প্রথমেই বলে রাখি দুনিয়াতে এত সব বিষয় থাকতে কেন আমি এই বিষয়ে নিয়ে লিখছি। আরো ত অনেক বিষয় আছে। আমি ঈশ্বরের সন্ধান খুজে পাবার আগ্রহ বোধ করছি এই জন্য যে কিছুটা ব্যাক্তিগত কারন কিছুটা সামাজিক দ্বায়িত্ব। সমাজের একজন বাসিন্দা হয়ে আমি দ্বায়বদ্ধতা এড়িয়ে যেতে পারি না। ব্যাক্তিগত কারন হিসাবে বলি ছোট বেলায় মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট তার জিজ্ঞাসু মন। এটা কি উটা কি, কি করলে কি হয় কি না করলে কি হয় এই সকল প্রশ্ন আমাকে তাড়িত করত। যাদের মধ্যে এটি এ্কটি প্রশ্ন। বেশ কিছুদিন আগে আমাকে আরো ভাবিয়ে তুলল দুইটা ব্যাপার। মানুষ কেন ধর্মে বিশ্বাসি হয়। মানুষ কেন ধর্মে অবিশ্বাসি হয়। উত্তর খুজতে যেয়ে যা কিছু উপ্লন্ধি করেছি সেটুকুই বলার প্রচেষ্টা মাত্র। সামাজিক দ্বায়বদ্ধতার কথা বলেছি এ কারনে যে আজ পৃথিবীতে ৭০০ কোটি মানুষের বসবাস। প্রত্তেকটি মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মত ও দর্শনের অনুসারি। প্রত্তেকের মত ও দর্শনের প্রতি আমার যথেষ্ট সম্মান রয়েছে। আমরা দেখেছি পৃথিবীতে জাতিগত বিদ্বেষ ধর্মিয় বিদ্বেষ মারামারি হানাহানির বিভৎস রুপ। এর মধ্যে ধর্ম একটি খুবই গুরুতপুর্ন বিষয়। এ বিষয়ে আলোচনা আমরা খুব সুন্দর ভাবে এড়িয়ে যেতে পছন্দ করি যদি কারো সাথে কারো মতের ভিন্নতা দেখা দেয়। এবং মনের ভিতরে সেই ভিন্নতা চাপা দিয়ে রাখার স্বভাব আমাদের বহুদিনের পুরানো। তাহলে আমাদের এই বিভক্ত মতামতের কি ঐক্য মতে পৌছানোর কোন রাস্তা খোলা নেই? অসম্ভব? আমি মনে করি সম্ভব। যদি আমরা আমাদের উপলব্ধ প্রমানিত ও পর্যবেক্ষিত জ্ঞানের বিনিময় চালয়ে যেতে থাকি তবেই কেবলমাত্র সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে আমাদের ভিন্ন মত ও দর্শন অবশ্যই সম্মনের সাথে গ্রহন করতে হবে। আলচনা করতে হবে। মত পার্থক্য থাকতেই পারে সেটা থাকা অসাভাবিক কিছু নয়। আমার চিন্তাধারার মধ্যেও ভুল থাকতে পারে, ভিন্ন মত থাকলে অবশ্যই সেটা বলবেন সেটা সাদরে গ্রহনযোগ্য , সম্মেলিত মতামতের ভিত্তিতেই আমরা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছুতে পারব। আর না পারলেও সঠিক সিদ্ধান্তের কাছাকাছি পৌছুতে পারব এটা অবধারিত।
একটি কথা আমরা সকলেই জানি ও স্বীকার করি আমরা সকলেই সত্য জানতে চাই, সত্য অনুধাবন করতে চাই। এটাও আমরা জানি সত্য অনুধাবনের জন্য বিজ্ঞানই একমাত্র হাতিয়ার যা মানুষকে সত্যের সন্ধান দিতে পারে।