
এর আগে একটি পোস্ট দিয়েছিলামঃ "আর কতক্ষণ হাততালি দেবেন ?" এই শিরোনামে। ঐ পোস্টে বলেছিলাম করতালি বা হাততালি পাওয়া সবসময় সৌভাগ্যের ব্যাপার নাও হতে পারে। আজকে সেরকম একটা গল্প আপনাদেরকে শোনাব।
প্রাচীন গ্রিসের এক আইন প্রণেতার নাম ছিলঃ ড্রাকো (Draco )। সেই যুগে আইনের কোনো লিখিত রূপ ছিলো না। তার ফলে সহজেই বিচারের রায় যেত অভিজাতদের পক্ষে। খ্রিস্টপূর্ব ৬২১ অব্দে ড্রাকোই প্রথম আইনের লিখিত রূপ দেন। ফলে চাইলেই রায় অভিজাতদের পক্ষে নেওয়ার আর কোনো সুযোগ ছিলো না।
কিন্তু ড্রাকোর এই আইন ছিল খুবই কড়া। কেমন কড়া? শুনুন প্রাচীন ঐতিহাসিক প্লুটার্কের মুখেইঃ " For nearly all crimes there is the penalty of death"। আরেক গ্রিক বক্তার কথা শুনুনঃ " The Draconian Code is written in blood." বোঝাই যাচ্ছে সবাই ব্যাপারটাকে অতিরঞ্জিত করে ফেলেছে। কিন্তু দুখঃজনক ব্যাপার হলো, বর্তমানে ইংরেজি ভাষায় Draconian শব্দের মানেও দাঁড়িয়েছে তাই, অতিশয় কঠোর ও নির্মম। বেচারা Draco, তার নাম থেকে তৈরি শব্দ তাকেই ব্যঙ্গ করছে।
ড্রাকো নাকি বলেছিলেনঃ "লঘু পাপের শাস্তি মৃত্যুদন্ড, কিন্তু গুরু পাপের জন্য-এর চেয়ে কঠিন কোনো শাস্তি আমার মাথায় আসেনা"। বলা হয় হত্যা বা মন্দির লুটের শাস্তি যেমন ছিলো মৃত্যুদন্ড, আপেল বা সব্জি চুরির শাস্তিও ছিলো মৃত্যুদন্ড! নরহত্যার শাস্তি ব্যতীত ড্রাকোর প্রবর্তিত বাকি সব শাস্তি ৩০ বছর পর জ্ঞানী সোলন পরিবর্তন করে ফেলেন। কিন্তু ড্রাকো'র সময়ে ড্রাকো কিন্তু ছিলেন সেলিব্রেটি, কারণ তিনিই প্রথম লিখিতভাবে সবার জন্য সমান আইন প্রণয়ন করেন। এরকম একটা সময়ে ড্রাকো গিয়েছিলেন এক অনুষ্ঠানে, সবাই বিপুল করতালি (Applause) দিয়ে তাকে অভিনন্দিত করছিল। তখনকার দিনের রেওয়াজ ছিল, নিজের পরিহিত আলখাল্লা বা টুপি ছুড়ে দিয়ে ব্যক্তির প্রতি সম্মান জানানো, তাই আনন্দের আতিসাজ্যে সবাই বিপুল করতালে দিয়েছিলো আর এরই সাথে ছুড়ে দিয়েছিলো বিপুল টুপি আর আলখাল্লা। হতভাগা ড্রাকো এতো টুপি ও আলখাল্লার ভার সইতে না পেরে মৃত্যুবরণ করেন । ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস!
ছবিঃ উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া (ড্রাকোর ছবি নয়)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪৭