somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাটগাঁর ডায়েরি - প্রথম কিস্তি

০২ রা মে, ২০১৬ সকাল ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চট্টগ্রাম সফর নিয়ে লিখতে গিয়ে লিখা হচ্ছে না । তারপরে জানতে পারলাম অত সাধের ল্যাপটপটা নষ্ট, ঠিক করা যাবে না । সুখের কথা তখন কলমে (পড়ুন কী-বোর্ডে) আসে না । তবু ভাল স্মৃতিগুলোকে আগলে রাখাটাই জীবন । আর ওটা করতে না পারলে বোধকরি জীবনকে উপভোগ করার মুহূর্ত কমে যাবে । খেয়াল করে দেখবেন যতটা ভাল সময় কাটান তার ঢের বেশি সেগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করি আমরা, বোধ করি সেটাই স্বাভাবিক । দুই বা তিনটে ছোট ছোট পর্বে আমার আর বন্ধু ফারহানের চট্টলা ঘুরে আসার একটা ধারাবিবরণী লিখব । আমি লেখালিখিতে পটু নই । তাই বিরক্তির উদ্রেক হওয়াটা অস্বাভাবিক না । সেক্ষেত্রে আগেই মাফ চাচ্ছি । ধারাবাহিক এই লেখাটির নাম শখ করে রাখছি 'চাটগাঁর ডায়েরি' । আজকে লিখছি প্রথম পর্ব । ঢাকা থেকে যাওয়াটার কথা আর চাটগাঁর প্রথম দিনকার কথা লিখব বলে মনস্থির করেছি । স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে আমি বরাবরই একটু অদক্ষ । সেদিক থেকে ফারহান আমার নামে হয়ত মামলা করবে না আমি ভুল করলে । ভুলগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে খুশিই হব ।

আমার বোধকরি কখনো আগে থেকে পরিকল্পনা করে চট্টলা ঘুরতে যাওয়া হবে না । কোথাও আজ পর্যন্ত পরিকল্পনা করে যাওয়া হয় নাই । যেমন ধরুন এই ছুটিতে যাওয়ার কথা সিলেট আর কুয়াকাটা । আর্থিক দৈন্যদশা কোনটিই করতে দিল না । বন্ধুরা রাগ করে আছে হয়ত । তবে এসব রাগের ভাল দিক হল খুব দ্রুত মাফ পাওয়া যায় । জীবনের সবক্ষেত্রেই যদি হত ! এই দেখেছেন লেখার কথা চট্টলা সফর নিয়ে, লিখছি এসব বাজে কথা । আমার অনেক দোষের এই একটা । প্রচুর কথা বলি । প্রায় সবটাই বাজে, আমাকে চেনে মাত্রই এসব কথা লোকে জানে । যাক সে কথা, কোথাও যাওয়া হবে না বলে বসে বসে মাছি মারছি উত্তপ্ত ঢাকা শহরে । হঠাৎ এক সকালে ফারহানের ফোন । বলে, "সিলেট ট্যুরের হল কী?" । বললাম ল্যাপটপ ঠিক করাতে হাজার তিনেক টাকা লাগবে যেটা আমার ট্যুরের জন্য বরাদ্দ টাকার পুরোটাই খেয়ে ফেলছে । কিছুদিন অপেক্ষা না করলে এ অধম যেতে পারবে না । ফোন রেখে দিল ফারহান । কিছুক্ষণ পর আবার কল করে বলে, "চিটাগাং যাবি ? ফুফু ডাকতেসে বহুদিন । একজন নিয়ে যাওয়ার অনুমতি আছে । যাওয়া-আসা ছাড়া কোন খরচ নাই ।" আমি মহা সংকটে । কারণ এই যাওয়া আসার টাকাটাও পকেটে নাই । স্টুডেন্ট একটা পড়াই বটে তবে মাস তিনেক সে টাকা দেয় না । বড়লোকি সবই করে, আমার টাকার ক্ষেত্রে তাদের নজর নাই । তারপরও এসুযোগ ছাড়ার কোন ইচ্ছেই ছিল না আমার । তাই সম্মতি দিয়ে বসলাম তখনি । জানলাম সেরাতেই রওনা হব । বাধ্য হয়ে নিপো ভাইকে ফোন । আমার সব বিপদের ফোনকল । ভাইয়ের কাছে বড় মুখ করে বললাম এক হাজার টাকা দেন, বরাবরের মত এবারও আমার আবদার তিনি রাখলেন । আরও দরকার এক হাজার টাকা । এটা অবশ্য ম্যানেজ করা কঠিন ছিল না । আমার ভাই নিশান ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বলতেই আরও হাজার খানেক টাকা জোগাড় করা গেল । পকেটে ছিল চারশ টাকা আর কিছু খুচরো । এই করে আমি গেলাম সন্ধ্যের দিকে ফারহানের বাসা । খেয়ে দেয়ে আব্দুল্লাহপুর থেকে বাসে উঠব বলে গেলাম । বলে রাখি ফারহানের পকেটও আমার থেকে খুব বেশি ভারি ছিল না । আব্দুল্লাহপুর গিয়ে দেখি ইউনিক পরিবহণের কাউন্টার ওখানে নেই । বাধ্য হয়ে শ্যামলীতে টিকিট কাটা । অতীতের মত এবারও তাদের সার্ভিস ছিল যাচ্ছেতাই । বান্দরবন গেছিলাম একবার শ্যামলী বাসে । সেবার তাদের গাড়ি মাঝপথে নষ্ট হয়েছিল, এবারও ! বরাবরের মত এবারও চট্টগ্রাম যাওয়াটা আমার জন্য ক্লান্তিকর ছিল ।

