উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই এখন চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে গঠিত হচ্ছে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন। উন্নত দেশগুলোর আদলে বাংলাদেশেও হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ২০১১ সালে প্রণীত জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি বাস্তবায়নেও হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আর এই হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশনের অর্থায়নের জন্য প্রাণঘাতী তামাকজাত দ্রব্যের ওপর স্বাস্থ্য কর (সারচার্জ) আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরে (২০১৪- ২০১৫) সালের বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর ১% স্বাস্থ্য কর (সারচার্জ) আরোপ করা হয়েছিল। এছাড়া পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও ১ শতাংশ কর আরোপ করা হয়। উভয় খাত থেকে প্রাপ্ত অর্থ এখনও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে রয়েছে। যা এখনও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে জমা হয়নি। আর এই আদায়কৃত অর্থ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে না পৌঁছানোর কারণে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্র জানায়, হেলথ প্রমোশনের মূল কাজ হবে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণে পরামর্শ দেওয়া। পাশাপাশি কার্যক্রম পরিচালনায় আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করা। এ প্রতিষ্ঠান অসংক্রামক রোগের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে গবেষণা করে স্বাস্থ্য উন্নয়নে করণীয় নির্ধারণ এবং স্বাস্থ্য উন্নয়নে আইন ও নীতি প্রণয়নে সরকারকে পরামর্শ প্রদান করা। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে এখনও হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন সম্ভব হচ্ছে না।
সূত্রমতে, বাংলাদেশে ৭০ লাখ ডায়বেটিস রোগী এবং ১২ লাখ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী রয়েছে। প্রতিবছর ২ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং ১.৫ লক্ষ মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের কারণে ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গু হয়। ২০১৩ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, তামাকের কারণে মৃত্যু হয় ১ লক্ষ মানুষের। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে শতকরা ৮০শতাংশ অপরিণত হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিস এবং ৪০ ভাগ ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য। এর জন্য দরকার প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক ও নীতিবিশ্লেষক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চিকিৎসা করাতে গিয়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৪৫ লাখ বা ৪ শতাংশ মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে অর্থায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর ১ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করে, যা রোগ প্রতিরোধে অর্থায়নের বিশাল সুযোগ। এছাড়া পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের ১ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া কোমল পানীয়, ফাস্টফুড, অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর খাবার, প্রাইভেট কার, বোতলজাত পানির ওপর কর আরোপের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ খাতে অর্থ জোগানোর সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চিকিৎসা কেন্দ্রিক হওয়ায়, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রাধান্য পাচ্ছে না। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করতে সরকারীভাবে হেল্থ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন করে, স্বাস্থ্য-কর (সারচার্জ) থেকে অর্জিত অর্থ ব্যয় করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।’
http://www.banglatribune.com/news/show/102794
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৫ রাত ১২:৩৬