চোখ মেলে চিম্বুক পাহাড় আর সবুজ অরণ্যের রূপের খেলা দেখার কথা যে শিশুর, তার চোখের আলো যেন নিভু নিভু। পৃথিবীতে আসার মাত্র এক বছরের মধ্যে চোখের ওপর মস্ত বড় টিউমার বসে তার। একদিকে পাহাড়ি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, অন্যদিকে চিকিৎসার বিশাল ব্যয়, এ দুই সমস্যায় দিশেহারা শিশুটির পরিবারের কথা ফেসবুকে লেখেন কেউ একজন।
তিন চারদিন আগে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লগ ইন করে নিউজ ফিডে মাউস ঘোরাচ্ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। হঠাৎ তার চোখে পড়ে সেই পোস্ট। থেমে যায় মন্ত্রীর চোখ, থেমে যায় তার ঘুরতে থাকা মাউসও।
কী যেন এক আবেদন স্পর্শ করে ওবায়দুল কাদেরের হৃদয়। তৎক্ষণাৎ তিনি সিদ্ধান্ত নেন শিশুটির মুখের হাসি ফেরানোর, সিদ্ধান্ত নেন সুন্দর পৃথিবীর আলোতে শিশুটির দুই চোখ আরও উজ্জ্বল করে তোলার।
তারপর মন্ত্রী সেই পোস্টটির সূত্র ধরে খোঁজ নিতে থাকেন। কিন্তু বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত শিশুটির পরিবারের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করা যাচ্ছিলো না। প্রথমে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে চেষ্টা করলেন মন্ত্রী। এরপর মন্ত্রী খোঁজ নিতে থাকলেন থানচির পরিচিত এক ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে। খোঁজ পেলেনও তার মাধ্যমে।
এরপরই দেরি না করে চিম্বুক পাহাড়ের টংকাবতির বাগানপাড়ার ম্রো সম্প্রদায়ের দম্পতি সিংরাও ম্রো ও পাইং পাউ ম্রো এর আদরের সন্তান চিং রুং ম্রোসহ তার পরিবারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসার ব্যবস্থা নেন ওবায়দুল কাদের। এরইমধ্যে সেখানে শুরু হয়েছে শিশুটির চিকিৎসা।
শনিবার (২৮ মে) সকালে ঢামেকে সেই মায়ামুখের পাহাড়ি শিশুটিকে দেখতে যান মন্ত্রী। কথা বলেন তার পরিবারের সঙ্গে। পরম স্নেহের হাত বুলিয়ে দেন চিং রুংয়ের মাথায়।
এসময় মন্ত্রীর নির্দেশনায় শিশুটির চিকিৎসার জন্য গঠন করা মেডিকেল বোর্ড তাকে জানায়, দেশেই চিং রুংয়ের সুচিকিৎসা সম্ভব। মন্ত্রী তখন পুরো চিকিৎসার ব্যয় বহন করবেন জানিয়ে বোর্ডকে সুচিকিৎসার অনুরোধ করেন।
তার এমন মানবিক সাড়ায় সাধুবাদ জানিয়ে অনেকে তখন বলে ওঠেন, মন্ত্রীর এই দৃষ্টান্ত অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়।
ওবায়দুল কাদের তখন জানান, কোনো কিছু নয়, মানবিক আবেদনই তার কাছে বড়। শিশুটি বড় হোক। সুন্দর আগামী রচনা করুক এমনটাই চান তিনি।
ঢামেকের বার্ন ইউনিটের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন শিশুটির সঙ্গে সেখানে রয়েছে তারা বাবা-মাও। তার চিকিৎসার জন্য গঠিত বোর্ডে আছেন নিউরোসার্জন ডা. রাজিউল হক, নাক কান গলা বিভাগের ডা. আবু ইউসুফ ফকির, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের ডা. আবুল কালাম আজাদ।
আমি নিজে এই মন্ত্রীর বিভিন্ন মতের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এসেছি।কিন্তু আজকের এই কাজের জন্য তিনি সাধুবাদ পেতেই পারেন। ধন্যবাদ জনাব। :-)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৫:০৮