SOUL/SPIRIT আত্মাঃ-
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ নিসৃত গীতা অনুযায়ী - আত্মা অবিনশ্বর, আত্মা না জন্মায় না মরে । আত্মা না কাউকে মারে না কারো দ্বারা হত হয়। আত্মা না রৌদ্রে শুকায়,না আগুনে পোড়ে,না বাতাসে শুকায় না জলে ভিজে। না দেখা যায় চোখে । শুধু অনুভব করা যায় । সুক্ষ অনুভুতি সম্পন্নরাই শুধু উপলব্ধি করতে পারে। “আত্মা অজনিত্যং হয়ং শাশ্বত, না হন্যে না হন্যতে , হন্যমান্যে শরীরে” ।
আত্মার বিনাশ নেই । শরীরের মাধ্যমে আত্মার শুধু আসা ও যাওয়া আছে । শরীর বিনষ্ট হয় কিন্তু আত্মার বিনাশ নাই । আত্মা শুধু ঊর্ধগতি সম্পন্ন । আত্মা পরম আত্মার (পরমাত্মা ) অতি ক্ষুদ্র অংশ ।
ইংরাজী’তে বলা হয় SOUL/SPIRIT । SPIRIT ( স্পিরিট )হলো আলকোহল উদ্বায়ী তরল এক দাহ্য বস্তু । আর এক অর্থ হল আত্মা বা ভুত । SOUL(সোউল ) মানেও আত্মা ।
আত্মা গঠিত ইথার দ্বারা । ইথার কি ?
ইথার হল মহাজাগতিক এক অদৃশ্য শক্তি । যা দৃশ্যমান নয় । স্পর্শ ও করা যায় না । যারা বিজ্ঞানের ছাত্র ছাত্রী তারা নিশ্চয় ই জানেন ইথার কি ? এই মহাজগতে যত যা কিছু আছে তরল,কঠিন,গ্যাসীয় যাহাই হোক না কেন প্রতিটি বস্তুকে ঘিরে আছে তার ইথার । তার অস্তিত্বের উপাদান । এই জল, স্থল, পৃথিবী ও মহাবিশ্ব সবেতেই ইথার দ্বারা আচ্ছাদিত । এই ইথার হল এক শক্তি । মহাশক্তি । এই ইথার থাকার কারনেই আমরা রেডিও , টিভি’র বিভিন্ন প্রোগ্রাম দেখতে পাই । টেলিফোন ও মোবাইলে কথা বলতে পাচ্ছি । ইথারে নির্দিষ্ট উচ্চমাত্রায় শব্দ,ছবি ইত্যাদি কে তরিৎ শক্তিতে রূপান্তর করে পুনরায় তাকে শব্দ ও ছবিতে পরিনত করা হয় ।যা আমরা শুনতে ও দেখতে পাচ্ছি । এ সব ই সম্ভব হচ্ছে ইথারের কারণে ।
এখন এই ইথার প্রতিটি বস্তুর মধ্যে নিহিত আছে বিভিন্ন ভাবে । বস্তুর বিনাশ ঘটে কিন্তু ইথারের বিনাশ হয় না ।
আত্মা হল এক অদৃশ্য শক্তি । সেটাও ইথার দ্বারা গঠিত । তার মধ্যেই আত্মার অস্তিত্ব থাকে । দেহ বা শরীর তো জীবের বীজ বা ফল । বিভিন্ন বস্তুতে বিভিন্ন মাত্রায় ইথার ও চৌম্বকীয় শক্তি থাকে । সেই শক্তি সেই বস্তুর মধ্যে তরঙ্গের আকারে খেলে বেড়ায় ।সেই পৃথক পৃথক বস্তুর মধ্যে নিহিত শক্তিতে সেই সেই বস্তুর গুন, ধর্ম লুক্কায়িত থাকে ।
অনু ও পরমানু জানেন নিশ্চয় । ওই অনু ও পরমানু পদার্থের ক্ষূদ্রতম কণা । তাতেই তো সেই বস্তুর গুন,ধর্ম লুক্কায়িত থাকে । সেই অনু ও পরমানু অদৃশ্য । সেগুলি একে অপরের সঙ্গে থাকে এক অদৃশ্য চৌম্বকীয় শক্তির টানে । সেই শক্তিই হলো ইথার ।
আমাদের দেহের বিনাশকালে ঐ শক্তি মহাজগতেই থেকে যায় । সেই শক্তি অন্য কোন শক্তির সাথে মিশে যায় না। মনের করুন রামের মৃত্যুর পর তার দেহ বিনাশ হল তার শক্তি বেড়িয়ে এল । শ্যামের মৃত্যুর পর ও তার শক্তি বেড়িয়ে এল । এখন এই রামের শক্তির সাথে শ্যামের শক্তির কোন মিশ্রণ হবে না । কারন তাদের সত্ত্বা ছিল আলাদা। তাদের পৃথক পৃথক সত্ত্বার কারণে তাদের আত্মাও পৃথক ই থাকবে । সেই শক্তি থেকে যাবে মহাজগতে । ঈশ্বর হলেন মহাশক্তির আধার।