বাংলা ফরেক্স স্কুল
ফরেক্স মার্কেটে অনেকে আসে একগাদি টাকা ( $ ) নিয়ে ঢুকে আরকিছু দিন এমনকি অনেক সময় ইনভেস্ট এর কিছু সময় পর ফার্স্ট ট্রেডে সব হারিয়ে বসে। এমন অনেকে আছে যারা ফরেক্সকে জুয়া খেলা (অল্প জ্ঞানের কারনে) বলে থাকেন। তাদের মতে ফরেক্সে খুব দ্রুত লাভ লস হয় তাই এটাকে তারা জুয়ার সাথে তুলনা করে থাকেন। আর সেসব ট্রেডারদের কারনে শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বে ৯০-৯৫ শতাংশ ট্রেডার লুজার। এই কারনে কিছু প্রশ্ন আমাদের মাথায় এমনি এমনি চলে আসে
আসলে ফরেক্সে এতো বেশী লুজার কেন?
তাহলে কি ফরেক্সে আসতে হলে টাকা($) কি হারানোর প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হবে?
যেখানে লাভ নাই শুধু লস হয় সেখানে যাবো কেন?
আসুন এবার আমরা টপিকে ফিরে আসি “টাকা আমার, নিয়ন্ত্রন আমার”। উধাহরন স্বরূপ, ঘোড়া আরোহী সহ অনেক দ্রুত ছুটতে পারে। আপনি পারবেন ঘোড়ার সাথে দৈাড় দিয়ে জিততে। কিন্তু হ্যাঁ আপনি ঘোড়ার পিঠে চড়ে ঠিকই ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রন করতে পারেন। এর জন্য প্রয়োজন লাগাম আর আপনার দক্ষতা। থামাতে পারবেন ইচ্ছে মত যেখানে খুশি সেখানে। ফরেক্স হল সেই ঘোড়া আপনি আরোহী আর নিচের শর্ত গুলো হল Driving Manual যা আপনার দক্ষতা বাড়াবে। আসুন দেখা যাক Driving Manual এ কি কি রুলস আছে।
প্রথম শর্তঃ ভালো একটা ট্রেডিং প্লান
আপনার অবশ্যই একটা Effective Trading Plan থাকতে হবে। একটা ট্রেড ওপেন এর পূর্বে আপনি সকল প্রকার আউটকাম(ফলাফল) সম্পর্কে সচেতন থাকবেন। বাই অথবা সেল যায় দেন না কেন আপনার লাভ অথবা লস যেকোনোটার মুখোমুখি হতে হবে আপনাকে। আগে থেকে প্রস্তুতি নিন ট্রেডে প্রফিট আসলে কি করবেন। এবং লস হলে কি করবেন। নির্ধারণ করুন কি পরিমান প্রফিট হলে আপনি মার্কেট থেকে বের হয়ে আসবেন। অনেক সময় দেখা যায় দশটি ট্রেড এর প্রফিট একটি লস ট্রেড তুলে নিয়ে যায়। তাই আপনার প্ল্যান তৈরি করা দরকার কোন সময় অর্থাৎ কি পরিমান লসে আপনি মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসবেন। প্রয়োজনে একটা সাদা কাগজে লিখে রাখুন এবং সময় এলে পড়ে নিন। Emotionally কখনো বাই অথবা সেল দিতে যাবেন না। ট্রেড দেবার পূর্বে নিজেকে প্রশ্ন করুন কেন ট্রেড দিচ্ছেন।
দ্বিতীয় শর্তঃ ঠিক করে রাখুন আপনার ট্রেডিং মেথড
প্রাইসের মমেন্টাম কোন দিকে, ট্রেন্ড কি এগুলো নির্ধারণ করুন। ধারনার বশবর্তী হয়ে কোন ট্রেড ওপেন না করা উত্তম এতে রিস্ক অনেক বেড়ে যায়। এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লসের সম্মুখিন হতে হয়। আপনি ট্রেন্ড Identify করতে ট্রেন্ড ইনডিকেটর ব্যবহার করতে পারেন। সব ইনডিকেটর সব টাইম ফ্রেমে ভালো কাজ করে না, কোন ইনডিকেটর ব্যবহার এর পূর্বে জেনে নিন কোন টাইম ফ্রেমে ইনডিকেটর টি ভালো কাজ করে অথবা ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
তৃতীয় শর্তঃ টাইম ফ্রেম
বেছে নিন একটি নির্দিষ্ট টাইম ফ্রেম, এটা M15, M30, H1, H4 …..যেকোনো টি হতে পারে। নিজেকে মানিয়ে নিন সেটার সাথে, টাইম ফ্রেম effective না হলে অন্য টাইম ফ্রেম। তবে সর্বশেষে অবশ্যই আপনি একটি নির্দিষ্ট টাইম ফ্রেম বছে নিবেন। হ্যাঁ আপনি Overall Trend কোন দিকে যাচ্ছে সেটা দেখতে বড় টাইম ফ্রেম দেখতে পারেন তবে short term ট্রেড ওপেন এর জন্য ছোট টাইম ফ্রেম ভালো। বারবার টাইম ফ্রেম পরিবর্তন করলে আপনি মুভমেন্ট সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবেন না।
আসুন একটা ছোট্ট গল্প দিয়ে বঝা যাক টাইম ফ্রেম কেমন হলে ভালো হয়। ধরুন আপনি অপরিচিত কাওকে কফি বা চায়ের দাওয়াত দিলেন বাইরে কোন রেস্তোরায়। এখন আপনি তার সাথে সময়ের অভাবের কারনে মাত্র ৫ মিনিট সময় পেলেন একে অপরকে জানার। এতে করে সে কেমন মনে মানুষ সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া খুব কঠিন। সে সময়টা তার মন খারাপ থাকলে আপনার সাথে ভালো ভাবে কথা নাও বলতে পারে তাই সে সব সময় সে এভাবে থাকে সেটা ভেবে নেয়া ঠিক হবে না। আপনি যদি আবার লম্বা একটা সময় ধরে প্রতিদিন তার সাথে কাটান তাহলে তার আচার আচরন, মানসিকতা সম্পর্কে আশা করি ভালো ধারণা পাবেন।
টাইম ফ্রেম অনেকটা সেরকম ছোট টাইম ফ্রেম গুলো সাময়িক। আমি এখানে বলছিনা বড় টাইম ফ্রেম বেস্ট। আমি বলছি চিনতে কত সময় আপনার প্রয়োজন, আপনি বেছে নিন।
চতুর্থ শর্তঃ গড় দাম, Moving Average
ভাবছেন এটাতো ইনডিকেটর শর্ত কেন। প্রথমে একটা উধাহরন দেখি পরে মুভিং এভারেজ নিয়ে আলোচনা করব। ধরুন আপনি চিনির ব্যাবসায়ি কিছু চিনি স্টক করে রাখতে চাচ্ছেন। এখন কোন সময় কিনবেন বুঝতে পারছেন না। চিনির দাম ২ বছর ধরে ৪০ থেকে শুরু করে ৬০ এর মধ্যে উঠা নামা করে। দেখা গেল মার্কেটে ৫০ টাকা থেকে বেড়ে দিয়ে ৫২, ৫৪,৫৬ উঠে গেল। এবার আপনি ভাবলেন দামতো বাড়তে আছে এবার কিনে ফেলি বেশী লাভ হবে। আপনি কেনার সময় আরও এক ধাপ দাম বেড়ে ৫৮ হয়ে গেছে আপনি কিনে ফেললেন ১০০ টন ৫৮ টাকা দরে। আপনি ভাবছেন মার্কেটে তো দাম বাড়তেই আছে। এবার দেখা গেল বাজারে চিনির মজুদ বেড়ে গেল এবং চিনির দাম কমা শুরু করলো আপনি কেনার পর দাম কমতে থাকল ঠিক যেভাবে বেড়েছিল। ৫৬, ৫৪, ৫২, ৫০, ৪৮। ব্যাস খেলেন ধরা।
তাহলে এখন প্রশ্ন উঠছে তাহলে কখন কেনা ভালো ছিল ?
এই প্রশ্নের উত্তর আপনি পাবেন মুভিং এভারেজ এর কাছ থেকে। ধরুন ৪০+৬০=১০০/২=৫০ টাকা চিনির গড় দাম। গড় দামে চিনি কিনলে আপনার রিস্ক কম হত লস ও কম হত লাভের মুখ দেখার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকতো। একটা লাইন সব সময় মনে রাখবেন,
“Buy At Average Price”
বিভিন্ন মুভিং এভারেজ কম্বিনেশন আছে। “Use effective combination That Suits You Best“
পঞ্চম শর্তঃ মানি ম্যানেজমেন্ট
ফরেক্সে $ বা টাকা হারানোর জন্য অনেকে মানি ম্যানেজমেন্ট ব্যবহার না করাকে দায়ী করে থাকেন। মানি ম্যানেজমেন্ট অনেক বিস্তর একটা বিষয় আমি এখানে খুব সংক্ষেপে তুলে ধরব। আপনার Risk Ratio কত ? আপনার লস অথবা লাভের একটা রেসিও থাকতে পারে অথবা থাকতে পারে একটা লিমিট যার বেশী আপনি লস করবেন না। এটা হতে পারে ২%, ৩% অথবা ৪%। কিন্তু অবশ্যই আপনার একটা লস লিমিট থাকতে হবে। ধরুন আপনার ডেপোজিট $১০০০ তাহলে আপনি ৩% বের করলেন $৩০ লস করবেন। সে অনুযায়ী আপনি স্টপ লস সেট করলেন। এক্ষেত্রে ভলিউম একটা বড় ফ্যাক্টর। বড় ভলিউম নিলে তো অল্পতে sl Hit করবে। একটা ছোট্ট ক্যালকুলেসন আপনার ভলিউম (লট সাইজ) নির্ধারণে সাহায্য করবে।
