কয়েকদিন ফেসবুকে শুদ্ধ ভাষা নিয়ে কয়েকটা মজার কাহিনী পড়ার পর আমার কয়েকটা কাহিনী মনে পড়ল ।
১। তখন প্রাইমারী স্কুলে ক্লাস ফাইভে পড়ি। ক্লাসে একটা আদু ভাই ছিল, যে নাকি থ্রি থেকে ফাইভ প্রত্যেক ক্লাসে তিন বছর থাকার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করছিল,নাম সালেহীন। ক্লাসে সবচেয়ে ফাজিল পোলা কাজল তাকে স্যালাইন ভাই বলে ডাকত। কাজলের দেখাদেখি বাকিরা সবাই মিলে স্যালাইন ভাই বলে ডাকায় সে স্যারের কাছে নালিশ করল। স্যার কাজলকে ডাকলে কাজল স্যারের সামনে প্রথমে বলে, " স্যার,সত্যি বুলচি, আমি বুলিনি( মেহেরপুরের আঞ্চলিক ভাষা) । স্যার বেত হাতে নিয়ে বলেন, শুদ্ধ ভাষায় কথা বল। তখন কাজলের বক্তব্য- "স্যার আমি আসলে স্যালাইন বুলতে চেইনি। কিন্তু "সালেহীন" আমার মুখে এসে না। "


২। রংপুরের মত মেহেরপুরেও ( আমার বাড়ি) অনেকে রক্ত কে অক্ত, রাজহাঁস কে আজহাঁস বলে। এক পিচ্চি কাজিনকে স্কুলে বাবার নাম জিজ্ঞেস করায় সে বলছে, আশেদ উদ্দীন ( রাশেদ উদ্দীন) । তখন স্যার শিখিয়েছে অক্ত, আজহাঁস এইগুলা না বলে যেন শুদ্ধ ভাষায় বলে। পিচ্চি বাসায় আসার পর মা আনারস খেতে দেয়ার পর সে খুব সিরিয়াস মুখ করে বলে, মামী, আমি রানারস খাইনা ।


৩। একদিন টিউশনিতে গিয়ে দেখি আন্টি বাসার দুই তিনটা পিচ্চি বুয়াকে পড়াচ্ছেন। দেখে অবাক হলাম। হঠাৎ শুনি, এক পিচ্চি বলে, "খালাম্মা, খাতা হারাইয়ালছি" । আন্টি ধমক দিয়ে বলেন, "এইগুলা কি বল! ঠিকভাবে বল।" পিচ্চি তখন কাচুমাচু করে বলে, "খালাম্মা খাতা হেরে গিয়েছে"


৪। তিন চারদিন আগে অফিসে পিয়ন একটা প্রোজেক্টের ফাইল এনে দিল।কলমের বদলে পেন্সিল নিয়ে লেখা শুরু করার পর খেয়াল হল, কলম দিয়ে লিখতে হবে।টেবিলে, ড্রয়ারে কোথাও ইরেজার (কিন্তু রাবার বলেই অভ্যস্ত) পেলাম না ।
পিয়নকে জিজ্ঞেস করলাম, "রাবার আছে?"
মিনমিন করে বলে - " জ্বী ম্যাডাম , আছে । কিন্তু ঢাকায় না, কুমিল্লায় থাকে, দেশে। বেতন বাড়লেই আপনাদের দোয়ায় বিয়া করতাম। "
আমি হতবাক হয়ে তার মুখের দিকে তাকাতে দেখি বেচারা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। আমার হতভম্ব চেহারা দেখে সে টাশকি খাওয়ার আগে আবার বললাম, "আমি রাবার আছে কিনা জিজ্ঞেস করছিলাম।"
সে দ্বিগুণ লজ্জা পেয়ে বলে, ওহ, সরি ম্যাডাম। আমি শুনছিলাম আপনি জিগাইতেছেন লাবার ( lover) আছে কিনা।

( শেষের ঘটনাটা কেউ আগেই পড়ে থাকতে পারেন, এটা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম )
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৭