somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রকৃত সুখের সন্ধান; মায়ের প্রতি ভালবাসা ।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীর আলো আমরা প্রত্যেকেই দেখেছি দু’জন মানব-মানবীর মাধ্যমে স্রষ্টার অপার মহিমায় । আর এই দু’জন মানব-মানবী হলেন আমাদের মা আর বাবা । ভূমিষ্ট হওয়ার পর মাটি স্পর্শ করার আগেই যার কুলে আমাদের বসবাস তিনি আমাদের সেই গর্ভধারীনী “মা” । কষ্ট শব্দটি সবসময় তার কাছে অপরিচিতই মনে হয়েছে ।এই ভূমন্ডলে আসার আগে ১০ মাস ১০ দিন তাকে অসহ্য যন্ত্রনা দিয়েছি আমরা ।কিন্তু ভুমিষ্ট হওয়ার পর আমাদের মুখ দেখে এই মমতাময়ীর ভূবনভুলানো হাসি তার সব কষ্ট মুছে দেয় । নিজের জীবনের চেয়েও প্রিয় হয়ে যায় তার সন্তান । আর এই সন্তানের মাঝেই সে খোঁজে পায় পৃথিবীর সব সুখ ।ছোট ছোট স্বপ্ন দেখতে থাকে নিজের ছেলে বা মেয়েটিকে নিয়ে ।রাত-দিন, সময়, অসময় কিছুই বুঝে না অবুঝ সন্তান, নিজের প্রয়োজন হলেই কান্না আর মাকে জ্বালাতন ।মায়ের মুখে কি তবুও একটু বিরক্তির চিহ্ন পাওয়া যায় ? নিশ্চই না, কারন এই সন্তানই যে তার কলিজার টুকরো ।শত কষ্ট হাসি মুখে সহ্য করে তিলে তিলে এই অবুঝ শিশুটিকে বড় করে তোলে এই মা ।কত শীতের রাত যে ভিজা বিচানায় নিজে ঘুমুন আর কত রাত যে নিদ্রহীন ভাবে কাটিয়ে দেন, তা শুধু এই মহামানবীই বলতে পারবে ।

পৃথিবীর বুকে এই একটি মানুষই আছে, যার ভালবাসা কখনো খন্ডন করা যায় না ।জীবনে চলার পথে প্রত্যেকটি মুহূর্তে একটি সন্তানের সাথী হয় এই মায়ের নি:স্বার্থ ভালবাসা আর অন্তরের গভীর থেকে আসা দোয়া ।স্বার্থপর এই পৃথিবীতে সময়ের সাথে সাথে সবাই স্বার্থপর হয়ে যায় ।কিন্তু মায়ের ভালবাসা এতই নিখুত যে, এখানে স্বার্থপরতার একটি ধূলি কনাও পাওয়া যায় না ।অকৃত্রিম এই ভালবাসার বন্ধনে সারা জীবন নিজের সন্তানকে আগলে রাখতে চান “মা” । সন্তানের বিপদের সময় কত অশ্রু যে মায়ের চোখ থেকে অঝরে পড়তে থাকে, তা একমাত্র বিশ্ববিধাতাই জানেন । সন্তানের সুখের জন্য কি না করে এই মা ? জীবনের শেষ প্রহর গুলোতেও চেষ্টা করে যায় সন্তানকে সুখী রাখতে । প্রায় প্রত্যেকটি মায়ের জীবনের শেষ ইচ্ছা হয় “ মৃত্যুর আগে যেন আমার ছেলে মেয়েদের সুখি দেখে যেত পারি ।

