আমার কবিতা রহস্য সৃষ্টি না করে আসঙ্গলিপ্সার কথা বলে -আল মাহমুদ
বাংলা কবিতা যাঁদের হাত ধরে আধুনিকতায় পৌঁছেছে আল মাহমুদ তাঁদের অন্যতম। ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর লেখালেখির সূচনা পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকেই। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লোক লোকান্তর’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। ১৯৬৬ সালে প্রকাশ পায় ‘কালের কলস’ ও ‘সোনালী কাবিন’। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’, ‘দোয়েল ও দয়িতা’, ‘দ্বিতীয় ভাঙন’ ইত্যাদি। তিনি অসংখ্য প্রবন্ধ লিখেছেন। লিখেছেন ‘পানকৌড়ির রক্ত’র মতো গল্পগ্রন্থ এবং ‘উপমহাদেশ’র মতো উপন্যাস। আল মাহমুদের কিশোর রচনাও কম নয়। তাঁর লেখা ‘পাখির কাছে ফুলের কাছে’র মতো কিশোর কবিতার বই বাংলা সাহিত্যে দুর্লভ।
সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর পরিচালক হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন তিনি। বাংলা একাডেমী পুরস্কার, একুশে পদকসহ তিনি দেশ-বিদেশের অসংখ্য পুরস্কার ও সন্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
মাহমুদ শাওন: প্রায় ৪ বছর আগে আমাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আপনি তরুণ কবিদের রচনা সম্পর্কে বলেছিলেন, তরুণদের কবিতা একটা চড়ায় আটকে গেছে। তারা ‘আমি’ ‘তুমি’র বৃত্ত থেকে বেরোতে পারছে না। আট-দশ লাইনে এসে কবিতা থেমে যাচ্ছে...ইত্যাদি। তরুণদের কবিতা সম্পর্কে এখনো কি আপনার এ রকমই মূল্যায়ন?
আল মাহমুদ: এটা বলেছিলাম এক সময়। তখন আমার মনে হয়েছিল তরুণরা একটা দিশেহারা অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ কবিতার বিষয় গতানুগতিক। আমি-তুমির বৃত্ত থেকে বেরোতে পারছে না তারা। যেন তাদের আর কোনো বক্তব্য নেই। এখন তো আমি তরুণদের ব্যাপারে জানিও না। তারা কী করছে, কিভাবে লিখছে কিছুই জানি না। এক সময় আজিজ মার্কেটে গিয়েছি, আড্ডা দিয়েছি। এখন তো সে অবস্থা নেই। এখন আমি পারি না কনটেম্পোরারি সাহিত্যের খোঁজ-খবর রাখতে। এ ব্যাপারে এখন উদাসীন বলা যায়। শুনেছি তারা গদ্য ভঙ্গিতে কবিতা লিখছে। আঙ্গিক ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তরুণদের এই প্রবণতাটাকে আমি মনে মনে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনো গ্রন্থ তাদের হাত দিয়ে রচিত হয়নি যা আমাকে বাধ্য করবে তাদেরকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে। যদি তেমন লেখা হতো নিশ্চয় আমি খোঁজ পেতাম, পড়তাম।
মাহমুদ শাওন: মাহমুদ ভাই, আপনার কবিতায়ও তো আমি-তুমির ছড়াছড়ি! সম্প্রতি প্রকাশিত আপনার কাব্যগ্রন্থের নাম ‘তোমার রক্তে তোমার গন্ধে’ কিংবা তার আগে প্রকাশিত গ্রন্থ ‘তুমি তৃষ্ণা তুমিই পিপাসার জল’! তরুণ কবিরাও তো বলতে পারে, আপনিও আমি-তুমি বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারেননি!
আল মাহমুদ: এটা বললে বলতে পারে। কিন্তু আমার কবিতায় আমি-তুমির একটা দেশ আছে, কাল আছে। তাদের অবস্থান আছে। ‘তুমি’ টা কে? তার অবস্থান কী? এই ‘তুমি’র ব্যাখ্যা থাকতে হবে। আমার কবিতায় আমি সে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
মাহমুদ শাওন: অনেকেই আপনার কবিতাকে ‘পুরুষতান্ত্রিক’ কবিতা বলে। বৈষ্ণব পদকাররা দেহাত্মা আর পরমাত্মার সংশ্লেষণ ঘটিয়েছিলেন তাঁদের কবিতায়। আপনার কবিতায় দেখি আত্মার অনুপস্থিতি। আপনার কবিতার বড় অংশ জুড়েই শুধু দেহ আর কাম। এটা কেন?
আল মাহমুদ: আমি অবশ্য প্রশ্নটা ভালো করে বুঝিনি। যতটুকু বুঝতে পারছি তার উত্তরে বলছি, সব সময়ই আমার কবিতায় একটা বিষয়কে উপস্থাপন করতে চাই। নর হোক, নারী হোক, প্রেম হোক একটা বিষয়কে উপস্থাপন করতে চাই। আমার ধারণা আমি তা করতে পেরেছি। এবং তরুণরা যে সেটা কিভাবে নিয়েছে তা তো জানতে পারিনি, কারণ কমিউনিকেশনটা নাই তরুণদের সঙ্গে।
মাহমুদ শাওন: আপনার ‘সোনালী কাবিন’ সনেটগুচ্ছের প্রথম সনেটটিতে লিখেছেন, ‘সোনার দিনার নেই কাবিন চেয়ো না হরিণী/যদি চাও দিতে পারি কাবিনবিহীন হাত দু’টি’, এই যে বাঁধা পড়তে না চাওয়া, ছুঁতে দিয়েও ধরা দিতে না চাওয়া-সৃজনশীল মানুষদের মধ্যে এই প্রবণতাটা এত বেশি কেন?
আল মাহমুদ: এটা হয়তো কবির একটা স্বাধীন ইচ্ছা হতে পারে, যে আমাকে কোনো কিছুতে বেঁধো না-এ-ই এই ইচ্ছে আর কী! আমি মুক্ত থাকতে চাই। মুক্ত থেকে যতটুকু বিনিময় করা যায় সেটুকু আমাকে পাবে, এর বেশি নয়। হয়তো এটা হতে পারে।
মাহমুদ শাওন: কিন্তু শিল্পীত মানুষদের মধ্যে কেন এ প্রবণতাটা বেশি কাজ করে?
আল মাহমুদ: এটা তো আমি বলতে পারবো না। কোনো কবি বন্ধনের মধ্যে যেতে চায় না।
মাহমুদ শাওন: আপনি কী চেয়েছেন? আপনার কবিতায় বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন প্রসঙ্গে, ভিন্ন ভিন্ন নারীরা এসেছে। এদের বিষয়ে কিছু বলুন...
আল মাহমুদ: নারী তো একটা কাঠামো। কবি বিভিন্ন জায়গা থেকে নারীকে এনে সেই কাঠামোতে বসিয়ে দেয়। কারো হাত, কারো চোখ, কারো কেশ, কারো বস্থল, কারো মুখ, পা, কারো কোমরÑভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে এনে কাঠামোতে জোড়া লাগিয়ে দেয়। আমি সেটাই করেছি। প্রশ্ন হচ্ছে এসব কবিতায় স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দের সৃষ্টি করছে কি-না? যদি করে থকে, তবে ঠিক আছে। অস্বীকার করছি না, আমার কবিতা রহস্য সৃষ্টি না করে সরাসরি আসঙ্গলিপ্সার কথা বলে। কবিতা লিখতে গিয়ে নারী-ই আমার প্রধান বিষয়। মেয়েদের আমার ভালো লেগেছে-এটা আমি অকপটে বলেছি। কবি জীবনে এটা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং ব্যক্তিজীবনে এটাকে আমি স্বশ্রদ্ধায় দেখি।
মাহমুদ শাওন: এই যে আপনি বললেন, ‘আমার কবিতা রহস্য সৃষ্টি না করে সরাসরি আসঙ্গলিপ্সার কথা বলে’, অর্থাৎ আপনার কবিতা একটা জায়গায় গিয়ে পৌঁছায়, একটা মীমাংসা বা পরিণতিতে স্থির হয়। কিন্তু কোনো মহৎ কবিতা কি কোনো সিদ্ধান্ত দেয় বা সিদ্ধান্তে পৌঁছে?
আল মাহমুদ: আমার কবিতা পড়লে দেখবে সময়ের ধার ঘেঁষে আমি সময় থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমার কবিতায় রয়েছে দেহজ প্রেমের আধুনিক রূপান্তর। এক জায়গায় তো স্থির থাকিনি। আর আমার কবিতা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছোবে না কেন? আমি সিদ্ধান্তে পৌঁছোতে চাই। আমি সবকিছুর একটা এ্যান্ড চাই। আধুনিক সাহিত্য এটাকেই আমি মনে করি, যেখানে হয়তো মিলও আছে, ছন্দও আছে, গন্ধও আছে-সবকিছু মিলিয়ে একটা স্থাবর বা অস্থাবর কিছু তৈরি হবে, একটা ম্যাজিক তৈরি হবে। আধুনিক কবিতা আমি এটাকেই বলি।
মাহমুদ শাওন: কবিতা যখন একটা সিদ্ধান্ত দিয়েই দিচ্ছে তখন সেটা কি কবিতার সীমাবদ্ধতা নয়? এর ফলে ওই কবিতা পড়ার পর পাঠকের মনে নতুন করে কোনো সন্দেহ বা প্রশ্নের উদ্ভব সম্ভব নাও হতে পারে। কবিতা তো একরৈখিক হয়ে যাবে! কোজ এন্ডেড হয়ে যাবে। শিল্পের বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনা বলে যে বিষয়টা আছে তা কি ুণœ হয় না এতে?
