অনেক দিন পর আবার ফিরে এলাম ব্লগ এ। আর একটা বিষয় নিয়ে অনেক দিন ধরে বসে বসে চিন্তা করছি কিন্তু আমার কথা যে বলব সেটা কোথায় বলব আর বললেই যে কাজ হবে তাও না। আর আমাদের মত ছোট মাথার লোকজন এর জন্য ব্লগ ছাড়া তো মত প্রকাশের জায়গা নাই। আমাদের ঢাকা শহর বিশ্বকাপ উপলক্ষে নতুন করে সাজানো হয়েছে। ভালই লাগছে সবার কাছে, মেগাসিটি বলে জয়গান গাইছে, কিন্ত খেলা শেষ হলে আবার সেই আগের ঢাকা ফিরে আসবে। আমরা যদি চাই তাহলে ঢাকাকে সত্যি মেগাসিটি এবং বসবাসের যোগ্য নগরী বানানো সম্ভব। আজ থেকে চার বছর আগে যখন ঢাকায় থাকতাম তখন কোনদিন ৮ টার অফিস ঠিক ৮ টায় যেতে পারি নাই তবে আমার ভাগ্য ভাল যে বেশিদিন ঢাকায় থাকতে হয় নাই। এখন চার বছর পর যে কি অবস্থা তা, যারা ঢাকায় থাকেন তা হারে হারে টের পাচ্ছেন। আমার কাছে মাঝে মাঝে মনে হয় যারা এখন ঢাকায় থাকেন তার একমাত্র জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে থাকেন । বর্তমান সরকার ঢাকার যানজট নিরসনে অনেক পদক্ষেপ নিচ্ছে যেমন: পাতাল রেল, মনোরেল, এলিভেটেড এস্কপ্রেস, ফ্লাইওভার
এবং ঝুলন্ত আর একটা ঢাকা শহর বানায় দিলেও যানজট বলেন আর গ্যাস, পানি, বিদ্যুত, কোন সমস্যাই সমাধান করতে পারবে না। কারন একটাই আমাদের সবকিছুই ঢাকা শহর কেন্দ্রিক তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে, ভাল চিকিৎসা করাবেন, ব্যবসা, পড়াশুনা, বিনোদন সবকিছু ঢাকা কেন্দ্রিক। একটু ভেবে দেখেন একজন ব্যবসায়ী তার কারখানার জন্য কাচাঁমাল কিন্তু চিটাগাং বন্দর দিয়ে আমদানি করে আবার প্রডাক্ট তৈরি করে আবার তা বন্দর দিয়ে রপ্তানি করছে, তার মানে মাঝখানে তাকে ঢাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত পরিবহন খরচ বহন করতে হচ্ছে। আমাদের পোশাক শিল্পে যে অস্থিরতা তারও কারন আমি বলব ঢাকা শহর, একজন শ্রমিক ৫০০০ টাকাও যদি পায় তা দিয়ে কি ঢাকা শহরে চলা সম্ভব?? কিন্তু যদি আমার ঢাকার বাইরে বিশেষ করে বন্দর কেন্দ্রিক যদি আমাদের পোশাক শিল্প গড়ে উঠে সেক্ষেত্রে আমার পরিবহন খরচ কমবে, ঢাকার বাইরে বসবাস খরচ কমবে এবং মালিক পক্ষ পরিবহন খরচ কমে গেলে সেক্ষেত্রে শক্ত বেতন কাঠামো এবং অন্যান্য সুবিধা দিতে পারবে, আর ঢাকার উপর থেকে অনেক বড় আকারের চাপ কমবে। আবার যদি তাকান চিকিৎসার দিকে তাকান তাও আমাকে ঢাকা আসতে হবে(এমপি/ মন্ত্রিদের ব্যাপার আলাদা, কারন এদের চিকিৎসা দেশে সম্ভব না

