somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"রাহেলা বেগমের নিঃসঙ্গতার ১০১ বছর" ।

১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১০১ বছর পেরোলেন রাহেলা বেগম । না,এতে কোন উল্লাস বা উৎসব অনুষ্টান পরিলক্ষিত হচ্ছেনা । কেননা ,বিগত বছরগুলোতে তার নিজেরই বড় ছেলে মারা যান তার অনেক আগে । তার এক নাতনীও সন্তান জন্ম দেয়ার পর মারা যান ।সেই শিশু মা ডাকার সুযোগ পায় না । বাকী চারছেলের কাছে এখন তিনি বলতে গেলে বোঝা । তার নাতনীর সন্তান মা ডাকতে পারেনি, তার মাকে । কিন্তু ব্যাপারটা পুষিয়ে যায় অন্যদিকে । তার চার ছেলের রাহেলা বেগমকে মা ডাকতে ডাকতে বিরক্তি এসে গেছে । তারা এখন নিজেদের মধ্যে এটা নিয়ে প্রায়ই কথা কাটাকাটি করে যে কে তাদের মাকে রাখবে । এমনকি যে মহিলাকে তার সেবা- শুশ্রুসার জন্য রাখা হয়েছে সেই মহিলা পর্যন্ত তাকে বিছানায় মল-ত্যাগের জন্য ধমকা-ধমকি করে । আর বাকি সময়টা তার সাথে কন্ঠে তারল্য নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করে । রাহেলা বেগমের গাঁ জ্বলে যায়, কাজের মহিলা জোহরার কথা-বার্তাতে । তিনি ওইদিন জোহরাকে বলেন, আমাকে একটু জানালার কাছে নিয়ে যা, আমার ছেলের কবরটা দেখবো । জোহরা কন্ঠে তারল্য এনে ছিনাল মেয়েছেলের মতো হেসে বলে, এতো তাড়াহুড়া কিসের, আপনার এখনো দেরী আছে । রাহেলা বেগম স্তম্বিত হয়ে যান এ বেয়াদবিতে ।

তিনি বুঝেন সব আজ সম্ভব হচ্ছে তিনি বিছানায় পটে মলত্যাগ করেন বিধায় ।তার মনে পড়ে যৌবনকালে এমনসব মাগীদের তিনি কিভাবে চুলের মুঠো ধরে ঢিঢ করতেন । তার সময়কালে তিনি পান থেকে চুন খসতে দেননি । তার ছেলেরা বলতো, আমার মায়ের গলার আওয়াজের তোড়ে বাড়ীর সামনে গাছ-পালায় কাক-চিল বসার উপায় ছিলো না । রাহেলা বেগমের যুক্তি হলো, যেহেতু জোহরা ৫০০০ টাকা মাসে নেয় শুধু তাকে দেখাবাবদ ,তাহলে জোহরার আবার এতো তাকত কিসের ।তাই কোন কোন দিন রাহেলা বেগম জোহরার উপর ক্ষেপে থাকলে পট থেকে মল-মুত্র ফেলে বিছানার চাঁদর কাথায় লেপ্টে রাখেন ইচ্ছে করেই । সেদিনটা খুব ঝড়ের বাতাস বয়। জোহরা মুহু মুহু ঘোষনা দেয় ,আর নয়,গার্মেন্টসে কাজ করে খাবো ,পরের বাসায় কাজ করে খাবো তবুও গু-মুত কাঁচাতে পারবো না । আমার খানা-দানার রুচি সব গেছে ।কি শরীর কি হয়েছে, আরে আমি ভেবেছিলাম বুড়ি ঠ্যাং ভেঙ্গেছে,বেশী হলে আর দুমাস টিকবে ।ঘরেও জামাই অসুস্থ ,তাই কাজটা নিলাম , এখন দেখি আমি এই বুড়ির আগে কবরে যাবো ।

তিনি এখন রুটিন অনুযায়ী বড় ছেলের নাতির কাছে আছেন । এ নাতি তাকে সত্যিই খুব ভালোবাসে,কেননা বংশের প্রথম নাতি হিসেবে সেই রাহেলা বেগমের সমস্ত আদর স্নেহ পেয়েছিলো । তার নাতি তাকে লুকিয়ে আম,দুধ ,মিস্টি,ছানা সব খাওয়ায় । এগুলোই তার প্রিয় খাবার , কিন্তু ডাক্তারের বারন নাতিকে বিচলিত করে না । সে ভাবে ,আমার দাদী আর কয়দিন আছে , মনের শখ মিটুক । আর আল্লাহর অশেষ রহমতে রাহেলা বেগমের ক্ষিধেও ভালো । শুধু ভাঙ্গা পা টুকু ছাড়া তিনি পুরো সুস্ত । তার স্মৃতি শক্তি এখনো অসাধারন ! তিনি কেবল মল-ত্যাগ করে বিছানা পত্তর নস্ট করার সময়ই কানে কিছু শোনেন না । কিন্তু জোহরা আর তার নাতির বৌয়ের প্রতিটা গালমন্দ তার কানে আসে । তিনি এটা নিয়ে তার নাতির সামনে কান্না-কাটি করেন ।তার নাত-বৌ তাকে যখন বিষমভাবে গালাগালি করেন অসময়ে বিছানা-পত্তর নস্ট করার জন্য,তখন তিনি ভয়ে বা তাচ্ছ্যিল্যে আরো যেটুকু বাওয়েলস পরিষ্কার করার দরকার ছিলো ,তা করে ফেলেন ।নাত বৌ বাবার বাড়ি যাবার ঘোষনা দেয় ,কিন্তু নাতির এক কথা- আমার দাদি আমার জন্য যেটা করেছে তা শোধ করার নয় ।আমি যখন যৌবনে গান-বাজনা আর নেশার কবলে পড়ে ঘরের থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন তখন দাদীই তো আমাকে নিয়ে সবার সাথে লড়েছে । বাবা আমাকে প্রায় ত্যাজ্য করার রাস্তায় নেমেছিলো ,কিন্তু দাদি বটগাছটার মতো আমাকে ছায়া দিয়েছিলো । আজ আমার এতো ধন -সম্পদ সব দাদীর দোয়ায় । সে মনে মনে ভাবে আর দাদীকে কোন চাচার ঘরে যেতে দিবে না । কিন্তু তার বৌ, সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে,সংসারের জটিলতার জন্য ।

