রাত ১টা বেজে ৩৫ মিনিট...বৃহস্পতিবার...২৩শে এপ্রিল ২০০৯
গতকাল দিনের শুরুটা পরিকল্পনা মত হলনা। ইচ্ছে ছিল ৮টার মধ্যে উঠে ব্যাংকে গিয়ে ২৯তম বিসিএস এর জন্য পে-অর্ডার করে হাসপাতালে যাব; স্যার এর সাথে দেখা করে ছুটির কথা বলবো। কিন্তু ঘুম থেকে উঠলাম দেরী করে...৯টার দিকে উঠেছি হয়তো।উঠে ঠিক করতে পারছিলাম না কী করবো...একবার মনে হলো ব্যাংকে গিয়ে কাজ শেষ করে হাসপাতালে যাই।পরে সেই পরিকল্পনা বাদ দিয়ে ২৯তম বিসিএস এর ফরম ফিলাপ করলাম। এইবার জেনারেল ক্যাডারেও অ্যাপ্লাই করলাম...ফরেন ক্যাডার ও পুলিশ...। এরপর ব্যাংকে গিয়ে দেখি বিশাল লাইন। অশেষ ধৈর্য প্রদর্শন করে টাকা জমা দিলাম পরীক্ষার জন্য।কিন্তু এরমাঝে আবিষ্কার করলাম ফরমের টাকার রশিদটা আনিনি,যেটা ফটোকপি করে ফরমের সাথে জমা দিতে হবে।অগ্যতা আবারো বাসায় গেলাম কষ্টকরে দুপুরের রোদের মাঝে।একদিক থেকে ভালই হলো, কারণ আমি অল্প টাকা নিয়ে বের হয়েছিলাম বাসা থেকে।বাসায় আসার পথে ফোনে দেখি একটা মিসকল,ইন্টার্নী আল-আমিনের।তাও সকাল ১০টা ১৫ মি. এর দিকে। তখন বাজে ১২টা। কল ব্যাক করলাম।৩বার কল দেয়ার পর ধরলো।বললাম কী ব্যাপার?বললো তেমন কিছুনা,এমনিতেই খোঁজ নেয়ার জন্য ফোন দিয়েছিলাম।এরপর যা জিজ্ঞেস করলো তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না...জিজ্ঞেস করলো আমার সে কেমন আছে...আমি কিছুটা অপ্রস্তুত ভাবে বললাম"কেন তুমি জান না?তোমার তো জানা উচিত।আমাদের ব্যাপারটা আর নেই" সে জিজ্ঞেস করলো 'কেন?' তার উত্তরও দিলাম।আর কথা বাড়ালো না,আমিও বাড়ালাম না। তবে পরে মনে হলো সে পুরো ব্যাপারটা জানে,তবুও আমাকে খোঁচা দেওয়ার জন্য আজ ফোন দিয়েছিল। ভাবলাম,ওকে এইভাবে না বলে অন্যভাবেও কথাটা ঘুরিয়ে দেয়া যেত...বলতে পারতাম ' তার খবর তো তোমার কাছেই ভাল থাকার কথা,কারণ ২ জন তো একসাথেই ইন্টার্ণী করছো'। কিন্তু এই কথাটা তখন মাথায় আসেনি। যাইহোক ,এরপর ভাবলাম তাকে ব্যাপারটা জানানো দরকার। কিন্তু তার মোবাইল গত ২৩ দিন ধরেই অফ। মাঝে মাঝে অন করে অবশ্য। তাই ভাবলাম একটা এসএমএস লিখি।তখন মোবাইলে আর টাকা ছিলোনা,পকেটেও না।এর মাঝেই বাসায় আসলাম।বাসায় এসেই টাকার রশিদ আর টাকা নিয়ে বের হয়ে গেলাম।ফার্মগেট যাবার পথে মোবাইলে টাকা ভরে তাকে এসএমএসটা করলাম।জানি এখনি ডেলিভারী হবেনা,তবুও চেক করলাম,এবং হলওনা...