ভোর ছটার দিকে পৌঁছালাম মীরসরাই । ফারহানের ফুফুর বাড়ি । ফুফু বেশ মজার মানুষ । ফুফা আবার শিক্ষক মশাই । কলেজে পড়ান অর্থনীতি ! চাকরি করেছেন গ্রামীণ ব্যাংকে । আমার আব্বুও করত একসময় । নাম বলতেই চিনে ফেললেন । সে বিশাল গল্প ! সেদিনের প্ল্যানে ছিল খৈয়াছড়া ঝর্ণা, মুহুরি প্রজেক্ট আর মহামায়া রাবার ড্যাম । ফারহানের ফুফাত ভাই আবরার যাবে আমাদের সাথে খৈয়াছড়া ঝর্ণা, যদিও স্থানীয় হবার সুবাদে সে এরমধ্যেই তিন চার বার দেখে ফেলেছে এই ঝর্ণা । সকালে ভরপেট খেয়ে বের হলাম খৈয়াছড়া ঝর্ণার উদ্দেশ্যে । মীরসরাই থেকে প্রথমে লেগুনায় করে ঝর্ণার এলাকা(নামটা মনে নেই), তারপর সিএনজিতে করে পাহাড় পর্যন্ত যাওয়া । এ পর্যন্ত সমস্যা হয় নি । তারপর মাইল দুয়েক হেঁটে ঝর্ণার পাদদেশে যাওয়া । কিন্তু এটা হল তিন নম্বর ঝর্ণা । আরও আটটা ঝর্ণা আছে । দুর্গম আর সাথে আবরার থাকাতে যাওয়া হয় নি আর । গোসল করেছি । ঝর্ণার পানির সব থেকে ভালদিক হল সেটা খুব ঠাণ্ডা । সে রোদতপ্ত দিনে আমাদের কাছে তা স্বর্গীয় মনে হচ্ছিল । স্বর্গের মত সুন্দরও জায়গাটা । হাঁটছিলাম, একে তো দুর্গম কিন্তু পাহাড়ের সৌন্দর্য কষ্টটা গায়ে মাখতে দিচ্ছিল না । পাহাড়ের একটা ব্যাপার আছে । এটা আপনাকে ডাকবে । খুবই ভয়ানক সে ডাক । আপনার যেতে ইচ্ছে করবে খুব । ভাগ্যিস আবরার ছিল, না হলে অনভ্যস্ত শরীরে পাহাড় বেয়ে উঠতে গিয়ে লঙ্কারাণ্ড হয়ে যেত । খুব করে মন চাচ্ছিল যে যাই, তবে যাওয়া হয় নাই । আমার সাথে এই হাঁটাহাঁটি আর ঝর্ণায় গোসল করার সুবাদে আবরারের ভাল একটা সম্পর্ক হয় । ওর ই বা কী দোষ? নিজের ভাই সারারাস্তা ফোনে কথা বললে আমার সাথে কথা বলা ছাড়া উপায়ও ছিল না ! ফারহান পারলে গোসলের সময়ও ফোনে কথা বলে । ছেলেটা গত এক বছরে বদলেই গেল পুরোটা ।

