উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন (আগস্ট ১৯, ১৯৪৬-) যিনি বিল ক্লিনটন নামে সমধিক পরিচিত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম রাষ্ট্রপতি। তিনি নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ও বর্তমান ওবামা প্রশাসনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের স্বামী।
বিল ক্লিনটন ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৮ সালে মনিকা লিউনিস্কি ইস্যু নিয়ে ভীষণ ঝামেলায় পড়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। ১৯৯৫ সালে মনিকা লিউনস্কির বয়স যখন ২২ বছর তখন ক্লিনটনের সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরি হয়। তাদের প্রেম বিশ্বব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করে।
৩৭ বছর বয়স্ক মনিকা বর্তমানে টেলিভিশনে একটি রিয়েলিটি শো পরিচালনা করছেন। ডেইলি মেইল তার ওই বন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, তিনি ন্যাশনাল ইনকুইরার ম্যাগাজিনকে বলেছিলেন, মনিকাকে এখনও বিল ক্লিনটন ভুলতে পারেননি। দ্বিতীয়বারের মতো তারা তাদের প্রেমের সম্পর্ক শুরু করেছেন। মনিকার ওই বন্ধু আরও বলেন, মনিকা বলেছেন, তার জীবনে অন্য কোনো পুরুষ আসবে না। কারণ ক্লিনটনের মতো কেউ তাকে সুখী করতে পারবেন না।বিল ক্লিনটন ও মনিকা লিউনস্কির প্রেমের সম্পর্ক এখনও ভেঙে যায়নি। তারা এখনও গোপনে তাদের সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছেন। মনিকার এক বন্ধু তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে এমন তথ্য দিয়েছেন। খবর জিনিউজ অনলাইনের।
৯০-এর দশকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সাথে হোয়াইট হাউজের কর্মচারী মনিকা লিউনস্কিকে জড়িয়ে কেলেংকারির কাহিনী জনসমক্ষে প্রকাশ পায়। ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত যৌন কেলেংকারির ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়া, ইতিহাসে সেই ছিল প্রথম। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে ইমপিচমেন্টের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো, তিনি যা করেছেন তা যদিও বেআইনি নয়। কেননা লিউনস্কি প্রাপ্তবয়স্কা। দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মহিলার সম্পর্ক গড়ে উঠতেই পারে।
ক্লিনটনের বিষয়টি যতটা না ছিলো স্ক্যান্ডাল, তার চেয়ে অনেক বেশি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিলো রাজনৈতিক অঙ্গনে । ক্লিনটনের প্রতি মার্কিন জনগণ ছিলো সহানুভূতিশীল । কারণ সে সময় মার্কিন অর্থনীতির অবস্থা ছিল খুবই ভাল এবং বেকারত্বের হার ছিলো নু্যনতম পর্যায়ে।
১৯৯৫ সালের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে চাকরি পায় লুইস এবং ক্লার্ক কলেজ গ্র্যাজুয়েট সুন্দরী মনিকা লুইনসকি। এ সময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম জেফারসন বিল ক্লিনটন সপরিবারে এই রাজকীয় প্রাসাদে বসবাস করতেন। ২২ বছরের এই সুন্দরীর প্রতি নজর পড়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের। কিছু দিন দৃষ্টি বিনিময় এবং অল্পস্বল্প কথোপকথনের পর মনিকার সঙ্গে ক্লিনটনের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মনিকা এবং ক্লিনটন নিয়মিত অভিসারে মিলিত হতেন। তাঁরা রোমান্স এত উপভোগ করতেন যে হোয়াইট হাউসেই ৯ বার গোপন অভিসারে লিপ্ত হন। এর মধ্যে পাঁচ বার এ রকম অভিসারের সময় ক্লিনটনের স্ত্রী হিলারি রডহাম ক্লিনটন হোয়াইট হাউসে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাঁদের এই অভিসারের খবর হিলারি কেন, কাকপক্ষীও টের পায়নি।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকরির সুবাদে মনিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তাঁর সহকর্মী লিন্ডা ট্রিপের। আলাপচারিতার একপর্যায়ে মনিকা তাঁর বিশ্বস্ত বন্ধু ও সহকর্মী লিন্ডাকে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর গোপন অভিসারের কথা জানান। ট্রিপ মনিকাকে পরামর্শ দেন, প্রেসিডেন্ট যে উপহার প্রদান করেন তা যেন সংরক্ষণ করা হয়। এ ছাড়া তিনি আরো অনুরোধ করেন যে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে গোপন অভিসারের সময় যে বস্ত্র পরিধান করা হয় তা যেন পরিষ্কার না করা হয়। এই বস্ত্র পরে 'নীল বস্ত্র' নামে খ্যাতি লাভ করে।
এই সেই নীল রঙের বিখ্যাত পোষাক।
গোপন টেপ
