আমি তামিমের দলে থাকার একজন সমালোচক । এভাবে এতদিন পারফর্ম না করে দলে থাকার ইতিহাস শুধু আশরাফুলের ছিল এই দলটার । আমি আশরাফুলের সব থেকে বড় ফ্যান ছিলাম, তারপর যা হল ওতে খেলাটার উপর আগ্রহ চলে গিয়েছিল । আমি বিশ্বকাপে আসলেই কোন খেলা পুরোটা দেখি নাই, দেখতে ইচ্ছে করে নি সত্যি বলতে । আমার মতে এই দলটার সেরা ব্যাটসম্যান এখন মুশফিক এবং তারপর রিয়াদ । তবে আমি আজ তামিমের কথা বলতে বসেছি । মানুষের পছন্দ ও, যাকে পপুলার চয়েস বলা যায় । মাশরাফি আর সাকিবের পর ওর ফ্যান বেইজ সব থেকে বেশি, সন্দেহ নাই । তবে সাম্প্রতিক সময়ে ওকে নিয়ে একটু মজা করা বেশি হয়েছে । এতে ওর অবদানই বেশি । পারফর্ম করতে না পারা তো আছেই, ব্যবহারটাও একটু নিম্নদিকে যাচ্ছিল । হতাশা থেকে এসব করাটা নতুন কিছু নয়, ওর স্বভাবের লোকের তো নয়ই । সে সব কথা থাক আমি এসব কিছু নিয়েই আজ লিখতে বসিনি ।
তামিম ইকবাল খান । এই নাম বললেই মানুষের ইংল্যান্ডের ঐ দুইটা টেস্ট সেঞ্চুরির কথা মনে করে । তাদের দোষ দিয়ে লাভ নাই । ঐ দুইটা শতক তাকে উইজডেন সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব এনে দিয়েছিল । লর্ডসের অনার বোর্ডের মত চির আকাঙ্ক্ষিত সম্মান এনে দিয়েছিল, টেন্ডুল্কার বা পন্টিং এর এটা নেই কিন্তু । আমি আসলে এগুলাও বলতে আজ আসিনি । আজকে আমার সব কথা হবে তামিমের সম্ভাবনা নিয়ে ।
লর্ডসের শতক আমাকে দোলা দেয় নি, ওর পরের শতকটা দেয়। কেননা ওর পরের শতকটা তামিমের ছিল । তামিমীয় ছিল, তামিমীয় বলতে একটা আগ্রাসন ছিল । সব কিছু ছিড়ে ফেলার একটা পাশবিক স্পৃহা ছিল । একটা অহংবোধ ছিল, একটা দানবীয় ভাব ছিল । একটা তামিমীও ভাব ছিল । আমার ঐ তামিম ভাল লাগত । আমার এই 'শ্রমিক' তামিম ভাল লাগে না । তাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি আমায় একদম নাচায় নি । ভাবিয়ে তুলেছিল । তামিমকেও কি আমরা নষ্ট করে ফেললাম । যে যাই বলুক মানুষ শেভাগের খেলা পছন্দ করত । একটা কারণেই এখনো মানুষের মুখে আজও স্যার ভিভের কথা আছে, মানুষের মুখে আজো একটা কারণেই মিয়াদাদের কথা আছে । ওরা শুধু খেলত না, অপরকে ধ্বংস করে দিত । ওরা টিকে গেলে অপর দলের মনোবল বলে কিছু থাকত না । তামিম আমাদের সেরকম একজন হওয়ার কথা ছিল । সেরকম হওয়ার পথেই ছিল ও । মাঝে কি হল, মানুষের কথা শুনতে গিয়ে নিজের খেলা নষ্ট করল । তামিমদের কোচ লাগে না, লাগে শুধু উৎসাহ । তার চেয়ে বেশি লাগে নিজের মতও খেলার অপার স্বাধীনতা । এটা পেলে বাকিটা ওরা 'ম্যানেজ' করে নিতে পারে । আজকেও প্রথম দিকের খেলা আমার ভাল লাগে নি । তবে ঐ দুই ছক্কা আর আজমলের ওভারে ওর পুরনো ঝলক দেখে স্বস্তি পেয়েছি । আমাদের দলে নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় অনেক আছে । রিয়াদ, মুশফিকের সাথে সাকিব তো আছেই । আর নতুন কেতন নিয়ে আছে সাব্বির, নাসির বা সৌম্য । তামিমের অমন দেখে খেলার দরকার নেই । ওকে ওর মত খেলতে দিলে ও একাই ভারতকে বিশ্বকাপ থেকে বের করে দিবে । ওকে ওর মতও খেলতে দিলে ইংল্যান্ডের মাটিতেও আমাদের খেলোয়াড়রা শতক পাবে । ওকে ওর মতও খেলতে দিলে আমাদের আর স্যার ভিভের রুপকথা শুনে বড় হতে হবে না । আমরা আমাদের নিজেদের রুপকথা পাব । নিজেকে নিয়ে ডাউট হলে ও প্রথমে আশরাফুলের মত ফর্ম হারাবে । তারপর অমন কাজ করে আমাদের মত ভক্তদের কাদাবে ।
তামিমকে নিজের অহংবোধ নিয়ে থাকতে দিন । তামিমকে ওর এই 'রেইজ' টা নিয়ে থাকতে দিন । তামিমকে ওর কোন কিছু পরোয়া না করার বেপরোয়া ভাবটা রাখতে দিন । তাহলে আর রানের চাকার জন্য মুশফিকের নামার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না । তামিমকে ওর মত থাকতে দিন । তামিমকে ওর মত খেলতে দিন । তাহলে আমাদের আর বেশিদিন শেভাগের কথা শুনতে হবে না । তামিম্ আগে রান করবে ওর থেকে ভাল স্টাইলে, তারপর ওকে কথা দিয়ে থামাবে । তামিমকে তামিম থাকতে দিন, তাহলে আর রামিজের মত দুই টাকার খেলোয়াড়দের কথা শুনতে হবে না । তামিমকে তামিম করে আগলে রাখুন । তাহলে তামিমীয় ইনিংসের জন্য অন্য দেশের ইতিহাস ঘাঁটতে হবে না । আমাদের নিজেদের একটা তামিম থাকলে শেভাগদের আর গুনতে হবে না । আমাদের একটা তামিম থাকলে তিনশ রান আমাদের কাছে কিছুই না । আর এক ইনিংসে দুইশ খুব বেশি দিন দূরে থাকবে না ।
আমি ঐ তামিমের অপেক্ষায় যে জহিরকে মারার সময় ভয় পায় নি । আমি ঐ তামিমের অপেক্ষায় যে আজমলকে মারতে গিয়ে ওর ইতিহাস নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবে নি । আমি ঐ তামিমের অপেক্ষায় যে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কথা বলার উপাদান যোগাবে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৯