somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্য ও সুন্দরের প্রার্থনা

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“সত্য মুক্তি দেয়, মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে”। এটি একটি আরবী প্রবাদ। সেই কতকাল আগে মাধ্যমিক শিক্ষা জীবনে প্রবাদটি পড়েছিলাম। যে মানুষের মনে সত্যের বীজ রোপিত হয় সে মানুষ হয় সুন্দর মানুষ। তার জীবন হয় সুন্দর। সত্য ও সুন্দরের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে তার জীবনের মধ্যে। তার হাসিতে সত্য, তার কথায় সত্য, তার গানে সত্য, তার প্রাণে সত্য- তার চলাফেরা, কথাবার্তা সর্বত্রই শুধু সত্য আর সত্য। সত্য ছাড়া সে কিছুই বুঝে না। সত্যকে অমূল্য রতনের মত সে আগলে রাখে। অন্য সব কিছুর মতই সত্যকে লালন করতে হয়। সত্যের বীজ থেকে অঙ্কুর গঁজিয়ে সুন্দরের বুক্ষে পরিণত হয়। সত্যের সে বৃক্ষে আশ্রয় নেয় পৃথিবীর সকল ভালো মানুষ। সত্যের বৃক্ষ হয় মার্জিত আর রুচিবান মানুষের আভয়াশ্রম।
যে মানুষের জীবন সত্যের আলোকে গঠিত হয় সে মানুষ প্রফুল্ল জীবন লাভ করে- সে জীবন হয় স্বার্থক জীবন। পান্তেরে যে মানুষের ভেতর মিথ্যার বীজ নিহিত সে জীবন হয় কূলুষিত। তার মন থাকে অন্ধকারে ঢাকা। সে অস্থির জীবন যাপন করে। কোনো কিছুতেই তার শান্তি নেই। কোনো কিছুই তার ভালো লাগে না। তার ভালো লাগে মিথ্যা। মিথ্যার কাছে সে ফিরে যায় বারবার। কারণ, তার মনে মরিচা পড়ে গেছে। তার বিকেক ভোঁতা হয়ে গেছে। তাই সব কিছুতেই সে একটা অস্থিরতা অনুভব করে। সব কিছুই সে বাঁকা চোখে দেখে। যে মানুষ সত্যকে আঁকড়ে ধরে, সত্যের উপর অটল থাকে, তার জীবন হয় সুস্থির। সে হয় প্রশান্ত আত্মার অধিকারী। তাই সত্যের জন্য যত প্রশংসাÑ সুন্দরের জন্য যত প্রার্থনা। কবি মল্লিকের একটা গান আছে না “প্রশংসা সবই কেবল তোমারি রাব্বুল আলামীন। দয়াল মেহেরবান করুণা অফুরাণ আর কেউ নেই তুমিই মালিক, শেষ বিচারের দিন”। যা সত্য তা-ই সুন্দর। যেখানে সত্য সেখানে মুক্তি। যেখানে মিথ্যা সেখানে কলহ বিবাদ। মিথ্যা যত গন্ডগলের মূল, অঘটন ঘটন পটিয়সী।
ধন থাকলে ধনী হওয়া যায় না; ধনী হতে মন লাগে। সত্যের শক্তি অবিনশ্বর। সে এতই শক্তিশালী যে সে সকলকে আকর্ষণ করতে পারে। সকল অসত্য সুন্দরের কাছে নাস্তানাবুদ হয়। প্রকৃত সত্য সম্পর্কে মানুষের কোনো ধারনাই নেই। অধিকাংশ মানুষই সত্যের নামে অসত্যের অনুসরণ করছে। সাদা চাপড়ার দেহধারী মানুষ সুন্দর মানুষ নয়; যদি তার স্বভাব-চরিত্র ভালো না হয়। আত্মিক সুন্দরের কাছে দৈহিক সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায়।
