বছর ঘুরে আবারও চলে এল সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান। আজ প্রথম রোজা। কনকনে শীতের দিনের রমজান মাস দেখেছি আবার তীব্র দাবদাহের কিংবা বর্ষনমুখর দিনের রমজানও আমরা দেখেছি। কিন্তু এমন রমজান মাস কি আমরা কখনো দেখেছি? যখন মসজিদ থেকে নামাজের জন্য আহবান করে বলা হচ্ছে "নামাজের দিকে এসো, কল্যাণের দিকে এসো" কিন্তু পরক্ষণেই মসজিদের মাইক থেকে বলে দেওয়া হচ্ছে ঘরে বসে তারাবি নামাজ আদায় করুন।
অন্যান্য বছরের মত মসজিদের সামনে টুপি, তসবি আতর,মেছাক বিক্রেতা আছে, আছে রাস্তায় পাশে সৌদি খেজুর বিক্রেতাও কিন্তু অনেক কিছুই নেই। মসজিদ আছে কিন্তু মসজিদের দুয়ার আমাদের জন্য বন্ধ, তাই মসজিদে মুসল্লি নেই। বাবা মাকে তারাবি নামাজ পড়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হওয়া টুপিপরা কিশোরদের রাস্তায় ঘোরাঘুরি নেই। সেহেরি খেয়ে ঘুমানোর পর পুনরায় কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে অফিস যাওয়ার তাড়া নেই,
তখন মনে হতো
-ইস আর একটু যদি ঘুমানো যেতো!!
সেই বাস কন্টাকটারেরাই বা কেমন আছে যারা জোরে জোরে চিৎকার করে যাত্রীদের ডাকতো মতিঝিল -- মতিঝিল ---
সেই চেকারটাইবা কেমন আছে? যাকে হেলপার ১০ টাকা দিয়ে অনায়াসেই ম্যানেজ করে ফেলতো। মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে ওয়েবিলে ৫০ জনের জায়গায় ৪০ জন লিখে সাইন করে দিতো।
কোথায় গেল সেই ট্রাফিক জ্যাম, আর সেই মাথা গরম ভদ্রলোকেরা বা কোথায়? গাড়িতে উঠলে ড্রাইভার হেল্পারের সাথে ঝগড়া না করলে যাদের পেটের ভাত হজম হতো না। গাড়ি একটু আস্তে চললেই এরা ড্রাইভারকে বলতো
- এই ব্যাটা তুই ড্রাইভার না হেল্পার? জীবনে গাড়ি চালিয়েছিস? এত যাত্রী কেন উঠালি?
এক কথায় দুই কথায় শুরু হতো ঝগড়া আরও কিছু যাত্রীর সমর্থন পেয়ে ভদ্রলোক দ্বিগুণ উৎসাহে ঝগড়া করতো
কেউ একজন বলতো
-এরা ভয়াবহ অপরাধ করছে,
আবার দুইএকজন এর সাথে রাজনীতির সম্পর্ক তৈরি করে ফেলতো
- রাজনীতিবিদরা কত অন্যায় করছে আর ওতো সামান্য কয়েকজন যাত্রী বেশি উঠিয়েছে।
তখন যাত্রীদের মধ্যেই দুটো গ্রুপ তৈরি হতো, একটা গ্রুপ ড্রাইভার হেল্পারকে সমর্থন করতো তবে ওটা দূর্বল গ্রুপ।
কেউ একজন বলতো
-আমরা রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করি, ঝগড়া থেকে বিরত থাকি,
এই কথায় ঝগড়ার রেশ কিছুটা কমে আসতো।
সেই সচিত্র নামাজ শিক্ষা বিক্রেতাই বা কেমন আছেন? যিনি গাড়িতেই চিত্রের মাধ্যমে নামাজের নিয়ম কানুন বুঝিয়ে দিতেন, মাত্র ১০ টাকা দিয়ে একটা বই কিনলেই সব পাওয়া যেতো, নামাজের নিয়মকানুন, সেই সাথে সুরা, কেরাত,নামাজের নিয়ত আরও কত কি?
পর্দাঘেরা চায়ের দোকানের সেই দোকানীটাই বা কেমন আছেন? এবারতো আর কেউ সেই পর্দার ফাক গলিয়ে ভিতরে ঢুকে বলছে না
- দুটো পরোটা, একটা ডিম আর এককাপ লাল চা দিন।
তবে কেমন করে চলছে ওর সংসার?
কতদিন দেখা হয় না এসব পরিচিত মানুষদের সাথে। যানযটের শহর ঢাকা আজ স্থবির। চিরচেনা সেই ঢাকা প্রাণ ফিরে পাক আবারও । ফিরে আসুক রিকশার টুংটাং শব্দ কিংবা গাড়ির বিকট হর্ন। এই পবিত্র মাসে মহামারি করোনা থেকে মুক্তি পাক বিশ্ববাসী। কর্মচঞ্চল হয়ে উঠুক পৃথিবী।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৪৪