ফুটবলভক্তদের একনামেই চিনে ফেলা উচিত কার কথা বলছি। যারা নিয়মিত ফুটবলের খবর রাখেন না তাঁরাও কালকের ইউরো সেমিফাইনাল ম্যাচ দেখে থাকলে চেনার কথা এই ইতালিয়ান ও ম্যানসিটির স্ট্রাইকারকে। ২০১০ সালে ইউরোপের বর্ষসেরা তরুন খেলোয়াড় হিসেবে "গোল্ডেন বয়" অ্যাওয়ার্ড জেতা এই ফুটবলার মাঠে নিঃসন্দেহে অত্যন্ত প্রতিভাবান হলেও তিনি সংবাদমাধ্যমে বেশি পরিচিত তার উদ্ভট কার্যকলাপের কারনে। দ্বিধাহীনভাবে বরং একথা বলা যায় যে বর্তমান ফুটবলবিশ্বে তিনিই সবচেয়ে বর্ণিল চরিত্র। তিনিই বোধহয় একমাত্র ফুটবলার শুধুমাত্র যার দৈনন্দিন কাজের আপডেট দেবার জন্য একাধিক ওয়েবসাইট আছে। এ পোস্টে ফুটবলভক্তদের কাছে "সুপার মারিও" নামে পরিচিত এ খেলোয়াড়ের ফুটবল প্রতিভা নয় বরং মাঠের অফ ট্র্যাক ও মাঠের বাইরে তাঁর ব্যাতিক্রমধর্মী চরিত্রই তুলে ধরা হলো। যদিও তাঁর সব মজাদার কর্মকাণ্ড লিখতে গেলে এনসাইক্লোপিডিয়া হয়ে যাবে।
► বালোতেল্লির প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ম্যানসিটি কোচ রবার্টো ম্যানচিনি বলেন, "ওর সাথে প্রতিদিন আলাপ করলে আমাকে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাতে হবে।"
► গোল্ডেন বয় পুরষ্কার জেতার পর তাঁর অনুভুতিঃ "পুরষ্কার পেয়ে ভালোই লাগছে, তবে আমি ছাড়া জেতার মত আর কেউ আছে নাকি?"
► পুরষ্কার পাবার পর দ্বিতীয় সেরা জ্যাক উইলশেয়ার সম্পর্কে বালোতেল্লি বলেনঃ "কি যেন নাম ওর? উইল... নাহ, ওকে চিনি না। তবে নেক্সট টাইম আর্সেনালের সাথে খেলার সময় ওর ওপর কড়া নজর রাখবো। পারলে ওকে আমার ট্রফিটা দেখাবো আর মনে করিয়ে দেব যে আমিই জিতেছি এটা, ও নয়।"
► আগের বছরগুলোতে এই পুরষ্কার জেতা মেসি, ফ্যাব্রিগাস, রুনি, ভ্যান ডার ভার্ট সহ অনান্যদের সম্পর্কে বালোতেল্লির মূল্যায়নঃ "এদের মধ্যে মেসিই আমার চেয়ে একটু ভালো, বাকিরা আমার ধারে কাছেও নেই।"
► প্রাক্তন প্রেমিকা সোফিকে ধোঁকা দিয়ে তারই এক বান্ধবীর সাথে রাত্রিযাপনের কাহিনি মিডিয়া প্রকাশ করলে তার জবাবে বলেনঃ "সোফি খালি মেসেজ দিয়ে আমাকে জ্বালিয়ে মারে। ওর বান্ধবীকেই বরং বেশি ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে আমার কাছে।"
► ইংলিশ মিডিয়া নিয়ে তাঁর বিখ্যাত উক্তিঃ "ইংল্যান্ডের স্টেডিয়ামগুলো খুবই ভালো তবে এদের পত্রিকাগুলো বস্তাপচা।"
► ম্যানসিটির ফরোয়ার্ড লাইনআপ প্রসঙ্গে বলেনঃ "তেভেজ, আগুয়েরো আর আমি। আমাদের এই অ্যাটাকিং লাইন বিশ্বসেরা। এমনকি বার্সা আর রিয়ালের চেয়েও শক্তিশালী।"
► মেসির ব্যালন ডি'অর জেতা প্রসঙ্গে তিনি বলেনঃ "মেসি না থাকলে আমিই পেতাম এটা।"
► এফ এ কাপ জেতার পর সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করলে বলেনঃ
"I played all my season was shit! Can i say that?"
বিশ্বাস হয় না? এই দেখেন ভিডিও!
► তাঁর গাড়ি চেক করে পুলিশ ব্যাকসিটে ২৫ হাজার পাউন্ড পায়। গাড়িতে এতো টাকা রাখার কারন জিজ্ঞেস করলে তাঁর বক্তব্যঃ "কারন আমি ধনী।"
► ইন্টারমিলান থেকে ম্যানচেস্টারে আসার পর এ পর্যন্ত ১৫ হাজার পাউন্ডের বেশি পার্কিং জরিমানা গুনতে হয়েছে মারিওকে।
► গত দু বছরে মাত্র ২৭ বার গাড়ি পাল্টিয়েছেন।
► কাসিনোতে ২৫ হাজার পাউন্ড জিতে বের হয়েই এক ভবঘুরেকে এক হাজার পাউন্ড দিয়ে দেন।
► প্র্যাকটিসের সময় তরুণ খেলোয়াড়দের টার্গেট করে ডার্ট ছুঁড়ে মেরে ৩ লাখ পাউন্ড জরিমানা দেন।
► সিরি এ তে খেলার সময় বিপক্ষ দলের ম্যানেজার কে টমেটো ছুঁড়ে মারেন।
► এ ঘটনার জন্য ডিসিপ্লিনারি কমিটি শুনানি ডাকলে সেখানে যেয়ে পানিভর্তি বেলুন ছুঁড়ে মারেন।
► মিলানের এক স্ট্রিপক্লাবে যেয়ে স্ট্রিপারদের শরীরে হাত দিয়ে ৪ বাউন্সারের সাথে মারামারি করেন।
► ম্যানসিটির প্র্যাকটিসে বিব পরা নিয়ে তাঁর সেই ঘটনা তো এখন ইতিহাসের অংশ। না রে ভাই, বলে বোঝানো যাবে না সেই ঘটনা। বরং দেখেই নিন ৬ মিলিয়নের ওপর হিট হওয়া সেই ভিডিওটি। যতবার দেখি, ততবারই হাসতে হাসতে শেষ আমি।
► টীমমেট এডিন জেকো আবার এটা নিয়ে মশকরা করতে ছাড়েননি।
► সুপার মারিওর সাথে বিটলামি করে পার পাওয়া যায় নাকি? এবার মারিওর পালা জেকোর সাথে মজা নেবার, তাও আবার ভরা স্টেডিয়ামেঃ
► মিমিক্রি তেও কম যান না মারিও। দেখুনঃ
► ১ লাখ ২০ হাজার পাউন্ড খরচ করে একটি অডি গাড়ি কিনেন। এক সপ্তাহের মধ্যে বেচেও দেন।
► তাঁর মা তাঁকে একবার মার্কেটে পাঠিয়েছিলেন ঘরের জন্য আয়রন বোর্ড আর কিছু ক্লিনিং টুলস কেনার জন্য। মার্কেট থেকে মারিও বাড়ি ফেরেন এক বিশাল ট্রাম্পোলিন, টেবিল টেনিস সেট আর একজোড়া স্কুটার কিনে।
► ম্যানসিটিতে যোগ দিয়ে প্র্যাকটিসের প্রথম দিনেই ভিনসেন্ট কোম্পানি, কার্লোস তেভেজ সহ ৪ সতীর্থের সাথে মারামারি বাঁধান।
► ইন্টারমিলানে খেলার সময় এক টিভি শো তে প্রতিদন্ধী ক্লাব এসি মিলানের জার্সি পরে হাজির হন। তাও আবার পিছনে নিজের নাম লেখা।
► ইতালির অনূর্ধ্ব-২১ দলের এক ম্যাচে তাঁকে ফাউল করা হলে রেফারীর কাছে ফাউলকারী খেলোয়াড়কে কার্ড দেখানোর দাবী জানান। কার্ড না দেখানোয় তিনি রেফারির ওপর অভিমান করে খেলা চলাকালীন সময়েই সবাইকে উপেক্ষা করে ৩-৪ মিনিট মাঠেই বসে থাকেন।
► এফ এ কাপ সেমিফাইনালে ম্যানইউর বিপক্ষে গোল করে ম্যানইউ সমর্থকদের সামনে যেয়ে তা সেলিব্রেট করেন।
► টিভি তে এক লাইভ শো তে বসে মেসেজ পাঠিয়ে গার্লফ্রেন্ডের সাথে ব্রেক আপ করে তা সরাসরি ঘোষণাও করেন।
► নিজ বাড়িতে গার্লফ্রেন্ড কে নিচতলায় বসিয়ে রেখে দোতলায় এক ইতালিয়ান মডেলের সাথে রোমান্টিক কাজে মেতে ওঠেন।
