যে মানুষের জীবন সত্যের আলোকে গঠিত হয় সে মানুষ প্রফুল্ল জীবন লাভ করে- সে জীবন হয় স্বার্থক জীবন। পান্তেরে যে মানুষের ভেতর মিথ্যার বীজ নিহিত সে জীবন হয় কূলুষিত। তার মন থাকে অন্ধকারে ঢাকা। সে অস্থির জীবন যাপন করে। কোনো কিছুতেই তার শান্তি নেই। কোনো কিছুই তার ভালো লাগে না। তার ভালো লাগে মিথ্যা। মিথ্যার কাছে সে ফিরে যায় বারবার। কারণ, তার মনে মরিচা পড়ে গেছে। তার বিকেক ভোঁতা হয়ে গেছে। তাই সব কিছুতেই সে একটা অস্থিরতা অনুভব করে। সব কিছুই সে বাঁকা চোখে দেখে। যে মানুষ সত্যকে আঁকড়ে ধরে, সত্যের উপর অটল থাকে, তার জীবন হয় সুস্থির। সে হয় প্রশান্ত আত্মার অধিকারী। তাই সত্যের জন্য যত প্রশংসাÑ সুন্দরের জন্য যত প্রার্থনা। কবি মল্লিকের একটা গান আছে না “প্রশংসা সবই কেবল তোমারি রাব্বুল আলামীন। দয়াল মেহেরবান করুণা অফুরাণ আর কেউ নেই তুমিই মালিক, শেষ বিচারের দিন”। যা সত্য তা-ই সুন্দর। যেখানে সত্য সেখানে মুক্তি। যেখানে মিথ্যা সেখানে কলহ বিবাদ। মিথ্যা যত গন্ডগলের মূল, অঘটন ঘটন পটিয়সী।
ধন থাকলে ধনী হওয়া যায় না; ধনী হতে মন লাগে। সত্যের শক্তি অবিনশ্বর। সে এতই শক্তিশালী যে সে সকলকে আকর্ষণ করতে পারে। সকল অসত্য সুন্দরের কাছে নাস্তানাবুদ হয়। প্রকৃত সত্য সম্পর্কে মানুষের কোনো ধারনাই নেই। অধিকাংশ মানুষই সত্যের নামে অসত্যের অনুসরণ করছে। সাদা চাপড়ার দেহধারী মানুষ সুন্দর মানুষ নয়; যদি তার স্বভাব-চরিত্র ভালো না হয়। আত্মিক সুন্দরের কাছে দৈহিক সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায়।
সত্য এতই সুন্দর যে বহু মুনি, ঋষি এবং মনীষী সত্যের জন্য সব কিছু ত্যাগ করেছেন। আধুনিক যুগের আদর্শ নেতা মহাত্মা গান্ধী সত্যের জন্য সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। শুধু মহাত্মা গান্ধী নয়- পৃথিবী শুরু থেকে বহু মানুষ এ সত্যের জন্য জীবনের সর্বত্রই বিলিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ প্রেরিত নবী, রাসুল, ওলীরা হলেন সত্যের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। যারা শত ভয়, জুলুম-নির্যাতনের মুখে সত্যের উপর অটল ছিলেন।
সত্য যেখানে সেখানে মুক্তি। সত্যের জন্য হৃদয়ের সবটুকু ঢেলে দিতে হয়। তাইতো আমি মনের সকল চাহিদা দিয়ে সত্যকে কামনা করি। সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় তাকে কাছে পেতে চাই। তাকে ভালোবেসে জীবন ভরিয়ে দিতে চাই। মরুভূমির জমিনে এক পশলা বৃষ্টির প্রার্থনার মতই হলো সুন্দরের আরাধনা। হৃদয় জমিতে তার ভালোবাসার ফুল ফোটাতে চাই। তার সুভাসে জীবন সুভাসিত করতে চাই। তার আলোয় জীবন আলোকিত করতে চাই। সৃষ্টিকর্তার নিকট সত্যের জন্য আমি প্রার্থনা করি।
রাত সত্য, দিন সত্য, জন্ম সত্য, মৃত্যু সত্য। সূর্য প্রতিদিন পূর্বদিক থেকে উদিত হয়, পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। তার মানে সে সত্যের কাছে আত্নসমর্পন করে। মায়ের অন্ধকার গর্ভে নিপ্তি এক ফোটা শুক্রবিন্দু থেকে জন্ম নেয় মানুষ। দুনিয়ার জীবন শেষে একদিন সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এরই নাম মৃত্যু। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মানুষের জীবনের সকল স্বাদ মিটে যায়। স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়। এরপর কবর তার উদরপূর্তি করে। মাটি থেকে সৃষ্টি মানুষ মাটিতেই ফিরে যায়। এটা তার গতি, এটা তার নিয়ম। পৃথিবীর প্রতিটি বিষয় একটা নিয়ম-নীতির অধীন। প্রত্যেক বস্তুই তার মূলের দিকে ফিরে যায়। এই মূল হলো প্রকৃত সত্য। সৃষ্টিকর্তা হলেন পরম সত্য। সেই সৃষ্টিকর্তার জন্য সকল প্রেম ঢেলে দিতে পারলে মানুষের জীবনে আর কিছুই লাগে না। যে মানুষ আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে পারে- তার অন্য কোনো বস্তুগত ভালোবাসার প্রয়োজন হয় না। জীবনের সকল চাওয়া-পাওয়াকে আল্লাহর মর্জি মাফিক করলেই প্রকৃত আল্লাহ প্রেমিক হওয়া যায়। তাইতো মু’মিন মুসলমানের উক্তি- যা পবিত্র কুরআনে কোড করা হয়েছে, “আমার নামাজ, আমার কোরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ একমাত্র আল্লাহই জন্য”। পৃথিবীর সকল সুন্দরের স্রষ্টা হলেন আমার পরম প্রভু। সেই প্রভু হলেন আসল সত্য। তার উপর আর কোনো সত্য নেই। সবার উপর আছেন একমাত্র আমার আল্লাহ তাঁয়ালা। তাঁর জন্যই সকল প্রেম ঢেলে দিতে চাই। পরম প্রভুর রঙে নিজেকে সাজাতে চাই। তাঁর কাছেই সব কিছু সঁপে দিতে চাই। তাই সে সত্যের জন্য যত আরাধনা সুন্দরের জন্য যত প্রার্থনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:০২