ঝর্ণা থেকে ফেরত আসার সময় বোঝা গেল পথ কতটা বড় ছিল । এবার তো আর ঝর্ণায় গোসল করার মুলোটা সামনে ঝুলোনো ছিল না । পথটা তাই স্বাভাবিকভাবেই বড় মনে হচ্ছিল । আবার ফুফুর বাড়ি । দুপুরে পোলাও মাংস খেয়ে কোনরকম বিশ্রাম না নিয়েই মহামায়া পার্ক আর মুহুরি প্রজেক্ট দেখব বলে বের হওয়া । মুহুরি প্রজেক্ট অনেক দূর । মীরসরাই থেকেও যেতে প্রায় ঘণ্টাদুয়েকের মত লেগে গিয়েছিল । চারপাঁচবার গাড়ি পরিবর্তন আর সোনাগাজীতে মানুষ খুন হওয়ার ঘটনাটাও বোধ করি কিছুটা প্রভাব রেখেছিল । সবাই যেতে মানা করে । আমরা না শুনে আগাতেই থাকি । তবে গিয়ে বুঝি না গেলে বড্ড মিস হয়ে যেত । মুহুরি প্রজেক্ট এমন আহামরি কিছু না । ড্যাম মতন কিছু একটা আছে মাতামুহুরি নদীর উপর । নদী শাসনের উদাহরণ বলতে পারেন । এক পাশে নদী খরস্রোতা, আরেক পাশে তা বোঝার উপায় নেই । বায়ুবিদ্যুতের কিছু উইন্ডমিল ছিল । তবে কতটা কাজ করে তা দেখে বোঝার উপায় নেই । তাহলে মুহুরিপ্রজেক্ট না গেলে কেন মিস করা হত? কারণ বাতাস । নির্জলা বাতাস । এত বাতাস যে আপনার জায়গাটা ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করবেই না । তারউপর আসার আগে ফুফা বলছিলেন যে কেন এটা আসলে চট্টগ্রামের ভেতর পড়া উচিত, ফেনীতে না । ফুফু কিন্তু এটা নিয়ে মজা করতে ছাড়ে নি ! সেখানে গেলে জীবন নিয়ে ভাবগম্ভীর কথা বলতে ইচ্ছে হবে । আমরাও তেমন কিছু করেছি । কী করেছি? সেলফি তুলেছি । অনেক ছবি তুলেছি । এটাই আমাদের জীবনকে নিয়ে গুরুগম্ভীর হওয়া । এর বেশি কিছু করতে পারার কথাও না ।


কোথায় কে খুন হয়েছে, সে গল্প শুনলাম । ওটা করতে করতে সন্ধ্যে হয়ে গেল । দেরীটা বোধ করি ইচ্ছে করেই করা । বাতাসটা বড্ড ভাল লাগছিল। তারউপর মানুষগুলো কষ্ট করে মাছ ধরছে অমন খরস্রোতা নদীতেও ! দেখছিলাম আর ভাবছিলাম একদিন ওয়াইফাই না থাকলে আমরা জীবন কেন ভাল না তা নিয়ে কষ্ট পাই ! কষ্ট আমরা জানিও না, করা অনেক পরের কথা । সেদিন আর মহামায়া যাওয়া হয়নি, স্বাভাবিক কারণেই । সেটায় গেছি তার পরের দিন । গিয়েছি সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথের পাহাড় আর তার শিখরের নিষিদ্ধ শিব মন্দিরেও ।জান নিয়ে ফেরত আসতে পেরে আমরা দুজনই খুব খুশি । সে গল্প পরের পর্বে । (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৬ সকাল ৮:৪৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×