► গাড়ি নিয়ে মহিলাদের এক জেলখানায় ঢুকে পড়েন। কারন জিজ্ঞেস করলে বলেনঃ "জাস্ট দেখতে এলাম এখানে আসলে হয়টা কি।"
► ফ্যারো আইল্যান্ডের সাথে এক প্রীতি ম্যাচ চলাকালীন সময় সাইড বেঞ্চে বসে আইপ্যাডে গেমস খেলা শুরু করেন।
► ঘরের ভেতর আতশবাজি পুড়িয়ে নিজ বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন।
► বাড়ি পোড়ানোর পর লন্ডনের একটি বিলাসবহুল হোটেল স্যুট এ বালোতেল্লি থাকেন কিছুদিন। এক রাতে ওই রুমেও আগুন লেগে যায়।
পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বালোতেল্লির সরল স্বীকারোক্তি, "লাইটার জ্বালিয়ে তাতে ডিওডরেণ্ট স্প্রে করে দেখছিলাম আগুন ধরে কিনা!"
► ইতালির এক ম্যাচে নতুন ডিজাইনের জার্সি পরে খেলা শুরু হয়। হাফ টাইমের পর বালোতেল্লি চেঞ্জ করে পুরনো জার্সি পরে মাঠে চলে আসেন। কারন? আর কিছুই না। নতুন জার্সিটি নাকি তাঁর ভালো লাগেনি।
► এভাবে উলটো করে জার্সি পরা বোধহয় শুধু বালোতেল্লির পক্ষেই সম্ভব।
► শুধুমাত্র তাঁর সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট বাবদ প্রতি সপ্তাহে ক্লাবের খরচ হয় ১০ হাজার পাউন্ড।
► তাঁকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তাঁর এসব উল্টাপাল্টা কাজের কারন কি। তাঁর দাবী ম্যানচেস্টারে আসার পর থেকেই নাকি তাঁর পিছনে নাকি একটা প্রেতাত্মা ঘুরছে।
► অ্যান্টোনিও কাসানো কে এসি মিলান প্রেসিডেন্ট সেরা ইতালিয়ান প্লেয়ার বলায় মারিওর ক্ষোভঃ "হয় সে ভুল বলেছে নয়তো সে আমাকে এখনো চিনেনি।"
► নিজের হাসি প্রসঙ্গে তাঁর অভিমতঃ "সাধারণত আমি হাসি না কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমি সবসময়ই হাসি।"
► কোচ ম্যানচিনির নাকি বালোতেল্লি কে প্রায়ই ঘুষি মারতে ইচ্ছা করে। এটা শোনার পর তাঁর প্রতিক্রিয়াঃ "তিনি ঘুষি মারতে পারেন না। আমি পারি। আমি থাই কিক বক্সিং জানি।"
► তাঁর এসব প্রতিনিয়ত অদ্ভুত কাজের জন্য তিনি যে সবসময় মিডিয়ার আকর্ষনের কেন্দ্রে থাকেন তা বলাই বাহুল্য। ম্যানচেস্টার ডার্বিতে গোল করার পর এর প্রতিবাদ করেন এভাবেইঃ
আজ এ পর্যন্তই দিলাম। সুপার মারিও সম্পর্কে আরও মজার মজার তথ্য জানা থাকলে কমেন্টে উল্লেখ করতে ভুলবেন না যেন!
আপডেটঃ
► সেমিফাইনালে দুর্দান্ত দ্বিতীয় গোলটির পর তাঁর জার্সি খুলে গোল সেলিব্রেশন ভুলে যাননি তো? জার্সি খোলার জন্য হলুদ কার্ড দেখে বালোতেল্লির প্রতিক্রিয়াঃ "যারা আমার গোল সেলিব্রেশনের সমালোচনা করছে, তারা আসলে আমার দুর্দান্ত এই শরীর দেখে ঈর্ষান্বিত।"
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৭:৩০