গন্তব্য এবার আগারগাঁও; পাবলিক সার্ভিস কমিশনের নতুন অফিস সেখানে। মাঝে ফার্মগেট থেকে ফটোকপির কাজ শেষ করলাম।আর সব অ্যাটাস্টেশনের কাজ শেষ করলাম আগারগাঁও নেমে একটি চায়ের দোকানে বসে।পরে পিএসসির অফিসে গিয়ে ফরম জমা দিয়ে প্রবেশপত্র নিলাম।এরমাঝে জুবায়ের (আমার মেডিক্যাল এর আমার থেকে ৬ বৎসর জুনিয়র) ৩ বার ফোন দিল। আমি জানি সে কেন ফোন দিচ্ছে। আমি ধরিনি। পরে নিজেই ফোন ব্যাক করলাম। ফোন ধরলো জেনি (জুবায়েরের গার্লফ্রেন্ড/ওয়াফ...আমি শিয়র না)। আসলে জেনিই আমাকে কিছুদিন ধরে ফোন দিচ্ছিল; তার মেডিক্যাল সার্টিফিকেট লাগবে। চেষ্টা করেছিলাম অ্যাভয়েড করতে,কিন্তু পারিনি । আজ তাই ঠিক করলাম আর ঘুরাবো না ওদের। আবার ফোন করে জানলাম ওরা নিউমার্কেটে আছে। আমি বললাম তোমরা নিলক্ষেত থেকে একটা প্রেশক্রিপশনের পেজ প্রিন্ট করে আমাকে জানাও। আমি ফার্মগেটে অপেক্ষা করছি। এরপর আমি ফার্মগেট এসে ভাবলাম কী করা যায়?বাসায় যাব ,নাকি ওয়েট করবো?ভাবলাম কতক্ষনই বা ওদের লাগবে,খুব বেশী হলে ১ ঘন্টা...বাসায় যাবার থেকে ফার্মগেটেই ওয়েট করাটা ঠিক হবে মনে হলো। এইসময়টা কী করা যায় ভাবতেই মনে পরলো সাইবার ক্যাফের কথা। অনেক দিন যাওয়া হয়না,বাসায় নেটের লাইন নেবার পর হতে।তাছাড়া সেখানে এসির বাতাসে বসা যাবে। পরিচিত ক্যাফেতেই গেলাম। কিন্তু ক্যাফেতে বসে কোন মজা পাচ্ছিলাম না। কী করবো ...কোন কাজই ছিল না। পরে বিডিচ্যাটে ঢুকে একজনের সাথে অনেকক্ষন আজাইরা পেচাল পারলাম। শেষের দিকে আমি নিজেই বিরক্ত হয়ে রূঢ় হয়ে গেলাম কিছুটা। এরমাঝেই জুবায়ের ফোন দিয়ে জানাল ওদের কাজ শেষ।তখন বাজে ২টা ২০মি এর মত। ওদের ফার্মগেট আসতে বলে আমি আরো ২০ মিনিট ক্যাফেতে বসলাম।এরপর নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে ওদের ফোন দিয়ে শুনি ওরা তখনও শাহাবাগে।একটু রাগ হলো ওদের ওপর।বেশ ভালই ক্ষিদে পেয়েছিল...সকালেও নাস্তা করিনি।তাই মনে হলো এর থেকে বাসায় গেলেই ভাল হত।এইসময় আবার কী করবো ভেবে পেলাম না। একবার চিন্তা করলাম রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে নেই,গেলামও,কিন্তু ইচ্ছে হলোনা।আবার বের হয়ে চিন্তা করলাম একটা মাউস কেনা দরকার।কিন্তু দোকানে যেয়ে মাউস পছন্দ হলো না,দামেও পুসলো না। সেখান থেকে বের হয়ে আবার আর একটা ক্যাফেতে গেলাম।কিন্তু বসার আগেই ওদের ফোন...তারা পৌছেছে ফার্মগেট।আমিও বের হয়ে তাদের কাছে গেলাম।জেনিকে আমি এর আগে কখনো দেখিনি...আজ দেখলাম ।ওদের নিয়ে বসলাম রেস্টুরেন্টে। সেখানে জেনির মেডিক্যাল সার্টিফিকেট লিখে দিলাম।