আরও অন্যান্য শহর কেন্দ্রিক, আবার তাদের বিনোদন মানে সিনেমা জগত যা পুরা বিশ্ব দখল করতে যাচ্ছে, তা কিন্তুক গড়ে উঠেছে মুম্বাই কে ঘিরে। তো আমাদের ছোট এই দেশে কেন সম্ভব না যেখানে তাদের দেশে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা যেতে ১-৩ দিন সময় লাগে। আর আমাদের দেশে যেতে সর্বচ্চো ১২ ঘন্টা সময় লাগে। সিনেমা যে ঢাকায় বসে মগবাজার এ বসে বানাতে হবে তার তো কোন মানে নেই। আবার যদি আমরা বাইরে তাকাই ফিনল্যান্ড (নকিয়া)বা ইনটেল তাদের শিল্প গুলো গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শহর কেন্দ্রিক। তাহলে আমাদের দেশে নয় কেন? আমরা আমাদের বিভাগীয় শহর গুলো কেন্দ্রিক কেন শিল্পাঞল, চিকিৎসা, বিনোদন, আইটি ভিলেজ, পড়াশুনা, গড়ে তুলতে পারি না কেন? চাই শুধু পরিকল্পনা এবং অবকাঠামো উন্নয়ন। আজকে আমাদের ডিজিটাল সরকার শুধু নামের জন্য বিমান বন্দর বানাতে চাচ্ছেন, কেন আপনি তো এটা করতে পারেন দেশের বাইরের বিমান বন্দরগুলো চালু করে, রাস্তাগুলো উন্নত করে ঢাকা থেকে শিল্পান্চল সরিয়ে ঢাকা কে সত্যিকার মেগাসিটি বা সিংগাপুর এর আদলে তৈরি করতে। আজ ঢাকা শহর থেকে ছিনতাই বলেন, যানজট বলেন, গরম বলেন, সবকিছু দুর করা সম্ভব। ঢাকা শুধু রাজধানী থাকবে আর রাজধানী কেন্দ্রিক যে সব তৈরি হবে তার কোন মানে নেই? আজকে টপ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করেও ঢাকায় একজন মানুষের পরিবার নিয়ে থাকতে হিমশিম খেতে হয়, ক্রেডিট কার্ড এর উপর নির্ভর করে চলতে হয়। আজকে যে আমাকে ঢাকায় বসে অফিস করতে হবে তার তো কোন মানে নেই, আমার যদি ইন্টারনেট থাকে আর আমি যদি পিসির সামনে বসে থাকি তাহলেও অফিস সম্ভব? একটা উদাহরন দেই- সেলফোন কোম্পানি গুলোর তাদের যে কলসেন্টার এর মাধ্যমে কাস্টমারদের সার্ভিস দিচ্ছে তা ঢাকায় হলে সুবিধা কি আর ঢাকার বাইরে হলে অসুবিধা কি? কারন ঐখানে যে জব করে ও ঢাকার বাইরে থেকে গেছে আর কাস্টমার তাদের কল করছে তারা পিসির সামনে বসে সমাধান দিচ্ছে ইন্টারনেট দিয়ে, আর সেই ইন্টারনেট যদি আমার ঢাকার বাইরে থাকে তাহলে কেন সম্ভব নয়???? এখানে যারা জব করছে তারা ঢাকার বাইরে থাকলে তাদের বেতনের অর্ধেক টাকা সেভ হবে।আর সাধারন মানুষ যারা ৮-১০ হাজার টাকা ইনকাম করে তারা কিভাবে চলবে? চুরি- ছিনতাই বাড়বে না তো কমবে???? আজকে পোশাক শিল্পের মালিকরা বুঝতে পেরে ঢাকায় থাকতে চাচ্ছে না! আজ কে যে গ্যাস কেন্দ্রিক শিল্প ঢাকায় গড়ে
উঠেছে, গ্যাসের জন্য তো আমাকে ঢাকায় থাকার দরকার নাই কারন এই গ্যাস তো আমার ঢাকার বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। তাই আমরা ঢাকাকে উন্নত দেশের আদলে পরিপূর্ন মেগাসিটি করতে চাইলে দরকার এখনি সঠিক পরিকল্পনা, যেখানে বড় ভূমিকা রাখতে পাড়ে আমাদের সরকার, বিরোধীদল এবং সকল রাজনৈতিক দল ও নগর পরিকল্পনাবিদরা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:১৫