Bismillahir Rahmanir Rahim
Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]
আপনি যদি উত্তরা রাজউক স্কুলে পড়েন তাহলে অবশ্যই আপনাকে সে স্কুলের নিয়ম কানুন অনুসরন করতে হবে এবং আপনাকে S.S.C/H.S.C দিতে হবে। আর যদি স্কলাস্টিকাতে পড়েন তাহলে আপনাকে সেই স্কুলের নিয়ম মেনে চলে O Level/ A Level দিতে হবে। সারা বছর রাজউকে পড়ে আপনি যেমন O Level/ A Level দিতে পারবেন না, তেমনি সারা বছর স্কলাস্টিকাতে পড়ে আপনি S.S.C/H.S.C দিতে পারবেন না। দিলে কি হবে? নিশ্চিত ফেল করবেন।
আপনি বলছেন, আপনি একজন মুসলিম। আপনার বাবা-দাদা মুসলিম ছিল। সেই সূত্রে আপনিও মুসলিম ঘরে জন্ম নিয়ে মুসলিম হয়েছেন। কিন্তু আপনি কি একজন মুসলিমের মত আচরন করছেন?
একজন মুসলিম অবশ্যই ইসলামিক নিয়মে চলবে। ইসলামিক নিয়মে চলার মানে কি? মানে হলো- তার কথাবার্তা, চালচলন, পোশাক পরিচ্ছদ, অর্থ উপার্জন ও খরচ, ইবাদত প্রনালী ইত্যাদি জীবনের যা কিছু লাগে সেটা আল্লাহ্র নিয়মে পালন করা।
যদি মুসলিম হিসাবে নিজেকে দাবি করেন, তাহলে বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, সত্যি কি আপনি আল্লাহ্র নিয়মগুলো পালন করছেন? ইসলামে বলা আছে মদ খাওয়া যাবে না, কিন্তু আপনি খাচ্ছেন। ইসলামে বলা আছে, সুদ খাওয়া যাবে না, আপনি খাচ্ছেন। ঘুষ খাওয়া যাবে না, আপনি খাচ্ছেন। ইসলাম বলে আপনাকে পর্দা করতে, কিন্তু আপনি করছেন না। ইসলাম বলে শিরক ছাড়া ইবাদত করতে, আপনি শিরক করছেন। ইসলাম বলে হালাল-হারাম মেনে চলতে, কিন্তু আপনি তা করছেন না। এরকম বহু কিছু বলা যায়। যার উত্তর হবে নেগেটিভ। কিন্তু তারপরেও আপনি বলেন যে আপনি মুসলিম। কিভাবে বলেন?
এই দুনিয়াটা তো একটা পরীক্ষা স্বরূপ, সেটা আপনি মানেন অথবা না মানেন। আপনি সারা বছর চলছেন নিজের নিয়মে কিন্তু বলছেন মুসলিম হিসাবে দুনিয়াতে চলছি । সারা বছর রাজউক স্কুলে পড়ে আপনি এখন O Level দিতে চান। ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে গেলো না।
ধরা যাক আপনি একজন নারী। নিজেকে মুসলিম নারী বলছেন। মুসলিম মানে হলো যে আল্লাহ্র আদেশ নিষেধ মেনে চলবে। তাহলে আপনি কেনো পর্দা মেনে চলছেন না ? আল্লাহ্ তো পর্দার নির্দেশ দিয়েছেন। নিজে পর্দা করছেন না আবার যারা পর্দা করছে তাঁদের কটাক্ষ করছেন। আপনার কেনো মনে হয় যে, পর্দা করলে নারী পিছিয়ে পড়বে? নারীদের অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হবে? নারীদের ঘর হতে বের হওয়া যাবে না ? নারীরা চাকরি করতে পারবে না ? আপনি নারী অথবা পুরুষ যাই হোন না কেনো, ইসলামের অন্য বিধান গুলোর ব্যাপারগুলোতেও আপনার এমন নেগেটিভ চিন্তা আসে। কেনো আসে?