মনিকা ও ক্লিনটনের গোপন রোমান্সের কথা লিন্ডা সাহিত্যিক লুসিয়ানা গোল্ডবার্গকে জানান। গোল্ডবার্গ লিন্ডাকে পরামর্শ দেন যে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মনিকার কথোপকথন যেন গোপনে রেকর্ড করা হয়। বহুবার চেষ্টার পর ট্রিপ ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁদের মধ্যকার প্রেমালাপ রেকর্ড করতে সক্ষম হন। এবার গোল্ডবার্গ ট্রিপকে পীড়াপীড়ি করে যে এই রেকর্ড করা টেপটি স্বাধীন তদন্ত কর্মকর্তা কেনথ স্টারকে প্রদান করতে। কিন্তু তাঁর এই আবেদনে ট্রিপ সাড়া দেননি। গোল্ডবার্গ বহুবার চেষ্টা করে ট্রিপকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে এই বছরের শেষের দিকে নিউজউইকের প্রতিবেদন মাইকেল ইসিকফের কাছে এ ঘটনা ফাঁস করে দেন।
এই স্ক্যান্ডালের খবর প্রথম প্রকাশ্যে আসে ১৭ জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে ড্রাজ রিপোর্ট ওয়েবসাইটে। এই বছরেরই ২১ জানুয়ারি দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে এই স্ক্যান্ডালের খবর প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদন জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। উপায়ন্তর না দেখে ক্লিনটন স্ত্রী হিলারিকে সঙ্গে নিয়ে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এই সংবাদ সম্মেলনে ক্লিনটন বলেন, 'মনিকা নামে যে মহিলার কথা বলা হচ্ছে তাঁর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি কখনো কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কোনো সময় একটিও মিথ্যা কথা বলিনি। এই অভিযোগ মিথ্যা।' অতঃপর মনিকাও দাবি করেন যে ঘটনা মিথ্যা এবং ট্রিপ ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এই অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন। এমতাবস্থায় ট্রিপ তাঁর কাছে সংরক্ষিত মনিকা এবং ক্লিনটনের প্রেমালাপের টেপ তদন্ত কর্মকর্তা কেনথ স্টারকে প্রদান করেন। কেনথ এই টেপের কথোপকথন পরীক্ষা করে বলেন, এ ঘটনা সত্য।
উপায়ন্তর না দেখে মনিকা গ্র্যান্ড জুরির কাছে তাঁর সঙ্গে ক্লিনটনের শারীরিক সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করেন এবং তাঁর কাছে সংরক্ষিত নীল বস্ত্র তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রদান করেন। তদন্ত কর্মকর্তা এই নীল বস্ত্র পরীক্ষা করে বলেন, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ সত্য এবং ক্লিনটনের দাবি মিথ্যা।
এই সেই নীল রঙের বিখ্যাত পোষাক।
অতঃপর বিচারক সুসান ডি ওয়েবার মিথ্যা কথা বলার জন্য প্রেসিডেন্টকে ৯০ হাজার ডলার জরিমানা করেন। অন্যদিকে ইয়েল আইন স্কুলের ছাত্র ক্লিনটনকে সুপ্রিম কোর্ট বার থেকে এক মাসের জন্য এবং আরকানসাস অঙ্গরাজ্যের বার থেকে পাঁচ বছরের জন্য বরখাস্ত করা হয়।
এ ঘটনা সত্য প্রমাণিত হওয়ার পর সিনেট সদস্যরা প্রেসিডেন্টের নৈতিক মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁকে ইমপিচমেন্টের দাবি করেন। ক্লিনটনের ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেক সদস্য ও বিরোধী রিপাবলিকানদের এই দাবি সমর্থন করেন। ফলে সিনেটে এ বিষয়ে ২১ দিন ধরে তুমুল বিতর্ক হয়। অবশেষে ভোটাভুটিতে ক্লিনটন জয়লাভ করেন। অর্থাৎ এ যাত্রায় প্রেসিডেন্ট ইমপিচমেন্টের হাত থেকে রক্ষা পান। হিলারি ক্লিনটন পুরো ঘটনায় স্বামীর পাশে থেকে স্বামীর মনোবল জোগান।
মনিকা লিউনিস্কি ও বিল ক্লিনটন স্ক্যান্ডাল ও স্টিভ জবস--
মনিকা লিউনিস্কির বিষয়ে স্টিভ জবসের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। কয়েকদিন আগে প্রয়াত অ্যাপল কম্পিউটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের আত্মজীবনীতে এই দাবি করা হয়েছে।
ওয়াল্টার আইজ্যাকসনের লিখিত ‘স্টিভ জবস’ শিরোনামের ওই বই আগামী সোমবারে বাজারে আসবে। ফলে, প্রযুক্তি জগতের এই অনন্য দিকপাল সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানা সম্ভব হবে।
বিল ক্লিনটন ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৮ সালে মনিকা লিউনিস্কি ইস্যু নিয়ে ভীষণ ঝামেলায় পড়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। ওই বইয়ে দাবি করা হয়েছে, মনিকা লিউনিস্কির সঙ্গে ক্লিনটনের সম্পর্ক জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর রাতের টেলিফোন কলগুলোতে স্টিভ জবস ক্লিনটনকে মনিকা লিউস্কির বিষয়ে পরামর্শ দিতেন।
জবস কিøনটনকে বলেন, ‘আমি জানি না, তুমি এটা করেছো কিনা, কিন্তু যদি তুমি এটা করে থাকে তাহলে এটা তোমার দেশবাসীকে জানানো উচিৎ।’
আইজ্যাকসন বলেন, অ্যাপলের গুরু ক্লিনটনকে এ কথা বলার টেলিফোনের অপর প্রান্ত ছিল নীরব।
স্টিভ জবস গত ৫ অক্টোবর ক্যান্সারে মারা যান।
মনিকা লিউনিস্কি ও বিল ক্লিনটন স্ক্যান্ডাল নিয়ে বানানো একটি ভিডিও--
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১:৫৪