আর আমরা এই মমতাময়ী মায়ের সন্তানরা ! আমাদের হৃদয়ে কতটুকু ভালবাসা লালিত হচ্ছে মায়ের জন্য ? পড়া-লেখা, ব্যস্ততা আর কর্মজীবন এই সবকিছুর মাঝেই কি হারিয়ে যাবে মায়ের জন্য আমাদের ভালবাসা ? যান্ত্রিক জীবনের যাঁতাকলে পিষ্ট না হয়ে, আমরা কি পারি না এই নি:স্বার্থ মানুষটিকে কিছু সময় দিতে ? মায়ের মুখের এক ফুটা হাসি আর হৃদয় নিংড়ানো প্রার্থনা বদলে দিতে পারে আমাদের হতাশাচ্ছন্ন, ক্লান্তিময় জীবনটিকে ।

হযরত রাসুল (স:) এক হাদীসে বলেছেন,

“ যে ব্যক্তি মা অথবা বাবার চেহারার দিকে একবার মায়ার নজরে, মহব্বতের নজরে তাকায় । তার আমল নামায় একটি কবুল হজ্বের সওয়াব দেওয়া হবে।”

এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন হে আল্লাহর রাসুল, কেউ যদি এক হাজার বার এই ভাবে তাকায়? রাসুল (স:) উত্তর দিলেন, তার আমল নামায় এক হাজার কবুল হজ্বের সওয়াব দেওয়া হবে । (সুবাহানাল্লাহ )

তাহলে এবার আসুন আমরা চেষ্টা করি কিভাবে শত ব্যস্ততার মাঝেও মায়ের মুখে হাসি ফুটানো যায় ।

Ž আমরা যারা বাড়ীর বাইরে থাকি, যখনই মায়ের সাথে কথা হয় (প্রতিদিন, দুই-তিন দিন পর পর ) কথা বলার শেষে অন্তত একবার বলি : মা, আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি / মা, তোমাকে অনেক মিস করি / মা তোমাকে খুব বেশী মনে পড়ে ।

Ž বাড়ীতে যাওয়ার সময় মায়ের পছন্দের ছোট্র একটি উপহার নিয়ে যেতে পারি।

Ž বাহিরে ঘুড়তে আসলে মাঝে মাঝে মায়ের পছন্দের একটি খাবার নিয়ে যেত পারি ।

Ž দূরে কোথাও গেলে মাকে শুধু একটা প্রশ্ন করা যায়, মা, আসার সময় তোমার জন্য কি আনব ? উত্তর আসবে কিছুই না । তুই শুধু ঠিকমত ফিরে আসিস।

Ž মা কোথাও যেতে চাইলে আগ্রহের সাথে আমরা বলতে পারি, মা, চল তোমাকে নিয়ে যাই । প্রত্যেক মা ই গর্ববোধ করে নিজের সন্তানকে নিয়ে চলা-ফেরা করতে ।

Ž অনেক সময় মা কোন কাজের কথা বলতে পারে যা আপনার জন্য কষ্টকর ।তাই বলে সাথে সাথে “পারব না” বলে না করা উচিত নয় । চেষ্টা করুন কাজটি করার । আর যদি একান্তই আপনার জন্য কষ্টসাধ্য হয় তাহলে মা কে পরে বুঝিয়ে বলুন ।

Ž মা কখনো বকুনি দিলে, অনেকই রাগ বা অভিমান করেন । এটা একেবারেই ভোকামী । আরে আপনাকে বকা দিয়েছে তো আপনারই মা , অন্য কেউতো না । আপনার রাগ ভাঙ্গার আগ পর্যন্ত তিনি অনেক কষ্টে পান ।কিন্তু একবার ভেবে দেখেছেন এই নি:স্বার্থ ব্যক্তিটি সবসময় আপনারই মঙ্গল কামনা করেন ।

Ž অনেক সময় বিভিন্ন বিষয়ে মায়ের সাথে আমাদের মতের মিল না ও হতে পারে ।তাই বলে রাগ দেখিয়ে কথা বলা বা এই ভাবা “ এই মহিলা কিছুই বুঝে না ” একেবারেই ঠিক নয় । বরং এই ভাবা উচিত যে, আপনার আমার আগেই তিনি পৃথিবীতে এসেছেন আর তিনিই আমাদের জন্মদাত্রী । যদি মনে হয় আমাদের মতামতটাই ঠিক তাহলে পরে সময় নিয়ে ব্যখ্যা সহ মাকে বুঝানো উচিত । অবশ্যই তিনি বুঝবেন, আর রাগ দেখাতে গেলে শুধু শুধু তাকে কষ্ট দেওয়া হবে ।

