বেশ কয়েকদিন আগের ঘটনা। হল থেকে বেশ কদিন পরে বাসায় যাচ্ছি। বাসায় গেলে মা নানান পদের ভাল মন্দ রান্না করে খাওয়াবে সেই আশায় বাসে উঠার সাথে সাথে মনটা বেলুনের মত ফুলে গেল। বাসে উঠলাম। উঠার সময় এক আঙ্কেল বাসের হেল্পারকে জিজ্ঞাসা করল সিট আছে? হেলপার চিল্লায়ে চিল্লায়ে বলল, সিট আছে সিট আছে। আমিও ভাবলাম যাক এইবার তাহলে সিটের মধ্যে বসে আরাম করে গান শুনতে শুনতে বাসায় যাওয়া যাবে। ভাবা শেষ হওয়ার সাথে সাথে বাসে উঠেই দেখি দুই তিনজন বাদুড় ঝুলা ঝুলছে। সিট থাকতেও তাদের এই বাদুড় ঝুলা ঝুলার কারণ তখনও বুঝি নি! তবে ভালমত পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম সিট আছে তবে কোন সিট খালি নাই! তখনই বুঝলাম হেল্পার মিথ্যা বলে নি।
যাই হোক, বাসে উঠে একেবারে শেষ মাথায় চলে গেলাম। গিয়েই দেখি পিছনের সিটে এক হুজুর টাইপ ব্যক্তি দুই দুইটা ব্যাগ নিয়ে বসে আছেন! মনের অজান্তেই বিড়বিড় করে সুর করতে লাগলাম “ইয়ারা তেরে সাদকে ইশকে সিখা...” উল্লেখ্য ককটেল গানখানা আমার অনেক প্রিয় হলেও বাস্তবের ককটেল আমার মোটেও প্রিয় নয়। যা হোক, আমি বাসের পিছন থেকে সামনের দিকে চলে আসলাম। আমাকে দেখে বাসের কন্ট্রাকটার চরম বিরক্ত মুখে বলল, “মামা, আপনে একবার পিছনে যান আবার সামনে আসেন! আপ্নের সমস্যা কি?” আমি বিড়বিড় করে বললাম কিছু না কিছু নাহ!
বাস সামনের দিকে এগিয়ে চলতে চলতে এক সময় আমার গন্তব্যে চলে আসল। যেহেতু তখনও ককটেল ফুটে নাই সেহেতু বুঝে নিলাম আমি আজাইড়াও পিছন থেকে এত্ত কষ্ট করে সামনে আসছি!
বাসার গেটে আসতেই দেখি দেয়ালে এক সুবিশাল পোষ্টার। রাস্তার পাশে পিলার, খাম্বা খালি থাকতে বাসার দেয়ালে এরকম পড়াতে চাওয়ার বিজ্ঞাপন কাহিনী বুঝলাম না! তবে বিজ্ঞাপন দেখে বুঝলাম এই বিজ্ঞাপনে ভাসমান ভাইয়া অনেক যত্ন দিয়ে প্লে গ্রুপ থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত সকল ছাত্র ছাত্রীকে পড়ান। অতঃপর বাসায় ঢুকলাম। ব্যাগ রেখেই সাইন পেন নিয়ে নিচে নামলাম। আম্মু জিজ্ঞাস করল যাস কই? আমি ক্ষীণ স্বরে বললাম, আসছি। নিচে নেমেই ভাইয়ার সুবিশাল পোষ্টার খানার আগে একটা “থা” অক্ষর যুক্ত করে দিলাম। ফলশ্রুতিতে বোঝা গেল, ভাইয়া যত্ন সহকারে ছাত্র-ছাত্রীদের থাপড়ান! বিশেষত যারা পড়ালেখায় দূর্বল তাদেরকে ভাইয়া অতীব যত্ন সহকারে থাপড়ান!
রাত্রিবেলা আব্বু ৫০ টাকা দিয়ে বলল কিছু টাকা ফ্লেক্সি করে দিতে। গেলাম দোকানে ফ্লেক্সি করতে। গিয়ে দেখি দোকানদার ভাই সুরেলা স্বরে মোবাইলে কার সাথে যেন কথা বলছে। আমার দাঁড়ায়ে থাকা দেখে ভাই কিঞ্চিত বিরক্ত! আস্তে করে অন্য দোকানের যেতেই ভাইয়া ফোনে বলল, “আমার একটু কাজ আছে! আমি পরে কথা বলছি তোমার সাথে।” তারপর আমাকে বলল, “তাড়াতাড়ি নাম্বার বলেন!” মোবাইলের নাম্বার অর্ধেক বলতেই এক সুন্দরী আপু এসে দোকানদারকে বলে, ৫০ টাকার কার্ড দিতে। দোকানদার বলল, ম্যাডাম কার্ড নাই। নাম্বারটা বলেন। ফ্লেক্সি দেই। আপু বলল না, নাম্বার বলব না! আমিও মনে মনে বুঝলাম ফ্লেক্সির দোকানদাররা কেন সারাক্ষণ মোবাইলে কথা বলেন।
যা হোক, আপুর এই ব্যবহারে ভাইয়া বোধ করি কিঞ্চিত লজ্জিত হল। তারপরই বলল, “একটু দাঁড়ান আপু! আরেকটু খুঁজে দেখি!” সুন্দরী আপুকে ক্ষণকাল ওয়েট করায়ে রেখে ভাইয়া অনেক খুঁজে একটা কার্ড উদ্ধার করলেন! ভাইয়ার এই কার্ড উদ্ধারে আপু মুগ্ধ হলেন কি না জানি না তবে কিঞ্চিত বক্র-নয়নে আপুর আমার দিকে তাকানোতে আমি নিজে মুগ্ধ হয়ে গেলাম আর মনে মনে বললাম, “এতদিন কোথায় ছিলে...”।
যা হোক, আপুর সব কথা শুনে পুনরায় ভাই আমার নিকট আসলেন। এই দফায় আমাকে পুনরায় পুরো নাম্বার আবার বলতে বললেন। আমি বললাম অর্ধেক তো আগেই লিখেছেন আবারও বলা লাগবে! দোকানদার বেচারা আমার কথা শুনে ভেবাচাকা খেয়ে বলল না না ইয়ে মানে না। আমি বললাম খাতা দেখেন। বেচারা খাতার দিকে তাকায়ে বলল বাকি নাম্বারটা বলতে বলল! আমি মনে মনে বললাম চান্দু, সুন্দরীদের দেখলে মাথা আউলাইয়া যায় না? যাই হোক, নাম্বার বললাম বাকিটুকু! বলে দোকান ত্যাগ করলাম।
অতঃপর এক টং দোকানে গিয়ে অবশিষ্ট ১০ টাকা দিয়ে বললাম লিফ দেও দুটা। দোকানদার টাকা নিয়ে গম্ভীর মুখে বলল, “মামা, লিফ নাই! দুইটা বেনসন দেই??” মিজাজ পুরা খারাপ হয়ে গেল! আমিও বললাম, “দেন দেন, দশ টাকায় যদি দুটি বেনসন পাওয়া যায় খারাপ কিছু না! এটা তো অনেক ভাল!” দোকানদার বেচারা ফেলফেল করে তাকায়ে ছিল!
যাই হোক, সিগ্রেট টেনে বহু সময় পরে বাসায় গেলে আব্বু গম্ভীর গলায় বলল, “কখন টাকা দিলাম! এখনো ফ্লেক্সি আসে নাই যে!” আমি ক্ষীণ স্বরে বললাম দেখতেছি ঘটনা কি! আবার গেলাম ফ্লেক্সির দোকানে। গিয়ে দেখি লুল ভাইয়া তখনও ফোনে কথা বলছেন! আমি চিন্তা করে দেখলাম এত কথা বিয়ের আগেই বলে ফেললে বিয়ের পর বলবে কি! তবে সান্তনা একটাই এরা একটা মেয়ের সাথে কথা বলে না! এদের কথা বলার বন্ধু(!) অসংখ্য! কাজেই নো টেনশন।
আমি যেতেই বেচারা আমার দিকে তাকায়ে মুচকি হাসি দিয়ে ফোন রাখল। আমি গম্ভীর স্বরে বললাম, মামা টাকা আসে নাই! বেচারা গম্ভীর হয়ে বলল, আপনে নাম্বার ভুল বললে আমি কি করব! আমি বললাম, নাম্বার ভুল বলছি মানে?? ভাইজান দৃঢ় স্বরে বলল, মামা আপনে এগারো ডিজিটের জায়গায় বার ডিজিটের নাম্বার বলেছেন! তারপর আমাকে সে খাতা দেখাল! আমি তাজ্জব! এ আমি কি করলাম!
যা হোক, নাম্বার ঠিক করে দিয়ে বাসায় ফেরার সময় ইহাই ভাবলাম, শুধু কুকুর হইতে সাবধান হলেই চলবে না আগুন সুন্দরী হইতেও সাবধান হতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪১