somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কন্যা শামাকে ঘিরে মা দিবসে শাহেদার স্ট্যাটাস

০৯ ই মে, ২০১৬ ভোর ৬:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
প্রফেসর শাহেদার সেই মর্মস্পর্শী স্ট্যাটসটি পাঠক বর্গের জন্য তুলে ধরা হলোঃ


আজ, ৮ ই মে ২০১৬, আজ নাকি বিশ্ব মা দিবস ! আমার এ দিবসটি নিয়ে ব্যাক্তিগত ভাবে ভীষণ রকম আপত্তি আছে। কারণ আমি মনে বছরের প্রতিটি দিনই মা দিবস হওয়া উচিত। যে মা ৯ মাস গর্ভে ধারণ, নিজের রক্ত ও প্রাণ দিয়ে আমাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন, যিনি আমার বাবার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, যার জন্য আজ আমার সবটুকু অস্তিত্ব , যার পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্থ I তার জন্য আমার প্রতিটি নিশ্বাস উৎসর্গর্গ করলেও কিছুই করা হয় না। তার জন্য আবার একটি দিবস কি ? ৩৬৫ দিনই তার জন্য নিবেদিত। বন্ধরা, আপনারা দেখেছেন প্রতি বছর মা দিবসে আমি এ সম্পর্কিত পোস্ট দিয়েছি।আজ আপনাদের একজন হতভাগা মা এর গল্প শোনাবো। যদি সময় হয় পড়বেন দয়া করে।
এক মা এর একটি মাত্র কন্যা সন্তান। মা চাকুরী করেন , বাবা রাজনীতি / ব্যবসা জাতীয় কিছু করেন। এবং সে সূত্রে সংসারে একেবারে সময় দিতে পারেন না বা দেন না I দিনরাত বলতে গেলে বাইরেই থাকেন । অনেক সময় বছরের বছর এমন জায়গায় থাকতে বাধ্য হন যেখানে তার স্ত্রী, কন্যা বা পরিবার দেখা করতে হলে অনেক বাধা পার হতে হয়। তাও আবার ১৫ দিন পর পরই এ অবস্থায়; সে মা বহু প্রতিকুলতা পেরিয়ে ,বদলির চাকরি করে ও এক মাত্র কন্যা কে অবলম্বন বানিয়ে দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ স্কুল, কলেজ পড়িয়ে এইচ এস সি পাশ করলো সে কন্যাটি কে। কোনো দিন বুঝতেও দেন নি তার বাবার অনুপস্থিতি, বা কোনো রকম কষ্ট। HSC পাশ করানোর পর মা এর খুব ইচ্ছা কন্যাকে আমেরিকা তে কম্পিউটার ইঞ্জিনীয়ারিং পড়াবে এবং সে ভাবে চেষ্টা করতে থাকলো সেই মা। এর মধ্যে সে আদরের কন্যাটি স্বজ্ঞানে জেনে শুনে একটি সামাজিক বিপর্যয় ডেকে আনলো। কন্যার বাবা তো ভীষণ ক্ষেপে গেলেন এবং কন্যার সাথে সম্পর্ক ই প্রায় রাখবেন না এমন অবস্থা দাড়ালো ।কিন্তু মা হাল ছাড়েন নি ।
তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে কন্যা কে সে বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করে যত দ্রুত সম্ভব তাকে আমেরিকা প্রবাসী তার মামার কাছে পাঠিয়ে উচ্চতর পড়া শুনার ব্যাবস্থা করার জন্য পাগলের মত ছুটোছুটি আরম্ভ করলেন।
এদিকে আরেক সমস্যা দেখা দিল, কন্যার বাবা মেয়ে কে কিছুতেই আমেরিকা পাঠাতে রাজি না এবং বলে দিলেন তিনি এক টাকা ও দেবেন না ।বাবা কন্যার মধ্যে সম্পর্ক নেই বললে ই চলে Iকিন্তু মা লেগে ই থাকলেন এবং অতি সংগোপনে আমেরিকার ভিসা করে কন্যার নানির সাথে আমেরিকা পাঠিয়ে দিলেন এবং তাকে এগিয়ে দিতে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত্য গেলেন। কন্যা কে তো পাঠিয়ে দিলেন কিন্তু তার ঘটানো সেই সামাজিক বিপর্যয়ের পরবর্তী মাশুল গুলো দিতে হলো মাকেই। বেচারী নিরবে সব মুখ বুজে সয়ে নিল কলজের টুকরা সন্তানের জন্য।