সকাল ১২ টা, শীতকাল।
তালবাড়ির মোড়…।আকাশ টা অনেক মেঘলা। রাস্তার ট্রাফিক তাই প্রতিদিনের থেকে একটু হালকা। আইল্যান্ডের ট্রাফিক পুলিশ পাশের টোং দোকানে বসে আয়েশ করে ধোয়া ওঠা গরম চা খাচ্ছে। ৩ নং ইলেক্ট্রিক পোলটার নিচে দাড়িয়ে বাবু হাতে সেই ২০০৯এর বাবার নোকিয়া১২০০ ফোনটা। ফোনের ডায়ালিং প্যাডটায় অনেক ব্যস্ততার সাথে আঙ্গুল ঘোরাচ্ছে সে। অনেক পরিচিত নাম্বার টা ফুটে ওঠে মোবাইল স্ক্রিনে।
সকাল ১২.০১ ,সিটি শপিং মল।
ছেলের জন্য একটা স্মার্ট ফোন কিনতে এসেছেন রাফিক সাহেব। অনেকদিন ধরে বায়না করে আসছে ছেলেটা। যতোই কষ্ট হোক একমাত্র ছেলের কোনও আবদার অপূর্ণ রাখেননা তিনি।
সকাল ১২ বেজে ১০ মিনিট।
বারান্দা থেকে ঘোলাটে আকাশটাকে দেখছে বহ্নি। একটা পাখিকেও আজ উড়ে যেতে দেখেনি ও আকাশ দিয়ে। পাড়ার মোড়ের আকাশ ভাইয়ের দোকানের সামনে কিছু মানুষ কাগজ জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছে। আগুনের পাশে মন্তুদের পোষা বিড়ালটাকেও দেখা যাচ্ছে। অনেক আয়েশ করে বসে আছে প্রাণীটা। গত ২ দিন একটা ফোন কলের জন্য অপেক্ষা করছে বহ্নি।
সকাল ১২ টা ৫ মিনিট, তালবাড়ির মোড়।
অসংখ্য মানুষ ছুটে আসছে এদিক ওদিক থেকে। একটু আগে একটা ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩নং পোলটায় ধাক্কা মেরেছে। একটা ছেলে অন স্পট মারা গেছে আর ২ জন এর অবস্থা আশঙ্কাজনক। পোলটা দুমড়ে মুচড়ে পরে আছে আর পরে আছে কিছু মাংসপিণ্ড। বাবুর স্লিপারটা দূরে আলম ভাইয়ের দোকানের সামনে পরে আছে।
পরদিন সকাল ১২টা,
একটা জাতীয় দৈনিকের ভিতরের একটা পাতায় ৭-৮ লাইন এর একটা নিউজ।
ওটা দেখেই কি মানুষ বুঝতে পারবে এই হারানোর যন্ত্রণাগুলো?
না পারবে না।
শুধুমাত্র যার হারাবে সেই বুঝবে।
কোন বাবা হয়তো ওয়ারড্রবের উপর রাখা ফোনসেট টার দিকে তাকিয়ে থাকবে রোজ মনের যন্ত্রণাগুলো আটকে রেখে।
আর কোনদিন ফোন কল আসবেনা জেনেও, বহ্নি হয়তো ভেজা চোখে রোজ অপেক্ষা করবে ওই ফোন কল টার জন্য।
দিন যাবে, মাস যাব, বছর যাবে। কিন্তু এদের অস্তিত্বহীন স্বপ্নের জালবোনা শেষ হবেনা হয়তো কখনও ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৬