বিজ্ঞান ছাড়া সত্যকে সঠিক ভাবে জানার উপায় নেই। কোন মনগড়া চিন্তা দ্বারা আমরা সত্যকে জানতে পারব এমন আশা করা বোকামি ছারা কিছু নয়। যে কারনে আমরা বিজ্ঞান দর্শন ও ইতিহাসের থেকে সাহায্য নিব আমাদের সত্য উপলব্ধির কাছাকাছি যাবার জন্য। যদিও দর্শনের উপ্র ভিত্তি করে বিজ্ঞানের সুত্রপাত কিন্তু দর্শন পুরপুরি বিজ্ঞান নয় একথা আমরা জানি। পর্যালোচনা ও উপলব্ধির সুবিধায় কয়েকটি বিষ্য় সম্পর্কে আমাদের পরিস্কার ধারনা থাকা লাগবে। এর একটি হল আমরা যাকে সত্য বলে মনে করি তা আসলে কি। এর বৈসিষ্টই বা কি। সত্য কে জানারই বা উপায় কি? এ ব্যাপারে একটা কথা বলি, সত্য জানার ক্ষেত্রে একজন ব্যাক্তি তিনি যত বড় মানুষই হোক না কেন তার ব্যাক্তিগত মনিষা বা ধী শক্তির উপর নির্ভর করব নাকি পরিক্ষা নির্ভ্র প্রমান যুক্তিবিধ্যার উপর নির্ভর করব আমরা। প্রশ্ন টা অত্যান্ত জরুরী । পরিক্ষা নিরিক্ষা ও বিজ্ঞানের উপর নির্ভর করাটাই আমাদের জন্য যুক্তিযুক্ত কারন তাতে ভুল হবার সম্ভাবনা কম।আর যদি কোন ভুল হয়ও সেখানে ভুল সংশোধনের উপায় রয়েছে। আর যদি আমরা ব্যাক্তিচিন্তা বা কোন মনিষীকে সত্য বলে ধরে নেই তাহলে ভুল হবার সম্ভাবনা অনেক বেশিত থাকবেই সাথে আর একটা সমস্যা রয়ে যায় সেটা হল ব্যাক্তি মনিষার উপর যেকোন সিধান্ত যে্কোন সময় চ্যালেঞ্জের মুখে পরতে পারে। কারন যে কোন মনিষীর চিন্তা আসলে একক ব্যাক্তি চিন্তা ছারা আসলে কিছুই না। সেক্ষেত্রে একক ব্যাক্তিচিন্তাকে সত্য বলে গ্রহন করার বিপত্তি হল অপর কন মনিষীর সাথে তার চিন্তার সরাসরি বি্রোধ দেখা দিতে পারে। তাহলে এই অবস্থায় আমরা সত্য জানব কি করে! এই রকম পরিস্থিতে সত্য জানা ত দুরের কথা জোড় জবরদস্তি গায়ের জোর ছাড়া কোন মিমাংসায় আসাই সম্ভব নয়। তাই ইতিহাসে দেখা গেছে এই রকম ব্যাক্তিচিন্তার উপর গড়ে উঠা নানা মতবাদ জোর জবরদোস্তি অন্ধবিশ্বাসের সাহাজ্যে সমাজে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে কোটি কোটি মানুসের কোটি কোটি উপলব্ধি গড়ে উঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এই কারনে সত্য একটি থাকলেও সত্য সংক্রান্ত মতবাদ একাধিক থাকতে পারে। সমস্ত মানুষের মানসিক গঠন ও চিন্তাভাবনা এক রক্ম নয় তাই সত্য সংক্রান্ত ব্যাখায় ভিন্নতা রয়েছে। কিন্তু আমরা জানি যে কোন বিষয় সম্পর্কে সত্য একটাই। কিন্তু মজার বিষয় হল এই ধরনের ব্যাক্তিচন্তার যারা প্রবক্তা তারা প্রত্যেকে মনে করেন তাদের ধারনা গুলসত্য এবং মানুসের মংগলের জন্য সমাজের জন্য তা বিশে্ষ ভুমিকা পালন করছে। কাজেই এই বিষয়ে সঠিক ও স্বচ্ছ ধারনা গড়তে হলে আমাদের আর গভীরে প্রবেশ করতে হবে। অর্থ্যা কোন কোন সমাজে কি কি পরিস্থিতিতে কি কি মতবাদ জন্ম নিল, তার ভুমিকা কি হো্লো এগুল বিশ্লেষন করতে হবে। কেনই বা পরবর্তিতে সেই ধারনাগুল অকেজো হয়ে পরল সেটাও বুঝতে হবে। একটা বিষয় গুলিয়ে ফেলা যাবে না আমাদের যা হোলো সত্য একটাই। একটা বিষয় সম্পর্কে একই পরিস্থিতিতে সত্য একটাই। এই পরিস্থিতি কথাটা খুব গুরুত্বপুর্ন। পরে এর ব্যাখ্যা করব। একটা বিষয় সম্পর্কে একই পরিস্থিতিতে এটাও সত্য ওটাও সত্য এমন হতে পারে না। একই পরিস্থিতিতে সত্য একটাই।
কাজেই সত্য জানার জন্য আমরা পরিক্ষিত ও প্রমানিত সত্যকেই আমরা সত্য হিসাবে ধরব। মনগড়া কিছু নয়। আরেকটা বিষয় খুবই স্বচ্ছ ধারনা থাকা দরকার। তা হল সত্যের রুপ ও অবস্থান। সত্য একটাই কিন্তু তার অবস্থান পরবর্তনশীল। মানে হচ্ছে কোন বিশেষ ঘটনা সম্পর্কে সত্য একটাই কিন্তু তার অবস্থান পরিবর্তনশীল হতে পারে। শ্বাশত সত্য বলে কিছু নেই। পরিস্থিতি পাল্টালে সত্যের অবস্থানও পালটায়। যেমন ধরেন,

গোল্ড বলটা ডান দিকে আছে (সত্য)
আমরা যদি এখন পিছনে যেয়ে দ্বারাই তাহলে বলব গোল্ড বলটা বাম দিকে আছে (সত্য)
এখানে অবস্থানের পরিবর্ত্নের সাথে সত্যের অবস্থান পরিবর্তিত হচ্ছে। এই মহাবিশ্বে কিছুই অপরিবর্তনশীল নয়। কাজেই সত্যের অবস্থান পরিবর্তনশীল। বিজ্ঞানী দার্শনিক সবাই এই ব্যাপারে একমত।
এখন এই সত্যের অবস্থান পরিবর্তনের একটি একটু জটিল উদাহরন দেই একটা সহজ প্রেক্ষাপটে।
ধরুন, ১৯৭১ সাল। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলছে বাংলাদেশে। আপনি বাংলাদেশের একজন সাধারন নাগরিক। ছাপোষা মানুষ। ধরলাম আপনার দেশ নিয়ে তেমন কোন মাথাব্যাথা নেই। যুদ্ধের ফলাফল কি হবে সে ব্যাপারেও আপনার তেমন চিন্তা নেই। একেবারেই সাধারন আপনি। নিজের মত থাকতে পছন্দ করেন। খুব ভাল লোক আপনি। কখনো মিথ্যা কথা বলেন না। কোন ঝুরঝামেলায় যান না। আপনার পাশের বাসায় প্রতিবেশি এক হিন্দু পরিবার থাকে। কোন একদিন রাতে আপনার পাশের বাসার সেই হিন্দু ভদ্রলোক তার মেয়েকে নিয়ে আপনার বাসায় আসল। এবং বলল আমি খবর পেয়েছি আজ রাতে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী এই পাড়ায় রেট দিবে। এবং সব হিন্দু মেয়েদের ধরে নিয়ে যাবে। আপনি আমার মেয়েটার প্রান রক্ষা করেন। আপনার খাটের নিচে ওকে একটু লুকিয়ে থাকতে দিন। এই বলে খাটের নিচে সেই ভদ্রলোকের মেয়েকে রেখে চলে গেল। যথাসময় আর্মি রেট দিল এবং পাশের বাসার পরিবারকে না পেয়ে পাকি আর্মিরা আপনার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল পাশের বাসার কাউকে আপনি দেখেছেন কিনা? আপনি চিন্তা করার জন্য একটু সময় নিলেন কি বলবেন ভেবে। আপনি যদি সত্যি কথা বলেন মেয়েটি মারা যাবে। আর যদি মিথ্যা কথা বলেন মেয়েটি প্রানে বেচে যাবে। মিথ্যা কথা বলা পাপ। কিন্তু আপনি উপলব্ধি করলেন আমি মিথ্যাকথা বলব। মেয়েটি প্রানে বাচবে। দেখুন, পরিস্থিতির বিবেচনায় সত্যের অবস্থান পুরোপুরি উল্ট হয়ে গেছে। আপনি উপ্লব্ধি করতে পেরেছেন আমার মিথ্যা কথার মধ্যেই সত্যের অবস্থান বিদ্যমান। কাজেই আমরা বুঝতে পারছি অবস্থার পরিবর্তনে সত্যের অবস্থানও পরিবর্তনশীল।
... চলবে...