এনিম্যাল প্লেনেটে পেঙ্গুইনদের জীবনধারা নিয়ে তৈরি একটা ডকুমেন্টারি দেখছিলাম ।আমরা অনেকই ছোটবেলায় মা বাবার পায়ের উপর পা চড়িয়ে হাঁটতে শিখেছি ।মা পেঙ্গুইনও ঠিক একইভাবে তার বাচ্চাকে পায়ের উপর পা তুলে গুটিগুটি পায়ে হাঁটা শেখায় , বাচ্চাকে দুপায়ের ফাঁকে নরম পশমে আগলে রেখে রক্ষা করে ঠান্ডা বাতাস থেকে ।কোন কোন বাচ্চা দলছুট হয় হারিয়ে যায় , এন্টার্কটিকার তীব্র শীতে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত হার মানে মৃত্যুর কাছে ।তার শীতে জমে শক্ত হওয়া পাথরসম মৃতদেহটা পড়ে থাকে শুভ্র তুষারে ।মা আর বাবা তাদের ছোট্টশিশুটার গা ঘেষে দাড়িয়ে থাকে ।মানুষের মত কাঁদতে পারে না ওরা , অবিরাম ট্যাঁ ট্যাঁ শব্দ করে ।মা পেঙ্গুইন ঠোঁট দিয়ে আঁচড় কেটে বারবার বুঝতে চেষ্টা করতে বাচ্চাটা এখনো বেঁচে আছে কিনা , তার মন কিছুতেই মানতে চায় না , ঐ মৃত্যদেহটাকেও বুকের সাথে আগলে রেখে আদর করতে থাকে ।বাবা পেঙ্গুইন পিছন থেকে মা'টার পিঠে ঠোঁট বুলিয়ে সান্তনা দিতে চায় , মা মাথা নিচু করে চুপচাপ তার মৃত বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ ।সে যেতে চায় না , কিন্তু বাবা পেঙ্গুইন বাচ্চাটাকে শেষবারের জন্য আদর করে মা'টাকে ঠেলে সরিয়ে নিয়ে যায় দূরে , এমন একটা সন্তানের জন্য যে তাদের অপেক্ষা করতে হবে আরো একটা বছর ।মা'টা করুণ চিত্কার করে , সে চিত্কারে মাথা নুইয়ে শোক প্রকাশ করে দলের অন্যেরা ।
*** আমরা এই সভ্য মানুষদের ঐ নির্বোধ পেঙ্গুইনদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে ।সাময়িক যৌনতৃপ্তি মেটানোর দায়ে আমরা একটা ফুটফুটে নতুন প্রাণের জন্ম দিই , কিন্তু সমাজ আর লোকচক্ষুর ভয়ে সেই সন্তানের উপাধি হয় "অবৈধ" , ময়লার পুটলির মত যার জায়গা হয় রাস্তার ডাস্টবিন কিংবা গাড়ির চাকার তলায় ।তীব্র আঘাতে বিচ্ছিন্ন হয় তার সুন্দর প্রাণটা ।তাতে শুধু বাচ্চাটাই মরে , কোন শাস্তি হয় না তার "অবৈধ মা-বাবার" ! পেঙ্গুইনদের মত তাদের মনে বাচ্চাটার জন্য সামান্যখানি দয়াও হয় না !! এভাবে প্রতিদিন এমন শতশত শিশুর জন্ম হচ্ছে কিছু তরুণ-তরুণীর ইচ্ছাকৃত ভুলের কারণে , ভুল যখন ইচ্ছাকৃতভাবেই করা হয় তখন তাকে ভুল না বলে অপরাধ বলাই শ্রেয়তর ।
অতি আধুনিক হবার সাহস থাকলে সেই আধুনিকতার কুফলগুলোর মুখোমুখি হবারও সাহস থাকা উচিত ।আমি সেক্স করবেন ভালো কথা , অসতর্ক থাকবেন আরো ভালো কথা , কিন্তু আপনাদের ভুলের দায় নিয়ে কেন একটা নবজাতক ডাস্টবিনে পড়ে থাকবে ? তার জন্মে তো ভূমিকাটা তার নয় ! তবে সে কেন ভিকটিম হবে ? বিজ্ঞানীরা কনডম আবিষ্কার করেছেন বহু আগে , একটা প্রতিষেধক থাকা সত্ত্বেও কেন আপনি অসতর্ক হবেন ? যারা এই দেশটায় আধুনিক ইউরোপ আমেরিকার মুক্তমনা সমাজব্যবস্থা দেখতে চান তারা আগে ওদের মত সাহসী হতে শিখুন ।
তাছাড়া আপনি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়াবেনই বা কেন ? ধর্ম আপনার মনে একটুও দাগ কাটেনি ? যাকে ভালোবাসেন তার জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে পারলেন না ? মেয়েরা কি নিজের পরিণতির কথা একবারও ভাবতে পারে না ? পুরুষটা মায়া-দয়াহীন হতে পারে কিন্তু একজন নারী কিভাবে তার সন্তানকে ডাস্টবিনে ছুড়ে আসতে পারে ?