আমেরিকায় , নিজ খরচে , টাকা কে ডলার এ রুপান্তরিত করে পড়া ভীষণ কষ্ট, কিন্তু মা এর যে চাকরি তাতে বাড়তি উপার্জনের কোনো সুযোগ নেই ।এটি ১৯৯৩ এর জানুয়ারী মাসের কথা। অগত্যা মা জীবনে যা করেনি, টিউশন পড়ানো আরম্ভ করলেন। গ্রীন রোডে দুটো রুম ভাড়া নিলেন পড়ানোর জন্য।সকাল ৯ থেকে ২.৩০ মিনিট পর্যন্ত্য পুরানো ঢাকায় চাকরি স্থল, সেখান থেকে নিজে ডান হাথে গাড়ি চালিয়ে আর বাম হাথে পাশের সীটে রাখা কিছু শুকনো খাবার খেতে খেতে গ্রীন রোডে চলে যেতেন।
তারপর ৩-৪ , ৪-৫, ৫-৬ পর্যন্ত্য তিন ব্যাচ ছাত্রী পড়িয়ে,আবার সেখান থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে মালিবাগ আরেকটি চাকরি করতেন Iতা সেরে বনানী বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ৯-১০ টা বেজে যেত I একটু ও ক্লান্তি নেই মহিলার কারণ মাথায় তখন একটি মাত্র চিন্তা, য়ে মেয়েকে আমেরিকায় টাকা পাঠাতে হবে i বাবা কখনো সখনো 20 টাকা লাগলে 2 টাকা দিতেন । এভাবে চললো দু বছর । তার মধ্যে আবার সেই মা ই বহু কষ্টে ছুটি নিয়ে প্রতি বছর মামার বাসায় থেকে লেখা পড়া করা মেয়ে কে দেখতে, সাহস দিতে ছুটে যেতেন আমেরিকা ।পাশা পাশি মেয়ে কে বিয়ে দেবার জন্য পাত্র খুজতে থাকেন মা । বাবার অবশ্য কোনো চিন্তা নেই,তবে মানুষের কাছে খুব গর্ব করে বলতেন আমার কন্যা আমেরিকাতে computer Engineering পড়ছে । কিন্তু খোজ খবর নেয়া বা আর্থিক দিক নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা ই ছিল না।
দু বছর বাদে মা-ই কন্যার বিয়ে দিলেন আমেরিকায় থাকা computer Engineer পাশা পাশি বিশাল business man পাত্রের সাথে ১৯৯৪ এর ডিসেম্বর মাসে I খুব ধুম ধাম সেই বিয়ের আয়োজন এর ৭০ ভাগ ই মা করলেন I বাবা যেন নিজ কন্যার বিয়েতে সব চেয়ে বড় মেহমান ।যা হোক কন্যা তার স্বামীর সাথে আমেরিকা ফিরে গেল । পড়া লেখা শেষ হলো । Computer ইঞ্জিনিয়ার হলো I সেখানে খুব ভালো চাকরি ও করলো । এর মধ্যে তাদের সন্তান ও হলো । এরপর থেকে সেই আদরের মেয়ের রূপ পাল্টাতে আরম্ভও হলো ।১৯৯৮ এ একবার দেশে রাজনৈতিক কারণে সেই মা খুব বিপদে পড়লো, তাও আবার তার স্বামীর কারণে । তখন মা উপায় না দেখে আমেরিকা মেয়ের কাছে চলে গেল । দু মাস পর মেয়ে মা কে বলল ” তুমি অমুক স্টেট এ তোমার বন্ধু তাহিয়া আন্টির কাছে চলে যাও ” অর্থাত সে বিপদে পড়ে আশ্রয় নেয়া মাকে তার বাড়ি থেক্কে বের করে দিল । বিপদে পরে মা অন্য স্টেট এ চলে গেল ঠিক ই তবে খুব কষ্টে দু মাস বন্ধুর বাসায় কাটিয়ে নিরুপায় হয়ে দেশে ফিরে এলো । ততদিনে সমস্যা টি অনেকটা কেটে গেছে।r1
সেই মেয়ে ১৬ বছর আমেরিকায় থাকলো । তার মা নিজের চাকরির পরোয়া না করে প্রতি বছর মেয়ের এবং নাতি দের টানে আমেরিকা ছুটে যেতো । তবে এ ১৬ বছরে মেয়ের বাবা একবার ও মেয়ে কে দেখতে আমেরিকা যায় নাই । ২০০৫ সালের শেষ ভাগে মেয়ে জামাই সন্তান সহ একেবারে দেশে ফিরে এলো, কারণ মেয়ের শশ্বুর মারা গেছে এবং বিশাল ব্যাবসা দেখা শুনা করতে হবে । ইতিমধ্যে মেয়ের বাবা ও খুব অসুস্থ হয়ে পড়লো । তখন থেকে ই মেয়ে বাবার জায়গায় রাজনীতি . করবে সে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে ।এর মধ্যে সেই মেয়ের বাবা মারা যায়। বেচে থাকতে বাবার সাথে চরম দূর্ব্যেবহার সহ বহু ঘটনা ঘটালো । তার যে একজন মা ছিল তা সে তার বাবার মৃত্যুর পর একেবারে ভুলে ই শুধু গেল না, মানুষের সামনে সেই মা কে যাচ্ছে তাই অপমান, অপদস্থ করতে থাকলো। মা মনের এক রাশ কষ্ট নিয়ে আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিল I আজ সেই মেয়ে একটি রাজনৈতিক দলের একটি পদ পেয়ে মনে করে যে সে বিশাল কিছু হয়ে গেছে । গত ৯ বছরে বর্তমানে তার ৬৬ বছর বয়সী অসুস্থ মা এর সাথে কোনো সম্পর্ক রাখে নাই , ফোনে করে কোনো খোজ ও নয় না । রাজনীতির কারণে বিভিন্ন সময় টিভি বা এখানে সেখানে সাক্ষাতকারে একটি বারো তার মা এর নামটি উচ্ছারন করে না, কিন্তু নিজেকে Computer engineer বলে গর্ব করে ।সে ভুলে গেছে যে ক্লাস ৮ পাশ করার পর সে science পড়তে ই চায় নাই, তার বাবা ও তার মত ই ভেবে ছিল যা একটা কিছু পড়লে ই হলো । মেয়ে তো , দুদিন বাদে বিয়ে হয়ে যাবে । তার মা ই রীতি মত যুদ্ধ করে তাকে science পড়তে বাধ্য করেছিল, যার ফলে আজ সে Computer Engineer I একবার ও কি ভাবে না কার রক্ত পানি করা শ্রমে আজ তার এ অবস্থান ! সে তো সেই কবে ১৯৯২ তে নিজের সর্বোচ্ছ ক্ষতি করে ই ফেলেছিল ! তার বাবার তো কোনদিন তার লেখা পড়া, বড় হওয়া, বিয়ের আয়োজন কোথাও কোনো ভুমিকা ছিল না I কোথা থেকে তুলে এনে তার মা তাকে আজকের অবস্থানের উপযুক্ত করেছে । যে মা এর সন্তান হয় না তাদের অনেক কষ্ট সন্দেহ নেই । কিন্তু যে মা এর সন্তান থাকা সত্বে ও সেই সন্তান নিজ স্বার্থের জন্য শেষ বয়সে মাকে চায়ের কাপে পড়ে যাওয়া মাছির মত উঠিয়ে আস্তাকুড়ে ফেলে দেয় সেই মা এর কষ্ট যে কি, তা যে ভোগ করে সে ই একমাত্র বোঝে…
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৬ ভোর ৬:৪২
২০টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাষ্ট্রদূত নিয়োগ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তুঘলকি কান্ড !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৪৪

৫ই নভেম্বর অন্তবর্তীকালীন সরকারের তিন মাস পূর্ণ হয়েছে। চারিদিকে আলোচনা চলছে এই সরকারের সময়ে কোন মন্ত্রণালয় কেমন পারফরম্যান্স করেছে তা নিয়ে। আলোচনা হচ্ছে অতি গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকানরা ভীষণ কনজারভেটিভ

লিখেছেন মুনতাসির, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:২৬

আমেরিকা নিয়ে মন্তব্য করার যোগ্যতা আমার নেই—এটা প্রথমেই বলে ফেলা ভালো। আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতার কথা বলছি। আমেরিকা তথা উত্তর আমেরিকাতে আমার যাওয়া হয়েছে বেশ কিছুবার। সবগুলো ভ্রমণ যোগ করলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্রগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের এসিড হামলা সাত পুলিশ আহত।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩

এসিড নিক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্য



চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×