somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই বই এবং বই

২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বরেণ্য ফরাসি সাহিত্যিক আলেকজান্ডার দ্যুমা রাশিয়ার টিফলিস শহরে বেড়াতে এসেছেন। হঠাৎ করেই তাঁর ইচ্ছা হলো শহরের সবচেয়ে বড় বইয়ের দোকানে যাবেন। সফরের মাঝপথে সময় করে তিনি ইচ্ছাপূরণের উদ্দেশ্যে বের হলেন। খবর পেয়ে দোকানের মালিক লেখককে খুশি করতে তাড়াহুড়ো করে সব দোকান দ্যুমার বই দিয়ে সাজালেন। দোকানে ঢুকে সব শেলফে নিজের বই দেখে দ্যুমা ভীষণ অবাক হয়ে বললেন, আরে! এ তো দেখি সবই আমার লেখা বই। অন্য লেখকের বই কোথায়?
এ কথা শুনে দোকানি বিগলিত হাসি দিয়ে বললেন, ওহ! অন্যদের সব বই বিক্রি হয়ে গেছে।
এই বঙ্গে বই বিক্রি সহজ কাজ নয়। প্রমথ চৌধুরী যতই বলুন, বই কিনে কেউ কোনো দিন দেউলিয়া হয় না_সে কথা মনে রাখছে কে? উল্টো বই লিখে বা প্রকাশ করে দেউলিয়া হয়েছেন এমন উদাহরণ অনেক আছে। এটুকু পড়ে আপনি হয়তো ভ্রু নাচিয়ে, চোখ পাকিয়ে বলবেন, তাহলে আমরা কি পড়ি না?
অবশ্যই পড়ি। তবে পত্রিকায় রাজনীতির খবর, মূল্য হ্রাসের খবর, রেসিপি, রাশি ফল এবং ব্যাংকের চেক বই যতটা মনোযোগ দিয়ে পড়ি, অন্য কিছু ততটা নয়। পাঠ্য বই তো নয়ই। আমরা শেয়ার মার্কেটে গিয়ে ধপাস করে মুখ থুবড়ে পড়তে পারি, পকেটের পয়সা খরচ করে একই সময় একাধিক প্রেমে পড়তে পারি, এমনকি চায়ের টেবিলে অবলীলায় জাতির ভবিষ্যৎও পড়তে পারি। কিন্তু বই পড়াটা আমাদের সঙ্গে ঠিক যায় না! ছাত্রজীবনে পড়তে হয় তাই পড়া। মেনে নিতে হয় তাই বাধ্য হয়ে মেনে নেওয়া। মনে নেওয়ার মানুষ হাতেগোনা যায়।
পিকলুর কথাই ধরুন। পিচ্চির বয়স পাঁচ। পড়ে কেজি ওয়ানে। পিকলুর পড়াশোনা নিয়ে মা যতটা চিন্তিত, সে ঠিক ততটাই নিশ্চিন্ত। 'পড়া' শব্দটাই তার দুই চোখের বিষ। একবার গ্রাম থেকে মেজকাকা বেড়াতে এসেছেন। পিকলুকে আদর করে তিনি জানতে চাইলেন, বাবা, তুমি কী পড়?
পড়ার কথা শুনেই পিকলুর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সারা দিন শুধু পড়া, পড়া আর পড়া। কাহাতক সহ্য হয়! সে ঘাড় উল্টো দিকে ঘুড়িয়ে বলল, প্যান্ট পরি।
: না, বলছি কোথায় পড়?
: নাভির ওপরে।
প্রতিবছর বাংলা একাডেমীতে বইমেলায় যে লোকসমাগম হয়, তার মাত্র আট থেকে দশ ভাগ মানুষ বই কেনে। বাকি সবাই আসেন বেড়াতে, বই দেখতে। মাছবাজারে গিয়ে মাছ টিপে দেখার মতো তারা বই দেখেন। বিজ্ঞের ভাব নিয়ে সযত্নে পাতা ওল্টান। তারপর একসময় 'নাহ! প্রচ্ছদ ভালো হয় নাই' বলে অন্য বই হাতে তুলে নেন। ভাবটা এমন, বই তোমার নাম কী? প্রচ্ছদে পরিচয়।
কথাটা সেদিন এক বন্ধুকে বলতেই সে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, ঠিকই তো। যে তরকারি দেখতে ভালো না, সে তরকারি খাইতেও স্বাদ লাগে না।
বন্ধুর কথা শুনে আমি থ হয়ে গেলাম! আমার থ ভাব কাটাতে বন্ধু পুনরায় বলতে শুরু করল, শোন বাংলা একাডেমীর গেটের বাঁ পাশে শিঙ্গাড়া-পুরির দোকান। মনে পড়ে? সেখান থেকে গরম গরম খেয়ে তবেই আমরা মেলায় ঢুকতাম। ঢুকেই সোজা বইয়ের স্টল। বই নেড়েচেড়ে দেখে তারপর একাডেমীর পুকুর পাড়ে সিঁড়িতে গিয়ে বসতাম। সেখানেই জমে উঠত আমাদের ম্যারাথন আড্ডা।
তাহলে বই নেড়েচেড়ে দেখার মানে কী? আমি প্রশ্ন করতেই বন্ধু পিঠে দুই চাপড় মেরে বলল, ধুর বোকা! আমরা কী কেনার জন্য বই দেখতাম নাকি! আমরা বইয়ের পাতা উল্টাতাম হাত মোছার জন্য। আরে বই তো শুধু পড়ার জিনিস নয়। বই দিয়ে কত কাজ হয় তুই জানিস?
