রাজন চলে গেছে। রয়ে গেছে তার স্মৃতিগুলো। আর সেই স্মৃতিগুলোকে আকড়ে ধরে গভীর রাত পর্যন্ত তার গ্রামে চলল আনন্দ উদযাপন আর স্মৃতিচারণ। বাড়িতে বাড়িতে সারাদিন চলেছে টেলিভিশন। রাজনের স্কুলে হয়েছে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ।
গতকাল রোববার সিলেটের শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলায় চার জনের ফাঁসির আদেশ ঘোষণার পর রাজনের বাবা-মাসহ স্বজনরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রায়ের খবর শুনে রাজনের গ্রামের বাড়ি বাদেআলী গ্রামেতে স্বজনরা ছুটে এসেছেন। রাতে সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়েনের বাদেআলীতে রাজনের বাড়িতে গিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে।
গ্রামবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রাজন হত্যার রায় ঘোষণা হওয়ার পর থেকে তাদের গ্রামের প্রতিটি মানুষের মাঝে চাপা কষ্ট কিছুটা দূর হয়েছে। এমনকি রায় শোনার পর গ্রামের লোকজন আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে বলে জানা গেছে।
রাজনের প্রতিবেশী সালাম মিয়া বাংলামেইলকে জানান, গতকাল রাজন হত্যার রায় শুনতে গ্রামের অনেকেই সিলেট দায়রা জজ আদালতে গিয়েছিলেন। কিন্তু আবার অনেকেই যেতে পারেনি। তবে আদালত কামরুলসহ চারজনকে ফাঁসি দিয়েছে এমন খবর গ্রামের আসা মাত্র লোকজন আনন্দ উল্লাস করতে শুরু করে।
অনন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা বাবুল মিয়া জানান, রাজন হত্যা রায় ঘোষণার পরপরই তাদরে গ্রামের শিশুরা একটি আনন্দ মিছিল বের করে। মিছিলটি অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (যে স্কুলে রাজন লেখাপড়া করেছে) সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে শিশুদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। মিছিলে অংশ নেয়া অনেকেই রাজনের সহপাঠি বলে জানান বাবুল।
এদিকে, গত রাত ৯টায় রাজনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, রায়ের খবর পেয়ে খুশিতে রাজনের আত্মীয়-স্বজনরা এসেছেন। এছাড়াও রাজনের মা লুবনা বেগম রান্না করছেন।
এ সময় রাজনের বাড়িতে আসা তাঁর ফুফু হাজেরা বেগম বলেন, ‘রাজন হত্যার রায়ের খবর পেয়ে খুশিতে আমি তাদের বাড়িতে এসেছি। বাড়িতে এসেই আমি রাজনের মা লুবনার সঙ্গে কোলাকুলি করেছি। আমরা ওই রায়ে খুশি আছি। তবে রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত টেনশন থাকবে।’
গবিন্দগঞ্জের মহিষপুর থেকে আসা আক্তারুন নেছা নামের এক স্বজন বলেন, ‘তিনিও রাজনের খুনিদের ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে শোনে রাজনের বাড়িতে এসেছেন। চার আসামির ফাঁসির আদেশ হওয়াতে তিনি খুশি হয়েছে বলে জানান।
এক পর্যায়ে রাজনের বৃদ্ধ দাদী লতিফা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাজন হত্যার রায় আমি বাড়িতে বসে টিভিতে দেখেছি। আসামিদের ফাঁসি হয়েছে এতে আমি খুশি। তবে দ্রুতে রায় কার্যকর করার জন্য তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।’
প্রসঙ্গত, গতকাল রোববার সিলেটে শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলায় চারজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া আদালত একজনকে যাবজ্জীবন, ৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও ৩ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
ফাঁসির দন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানার শেখপাড়ার মৃত আবদুল মালেকের ছেলে কামরুল ইসলাম, সুলতান মিয়ার ছেলে তাজউদ্দিন আহমদ বাদল, পীরপুর গ্রামের মৃত মব উল্লাহর ছেলে সাদিক আহমদ ময়না ওরফে বড় ময়না ওরফে ময়না চৌকিদার ও সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের অলিউর রহমানের ছেলে জাকির হোসেন পাভেল ওরফে রাজু।
সূত্রঃ বাংলামেইল২৪
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৪৩