সত্য এতই সুন্দর যে বহু মুনি, ঋষি এবং মনীষী সত্যের জন্য সব কিছু ত্যাগ করেছেন। আধুনিক যুগের আদর্শ নেতা মহাত্মা গান্ধী সত্যের জন্য সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। শুধু মহাত্মা গান্ধী নয়- পৃথিবী শুরু থেকে বহু মানুষ এ সত্যের জন্য জীবনের সর্বত্রই বিলিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ প্রেরিত নবী, রাসুল, ওলীরা হলেন সত্যের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। যারা শত ভয়, জুলুম-নির্যাতনের মুখে সত্যের উপর অটল ছিলেন।
সত্য যেখানে সেখানে মুক্তি। সত্যের জন্য হৃদয়ের সবটুকু ঢেলে দিতে হয়। তাইতো আমি মনের সকল চাহিদা দিয়ে সত্যকে কামনা করি। সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় তাকে কাছে পেতে চাই। তাকে ভালোবেসে জীবন ভরিয়ে দিতে চাই। মরুভূমির জমিনে এক পশলা বৃষ্টির প্রার্থনার মতই হলো সুন্দরের আরাধনা। হৃদয় জমিতে তার ভালোবাসার ফুল ফোটাতে চাই। তার সুভাসে জীবন সুভাসিত করতে চাই। তার আলোয় জীবন আলোকিত করতে চাই। সৃষ্টিকর্তার নিকট সত্যের জন্য আমি প্রার্থনা করি।
রাত সত্য, দিন সত্য, জন্ম সত্য, মৃত্যু সত্য। সূর্য প্রতিদিন পূর্বদিক থেকে উদিত হয়, পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। তার মানে সে সত্যের কাছে আত্নসমর্পন করে। মায়ের অন্ধকার গর্ভে নিপ্তি এক ফোটা শুক্রবিন্দু থেকে জন্ম নেয় মানুষ। দুনিয়ার জীবন শেষে একদিন সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এরই নাম মৃত্যু। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মানুষের জীবনের সকল স্বাদ মিটে যায়। স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়। এরপর কবর তার উদরপূর্তি করে। মাটি থেকে সৃষ্টি মানুষ মাটিতেই ফিরে যায়। এটা তার গতি, এটা তার নিয়ম। পৃথিবীর প্রতিটি বিষয় একটা নিয়ম-নীতির অধীন। প্রত্যেক বস্তুই তার মূলের দিকে ফিরে যায়। এই মূল হলো প্রকৃত সত্য। সৃষ্টিকর্তা হলেন পরম সত্য। সেই সৃষ্টিকর্তার জন্য সকল প্রেম ঢেলে দিতে পারলে মানুষের জীবনে আর কিছুই লাগে না। যে মানুষ আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে পারে- তার অন্য কোনো বস্তুগত ভালোবাসার প্রয়োজন হয় না। জীবনের সকল চাওয়া-পাওয়াকে আল্লাহর মর্জি মাফিক করলেই প্রকৃত আল্লাহ প্রেমিক হওয়া যায়। তাইতো মু’মিন মুসলমানের উক্তি- যা পবিত্র কুরআনে কোড করা হয়েছে, “আমার নামাজ, আমার কোরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ একমাত্র আল্লাহই জন্য”। পৃথিবীর সকল সুন্দরের স্রষ্টা হলেন আমার পরম প্রভু। সেই প্রভু হলেন আসল সত্য। তার উপর আর কোনো সত্য নেই। সবার উপর আছেন একমাত্র আমার আল্লাহ তাঁয়ালা। তাঁর জন্যই সকল প্রেম ঢেলে দিতে চাই। পরম প্রভুর রঙে নিজেকে সাজাতে চাই। তাঁর কাছেই সব কিছু সঁপে দিতে চাই। তাই সে সত্যের জন্য যত আরাধনা সুন্দরের জন্য যত প্রার্থনা।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:০২
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×