প্রধানমন্ত্রী আপনি বুঝে শুনে বক্তব্য দিয়েছেন তো?
৮ই মে ঢাকায় উপজাতীয় কমপ্লেক্স (পার্বত্য কমপ্লেক্স) উদ্বোধন করতে এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন যে, ৪টি বিগ্রেড ছাড়া বাকি সব সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে পুনরায় প্রশ্ন রেখে লেখা শেষ করবো। তার আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের আওয়ামীলীগের বিগত কয়েক বছরের ইতিহাস তুলে ধরছি।
কাপ্তাই উপজেলার কৃষকলীগের সভাপতি অনিল তঞ্চঙ্গ্যাকে অপহরণ করে হত্যা করার পর থেকে পাহাড়ে লীগ ও জেএসসের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের প্রকাশ্য যাত্রা শুরু। গত সংসদ নির্বাচনে দিপংকর তালুকদার হেরে যাওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে থাকে। রাঙ্গামাটি আওয়ামীলীগ নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ হিসেবে পাহাড়ে জেএসএস এর অস্ত্র সন্ত্রাসকে দায়ী করে আসছে। শুরু হয় দিপংকর দাদার অস্ত্র রাজনীতি। আওয়ামীলীগ বুঝতে পারে পাহাড়ে অস্ত্র উদ্ধার করা না গেলে জীবনেও নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই দাদা ক্ষমতা ফিরে পেতে অস্ত্র উদ্ধারে জন্য বিভিন্ন সভা সেমিনার ও সাংবাদিক সম্মেলন করে আসছিলেন। ইতিমধ্যে মেডিকেল কলেজ উদ্বোধন নিয়ে সংঘর্ষে যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে আওওয়ামীলীগ -জেএসএস।
গত ২ডিসেম্বর ১৫ শান্তি চুক্তির ১৮ বছর উপলক্ষে প্রথমবারের মতো পৌরসভা চত্বরে বিশাল জনসভার আয়োজন করে আওয়ামীলীগ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য দালাল হিসেবে পরিচিত ড.গহওর রিজবী। জনসভায় প্রত্যেক উপজেলার লীগের সভাপতি বা অন্যকোন বড় নেতা বক্তব্য দিয়েছেন। সবার কন্ঠে একটাই দাবি ছিলো ড.রিজভী যেন প্রধানমন্ত্রীকে পাহাড়ের অস্ত্র উদ্ধারের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।অভিযোগ করা হয় দাদা কেন প্রধানমন্ত্রী নিজে নির্বাচন করলেও জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই যদি অস্ত্র উদ্ধার করা না হয়! একজন বক্তব্য দাবী করেছিলেন চুক্তি বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে যেন পাহাড়ের লীগের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দিপংকর, এমপি চিনুসহ আওয়ামীলীগের লাগব বোয়াল সবাই একই দাবি করেছিলেন।
কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রধান অতিথি জনাব রিজভী শন্তু লারমাকে একজন খাটি দেশপ্রেমিক হিসেবে ঘোষণা দেয়! প্রকাশ্যে কিছু বলতে না পারলেও সভাস্থলেই কানাঘুষা শুরু হয়ে যায়। পার্বত্য বিষয়ে ড. রিজভীকে বিরোধীরা দালাল বলে আসলেও সেদিন থেকে তৃনমুল আওয়ামীলীগও তাকে দালাল হিসেবে চিহ্নিত করে ফেলে।
এরপর কাপ্তাই লেক দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে। আপনারা কমবেশি সবাই জানেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্ত্র উদ্ধারের দাবিতে দিপংকর দাদা স্বরনকালের বৃহৎ জনসভা করলে ১৬সালে মার্চ ২৪ তারিখে। দাবি একটাই পাহাড়ে অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।
আরও নাটকীয় ঘটনা ঘটে তৃতীয় ধাপে হতে যাওয়া রাঙ্গামাটি জেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে। পাহাড়ে অস্ত্রের ভয়ে সবকটি ইউনিয়নে পার্থী দিতে পারেনি আওয়ামীলীগ (৪৯টি থেকে মাত্র ২৩/২৪টিতে পেরেছে। তাও বাঙ্গালি অধ্যুষিত এলাকায়)। তাই লীগে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিশন নির্বাচন পিছিয়ে দেয়। ২৩ এপ্রিল থেকে পিছিয়ে ৪জুন ঘোষণা করা হয়।
এর মধ্যে পাহাড়ে অস্ত্র উদ্ধার তো দূরের কথা কোন অভিযান পরিচালিত হয়েছে বলে কেউ বলতে পারবে না। কোনপ্রকার অস্ত্র উদ্ধার তো পরের কথা। ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগ ৪৯টির মধ্যে ৪৬টি ইউনিয়নে দলীয় পার্থী ঘোষণা করেছে!
প্রধানমন্ত্রীর সেনাবাহিনী ক্যাম্প প্রত্যাহারের ঘোষণা ও ৪৬টি পরিষদে পার্থী ঘোষণায় পার্বত্যবাসীর মনে কিছু প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে!
প্রশ্ন ১. প্রধানমন্ত্রী আপনি কি পাহাড় সম্পর্কে অবগত থেকেই ক্যাম্প প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন?
২.পার্বত্যবাসীর প্রানের দাবি পাহাড় থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা। অস্ত্র কি উদ্ধার হয়েছে?
৩. যে অস্ত্র সন্ত্রাসের ভয়ে লীগ পার্থী দিতে পারলো না, ১মাসের ব্যবধানে কিভাবে পার্থী ঘোষণা দেওয়া হলো?
৪. পাহাড়ের অস্ত্র উদ্ধারের যে আন্দোলন আওয়ামীলীগ করে আসছিলো তা কি সব ভুয়া?
৫. রাজনীতির মাঠে অস্ত্রের কথা তুলে দাদা দিপংকর তালুকদার বাঙ্গালিদের দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করেছেন কি?
৬. দাদা ২০০৯ - ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকেও কেন পাহাড়ের অস্ত্র উদ্ধারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি?
৭. নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর কেন দাদা অস্ত্র উদ্ধারের দাবি করে আসছেন?
৮. ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে লীগ - জেএসএস এর মধ্যে কোন গোপণ সমজোতা হয়েছে বা হয়নি তো?
পাহাড় থেকে অস্ত্র উদ্ধার না করে সন্ত্রাসীদের নির্মূল না করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিসের উপর ভিত্তি করে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন পার্বত্যবাসী তা জানতে চায়। আজকে যদি পাহাড়ের অস্ত্র সন্ত্রাসীদের অস্তিত্ব নিঃষেশ হতো তাহলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় আমাদের কোন সমস্যা ছিলো না। কিন্তু অস্ত্র ও সন্ত্রাস নির্মুল না করে পাহাড় থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী দিলেন তাতে পার্বত্য খুবই মর্মাহ! এই সিদ্ধান্তের তিব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি!