পর্ব হিসাবে লেখতে গিয়ে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা হয় তা আগের পর্ব কোথায় শেষ করেছিলাম এবং আগের পর্বের মুড এই পর্বে নিয়ে আসা, তারপরও স্বাভাবিক ভাবেই লেখতে চেষ্টা করছি।
লাল ইমিগ্রেশন বিল্ডিংএ এসে দেখলাম এলাহী কান্ড, মানুষ আর মানুষ। এত মানুষ এখানে কি করে ভেবেই অবাক হলাম। যতজন যাত্রী তারচেয়ে বেশি মনেহয় দালাল হবে, কেউ এসে বলছে টেক্স দিয়ে দেবে কেউ বলছে এই সেই করে দেবে।
স্থলপথে ইন্ডিয়া আসতে ৫০০ টাকা ট্রাভেল টেক্স দিতে হয়, এটা ঢাকা থেকেই দিয়ে আসা যায়। যারা সময়ের অভাবে দিতে পারবেন না তারা ১ থেকে ২ ঘন্টার লাইনে দাড়িয়ে দিতে হবে, তাতে করে আপনার ইমিগ্রেশনের প্রসেস অনেক লম্বা হবে এমনকি বেশি দেড়ি হওয়ার জন্য বাসও মিস করতে হতে পারে।
বাসের সুপারভাইজারকে দিয়ে টেক্স দেয়া যায়, তাতে ১৫০ টাকা বেশি লাগবে সময় কিছুটা কম লাগতে পারে।
আমরা যেহেতু ঢাকা থেকেই ট্রাভেল টেক্স দিয়ে এসেছি সুতরাং এই একটা ঝামেলা থেকে মুক্তি পেলাম, তবে গিন্জিগিন্জি ইমিগ্রেশনে মারাত্বক ভয় করছে, না জানি কত সময় লাগে।
যতদূর বুঝতে পারছি, বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনেই দেড়ি হয় বেশি তবে ইন্ডিয়া ইমিগ্রেশনে তুলনামুলক সময় কম লাগে।
যারা সব সময় এয়ারপোর্ট দিয়ে ইমিগ্রেশন পার হয় তারা এখানে অনেক সমস্যা খুজে পাবে, স্যার স্যার ডাক শুনে অবস্থ মানুষ এখানে বিরক্ত হওয়া ছাড়া কোন উপাই নাই। আমি বিরক্তি সব কাপড়ের সাথে লাগেজে রেখে দিছি, সুতরাং বিরক্তি আমারকে স্পর্শ করতে পারছেনা।
আমরা লাইনে দাড়ালাম, লম্বা লাইন। আমাদের সামনে ৫০/৬০ জন মানুষ হবে। দেখি কত সময় লাগে।
একটা বিষয় বলে রাখা ভাল, আপনার সাথে বাংলাদেশের টাকা ১৫ হাজার এবং ৫ হাজার ইউএস ডলার নিতে পারবেন। তবে ডলার অবশ্যই পাসপোর্টে এন্ডর্স করিয়ে নিতে হবে, আমরা দুজনে ৬ হাজার (আমার ৩ হাজার আর বউয়ের ৩ হাজার) নিয়ে ছিলাম। তবে ইন্ডিয়ান রূপি না নেয়াটাই ভাল, এটা নাকি অবৈধ। চেক করে পেলে তারা রেখে দিবে অথবা ঝামেলা করবে।
আমার সাথে বিদেশী ক্রেডিট কার্ড থাকাতে একটা সুভিধা ছিল, এই টাকার বেশিভাগটাই ফেরত নিয়ে আসছি খরচ বলতে কার্ডে করেছিলাম। হোটেল বুকিং কেনাকাটা ট্রেনের টিকেট যেখানে কার্ড ইউজ করা গেছে সব জায়গাতেই কার্ডে পেমেন্ট করেছি, একটা কার্ড বাড়তি অনেক সুভিদা।
১৫/২০ মিনিটে এয়ারকন রুমে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা আমি ঘন্টা অপেক্ষা করে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে এক প্রকার ক্লান্ত হয়ে গেলাম, লম্বাসময় দাড়িয়ে থাকা সাথে লাগেজ তার উপর অফিসারের অভান্তব অনেক প্রশ্ন, সব মিলিয়ে বাজে এক্সপিরেন্স বলা চলে।
আর একটা কথা, যারা জব করেন তারা অবশ্যই কোম্পানি থেকে এনওসি লেটার নিয়ে আসবেন (সহজ কথায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য ছুটি মন্জুরের একটা কাগজ), যারা ব্যবসা করেন তাদের ট্রেড লাইসেন্সের কপি নতুবা অনেক ঝামেলা করবে। এইসব কেন লাগবে আমি বুঝতে পারিনি। আমিতো দেশেই আছি ছুটিতে তারপরও অনেক প্রশ্নের সম্মুহীন হতে হয়েছে, এইদিকে বউয়ের ভাগ্য ভাল। ইউনিভার্সিটি বন্ধ, সাথে কোন প্রশ্ন করলেই পিছনে থাকা আমাকে দেখিয়ে দিয়েছে। আমি বেচারা মাথা একবার ডানে একবার বামে ঝুকিয়ে সম্মত জানাচ্ছি।
ভ্রমণের সময় একটা কলম অবশ্যই সাথে রাখবেন, বিশেষ করে দরকারি ফর্ম পুরনের জন্য লাগবে। বাসে বসে ইমিগ্রেশন কার্ড পুরন করে নিতে পারেন তাতে কিছুটা হলেও সময় বেচে যাবে, সাধারন কিছু ইনফর্মেশন দিতে হয় কার্ডে।
আমাদেরকে ডলার দেখাতে হয়েছে, মানিব্যাগে কার্ড দেখে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হইছে। অনেকেই কিছুটা বিচলিত হয়ে যান তবে আমি নরমাল ভাবেই উত্তর দিয়ে গেছি, রিফিউজ করে দিলে বাই এয়ারে চলে যাবো। তাতে একটা দিন নষ্ট হলেও পুসিয়ে নেয়া যাবে বিমানে কম সময় লাগিয়ে।
অনেক ঝাক্কি ঝামেলা পার হয়ে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে ইন্ডিয়া ইমিগ্রেশন বিল্ডিংএ এসে পৌছলাম, এখানে লোকজনের ভীর অনেক কম নিয়ম কানুন অনেক সুন্দর। বড় কথা ডিসিপ্লেইন বেশি।
ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে লাগেজ স্ক্যান করে বের হওয়ার সময় ইন্ডিয়ান পুলিশ ১০০ করে দুই জনের জন্য ২০০ টাকা চাইলো, কেন এই টাকা তার কোন উত্তর নেই তবে সবাই দিচ্ছে এবং একজন নিয়মিত ভ্রমণকারি জানাল এটা এখানকার নিয়ম বাধ্যতামুলক দিতে হবে।
এত ঝামেলা করে ইমিগ্রেশন পার হয়ে এই ১০০ টাকার চিন্তা না করেই দিয়ে দিলাম।
ফাইনালি আমরা ইন্ডিয়া পৌছালাম, খুজে টুজে আমাদের বাসকে বের করলাম। সুপারভাইজার ড্রাইভার দুজনেই ঘুমাচ্ছেন। আমরাই প্রথম যাত্রী যারা ইমিগ্রেশন শেষ করে বাসে আসলাম, লাগেজ জমা দিয়ে আমরা বাসে বসলাম। কিছুটা সময় জিড়িয়ে নিতে পারলে মন্ধ হবেনা, সমস্যা হলো বন্ধ বাসে এসি চলবেনা গরমে বসে থেকে মেজাজ খারাপ না করে দুজন একটু এদিক সেদিক হাটতে থাকলাম।
সবচেয়ে জরুরি একটা সীম কিনা, সবার সাথেই যোগাযোগ করা দরকার। নতুবা বাসায় চিন্তা করবে। পাশের টেলিকমের দোকান থেকে এয়ারটেলের একটা সীম নিলাম ১৩০ রুপিতে, সাথে ৮০ রুপিতে ২ জিভি ডাটা কিনলাম। এবার ফেইসবুকিং আর কথা বলেই কাটানো যাবে। ওমা, বউ সুন্দর করে উনার মোবাইলটা এগিয়ে দিলো সীম ডুকিয়ে দেয়ার জন্য। পরে অবশ্যক হটস্পট দিয়ে ডাটা শেয়ার করতে দিছে, যদিও অপরিচিত জায়গাতে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে আরো একটা সীম কিনে নিালম। টাকার চেয়ে নিরাপত্তাটাই বেশি জরুরী মনে হল।
সিমকার্ড কিনতে গিয়ে দেখলাম আমাদের কাছে কোন রুপি নাই, পাশেই মানি এক্সেন্জ দৌড়ে গেলাম টাকা ভাঙ্গাতে। তবে মনে হচ্ছে দাম অনেক কম তাই ফিরে আসলাম, টেলিকমের দোকানি ভাল পরামর্শ দিছে। অল্প কিছু ভাঙ্গিয়ে নিয়ে বাকিটা নিউমার্কেট থেকে ভাঙ্গাতে, ঐখানে রেইট ভালো দিবে। পরামর্শটা মনে ধরছে, তাই করলাম ২০০ ডলার ভাঙ্গিয়ে নিলাম।
বউ চিপস খেতে খেতে হাটছে আমি চায়ের দোকান খুজছি, এক কাপ চায়ে একটা রুটি ভিজিয়ে খেতে পারলে মন্ধ হবেনা।
বউকে বলতেই অগ্নিচোখে কতক্ষন তাকিয়ে থেকে মায়া করে একটু দূরে চায়ের দোকানটাতে নিয়ে গেছে, চা রুটি খেয়ে পানির বোতল হাতে করে বাসে ফিরলাম। এসে দেখি মাত্র ৩/৪ জন যাত্রী এসেছেন, ভিতরে নাকি অনেকে টেক্সের লাইনেই দাড়িয়ে আছে। বন্ধু পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য সুপারভাইজার ভালই আপ্যায়ন করছে, এবার সুন্দর মতেই বল্লো "ভাই যে লাম্বা লাইন, আরো ৩ ঘন্টা লাগবে" আপনি ভিতরে বসেন নতুবা বিরক্ত হয়ে যাবেন।
আমার বিরক্তি যখন কাপড়ের সাথে লাগেজে রেখে দিছি সুতরাং বিরক্ত বা রাগ হওয়ার প্রশ্নই নাই, নিউজপেপার বিছিয়ে সিড়িতে বসে পরলাম। এবার মনে হয় বউ বেশি বিরক্ত। কানের কাছে আস্তে করে বলছে, অন্যভাবে যাওয়া যাবেনা?
আমি হাসলাম তারপর বল্লাম চল খুজে দেখি, নিশ্চয় কোন একটা পথ পাওয়া যাবে।
বাসের সুপারভাইজারকে বল্লাম আমরা চলে যাবো, তারকাছে পরামর্শ চাইলাম কিভাবে যাওয়া যাবে। সে ২টা পথের কথা বলছে,
১. শেয়ার অটোতে বনগা (৩০ রুপি), বন গা থেকে ট্রেনে (১০ রুমি) শেয়ালদা, শেয়ালদা থেকে মেট্রো বা টেক্সিতে কলকাতা নিউ মার্কেট।
২. এখান থেকে বাসে (২৫০/২৮০ রুপি) নিউমার্কেট / ধর্মতলা যাওয়া।
ক্লান্ত শরীরে এমন ভাঙ্গাভাঙ্গিতে যেতে ইচ্ছে হলনা, নিজেরাই খুজে একটা টেক্সি নিলাম। নিউমার্কেট পর্যন্ত ভাড়া ৬৫০ রুপি। এখানেও দালালের দৌড়ঝাপ বেশি, বাসের সুপারভাইজারই শেষপর্যন্ত ঠিক করে দিছে, তাতে করে আমরা নাকি ২/৩ শত রুপি সেইভ করতে পারছি।
এক্সপেডিয়া থেকে The Oberoi Grand, Kolkata বুকিং করা ছিল, টেক্সি আমাদের সেখানেই নামিয়ে দেবে এমন কথা বলেই টেক্সিতে উঠালাম।
আমাদের টেক্সিটা কলকাতা হাইওয়ে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে, হাইওয়েটাকে যশোর রোড ডাকা হয়। এই রোডের দুইপাশে সারিসারি পুরাতন গাছ, ড্রাইভারের কথাতে জানলাম কিছু গাছের বয়স ২০০ বছরেরও বেশি, ঢালপালা কেটে সুন্দর করে রাস্তাটাকে সাজানো হয়েছে।
অনেক কষ্ট করেও বিদেশ বিশেষ ভাব আনতে পারলাম না, কেমন জানি ব্রাহ্মনবাড়িয়ার মতই লাগছে সব কিছু। তবে দোকানের সামনে সাবোর্ডে বাংলা লেখা পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছে "আমরা দেশে নাই, বিদেশে আছি"।
সবুজে ঢাকা গ্রাম্য পরিবেশের একেবেকে রাস্তা হয়ে আমরা কলকাতার পথে এগিয়ে যাচ্ছি, প্রায় ৩ ঘন্টা পথ চলে ৯০ কিঃমিঃ রাস্তা পার হয়ে পৌছালাম আমাদের হোটেলে। আগে থেকেই বুকিং দেয়া ছিল তাই রিসিপশনে তেমন সময় লাগেনি।
ক্লান্ত শরীর কলকাতা না দেখে একটু বিছানা খুজছে, বিশ্রাম জরুরি। রাত্রটা পার হলেযে আমাদের কাল থেকে অনেকককক লম্বা ট্রেন জার্নিতে বের হতে হবে। দেড়ি না করে জটপট ফ্রেশ হয়ে এলিয়ে পরলাম বিছানাতে, ক্লান্ত শরীর ভালই ঘুম হইছে। যখন ঘুম ভাঙ্গছে, ঘরিতে সময় ১টার বেশি। ক্লান্তি শেষ তাই ঘুম ভাঙ্গছে এমনটা বলা যাবেনা, মুলত পেটের ক্ষিদাতে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। বাহিরে বের হওয়ার চেয়ে হোটেলের রেষ্টোরেন্টে কল করে খাবারের অর্ডার করলাম, দাম একটু বেশি হলেও কিছু করার নেই। খেতে যে হবেই, এতবেশি ক্ষিদা যে বাহিরে যাওয়ার শক্তিটুকুও পেলাম না।
খাবার আসতে আসতে আমরা দুজন ফ্রেশ হয়ে নিলাম, প্লান করছি খাবার শেষে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে নিউ মার্কেট যাবো। বাংলাদেশ থেকে যারাই বেড়াতে আসেন সবাই নাকি নিউ মার্কেটে একটু হলেও "টু" মেরে যায়, আমরা না গেলে আবার জাতের বাহিরে চলে যায় কিনা।
খাবারের মান ১০/৬ দেয়া যাবে, কেমন জানি আর্টিফিসিয়াল স্বাদ মনে হচ্ছে। তবে বেশি ক্ষিদা না থাকলে মনে হয় ১০/৩ দিয়ে দিতাম।
খাবারের মাঝেই কলকাতার বন্ধুকে ফোন করলাম, ট্রেনের টিকিট দিয়ে যাওয়ার জন্য। হোটেলের এড্রেস নিয়ে ২০ মিনিট সময় লাগবে বল্লো, আমরা খাবারে মনযোগ দিলাম।