এদিকে আজকেও রাহেলা বেগম বিছানাতে তার রুটিন ওয়ার্ক সেরে ফেলেছেন ।এক পশলা গালাগালির হয়ে গিয়েছে । আসলে জোহরা আর নাত-বৌ সমানে তেড়ে এলে তিনি আর আগের মতো খেই বজায় রাখতে পারেন না ।সেটাই তিনি ভাবেন, কি যৌবন কি হয়ে গেলো ।তোরাও একদিন বিছানাতে হাগবি বেয়াদপের দল । পরের মাসে তাকে আরেক ছেলের ঘরে থাকতে যেতে হবে ,তার আর এ বয়সে এতোবার জায়গা নাড়তে ইচ্ছা করেনা । এভাবে আজ এখানে কাল ওখানে , কেউ যেনো তাকে রাখতে চায় না ।তার মনে পড়ে অনেকদিন আগের একটি ঘটনা ,তার স্বামী রেলওয়ের কর্মকর্তা ছিলেন । তাদের বাতসরিক ক্রীড়ানুষ্ঠানে একটা আয়োজন ছিলো নাম -মিউজিক্যাল পিলো-। ব্যাপারটা ছিলো এমন ,অনেকগুলো বৃত্তাকার করে রাখা চেয়ারে মহিলারা বসতো,তাদের হাতে করে একটা বালিশ সেই বৃত্তাকারে ঘুরে বেড়াতো সবার হাতে হাতে মিউজিকের তালে তালে ।কেউই বালিশটাকে রাখতে চাইতো না,হাতে আসা মাত্র অপরকে দ্রুত হস্তান্তর করে দিতো । কারন মিউজিক থেমে গেলে যার হাতে বালিশ ছিলো সে এই কলঙ্কের বালিশ রাখার দায়ে খেলায় আউট হয়ে যেতো ।

রাহেলা বেগমের হঠাত করে নিজেকে সেই মিউজিক্যাল পিলোর বালিশের মতোই মনে হলো ।কেননা তাকেও সবাই এভাবে পার করে দেয় ।কিংবা হয়তো তিনি আরো খারাপ ,কেননা তিনি টের পাচ্ছেন স্বয়ং আজরাইলও তাকে সেই মিউজিক্যাল পিলোর বালিশ ভাবে,না হলে পুরো এলাকাজুড়ে সবাই উজার হয়ে যাচ্ছে,কিন্তু আজরাইল তাকে প্রায় কিছুতেই ছোঁয়া দিচ্ছে না ।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইনডিয়ান মিডিয়া, র এবং সংখ‍্যালঘু প্রসঙ্গ

লিখেছেন মোরতাজা, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১২:৫৭



১.
ইন্ডিয়ান মিডিয়াকে ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্র বঙ্গে গীতা/বাইবেল জ্ঞান করা হতো। ৫ আগস্টের পর এই দেশটির মিডিয়া আম্লীগ এক্টিভিস্ট সুশান্তের আমার ব্লগের চেয়ে খারাপ পর্যায়ে প্রমানিত হয়েছে—জানায়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন মিলনকে ধর্ষণ বলা হবে, না প্রতারণা বলা হবে?

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১:৪১

আমাদের দেশে এবং ভারতের আইনে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন মিলনকে ধর্ষণ হিসাবে গণ্য করা হয়। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এই ধরণের বিধান আছে বলে আমার মনে হয় না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ, চীন ও ভারত: বিনিয়োগ, কূটনীতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:১০


প্রতিকী ছবি

বাংলাদেশের বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমীকরণ নতুন মাত্রা পেয়েছে। চীন সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ও আর্থিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরছেন, যা দেশের অর্থনীতির জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। শনিবার (২৯ মার্চ) এক বিশেষ অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্রঋণ ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনুস: এক নতুন স্টেটসম্যানের উত্থান

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ড. মুহাম্মদ ইউনুস ধীরে ধীরে রাজনীতির এক নতুন স্তরে পদার্পণ করছেন—একজন স্টেটসম্যান হিসেবে। তার রাজনৈতিক যাত্রা হয়তো এখনও পূর্ণতা পায়নি, তবে গতিপথ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। তার প্রতিটি পদক্ষেপ মেপে মেপে নেয়া,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×