Ž আমরা অনেক সময় আবেগের বশীভূত হয়ে সিদ্বান্ত নিতে চাই। কিন্ত মা-বাবা সিদ্বান্ত নেন তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে । তাই যেকোন সিদ্বান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের মতামতকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় রাখা উচিত । এতে তারা খুশী হবেন ।

Ž মা যদি অসুস্থ হয়, তার পাশে বসে একটু বেশী সময় দিলে তা মায়ের মানষিক সুস্থতার ক্ষেত্রে ঔষদের চেয়েও বেশী কাজ করবে ।

Ž যখন যেভাবে পারা যায় আমরা মায়ের সেবা করতে পারি ।

এই কথাতো সবারই জানা:

“মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত”

এই ছোট ছোট কাজগুলো নিয়মিত করতে পারলে মায়ের মুখে যে ভূবনভুলানো তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠবে তা অবশ্যই আমাদের জীবনকে সুখে পরিপূর্ণ করতে কূণ্ঠাবোধ করবে না ।আর মায়ের হৃদয়ের গভীর থেকে চলে আসা দোয়া আমাদের জীবনকে সফলতা ও সুখে একাকার করে দিতে পারে ।

অল্লাহ আমাদের সবাইকে মায়ের সেবা করার তওফিক দিক (আমিন)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দরখাস্ত - বরাবর: জনাব, কাল্পনিক ভালোবাসা / জাদিদ সাহেব

লিখেছেন ঠাকুরমাহমুদ, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৫৩



বরাবর:
জনাব, কাল্পনিক ভালোবাসা / জাদিদ সাহেব
চিফ এক্সিকিউটিভ এডমিন
সামহোয়্যারইন ব্লগ

তারিখ: ১১-১১-২০২৪ইং

বিষয়: ব্লগার সোনাগাজী নিকের ব্লগিং ব্যানমুক্ত করার জন্য অনুরোধ।


জনাব, কাল্পনিক ভালোবাসা / জাদিদ সাহেব,
আপনাকে ও সামহোয়্যারইন ব্লগের সকল ব্লগারদের প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সময়ের স্রোতে ক্লান্ত এক পথিক তবু আশায় থাকি …

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:০৫


হালকা হাওয়ায় ভেসে আসে গত সময়ের এলবাম
মাঝে মাঝে থেমে যায়, আবার চলে তা অবিরাম
সময় তো এক নদীর মতো, বহমান অবিরত,
জল-কণা আর স্মৃতি বয়ে নেয় যত তার গত।

একটু... ...বাকিটুকু পড়ুন

মত প্রকাশঃ ইতিহাস কি বিজয়ীরাই লেখে?

লিখেছেন জাদিদ, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩২

"বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস রচনার সমস্যা" -বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আলী রীয়াজ একবার বলেছিলেন, ‘ইতিহাসের সঙ্গে ক্ষমতার একটা সম্পর্ক আছে। সে ক্ষমতায় যারা বিজয়ী হয়, তারাই ইতিহাস রচনা করে। পরাজিতরা ইতিহাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধু নাম আর কেউ মুছতে পারবেনা।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০


২০১৮ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপনণের পরপরই ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মহাকাশে আজ উড়ল বাংলাদেশের পতাকা। আজ থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

“বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো উচিত হয়নি “এই কথা রিজভী কোন মুখে বলে ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫১



অবাক হয়ে রিজভীর কথা শুনছিলাম উনি কি নিজেকে মহান প্রমান করার জন্য এই কথা বললেন নাকি উনি বলদ প্রকৃতির মানুষ সেটাই ভাবতেছি। উনি নিশ্চই জানেন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×