somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জোর যার মুল্লুক তার !

০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবের কথা সবার নিশ্চয়ই মনে আছে ? বিগত সরকারের সময়ে প্রণীত নতুন ক্যারিকুলামের বিরুদ্ধে পাবলিকলি প্রতিবাদ করে যাকে চাকুরি হারাতে হয়েছিলো। মাহতাব সাহেব সপ্তম শ্রেনীর শারীরিক শিক্ষা বইয়ের জেন্ডার সংক্রান্ত চ্যাপ্টার নিয়ে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তার অভিযোগ ছিলো সরকার বইয়ে এলজিবিটিকিউ লেখা অন্তর্ভুক্ত করে বাচ্চাদের কোমল মনকে কলঙ্কিত করতে চায়। এই ঘটনার জল অনেকদূর পর্যন্ত গড়িয়েছিলো। যারা ক্ষমতাসীন ছিলেন এবং যারা ক্ষমতাসীনদের সাপোর্ট করতেন তাদের রোষের মুখে পড়ে ব্রাক ইউনিভার্সিটি আসিফ মাহতাব কে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করে । আসিফ স্যার কে লঘু পাপে গুরু দন্ড দেয়া হয়েছিলো।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের ক্ষমতায় নতুন সরকার আসলো। বিগত সরকার স্বৈরাচারী মনোভাবের ছিলো বিধায় লঘু পাপে গুরু দন্ড দেয়া খুবই সাধারণ ঘটনা ছিলো। তবে আসিফ মাহতাব স্যারের ঘটনার প্রছন্ন প্রভাব ঠিকই সমাজে থেকে গেল। এখন যারা ক্ষমতাসীনদের সাপোর্টার তাদের দাবীর মুখে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন একই রকম ব্যবস্থা নিয়েছে। জোর যার মুল্লুক তার - এই প্রবাদের বাস্তব প্রতিফলন আমরা সমাজে দেখতে পাচ্ছি।

গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা - ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে সোমবার সারাদেশে পালিত হয়। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো ড্যাফোডিলের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৩য়/৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু খন্ডকালীন শিক্ষক তাহমিনা রহমান তাদের মিছিলে অংশ না নিতে চাপ দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের হুমকি দেন ডাবল এবসেন্ট দিবেন বলে। প্রাইভেট গ্রুপের আলাপ পাব্লিক হওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় তা ভাইরাল হয়ে যায়। একশ্রেণীর মানুষ জনমত গঠন করে ম্যাডাম কে বরখাস্তের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবী তুলে। কতৃপক্ষ সমালোচনার মুখে ম্যাডাম কে চাকুরি থেকে এখন সাময়িক ও ভবিষ্যতে স্থায়ী ভাবে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখানে সবসময় প্রভাব বিস্তার করে তারাই যাদের সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় থাকে। উক্ত ঘটনায় ম্যাডামের ক্যারেক্টার এস্যাসিনেশন করা হলো, চাকুরি খেয়ে দেয়া হলো, ইয়াহুদী-নাসাদের দালাল ট্যাগ দেয়া হলো। কেউ ম্যাডামের বক্তব্যের ব্যাখ্যা বা ক্ষমা চাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে নাই। এমনভাবে শোরগোল করা হলো ড্যাফোডিল কতৃপক্ষ বিষয়টিতে অন্যকারো হস্তক্ষেপের পূর্বে নিজেরাই ব্রাকের দেখানো পথ অনুসরণ করলো।

ম্যাডাম কি চাকুরি চলে যাওয়ার মতো কোনো অপরাধ করেছে ? শাস্তি হিসাবে কতৃপক্ষ উনাকে মিছিলে যেতে নির্দেশ দিতে পারতো। ম্যাডামের বেতনের কিছু অংশ কর্তন করে ফিলিস্তিননে অনুদানের কাজে লাগানো যেত । এভাবে পাবলিক করে কেন উনার ভবিষ্যৎ কে সংকটের মুখে ফেলা হলো ? ম্যাডাম তার ভুলের বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় নাই । সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিকটু লেগেছে যারা প্রাইভেট গ্রুপের মেসেজ পাবলিক করেছে। ম্যাডামের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কতৃপক্ষকে জানাতে পারতো। শিক্ষার্থীরা এখন টিচারদের গণনার মধ্যেই রাখে না। টাকা দিয়ে ডিগ্রী কেনা যায় এই ধারণা যেদিন থেকে সমাজে চালু হয়েছে সেদিন থেকে শিক্ষকদের সম্মান কমে গিয়েছে।

ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির কতৃপক্ষ খুব সম্ভবত অফলাইন মবের ভয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতীতে মবের মাধ্যমে সৃষ্ট ঘটনার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় সবার মধ্যেই আতঙ্ক কাজ করছে। ড্যাফোডিল কতৃপক্ষের ভয় যে অমূলক নয় তার প্রমাণ আজকের দিনেও পাওয়া যায়। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর সময় মব ক্রিয়েট করে কেএফসি, পিজ্জা হাট ও বাটার শোরুম ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাক দিয়ে হাজারো পণ্য নষ্ট করা হয়েছে। কক্সবাজারের মতো স্থানে যেখানে পর্যটকের সমাগম হয় সেখানে রেস্টুরেন্টে ভাংচুর হয়েছে। যেহেতু এসবের বিরুদ্ধে কোনো বিচার হবে না তাই আগে থেকেই ড্যাফোডিল কতৃপক্ষ প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে।

দেশে আজ থেকে শুরু হয়েছে চারদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন। এমন সময় যদি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশের সুযোগে কেউ অশান্তি সৃষ্টি করতে মাঠে নামতে চায় তার জন্য সরকারের উচিত আগে থেকেই ব্যবস্থা নেয়া । এমন ঘটনা প্রথমবার নয় যে সরকার সামাল দিতে পারবে না। জাতিসংঘের মহাসচিব যখন দেশে এসেছিলেন তখনো দেশে মব আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছিলো। পহেলা বৈশাখের আর মাত্র সপ্তাহখানেক সময় বাকি আছে। গতমাসেই আন্দাজ করেছিলাম দিন যত ঘনিয়ে আসবে কেউ না কেউ মাঠে নেমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করবে। ;)

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৪৭
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×