মন চাইলে মন পাবে
জোনাকীর আজ সন্ধ্যায় এই বাগানেই অপেড়্গা করার কথা। তাদের প্রেম বছর পেরিয়েছে তাও অনেকদিন। একে মেগা প্রেম বলা যায়। কিন্তু জোনাকীটা যেন কেমন! এক্কেবারে রস-কষহীন! ভিড়্গুকের মত হাত পাতলেও ডাকাতের মত তেড়ে আসে। বলে বিয়ের আগে নাকি ওসব ভালো নয়। আজ জোনাকীর কোনো কথাই শুনবে না সে। মশা রোমান্টিক মুডে জোনাকীর খোঁজে বাগানের চারপাশে উড়তে দিতে থাকে। হঠাত্ গন্ধরাজের ডাল-পাতার ফাঁক দিয়ে একটু আলো জ্বলে উঠতে দেখেই প্রেমিক মশা তৃষ্ণার্ত মন নিয়ে ছুটে যায় সেদিকে। তার ডানায় তখন হেলিকপ্টারের বেগ। দু’চোখ বুজে পিয়াসী ঠোঁট ডাকাতের মত বাড়িয়ে দেয় সে আলোর সম্মুখে। কিন্তু একি! চিত্কার দিয়ে মুহুর্তেই মশা উল্টে পড়ে যায় বাগানের শুকনো ঘাসের উপর। চিত্কার শুনে ছুটে আসে জোনাকী।
: ওগো তোমার এ অবস্থা কী করে হলো?
: তোমাকে চুমু খেতে গিয়ে সিগারেটের আগুনে... ইইই...
ব্যাস! তারপর যা হওয়ার তাই হলো। মশার শত কান্নাতেও মন গলল না জোনাকীর। তার একটাই কথা, হোয়েন ক্যারেক্টার ইজ লস্ট, এভরিথিং ইজ লস্ট। সুতরাং দুজনের দুটি পথ বেঁকে গেল দুদিকে। দুদিন বাদেই খবর এলো জোনাকীর বিয়ে। পাত্র ঝিঁঝিঁ পোকা। এরপর থেকেই মশার পাগলামো শুরম্ন। দিন কী রাতে সাঁঝ-প্রভাতে গুনগুনিয়ে গান গায় আর সবাইকে চুমু খেয়ে বেড়ায়। এমনকি মানুষের চড়ে, গরম্নর লেজের বাড়িতে বেলাজের মত মরার আগেও তার গান চলতেই থাকে, হয় যদি বদনাম হোক আরো, আমি তো এখন আর নই কারো...
কবি এবং বণিক
এদিকে মশার মজনুগিরি দেখে প্রাণীকুলে আলোচনা, সমালোচনার ঝড় উঠল। একদল বলে, ঠিক হয়েছে, উচিত্ সাজা! কাম এবং প্রেম একসাথে হতে পারে না। অন্যদল বলে, হতেই পারে। কারণ প্রেম হলো যৌবনের হামজ্বর। তাছাড়া জোনাকীরা ভালোবাসে কবিকে আর বিয়ে করে বণিককে। এমন উদাহরণ ভুরিভুরি আছে।
ডাক্তার এবং কবি দুই বন্ধু। ঘটনাক্রমে দুই বন্ধু একই মেয়ের প্রেমে পড়ল। অর্থাত্ এক ফুল দুই মালি কেস! একদিন ডাক্তার ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে কবি বন্ধুকে ধমক দিয়ে বলল, তোর যন্¿ণায় ও যখন পাগল হয়ে যাবে তখন আমিই ওকে চিকিত্সা করে ভালো করব। সুতরাং ওর আমাকেই বেশী প্রয়োজন। শুনে কবি বন্ধু মুচকী হসে বলল, তুই চিকিত্সা করলে ও ভালো হবে তার গ্যারান্টি কী? তোর ভুল চিকিত্সায় ওর তো মৃত্যুও হতে পারে। আর এমন ঘটলে তখন আমি আমার কবিতা দিয়ে ওকে অমর করে রাখব। সুতরাং ওর প্রতি আমার দাবিই বেশি।
দুই বন্ধুর ঝগড়া যখন মুখ থেকে হাতে গড়ানোর উপক্রম তখন ডাক্তার বলল, চল ওকেই তাহলে জিজ্ঞেস করি। কবি বলল, চল। দুই বন্ধু গিয়ে প্রেমিকাকে পাকড়াও করতেই প্রেমিকা স্পষ্ট জানিয়ে দিল, মরে গিয়ে অমর হওয়ার তার কোনো খায়েশ নেই। এরপর থেকে কবির কোনো অমাবস্যা প–র্ণিমা নেই। ভর দুপুরেও সে এখন লিখে ফেলতে পারে বিরহের আসত্ম একটি কবিতা।
ছ্যাঁকা খেয়ে একা
কিন্তু এটাও তো ঠিক পুরম্নষের জীবনে প্রেম সে তো অনুকাহিনী মাত্র। পুরম্নষের পরান পোড়ে কয়দিন? আর নারীর জীবনে তা সমগ্র ইতিহাস। একথা শুনে হৈ হৈ করে ওঠে একদল। বলে, ইতিহাস তো আমরাও কম দেখলাম না। প্রজননকালে ময়–রীর ডাকে হৃদয়ে ভালবাসা নিয়ে ছুটে আসে একাধিক ময়–র। শুরম্ন হয় লড়াই। ময়–রী বেছে নেয় বিজয়ী ময়–রকে। পশু হাসপাতালের বেডে পরাজিত ময়–রের খোঁজ তখন আর কে রাখে? চড়ুইয়ের প্রেমকে মডেল বিবেচনা করে ‘টোনাটুনির প্রেম’ বলা হয়। অথচ পুরম্নষ চড়ুই মারা গেলে স¿ী চড়ুই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নতুন সঙ্গী বেছে নেয়। ইতিহাসের এখানেই শেষ নয়। রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড প্রেমের জন্য সিংহাসন ছেড়েছিল। আর বেচারা দেবদাস তো এই প্যাঁচে পড়ে দারম্ন পর্যন্ত্ম ছাড়তে পারল না।
শুনে প্রতিপড়্গ বলে, আমরা কিন্তু একজনের কথা জানি, প্রেমের জন্যে জীবন বাঁচাতে যাকে রাতের আঁঁধারে প্রিয় শহর ছাড়তে হয়েছিল। কারণ সে যে মহিলাকে ভালবাসত তার স্বামী বিষয়টি জেনে গিয়েছিল। মহিলার স্বামী তখন বন্দুক নিয়ে তাকে খুঁজতে বেরিয়েছিল। এজন্যই লোকে বলে, ভাগ্যবান প্রেমিক তারাই যারা অবিবাহিত।
তর্ক-বিতর্ক চলতেই থাকে। কিন্তু ছ্যাঁকা খেয়ে যে একা হয়ে গেল তার কথা কেউ ভাবে না। অবশ্য অনেকে বলে, প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে দ্রম্নত বিয়ে করে ফেলাই নাকি বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ প্রেমের জখম প্রেমেই সারে।