্প বলি। মেক্সিকো সিটিতে ১৬ বছর আগে যাদের দেখেছিলাম আমেরিকায় ঢোকার জন্য ব্যাকুল, তাদের মধ্যে একজনের বাড়িতে নিমন্ত্রণে গিয়েছিলাম ৫ বছর পরে। এই ৫ বছরে তিনি রিপাবলিকান হয়ে গেছেন।