আল মাহমুদ: আধুনিক সাহিত্যের রীতি অনুযায়ী কবিতাকে এক জায়গায় পৌঁছোতেই হবে। যদি না পৌঁছায় তবু আমি হয়তো তাকে কবিতা বলবো, কিন্তু আসলে তা কবিতা হয়ে ওঠেনি। কবিতার নিজস্ব শব্দ আছে, গল্প আছে, ছন্দ আছে, উৎপ্রো, অনুপ্রাস আছে। এমনি তো আর কবিতা হয় না। অনেকগুলো স্বাদ যুক্ত হলে কবিতা হয়। আমি অনেকদিন থেকেই কবিতা লিখছি। আধুনিক কবিতা সম্পর্কে আমার ধারণা গড়ে উঠেছে। আমি সেই ধারণা থেকেই লিখছি। আমার কাজের বহর কম নয়, অনেক বড়, অনেক বিস্তৃত। আমাদের বাংলা কবিতা হলো গীতিপ্রবণ। আমি নিজেও মোটামুটি গীতিধর্মী কবিতা লিখতে চাই। আর অ-কবিতাকে কবিতা থেকে আলাদা রাখার জন্য ছন্দ, মিল, অনুপ্রাস এসবের ঝোক বানাতে হয়। কবি হতে গেলে তার অবশ্যই মাত্রাজ্ঞান থাকতে হবে। মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা হলো মিলের মধ্যে থাকা। সব জায়গায় এটা আছে। তবে ছন্দহীন কবিতাও কবিতা হতে পারে। রবীন্দ্রনাথ শেষের দিকে অনেক ছন্দহীন কবিতা লিখেছেন। কবিতাকে কবিতা করে তুলতে হবে। যদি ছন্দ না থাকে তবে ছন্দের অভাব অন্যকিছু দিয়ে পুরণ করতে হবে। নইলে মানুষ পড়বে না; শুধু তাকিয়ে দেখবে।
মাহমুদ শাওন: বেশ। কবিতা নিয়ে অনেক কথা হলো। কবি আসলে কী চায়?
আল মাহমুদ: কবি সব সময় দুটো জিনিস এক সঙ্গে চায়। একটা হলো-তাঁকে তাঁর প্রেমের পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে, সে যে প্রেমে পড়ে এটা মেনে নিতে হবে। অন্যটি হলোÑতাঁকে কোনো বাঁধনে আটকানো যাবে না।
মাহমুদ শাওন: কিন্তু আমাদের সোসাইটি কি এটাকে এ্যালও করে বা আমাদের পরিবার?
আল মাহমুদ: না, পরিবার তো এ্যালাও করে না, সমাজও করে না। এ জন্যই কবিরা বিদ্রোহী।
মাহমুদ শাওন: মাহমুদ ভাই, সেক্ষেত্রে আপনি কীভাবে সামাল দেন?
আল মাহমুদ: আমিও বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি। তারপরও সমস্ত শূন্যতাকে মাড়িয়ে এগিয়ে গেছি। আমি বলেছি, আই উইশ টু বি আ পোয়েট। কবির মতো জীবন যাপন করতে চেয়েছি। কবির স্বপ্ন যেমন থাকে, আমারও তেমন স্বপ্ন। সেই স্বপ্নে যত বাঁধা এসেছে-সব অতিক্রম করতে পারিনি, কিন্তু বিদ্রোহ করেছি।
মাহমুদ শাওন: কিন্তু জীবনসঙ্গী হিসেবে নারী কি কবিকে পছন্দ করে?
আল মাহমুদ: অবশ্যই করে। মেয়েরা কবিপুরুষকেই বিয়ে করতে চায়। কারণ কবিরা সহনশীল হয়। পার্থিব অনেক বিষয়ে তারা উচ্চবাচ্য করেন না। এটা ঠিক না যে কবি হলেই তিনি পরিত্যজ্য হলেন।
মাহমুদ শাওন: আমি ঠিক পরিত্যজ্য হওয়ার কথা বলছি না। যেমন আমি একটা ঘটনা জানি, অনুমতি দিলে বলতে পারি...
আল মাহমুদ: বলো।
মাহমুদ শাওন: আপনার বাবা প্রথমে যে মেয়ের সঙ্গে আপনার বিয়ে ঠিক করেছিলেন, যতদূর জানি, বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক হয়েছিল, দাওয়াত পত্র ছাপা হয়েছিল-এমন সময় মেয়েটি জানলেন আপনি কবি, কবিতা লেখেন, এবং কবি হওয়ার কারণে মেয়েটি শেষ পর্যন্ত বিয়েতে রাজি হয়নি। বিষয়টি আপনার বাবার সম্মানে লেগেছিল। তিনি সঙ্গে সঙ্গে পাশের গ্রামের এক স্কুল শিকের মেয়ের সঙ্গে আপনার বিয়ে ঠিক করেন। আমৃত্যু তিনি আপনার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে ছিলেন...
আল মাহমুদ: হ্যাঁ, কেউ কেউ এমনও আছে। রকমফের তো থাকেই। তবে অনেক নারীই আছে-অর্থ নেই, বৃত্ত নেই-শুধু কবি বলেই তাঁকে বিয়ে করতে চায়, জীবনসঙ্গী হিসেবে চায়। এটা আমার বিশ্বাস আর কী-কবিদের মেয়েরা পছন্দ করে। কারণ কবিরা নিষ্ঠুর হয় না। কোনো কিছু ভাঙতে চায় না তাঁরা। তাঁরা হলো রণশীল। ভালো যেটা, সুন্দর যেটা-ধরে রাখতে চায় কবিরা।
আমার স্ত্রী জেনেশুনেই আমাকে বিয়ে করেছেন। তিনি জানতেন আমি কবি। আমার শ্বশুর স্কুল শিক ছিলেন। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে যেদিন ঢাকায় এলাম, উঠলাম পুরান ঢাকার ছোট্ট একটা ঘরে, বিছানায় ছড়িয়ে আছে বই; বড় মমতায় বইগুলো এক পাশে সরিয়ে শুয়ে পড়লেন, কোনো অভিযোগ করলেন না। সেই যে তিনি একটুখানি জায়গা দখল করলেন, সে জায়গাটুকুই নিয়ে ছিলেন। বইয়ের সঙ্গে তাঁর কখনোই বিরোধ হয়নি।
মাহমুদ শাওন: আপনার কথাসাহিত্য নিয়ে কথা বলতে চাই। আপনার ‘জলবেশ্যা’ বা ‘পানকৌড়ির রক্ত’ গল্পে...
আল মাহমুদ: দেখো, আমার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। এসব নিয়ে আজ কিছু বলতে পারবো না। তবে যা বললে গল্প হবে আমি তা-ই লিখতে চেয়েছি, লিখেওছি। আমার উপন্যাসে জাদুবাস্তবতা আছে। স্বপ্ন, অলৌকিক, অশরীরী অনেক বিষয়কে গল্প বা উপন্যাস করে তুলেছি। আমি যেটা দিয়ে গল্প বলাতে চেয়েছি, সেটাই গল্প হয়ে উঠেছে। এটা আমার বিশ্বাস।
মাহমুদ শাওন: মাহমুদ ভাই, এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে কথা বলবো। এই যে আপনি পঁচাত্তর বছরে পা রাখলেন, জীবনের এতগুলো দিন, এত অভিজ্ঞতা পেরিয়ে এসেছেন; পেছন ফিরে তাকাতে ইচ্ছে করে না?
আল মাহমুদ: তাকাতে ইচ্ছে করে। আমি তাকাই। কিন্তু খুব বেশি পেছনে তো যেতে পারি না। তবে মানুষ হিসেবে আমি অতীতমুখী নই। ভবিষ্যৎমুখী। অতীত আমি বাদ দেইনি, আবার তাকে সামনেও আনতে চাইনি।
মাহমুদ শাওন: আপনি তো সারাণই বাসায় থাকেন। আপনার সময় কাটছে কিভাবে?
আল মাহমুদ: কেটে যাচ্ছে বা কোনো রকমে সময় অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে। এখন তো আর বাইরে যেতে পারি না। একসময় যাঁদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম তাঁদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এখন নানা রকম চিন্তা কাজ করে। অনেক কথা লিখতে ইচ্ছে করে। সব কথা তো আর লিখতে পারিনি।
মাহমুদ শাওন: মৃত্যুচিন্তা...
আল মাহমুদ : মৃত্যুচিন্তাও কাজ করে। মৃত্যু আসবে। আমি মৃত্যুটাকে সহজভাবে নিই। কোনো জটিলতা নাই। পৃথিবীতে মানুষ যত জন্মেছে, ততই মরেছে। মৃত্যু নিয়ে আমার চিন্তা আছে, দুঃশ্চিন্তা নাই।
সাক্ষাৎকারটি দৈনিক কালের কণ্ঠ'র সাহিত্য ম্যাগাজিন শিলালিপিতে প্রকাশিত হয়েছে ২৩ জুলাই' ২০১০।