আর হ্যাঁ , এরপরেও যদি নিজেদের শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তবে তবে সত্যটা প্রকাশের সাহস রাখুন ।কোন বেশ্যা নিশ্চয়ই তার অনৈতিক সম্পর্কের ফলে জন্ম নেয়া সন্তানকে রাস্তায় ফেলে আসে না , এটা আমাদের সভ্য সমাজের সভ্য মানুষরাই ।এরাই রাস্তায় ভালোমানুষির সার্টিফিকেট নিয়ে ঘুরে বেড়ায় , এদের মুখের ফুলঝুড়ি ছোট নৈতিকতা আর মূল্যবোধের ।আর এই তারাই দিনে দুপুরে অবৈধ যৌনপূর্তি করে ! আদুল গায়ে ঘাম ছড়িয়ে সুখ মেটায় !
এই সমাজ ঐ বাচ্চাটাকে অবৈধ বলে ! কেন ? বাচ্চাটা কেন অবৈধ হবে ? তার কি দোষ ছিল ? যাদের ভুলের জন্য তাকে অবৈধ বলা হল তাদের কোন দোষ নেই ?? ঐ বাচ্চাটা অবৈধ না , বরং "অবৈধ" তার "বাবা-মা" !!
সন্তান "অবৈধ" নয় , বরং "অবৈধ" তার "পিতামাতা"
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
এক্স লইয়া কি করিব
যাচ্ছিলাম সেগুনবাগিচা। রিকশাওয়ালার সিট কভারটা খুব চমৎকার। হাতে সেলাইকরা কাঁথা মোড়ানো। সুন্দর নকশা-টকশা করা। নর্মালি এররকম দেখা যায় না। শৈল্পিক একটা ব্যাপার। শুধু সিটকভার দেইখাই তার-সাথে কোন দামাদামি না কইরা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইলিশনামা~ ১
১৯৮৫ সালে ডক্টর মোকাম্মেল হোসাইন ‘ ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে যেই রিসার্চ পেপারটা( থিসিস – এম এস এর জন্য) জমা দিয়েছিলেন সেটা এখানে মিলবে;
[link|https://open.library.ubc.ca/cIRcle/collections/ubctheses/831/items/1.0096089|Spawning times and early life history of... ...বাকিটুকু পড়ুন
সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার | SAD
শীতকালীন সর্দি-কাশি, জ্বর, হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, কনজাংকটিভাটিস, নিউমোনিয়া কিংবা খুশকি মতো কমন রোগের কথা আমরা জানি। উইন্টার ডিসঅর্ডার বা শীতকালীন হতাশা নামক রোগের কথা কখনো শুনেছেন? যে ডিসঅর্ডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন
চট্টগ্রাম আদালত চত্বরের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি
আজ চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা নানান গুজব ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা এড়াতে প্রকৃত ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে... ...বাকিটুকু পড়ুন