কারণ আপনার এসব চিন্তা ছোট বেলাতেই আপনার মাথাতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনার বাবা-মা, আপনার স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, আপনার বন্ধু বান্ধব, আপনার নাটক-সিনেমা, আপনার বই- অর্থাৎ আপনার আশেপাশের পরিবেশ আপনার মনের ভিতর এই ভুল চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছে।অবাক হচ্ছেন? কিন্তু এটাই সত্যি।
আপনিতো অনেক পড়াশুনা করেন, জানেন, বড় বড় অনেক ডিগ্রীও হয়তো আপনার ঝুলিতে। কিন্তু আপনি কখনো ইসলামের আদেশ নিষেধ নিয়ে, নিয়ম কানুন নিয়ে পড়েছেন ? ইসলামে কি কোথাও আছে নারীকে অবরুদ্ধ করে রাখার কথা? নারীর অবমাননার কথা? আপনি পড়ুন, যাচাই করুন।
আমার পরিচিত একজন ষাটোর্দ্ধ মহিলা আছেন। কোন এক অজানা কারণে তিনি বিয়ে করেননি। জীবনটাকে তিনি নারী আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা করেই কাটিয়ে দিচ্ছেন। তার গবেষণার লেখাগুলো পড়লে অনেক ভালো লাগে। নিজের দেশের মেয়েদের অবস্থার কথা জানা যায়। উনাকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, “আপা, আপনি তো কত জানেনে, বুঝেন কিন্তু কোরআন টা পড়েন না কেনো?” উত্তরে বলেছিলেন, “ভয় লাগে, আরবি বুঝি না। তার উপর বাংলা অনুবাদ ঠিক না বেঠিক কিভাবে বুঝবো”। বললাম, “সব আলেম যেটা প্রাধান্য দিয়েছেন সেটা পড়লেই তো আর সমস্যা নেই”। তিনি বললেন, “নাহ, পড়তে ইচ্ছা করে না। পড়লেই তো মানতে হবে”। আমি দুঃখ পেয়েছিলাম।
এখন বলি, কেনো আপনি ব্যক্তি জীবনে, পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে ইসলামিক নিয়ম মেনে চলতে চাচ্ছেন না বা ইসলামিক আইন প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন না। কারণ আপনিও ভয় পান। আপনি ভয় পান যে, ইসলামিক নিয়ম মানলে আর স্বেচ্ছাচারিতা থাকবে না, নিজের খেয়াল খুশী মত চলা যাবে না, নিজের বড়ত্ব প্রকাশ করা যাবে না, নিজের আধিপত্য বিস্তার করা যাবে না। বাকস্বাধীনতার নামে যা ইচ্ছা তাই বলতে পারবেন না। তাই আপনার মনে হবে কোরআন এইটা না বললেই পারতো। কোরআন এর কিছু অংশ আপনি সুবিধা মত মানবেন। মেনে বলবেন যে, দেখো আমি তো কোরআন মানছি। আবার নিজের সুবিধা মত ব্যাখ্যা করে নিবেন। বলবেন যে, দেখো কোরআন তখনকার সময় অনুযায়ী নাযিল হয়েছিল। তাই ব্যাপারটা এই যামানার সাথে যায় না। আপনি হতে চান একজন মডারেট মুসলিম।
আপনি কোরআন পড়ুন, সব কিছু যাচাই করুন। বুঝতে না পারলে কোন আলেমের সাহায্য নিন। যাচাই করার পরে, বুঝার পরেও যদি আপনি না মানেন তাহলে বুঝতে হবে আপনি ধরা খেয়ে গিয়েছেন। আপনার আত্মা ধরা খেয়ে গিয়েছে। ধরা খেয়ে গিয়েছে শয়তানের হাতে। আর আল্লাহ্ তো বলেই দিয়েছেন যে, শয়তান আমাদের প্রকাশ্য শ্ত্রু। আপনি আপনার শত্রুর দ্বারা পরিবেষ্টিত।