মনে পড়ে গেল কবি জসীমউদ্দীনের কথা। তিনি বইকে রথের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, বইয়ের রথে চেপে আপনি অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ অনায়াসে যেকোনো জায়গায় যেতে পারেন। যদিও আমি বহুবার সে চেষ্টা করে দেখেছি, কাজ হয়নি। কারণ ছেলেবেলা থেকেই বই পড়তে নিলেই আমার ঘুম পায়। আমার জীবনে এর পরই ঘটে বইয়ের সর্বোত্তম ব্যবহার। মাথার নিচে বই রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ি। এ ক্ষেত্রে সিডনি স্মিথের কথাও স্মরণযোগ্য। তিনি বলেছেন, বই হচ্ছে ঘরের সবচেয়ে সুন্দর আসবাব। সমঝদার বাঙালি বিষয়টি বুঝতে পেরেছে বলেই আমার মনে হয়। কিন্তু 'বই দিয়ে কত কাজ হয়' বলে বন্ধু ঠিক কী বোঝাতে চাইছে বুঝতে পারলাম না। আমাকে বোঝাতে গিয়ে বন্ধু যে গল্পটি বলল তা এ রকম :
ছোট্ট মিনুকে পণ্ডিত মশাই জিজ্ঞেস করলেন, রামায়ণ পড়েছ?
: হুম।
: বলো তো রামায়ণে কী আছে?
: বেলপাতা রাখা আছে।
: না। আর কী আছে?
: আর, আর, আর। মনে পড়েছে! বড়দির বয়ফ্রেন্ডের একটা ছবি আছে।
প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য বই সত্যি এক কাজের জিনিস। এ জন্যই কি ভিক্টর হুগো বইকে বিশ্বাসের অঙ্গ বলেছেন? তবে যে যা-ই বলুন, মনীষী তলস্তয় বই সম্পর্কে যা বলেছেন, তার ওপর আর কথা হয় না। তিনি বলেছেন, জীবনে মাত্র তিনটি জিনিসের প্রয়োজন। বই, বই এবং বই। কথাটি কার্ল মার্ক্স যতটা বুঝেছিলেন, তাঁর স্ত্রী ততটা বুঝতে পারেননি বলেই মনে হয়। ঘটনা খুলেই বলি, কার্ল মার্ক্সের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীর সাক্ষাৎকার নিতে এলেন এক সাংবাদিক। এ প্রশ্ন-সে প্রশ্নের পর মার্ক্সের দাম্পত্য জীবন নিয়েও প্রশ্ন করল সে। এমনই এক প্রশ্নের জবাবে স্ত্রী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, আমরা যথেষ্ট সুখী ছিলাম।
উত্তর দেওয়ার ধরন দেখেই চতুর সাংবাদিক চটপট জানতে চাইলেন, আপনারা সত্যিই কি সুখী ছিলেন?
এবার ভদ্রমহিলা আরো বড় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, আমরা সত্যিই সুখী ছিলাম। কিন্তু কার্ল যদি ক্যাপিটাল লেখায় সময় না দিয়ে ক্যাপিটাল সংগ্রহেও কিছু সময় দিত, তাহলে আরো ভালো হতো।
বইয়ের সঙ্গে সরস্বতীর সম্পর্ক আছে বলেই হয়তো লক্ষ্মীর সঙ্গে তাঁর এত দূরত্ব। খুব কম বই-ই পারে এই দূরত্ব ঘুচিয়ে দিতে। কারণ মানুষের বেলায় যেমন বইয়ের বেলায়ও তেমনি, অল্পসংখ্যকই মহান ভূমিকা পালন করে। বাকি সব হারিয়ে যায় আগমনের মধ্যে।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×