স্টপ লস কমপক্ষে ৩০ পিপস ধরা উত্তম। এবার ৩০ পিপস লস = $৩০ লস তার মানে $১ / পিপ ট্রেডিং লট (০.১০) আপনাকে ব্বহার করতে হবে।
অথবা রেসিও থাকতে পারে লস $১০ করলে প্রফিট $২০ অর্থাৎ লস: প্রফিট = ১:২।
ষষ্ঠ শর্তঃ ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না
বাই অথবা সেল যায় দেন না কেন আত্মবিশ্বাসের সাথে ট্রেড ওপেন করবেন। অনেক সময় বাই দিবেন না সেল দিবেন এটা নিয়ে কনফিউসন থাকতে পারে। সেসকল সময় ট্রেড ওপেন থেকে বিরত থাকুন। ট্রেড ওপেন করে ফেললে আর ভাববেন না কেন ট্রেড দিলে স্টপ লস টেক প্রফিট দিয়ে বসে থেকে মার্কেট দেখুন।
সপ্তম শর্তঃ কে কি বলছে, মাথা ঘামাবেন না
আমার মনে আছে ছোট বেলায় অঙ্ক পরিক্ষায় কম জানা অঙ্ক গুলো পরীক্ষার হলে স্যারের চোখ ফাকি দিয়ে বন্ধুদের সাথে মিলিয়ে দেখতাম। আমার উত্তর ভুল হলে সেগুলো ওদের মত করে আবার করতাম এবং উত্তর এক করতাম। পরীক্ষা শেষে দেখতাম আমার উত্তর ঠিক ছিল।
ফেসবুকে এমন অনেক কেই পাবেন হুট হাট কোন আনাল্যসিস ছাড়াই সিগন্যাল দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি অনেক সিগন্যাল আছে যার টেক প্রফিট ৫পিপস হয় এ আবার কেমন আনাল্যসিস। আগে আনাল্যসিস জানবেন তারপর আনাল্যসিস পছন্দ হলে আপনি সিগন্যাল ফলো করবেন অথবা, সিগন্যাল পছন্দ হলে আগে কিছু দিন পর্যবেক্ষণে রাখুন এর পর সিধান্ত নিন। টাকা আপনার রিস্ক আপনার আপনার লসে ফ্রী সিগন্যাল প্রভাইডার এর কিছু যায় আসেনা।
অষ্টম শর্তঃ সব ট্রেড Perfect নাও হতে পারে
আপনি অনেক আনাল্যসিস করে দেখলেন মার্কেট ডাউন হবে কিন্তু মার্কেট আপনার বিপরীতে গেল এখন কি করবেন। রেগে মেগে আরেকটা ট্রেড, সেক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় আপনি লস করবেন। কেন জানেন? কারন পরের ট্রেডে আপনি অপেক্ষাকৃত কম আনাল্যসিস করে ট্রেড দিয়েছে এই ট্রেড ছিল Revenge (প্রতিশোধ) । কোন ট্রেড লসে গেলে সেটাকে Business Cost হিসেবে দেখার চেষ্টা করবেন। প্রতিটা বিজনেসে কিছু খরচ থাকে ফরেক্সে লস গুলো আপনার খরচ। আপনার কাজ হল রিস্ক নিয়ন্ত্রন করা বরং আপনার টাকা গুলোকে রিস্কে ফেলা নয়। একজন Professional এবং একজন Amateur এর মধ্যে মুল পার্থক্য দেখা যায় কে psychologically লস কে কিভাবে দেখছে। প্রফেশনাল ট্রেডার লস হলে শুধু Better Luck Next Time বলে লস কে মেনে নেয়। কিন্তু নতুন রা উঠে পরে লাগে লস তোলার জন্য আর অবশিষ্ট টুকু হারায়। অনেকে বলেন পর পর তিনটা ট্রেড লস করলে মার্কেটে এক সপ্তাহ নতুন ট্রেড না দিয়ে শুধু মার্কেট দেখা উচিত।
নবম শর্তঃ ভুল গুলো থেকে শিক্ষা নিন
আমাদের জীবনে অনেক 3D এর মত। যেটা ভালো গ্রহন করলাম, যেটা খারাপ বর্জন করলাম, আর যেটা খুব খারাপ সেটা Experience হিসেবে নিলাম। আপনি কোথায় ভুল করছেন কেন করছেন মনে রাখুন পারলে খাতায়, ডায়েরিতে যেখানে পারুন নোট করে রাখুন কি করেছেন, কেন করেছেন, ফলাফল কি আর কি করা উচিত ছিল।
এবার আসুন মুল কোথায় এই রুলস গুলো আপনাকে আপনার মানি নিয়ন্ত্রন করতে সেখাবে। কিছু লোক আছে তারা বার বার একই ভুল করে সেটা বোকামি ছাড়া কিছু নয়। আপনি সব সময় জয়ী হবেন এটার কোন গ্যারান্টি নাই তবে Perfect Mind Set UP এবং আপনার নিজের উপর নিয়ন্ত্রন আপনাকে successful বানাবে।
এবার বলুন আমার সাথে আপনি একমত কিনা “টাকা আমার, নিয়ন্ত্রন আমার”