এরপর জেনির জোরাজুরিতে আমাকে কাবাব আর নান খেতে হলো।তখন প্রায় সাড়ে ৪টা বাজে। রেস্টুরেন্টের বিল আমি দিতে চাইলাম অনেককরে। কিন্তু আমার টাকা তারা ক্যাশ থেকে ফিরিয়ে নিল।এরপর সেখান থেকে বের হয়ে ওদের বিদায় দিয়ে আমি বাসায় আসলাম। যথারীতি ইলেক্ট্রিসিটি নেই।এসে গোসল করে বের হয়ে আসার কিছুক্ষনের মাঝেই অবশ্য ইলেক্ট্রিসিটি চলে আসলো। এরপর টিভি দেখতে বসলাম।স্টার মুভিজে লাস্ট কিং অফ স্কটল্যান্ড দেখাচ্ছিল। এর আগে শুরুটা দেখেছিলাম।বেশ ভালই লেগেছিল।তাই আজ এটাই দেখা শুরু করলাম।ঈদি আমিনের চরিত্রে ফরেস্ট হুইটেকার অসাধারণ অভিনয় করেছে। একদম শেষের দিকে আসতেই আবারো ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল।অন্ধকারে কিছু্ক্ষন বসে থেকে ল্যাপটপটা নিয়ে বসলাম।ইটালিয়ান জব মুভিটা শেষ হয়নি,তাই সেটাই শুরু করলাম। এরমাঝে ইলেক্ট্রিসিটি আসলো।কিছুক্ষণ পর চেম্বার থেকে ফোন...রুগী এসেছে।যেতে ইচ্ছে করছিল না,মুভিটা শেষ করার ইচ্ছে ছিল।কিন্তু এটা বাদ দিয়ে চেম্বারে গেলাম।রুগী আমার খুব বেশি না, গড়ে ২ জন। আজ অনেক সময় বসে ছিলাম । ৪ জনে রুগী দেখলাম। এর মাঝে এলাকার মুরিব্বি একজন এসে আমার সাথে অনেক সময় নিয়ে গল্প করলো।আসলে আমার সম্পর্কে সব কিছু জানার চেষ্টা করলো। আমিও চালিয়ে গেলাম। চেম্বার থেকে বের হব, তখনই ৪ নং রুগীটা আসলো।তখন প্রায় পৌনে ১০টা। এরমাঝেই আমার একবৎসর জুনিয়র রাসেলের ফোন।জিজ্ঞেস করলো আমি কই; আর জানালো তার ইয়ার মেট বাবরকে(যাকে আমরা খুজছি অনেকদিন ধরেই)ধরার জন্য টোপ ফেলা হয়েছে।কোথায় আসতে হবে জেনে আমি বললাম আমি আসছি।এইফোনের মাঝেই আমার ১ ইয়ার সিনিয়র পিযুসদা'র ফোন...একই বিষয়।আমি জানালাম আসছি। এরপর শেষ রুগীটা দেখেই চেম্বার থেকে বের হয়ে নির্ধারিত স্থানের দিকে রওনা দিলাম। পথে যেতে যেতে ভাবছিলাম কী হতে পারে আজ? আমার ভূমিকাই বা কী হবে?আর এর ভবিষ্যতটাই বা কী?একবার মনে হলো না যাই।কিন্তু সেটা করলে ঠিক হবে না বুঝলাম।তবে ওদের পরিকল্পনা কী আমি না জানলেও এটা আমি বুঝতে পারছিলাম যে একটা ঝামেলা হবে ও ওদের প্লান কাজ করবেনা।কারণ আমার ইয়ারমেট গুলো সব পেঁচিয়ে ফেল্বে।আমি ওদের ভালভাবেই জানি।কাজের থেকে অকাজই বেশি করে তারা। কিন্তু জুনিয়ররা গোছান,সিনিয়র রাও। যেতে যেতে আর ফোন দিলাম না। নির্ধারিত স্থানের কাছাকাছি পৌছেই ফোন দিলাম প্রথমে পি্যুসদা'কে,কেটে দিল।এরপর রাসেল কে,জিজ্ঞেস করলাম কোন সমস্যা?বললো হ্যা।