প্রথমেই শুরু করতে চাই সীমান্ত হত্যা নিয়েঃ -
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী দ্বারা ২০০০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১,৫০০ সাধারণ ও বেসামরিক বাংলাদেশি হত্যা করা হয়েছে। ভারত সরকারের বাংলাদেশের সীমান্তে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) দ্বারা হত্যা, নির্যাতন, ও অন্যান্য অনাচারের নতুন অভিযোগ একটি, দ্রুত পরিষ্কার, এবং স্বচ্ছ অপরাধের তদন্ত দায়িত্বগ্রহণ করা উচিত কিন্তু তা তারা করেনি বরং বিএসএফ-এর প্রাক্তন প্রধান রমণ শ্রীবাস্তব বলেন যে, কোনও মানুষের উচিত নয় এই শিকারগ্রস্তদের জন্য দুঃখ বোধ করা। তিনি দাবি করেন যে, যেহেতু এইসব ব্যক্তি প্রায়শই রাতে, অবৈধভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করছিল, তাই তারা মোটেই "নির্দোষ" ছিল না এবং এ কারণেই এরা বৈধ লক্ষ্য ছিল।
হাতীবান্ধা সীমান্তে গুলিতে নিহত বাংলাদেশি তরুণ লালমনিরহাটের দুপুরে সীমান্ত এলাকায় নিজ জমিতে ঘাস কাটতে যান হাসিবুল ইসলাম। এ সময় ভারতের ১৫৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের ফুলবাড়ি ক্যাম্পের টহল দলের বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করে হাসিবুলকে ধরে ভারতের কাছাকাছি অংশে নিয়ে যান। পরে তাঁকে লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি ছোড়ে। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসিবুল মাটিতে পড়ে যান। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা তাঁকে মারধর করে টেনেহিঁচড়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যান।
আমরা জামদানি-ইলিশ পাঠাই, ভারত দেয় ফেলানীর লাশ ।
আপনাদের মনে আছে ফেলানীর কথা যার লাশ পাঁচ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে ছিল।
ফেলানীর মতোই বাংলাদেশের আরেক কিশোরীকে গুলি করে মারল ভারতীয় বিএসএফ। ১ সেপ্টেম্বর রোববার রাতে মায়ের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরায় থাকা ভাইকে দেখতে যাওয়ার সময় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে কিশোরী স্বর্ণা দাস (১৪) নিহত হয়।
নদী আগ্রাসন :-
সিন্ধু, গঙ্গা, ইরাবতি, মেকং, ব্রহ্মপুত্রসহ দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলো তিব্বতের গিরিশৃঙ্গে উৎপত্তি হয়ে নেপাল ভারত হয়ে পাকিস্তান, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, লাওস, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো দেশ অন্য কোনো দেশ থেকে এমন পানি আগ্রাসণের শিকার হয়নি। এমনকি ভারতের অন্যতম আঞ্চলিক বৈরী দেশ পাকিস্তানের সাথেও সিন্ধু নদের পানি নিয়ে ভারতের আগ্রাসনের শিকার হতে হয়নি। বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধুর পানিচুক্তি ৬০ দশকের বেশি সময় ধরে বলবৎ রয়েছে। দেশের ১৭ কোটি মানুষ এবং আগামী প্রজন্ম ভারতের এই আগ্রাসণের চরম খেসারত দিতে চলেছে। অথচ এসব নদীর মূল নিয়ন্ত্রণ চীনের হাতে। উজানে অবস্থান করায় এবং বড় দেশ হওয়ায় ভারত যেমন বাংলাদেশের উপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে একইভাবে চীন ভারতের উপর আধিপত্যবাদী নীতি গ্রহণ করলে এবং নদীর উৎসমূলে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলে ভারতের গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, নর্মদা পানিশূন্য হয়ে পড়তে খুব বেশি সময় লাগবে না। আগেই বলেছি, রাজনৈতিকভাবে যতই মানচিত্রের বিভাজন ঘটুক না কেন, পবর্তমালা, নদ-নদী, বনভূমি এবং সমুদ্রকে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক মানচিত্রের আওতায় সীমাবদ্ধ করে ফেলা প্রায় অসম্ভব। যে কারণে ভারতের ফারাক্কা, তিস্তা বা টিপাইমুখ বাঁধ সমর্থনযোগ্য নয়, ঠিক একই কারণে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের উজানের চীনের বাঁধ নির্মাণ ও পানি প্রত্যাহারের প্রকল্প সমর্থনযোগ্য নয়।
টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে সিলেটে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এবং এর কট্টর সমালোচক ছিলেন ইলিয়াস আলী। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ৪ মাস আগে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর. কমকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় সিলেটে টিপাইমুখ বাঁধ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেন।
নোটঃ- এখানে একটি কথা না বললে না হয়, পালাতক রাক্ষুসি খুনি শেখ হাসিনা বলেছিলেন আওয়ামী লীগ সরকার ভারতকে যা দিয়েছে, দেশটিকে তা সারা জীবন মনে রাখতে হবে ।
বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'র' এর আগ্রাসন:
ভারতের বাংলাদেশ বিরোধী গুপ্তচরবৃত্তি অনেকটা ওপেন সিক্রেট। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ‘র’ এর তৎপরতা সম্পর্কে জানে, কিন্তু ভারতের অনুকূলে থাকে বাংলাদেশের যেসব রাজনৈতিক সরকার, তারা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ‘র’ এর তৎপরতায় বাধা দিতে কার্যত নিরুৎসাহিত করে। বাংলাদেশে ‘র’ এর অশুভ তৎপরতা নিয়ে ব্যাপক কাজ করেছেন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা আবু রুশদ, যিনি পরবর্তীতে সাংবাদিক হিসেবে তার পেশাজীবনে সামরিক বিষয়ে বহু অজানা তথ্য দেশবাসীর সামনে এনে জাতিকে সচেতন ও সতর্ক করেছেন।
আবু রুশদ বাংলাদেশে ভারতের গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান ‘র’ কর্মপরিধি ও অনুপ্রবেশের মাত্রা বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। এসব সাক্ষাৎকারেও উঠে এসেছে যে, ভারতের অপতৎপরতার সামনে বাংলাদেশ কতটা অসহায়। জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা বা এনএসআই-এর সাবেক এক মহাপরিচালক ব্রি: জে: (অব.) আমিনুল হক, বীর উত্তম এর মতে, বাংলাদেশে এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে ‘র’ হাত বাড়ায়নি। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক সেক্টর ছাড়াও সামরিক এমনকি ধর্মীয় পর্যায়েও ‘র’ থাবা বিস্তার করেছে।
ভারত যে বাংলাদেশের গৃহীত আদর্শকে তাদের পক্ষে দেখলেই কেবলমাত্র সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তার দৃষ্টান্ত ১৯৭১ সালেল শেষ দিকে পাক-ভারত যুদ্ধ শুরুর মুহূর্তে ভারতীয় পার্লামেন্টে ইন্দিরা গান্ধীর বক্তব্য। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনারা জেনে খুশি হবেন, বাংলাদেশ সরকার ধর্মনিরপেক্ষমতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র-কে তাদের সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে’। এ চার নীতি ছিল ভারতীয় সংবিধানে অনুসৃত নীতির অনুরূপ। ভারত শুরু থেকে চেয়েছে যে, বাংলাদেশ তাদের পক্ষে থাকুক। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হোক ভারতের পররাষ্ট্রনীতির অনুকূল। এজন্য তাদের প্রয়োজন একটি ‘বন্ধুপ্রতিম’ বাংলাদেশ সরকার এবং অনুরূপ একটি সরকার গঠন বা ভারতের প্রতি নমনীয় মনোভাব গ্রহণে চাপ প্রয়োগের দায়িত্ব হচ্ছে ‘র’-এর।
( নোটঃ- ৫ আগস্ট ২০২৪ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান পর সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানে পাঁচটি নতুন মূলনীতির প্রস্তাব করেছে৷ এগুলো হলো সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র৷)
কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক দল বি এন পির এখনো ভারতের গোলামী করার সখ- তাই সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তনে তাদের সমস্যা।
গোলামী না আজাদি, আজাদি আজাদি’; ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’; ‘দিল্লী না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’; ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ, এই স্লোগান দিয়ে শেষ করলাম -