সেই আধারেই কালক্রমে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।মহাশক্তির টানে সেই শক্তি এসে মিশে যায় । আমাদের আত্মা মিশে যায় পরমাত্মার সাথে। তার জন্য অনেক অনেক জন্ম অপেক্ষা করতে হ্য় । যেমন খালের জল নদীতে-নদীর জল সাগরে সাগরের জল মহাসাগরে মেশে ঠিক তেমনই। একমাত্র পরমেশ্বরই পারেন তাঁর ইচ্ছানুযায়ী আত্মাকে তাঁর কাছে টেনে নিতে।কারণ তিনিই তো সব শক্তির মুল । আত্মার নেই জন্ম নেই মৃত্যু । নতুন দেহ ধারনের মাধ্যমে জগতে তার আসা ও যাওয়া আছে । নতুন দেহে ঐ আত্মা আসে নতুন রূপে । অনেক সময় পুরাণো সত্ত্বার কিছু রূপ প্রকাশিত হয় নবজাতকের মধ্যে । যেমন আগে সে যে রূপে ছিল সেই রূপ পেতে পারে বা তার গুন,ধর্ম পেতে পারে । তখন তার মধ্যে জাতিস্মরের প্রভাব দেখা যায় । সন্তান দেখতে হয় বাবা-মায়ের জিন ঘটিত কারনে ।
আর গুনাবলীও পায় সেই ভাবেই । বৈচিত্র দেখা যায় সেখানেই । আবার কেঊ কারো মত দেখতে হয় স্বভাব হয় তার মত সেক্ষেত্রে ঐ সত্ত্বার ওয়েভ পায় । তাই বলেই এগুলি হয়।
আমরা অনেক সময় অন্যের মনের কথা তার সামনেই বলে ফেলি । ধরুন রীমা ভাবছে একটা কথা , সীমা সেই কথাটাই বলে ফেলল। রীমা বলল আরে আমি তো এই কথাটাই ভাবছিলাম- তুই বলে দিলি । এটা কি করে হ্য় বলুন তো ? ঐ ইথার । রীমা যখন এই কথা ভাবছিল তখন তার মনের মধ্যে এই চিন্তাধারাটি তার ইথারে বিদ্যুত তরঙ্গের আকারে খেলে বেড়াচ্ছিল, ঠিক সেই সময় কোন কারনে সীমার মধ্যেস্থিত ইথারের পাওয়ার বেড়ে যাওয়ার কারণে রীমার ইথার কে আকর্ষন করে নিয়েছিল এবং স্বয়ংক্রিয় ভাবে সীমার চিন্তাশক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পরে আবার তা তার মুখদিয়ে শব্দ আকারে বের হয়ে যায়। বড়ো অদ্ভুত ব্যাপার তাই না ?
এই জন্য কোন বড়ো সাধু, মহাপুরুষ রা আমাদের মনের কথা জানতে পারেন ঠিক এই ভাবে । আমরা কি ভাবছি , কি করছি সব কিছু বলে দিতে পারেন। কারন তাঁদের শরীরে এই শক্তি প্রবল। ঈশ্বর-ভগবান রা তো এসব পারেন ই । সাধু,মহাপুরুষ - তাঁরা সাধনা করে, সৎ পথে থেকে, তাঁদের আত্মার উন্নতি সাধন করেছেন। এই সাধনা, সৎভাবে জীবন যাপন, দান-ধ্যান, পুণ্যকর্ম, মিথ্যাচার না করে আত্মাকে উন্নত করতে হয় । তবেই তার শরীরে স্থিত ইথারের পাওয়ার বাড়ে, আর সেই কারণেই আত্মা ঊর্ধগতি লাভ করে । এ পুরো বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যাপার ।
এই সামান্য আলোচনা করলাম আত্মা সম্বন্ধে । আত্মা সম্বন্ধে আলোচনা করতে হলে বিশাল ভাবে ব্যাখা করতে হয়। তা না - কারন আত্মা ব্যাখাতীত । ভগবান ব্রহ্মাও তিন মুখে ব্যাখা করে শেষ করতে পারবেন না ।
পরের আলোচনায় আত্মার প্রকার ভেদ ও ভুতের সম্বন্ধে আলোচনা করে এই বিভাগ শেষ করব । আজ আর সময় নেই।
সবাই খুব ভালো থাকুন ।
-এই লেখাটি চলবে -" বিশ্বাস অবিশ্বাসে ভুত ও ভৌতিক " এই শিরোনামে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১১:১১