আমি কাজের ফাকে একটু সময় পেলেই ছুটে চলি এইদেশ সেইদেশে, অন্য দেশে যেতে যেহেতু ভিসার জটিলতা থাকে তাই আগে থেকেই ভিসা ম্যানেজ করে রাখতে হয়। নিজে ভিসা করতে না পারলে এজেন্টকে দিতে হয় অনেগুলি টাকা, যদিও সব দেশের ভিসাই নিজে নিজে করা যায়। শুধু একটু সময় আর ধৈর্য্য লাগে, আপনি যে কাজটা করতেন এজেন্টও কিন্তু সেই কাজটাই করে। যারা ঘুরতে গিয়ে আর ফিরে আসতে চাচ্ছেন না তাদের বিষয়টা ভিন্ন, তারা সাধারনত এজেন্টের সাথে মোটা অংকের টাকায় চুক্তি করে ভিসার জন্য।
আমি এখন পর্যন্ত ইউরোপ আমেরিকা কানাডা অষ্ট্রেলিয়া সব দেশের ভিসাই নিজে নিজে করেছি, আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত কোন দেশের ভিসাই রিজেক্ট আসেনি।
.
গত মাসে খামখেয়ালি করেই নিউজিল্যান্ড এর ভিসা করলাম, শুরুতে অনেক কঠিন মনে হলেও শেষ পর্যন্ত ২০ দিনের মধ্যেই ভিসা পেয়ে গেছি ১ বছরের মাল্ট্রি এন্ট্রি। আমাদের দেশের অনেকেই নিউজিল্যান্ডে ঘুরতে যেতে ইচ্ছুক তাই ভাবলাম ভিসার প্রসিডিউরটা একটু শেয়ার করি, যদি কারো কোন কাজে লাগে।
.
শুরুতে আপনাকে এই লিংকে একটা একাউন্ট করতে হবে, সাধারনত আপনার ইমেইল মোবাইল নাম্বার দিয়েই একাউন্ট করতে পারবেন।
একাউন্ট করা হয়ে গেলে এপ্লিকেশনের ষ্টেপগুলি ফলো করতে হবে
১. ভিসার ক্লাস (আমি টেম্পোরারি এন্ট্রি দিয়েছিলাম)
২. জানতে চাওয়া হবে আপনি নিউজিল্যান্ডে আছেন নাকি বাহির থেকে এপ্লিকেশন করছেন (আমি যেহেতু সিঙ্গাপুর থেকে এপ্লাই করেছি তাই আউটসাইড অফ নিউজিল্যান্ড দিয়েছেি)।
৩. আপনার কি ধরনের ভিসা লাগবে ( আমি ভিজিটর দিয়েছিলাম)
৪. আপনি অষ্ট্রেলিয়ার সিটিজেন বা পার্মান্যান্ট রেসিডেন্ট কিনা জানতে চাইবে (আমি না দিয়েছি)
৫. পারপাস অফ ভিজিট জানতে চাইবে (আমি টুরিজম এবং হলিডে দিয়েছিলাম)
৬. আপনি নিউজিল্যান্ডে কেন আসবেন জানতে চাইবে (আমি হলিডে এবং ভ্যাকেশন দিয়েছিলাম)
এখন ভিসা এপ্লিকেশনের মেইন পেইজে যাবেন - (স্টার্ট মাই ভিসা এপ্লিকেশনে ক্লিক করলেই শুরু) আপনার এপ্লিকেশন ড্রাফট দেখাবে এখান থেকে কন্টিনিউতে ক্লিক করতে হবে।
এই পেইজে আপনাকে কিছু ছোট ছোট প্রশ্ন করা হবে, আপনার জন্য যেটা প্রজোয্য সেটাতে টিক দেবেন এবং পাসপোর্ট ডিটেইলস চাওয়া হবে, সবকিছু আপনার পাসপোর্ট দেখে দেখে ফিল-আপ করলেই চলবে। যেহেতু ই-ভিসা ইস্যু করবে সুতরাং সকল তথ্য নির্ভুল ভাবে দেয়ার চেষ্টা করবেন।
পরের পেইজে আপনার ভ্রমণের ডিটেইলস চাইবে, নিজে নিজে একটা ট্রাভেল প্লান তৈরী করে নিতে পারেন অথবা কারো কাছ থেকে কপি করে একটু কাটছাট করতে পারেন (আমি ১৪ দিনের প্লান দিয়েছিলাম অনলাইনে খুজে খুজে)
এখানে একটা বিষয়, এরা জানতে চাইবে আপনি কি সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা চাচ্ছেন নাকি মাল্টি এন্ট্রি। আমি সিঙ্গেল এন্ট্রি লিখেছিলাম যদিও আমাকে মাল্টি এন্ট্রি ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। মাল্টি এন্ট্রি সিলেক্ট করলে এডিশনাল অনেক ডকুমেন্ট দিতে হয়, আমার কাছে এটা একটা প্যারা মনে হয়েছে।
যা যা ডকুমেন্ট আপনার হাতে লাগবে -
১. আপনার পাসপোর্ট সাইজের ছবি
২. আপনার পাসপোর্ট কপি
৩. ন্যাশনাল আইডি কার্ডের কপি
৪. আপনি বাংলাদেশের বাহিরে থাকলে ঐ দেশের রেসিডেন্ট কপি (বাংলাদেশ থেকে এপ্লিকেশন করলে এই পার্ট বাধ)
৫. ছুটির অনুমতি পত্র (বিজনেসম্যানদের জন্য কি ডকুমেন্ট লাগে আমার জানা নাই)
৬. আপনি জব হোল্ডার হলে কোম্পানির লেটার গত ৬ মাসের সেলেরি ম্যানশন করলে ভাল হয়।
৭. ৩ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
৮. হোটেল রিজার্ভেশন (বুকিং ডটকম থেকে ক্যান্সেল অপশন আছে এমন হোটেল বুকিং করতে পারেন, যাতে ভিসা হওয়ার পর হোটেল ক্যান্সেল করতে পারেন। এপ্লিকেশনের সময় ভাল মানের হোটেল দেখাতে পারলে ভাল হয়)
৯. এয়ার টিকেট বুকিং কপি (এটা অনলাইনেও নিতে পারেন অথবা পরিচিত ট্রাভেল্স থেকেও নিতে পারেন)
সবডকুমেন্টস দিয়ে ভাল করে একবার চেক করে নিয়ে পেমেন্ট অপশনে গিয়ে ২৪০ ডলার ফি দিতে হবে।
.
আপাতত আপনার কাজ শেষ, সেইম ডে অথবা একদিন পর আপনার এপ্লিকেশন রিসিপ হয়েছে এমন কনফার্মেশন মেইল পাবেন। ২০ দিনের মধ্যেই ই-ভিসা এপ্রুভ মেইল চলে আসবে, তবে আমার ক্ষেত্রে এক্সট্রা কিছু ডকুমেন্ট চেয়েছিল যা দেয়ার ২দিন পরই ভিসা হয়ে গেছে।
আমার ভিসা সাপোর্ট হিসাবে এড করে আমার উয়াইফের জন্য এপ্লাই করার ৭ দিনের মধ্যেই এপ্রুভ হয়ে গেছে।
.
আপনার হাতে এখন নিউজিল্যান্ড এর ১ বছরের মাল্ট্রি এন্ট্রি ভিসা আছে, সময় সুযোগ করে ঘুরে আসতেই পারেন কিছু দিনের জন্য। ঘুরাফেরা শেষে সুন্দর করে একটা ছবি ব্লগ দিতে ভুল করবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