ওরা কোথায় তা জানলাম। পূর্ব নির্ধারিত স্থানের কাছে গিয়ে দেখি অনেক মানুষ আর পুলিশ।আমি সেখান থেকে চলে গেলাম ওদের বর্তমান অবস্থানের দিকে।সেখানে গিয়ে জানলাম পুরো ঘটনা।বুঝলাম আমি যা ভেবেছি সেরকমই হয়েছে। বাবরকে পেয়েছে,কিছুটা উত্তম-মধ্যমও দিয়েছে,কিন্তু সেটা তার ডিজার্ভিং লেভেল টাচ করেনি।এর আগেই ঝামেলা হয়ে যায়। আর সবাই একসাথে সঠিক সময়ে পৌছাতেও পারেনি। এরমাঝেই বাবরের সহযোগী কামরুলকে নিয়ে নিলাঞ্জন হাজির।কামরুলই ছিল বাবরের টোপ।আমি কাছে যাওয়াতেই নিলা কামরুলকে সরিয়ে দিয়ে বললো ওকে আজ ছেড়ে দে। আমি আর কিছু বললাম না। কামরুলের ইয়ারমেটরাও কিছু বলছিলোনা,শুধু সুমন ছাড়া।সাথে রাজীবদাও এখনি তাকে ছাড়তে চাইছিলনা।সে আরও কিছু কামরুলের কাছ থেকে জানতে চাচ্ছিলো।কিন্তু নিলা ওকে ছেড়ে দিল।সুমন পিছন থেকে একবার শুধু ডাক দেওয়ার সাথে সাথেই কামরুল দৌড়ে পালালো।এরপর চললো ব্যর্থ অভিযানের ময়না তদন্ত ও কথা কাটা-কাটি। আরও কিছু বিষয় নিয়ে কথা হলো।পরে আমি আর সুমন বের হয়ে গেলাম।সাথে পরে কমলেশ আসলো।আমরা সিএনজি নিয়ে বাসার পথে রওনা হলাম।
বাসায় এসে দেখি যথারীতি ইলেক্ট্রিসিটি নেই। প্রচন্ড গরম।আবারো গোসোল করলাম।এর মাঝেই ইলেক্ট্রিসিটি চলে আসলো। কম্পিউটার অন করে দেখি নেটের লাইন নেই।তাই আবারো ল্যাপটপ ওপেন করে ইটানিয়ান জব মুভিটা শেষ করলাম।এর মাঝেই 'তাকে' পাঠানো দুপুরের এসএমএসটা ডেলিভারী হল।ভাবলাম কল দিব কিনা। জানি সে ধরবেনা,তাও দিলাম এবং আশা পূর্ণ হল,সে ফোন ধরলো না,কেটে দিয়ে অফ করে দিল। মুভি শেষ করে দেখি নেটের লাইন চলে এসেছে। সা.ইনে আর ফেসবুকে ঢুকলাম।ইয়াহু আর এমএসএনেও লগ ইন করলাম।ইয়াহুতে প্রাক্তন ইন্টার্নী সাদাতের সাথে ২৮তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রিপারেশন ও সিট প্লান নিয়ে কথা হলো।আমি এখনো কিছুই পড়িনি,সিট প্লানও জানিনা।সামনের সুপ্তাহে পরীক্ষা!!!
ফেসবুক আর সা.ইনে তেমন কিছুই পেলাম না ইন্টারেস্টিং।গতরাতের লেখা ব্লগের কমেন্ট গুলোর উত্তর দিলাম।এরপর ভাবলাম আজকের কথা গুলো লিখবো কিনা।ইচ্ছে করছিলোনা।তারপরও কেন জানি ব্লগস্পটে নিজের একটা ব্লগ খুলে লেখা শুরু করে দিলাম...
এখন ৩টা বেজে ৩৫ মিনিট। পাক্কা ২ ঘন্টা!!! টানা লিখেছি এইপুরো সময়টা!!! প্রচন্ড খুদে পেয়েছে...এখনও রাতের খাবার খাইনি...খেতে যাব এখন। এরপর ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি...কাল সকালে আবার একটা নতুন দিন...জানিনা কী অপেক্ষা করছে আমার জন্য...
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ৮:০৬