রিসিপশন থেকে ফোন আসলো, আমাদের সাথে একজন দেখা করতে আসছেন। আমরা উনাকে বসতে বলে দুজন রেডি হয়ে বাহিরে নিচে নেমে আসলাম, অনেকদিনের আগের পরিচিত বন্ধু। সিঙ্গাপুর প্রায় ৩ বছর ছিলাম এক সাথে। নিরেট ভদ্র মানুষ, নিজ থেকেই বল্লো যেহেতু বেড়াতে এসেছো তাই গল্প করে সময় নষ্ট না করি। অনেক অনুরোধে হোটেলের ক্যাফে থেকে একটা কফি খেয়ে বিদায় নিয়ে চলে গেছে।
আমাদের ট্রেন Howrah New Delhi AC Special - 02301 আগামীকাল দুুপুর ৪.৫০ মিনিটে Howrah station এর platform 9 থেকে ছেড়ে যাবে, দিল্লি পৌছাবে পরদিন সকাল ১০টা বাজে। ১৭/১৮ ঘন্টার এক লম্বাজার্নি, দেশ থেকে অনেকেই পরামর্শ দিয়েছিলেন শিয়ালদহ থেকে যাওয়ার জন্য কিন্তু হাওড়া ব্রীজ দেখার ইচ্ছা তাই আমরা এই পথেই যাচ্ছি। ট্রেনে উঠেই না হয় ট্রেনের গল্প করবো, এখন আজকের দিনের গল্পটা করি।
আমরা বিকালের দিকে নিউমার্কেটে এসে পৌছলাম, ক্রেতা বিক্রেতার এক মিলন মেলা। সবাই শুধু কিনছে আর প্যাক করে গাড়িতে উঠছে। বউ প্রথমে টুকটাক কেনা কাটার চিন্তা করলেও পরে থেমে গেছে, আমারা এইসব নিয়ে সারা ইন্ডিয়া বেড়াতে অনেক কষ্ট হবে। এখন আমার খুশি লাগছে, বউয়ের হাতে কয়েকটা ক্রেডিট কার্ড এবং ৫ হাজার ডলার অথচ কিছুই কিনতে পারছেনা। আপনারাও যারা বউ নিয়ে বেড়াতে যাবেন, নিউ মার্কেট এরিয়াটা প্রথম স্টপে রেখে দিলে অনেকগুলি টাকা খরচের হাত থেকে বেচে যাবেন।
যেহেতু আমরা আর কলকাতা ফিরবোনা তাই মার্কেটে সময় না দিয়ে কলকাতা শহরটা একটু ঘুরে দেখতে পা বাড়ালাম। গাইড হিসাবে একটা টেক্সি নিলাম, আমাদের আসেপাশের সবকিছু ঘুরে দেখিয়ে ভালকোন রেষ্টোরেন্টে রাতের খাবারের পর্ব শেষ করে হোটেলে পৌছে দেবে।
প্রথম যাত্রা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ৬টার সময় গেইট বন্ধ হয়ে যাবে সুতরাং দ্রুতই যেতে হবে। ১০০ রুপির দুইটা টিকেট কিনে আমরা ভিতরে প্রবেশ করলাম (ইন্ডিয়ান নাগরিকদের জন্য ৩০ রুপি, সার্ক দেশের জন্য ১০০ রুপি এবং অন্য সবার জন্য ৫০০ রুপি), অসাধারন সুন্দর কাজে সাজানো। ছবি ভিডিও আর বাস্তবের মাঝে অনেক তফাৎ, মুগ্ধ হয়ে দেখছি। আসলে বাড়ির কাছেই কলকতা অথচ এই প্রথম আসলাম। আগে একবার এসে গেলে এখন বউয়ের গাইড হিসাবে কাজ করতে পারতাম, সবকিছু পরিচিত থাকলে একটা অন্য রকম ভাব থাকত।
এই কয়েক ঘন্টাতে এইসব দেখে শেষ করা যাবেনা, অনেকে ২/৩/৪ দিনও কলকাতা শহরে ঘুরে ফিরে। কিছুদিন পর আবার শুধু কলকাতা দেখতে আসতে হবে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখে পাশের গার্ডেনে ২০ রুপির টিকেটে একটু টু মেয়ে বের হয়ে গেলাম। যতটা অল্প সময় মনে হলো আসলে কিন্তু ততটানা, এই সময়ের মধ্যেই কয়েক শত ছবি মোবাইলে বন্ধি করা হয়ে গেছে। অবশ্যক এখানে কিছু ফটোগ্রাফারও আছে, আপনি চাইলে ওনাদের দিয়েও ছবি তুলতে পারবেন। সময় এবং ছবির সংখ্যার উপর দাম নির্বর করে। দুজনের ছবি উঠানোর জন্য ভিন্ন একজন লাগে তাই একটা ফটোগ্রাফারের হেল্প নিলাম প্রতি ছবি ২০ রুপি করে, ভদ্রলোকের অমায়িক আচরন মুগ্ধ করার মত।
ইডেন গার্ডেন ষ্টেডিয়ামের নাম শুনেছি, কাছেই যখন চলে আসলাম তাই ভাবলাম একটু দেখেই যায়। গেইট থেকে দুইটা আইসক্রিম কিনে খেতে খেতে বিধান সভা, হাইকোর্ট, টাউন হল, লালদীঘি দেখে মিলিনিয়াম পার্কে এসে থামলাম। হুগলি নদীর তীর ঘেষে মিলিনিয়াম পার্ক, ১০ রুপি টিকেটে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু আমরা সময়টা জানতাম না তাই দেড়ি করে আসাতে দেখলাম গেইট বন্ধ হয়ে গেছে। কালকে দেখিয়ে নিয়ে যাবো এমন শর্তে বউকে রাজি করিয়ে ছোটলাম হাওরা ব্রীজের দিকে। কত সিনেমা নাটক এবং ব্লগে দেখেছি এই ব্রীজ, আজ সামনের থেকে একটু দেখে যায়। হাওয়ার ব্রীজের দুইটা সুন্দর্য আছে, রাতের সুন্দর্যটা নাকি একটু ভিন্ন। অন্ধকারের মাঝে আলো ঝলমল করে হুগলি নদীর মাঝে দাড়িয়ে থাকা ব্রীজটা দেখতে মন্দ লাগছেনা, নদীর দুইপাশে আলোকসজ্জাও অনেক। সব মিলিয়ে অসাধারন কম্ভিনেশন, জোসনা রাত না হয়ে অন্ধকার রাত্র হলে মনে হয় আরো বেশি ভাললাগত।
জোসনার আলোতে তাজমহল দেখার ইচ্ছাটার জন্য আমাদের জোসনার সময়টাই বেছে নিতে হল। রাতের হওয়ারা ব্রীজ আর হুগলি নদীর পাশে কিছুক্ষন ক্লিক ক্লিক করে আমরা চল্লাম রাতের খাবারের জন্য, ভাত খাবনা বলাতে টেক্সি ড্রাইভার আমাদের একটা চাপাতির (আটার রুটি) রেষ্টোরেন্টে নিয়ে আসছে। ডাল চাপাতি আর পায়া (নেহারি), ভালই লাগছে কম্বিনেশনটা। এই খাবারে আমার তৃপ্তি আসলেও নিশি যে ভাতের প্রতি আগ্রহ বেশি, তাই ড্রাইভারকে বলে পাশের রেষ্টুরেন্ট থেকে এক প্যাকেট বিরিয়ানি আনিয়ে রাখলাম তবে বিষয়টা নিশিকে একেবারেই জানাইনি। হোটেলে গিয়ে যখন বলবে এইসব খেয়ে মানুষ থাকতে পারে........ কিছুক্ষন গ্যান গ্যান করার পর বিরিয়ানির প্যাকেট খুলে দেবো, যদিও অর্ধেকের বেশি আমাকেই খেতে হবে।
খাবারের পর্ব শেষ করে আমরা যখন হোটেলে ফিরি ঘড়িতে তখন সময় ৯টা পার হয়ে গেছে, চারিদিকে কেমন নিরব হয়ে গেছে। চলতে থাকা নগরী কেমন ঘুমন্ত নগরীতে পরিনত হচ্ছে।
এইসব কালকে ট্রেনে বসে ভাবা যাবে, এখন বিছানাটা পেলে জার্নির সব দকল সেরে কালকের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারি..........
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২১ বিকাল ৫:২০