সিগারেটের গন্ধ পেয়েই কাচা ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে দেখলাম ৪.৪৫। যতদুর খেয়াল আছে শেষ সিগারেট খেয়েছিলাম অনেক্ষণ আগে। জানালাগুলোও খোলাই আছে। গন্ধতো এতক্ষণ থাকার কথা না।
অনুভব করলাম খুব কাছে বসেই কেও আমার দিকে ধোঁয়া ছাড়ছে। এমন তো হওয়ার কথা না। ভার্সিটি বন্ধ হওয়ায় অরূপ চলে গেছে ২ দিন হলো। রুমে আমি একাই ছিলাম। ভয় পেলাম না। কিন্তু কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম। উঠে বসে লাইট জ্বালাতে গিয়ে দেখি কারেন্ট নেই। তাই ফোনের টর্চ লাইটটা জ্বালিয়েই সামনে ধোঁয়ার উৎপত্তিস্থল খুঁজতে লাগলাম। আশ্চর্য! বারান্দায় রাখা চেয়ারটা দরজার সামনে রেখে বর্ণ বসে আছে সেখানে।
কিরে তুই এখানে? কিভাবে? কখন আসলি?
সে অনেক কথা রে। আগে আমাকে এককাপ চা বানিয়ে দে না একটু। চা ছাড়া সিগারেটটা কেমন যেন পানশে লাগছে। হাতটা ভেঙ্গে আছে দেখতেই পাচ্ছিস। একটু খাওয়া না ভাই।
এমন অজুহাত দেখানোর পর আর না করতে পারলাম না। চা বানিয়ে আনলাম।
হাতে থাকা জন প্লেয়ারটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সে আরেকটা সিগারেট ধরালো। আমি কিছুতেই নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আবার সময়ের বিরুদ্ধে যাওয়াও সম্ভব হচ্ছিলো না। আনমনে সিগারেটে টান দিলাম।
কিছু জিজ্ঞেস না করলেও আমাকে অবাক করে দিয়ে বর্ণ নিজ থেকেই কথা বলা শুরু করলো। খুব বেশি ইগোসম্পন্ন মানুষটাকে আমি যেন চিনতে পারছিলাম না।
"ইরার কি খবর? "
"ইরা" ওর মেয়েবন্ধু। না মেয়ে বন্ধু না। ছিলো কিন্তু এখন নেই আর। বললাম ওইদিনের পর আর কথা হয়নি রে। অনেক কেঁদেছিলো মেয়েটা। ভেঙ্গে পড়েছে অনেক।
জানতাম আমি। ওকে কতবার বলেছিলাম অতটা ভালো না বাসতে। কিন্তু পাগল মেয়েটা আমার কথা শুনতো না একেবারেই। জানিস আমারো অনেক কষ্ট হয়েছিলো। থাকতে চেয়েছিলাম সাথেই। পারিনি। চলে যেতে হলো। ওর জন্মদিনের জন্য কত না প্ল্যান করলাম। অথচ দেখ আজ আমরা সাথেই নেই। জন্মদিনের প্ল্যানটাও আমাদের সম্পর্কের সাথেই ভেঙ্গে গিয়েছে। কিছু দিন আগে থেকেই মনে হচ্ছিলো সম্পর্কটা আর টিকবে না। দুজনের মত থাকা স্বত্তেও সম্পর্কটা ভেঙ্গে গেলো। আসলেই আমি ছাড়তে চাইনি। কিন্তু তবুও ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। অনেকসময় নিজের অনিচ্ছা স্বত্তেও অনেক কাজ করতে হয়। সাথে থাকিস ওর। সঙ্গ দিস। মেয়েটা বড়ই কষ্ট পাবে। আমি ওর ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারলাম না।
এমন বলছিস কেন? তুই তো আর নিজের ইচ্ছাতে করিস নি এসব।
যাই হোক। কষ্ট তো দিয়েছি ওকে।
ভোর হচ্ছে বন্ধু। ঘুমিয়ে পর তুই। আমি আসবো হঠাৎ হঠাৎ করে। দেখে রাখিস ইরাকে। আর হ্যা চায়ের জন্য ধন্যবাদ।
ধুর পাগল। বন্ধুকে আবার ধন্যবাদ দিতে হয় নাকি। ভালো থাকিস তুই। আমি ঘুমালাম।
চোখগুলো বন্ধ করতে কষ্ট হচ্ছিলো খুব। কিন্তু তবুও বন্ধ করতেই হবে। যে করেই হোক আমার ঘুমাতে হবে। জানি ঘুম থেকে উঠার পর আমি আর বর্ণকে সাথে পাবো না। তবুও আমাকে ঘুমাতেই হবে। কাল আবার বর্ণের দাফনের কাজটা শেষ করে আসতে হবে। তাই অনিচ্ছা স্বত্তেই জোর করে ঘুমিয়ে পড়লাম। আজ দুপুরেও অনিচ্ছাস্বত্তেই বিশ্বাস করতে হয়েছিলো বর্ণ আমাদের মাঝে নেই।
আমাদের মাঝেমাঝে অনিচ্ছাস্বত্তেই কিছু কাজ করতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৮