পুরাই আওলা হওয়ার মতো অবস্থা। চোখে মুখে মুগ্ধতা নিয়ে NARCOS দেখলাম বলা যায় । টিভি সিরিয়াল যে এমন দারুন হতে পারে, ভাবনাতেই ছিলো না। প্রতিটা পর্বই যেন এক একটা সিনেমা। এক একটা ‘গ্যাং অফ ওয়াসিপুর’।
বরাবরই ক্রাইম জর্নাটা আমার পছন্দের। আর এই সিরিজটা তো ক্রাইমের মহাভারত! তাও আবার সত্য ঘটনা অবলম্বনে! যেনো মেঘ না চাইতে তুফান!
কলম্বিয়ার কোকেন সম্রাট পাবলো এসকোবার এর জীবনীর উপর নির্মিত হয়েছে সিরিয়ালটি। এটি একটি Netflix এক্সক্লুসিভ যার কাহিনী লিখেছেন Chirs Brancato, Carlo Bernard এবং Doug Miro আর পরিচালনা করেছেন Jose Padilha ।
পাবলো এসকোবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ব্রাজিলিয়ান অভিনেতা Wagner Moura যিনি আসলে পর্তুগিজ। এই অভিনেতা নির্বাচনের কারণ একটাই ছিলো, আর তা হচ্ছে পাবলো এসকোবারের সাথে তার চেহারার মিল। ওয়াগনার মৌরা স্প্যানিস ভাষা জানতেন না, তাও আবার কলম্বিয়ান একসেন্টে। কিন্তু তিনি শুধু শিখেছেন বললে ভুল হবে, গিলে ফেলেছেন যেন!
পাবলো এসকোবারের শুরুটা হয়েছিলো ছোটোখাটো স্মাগলিং দিয়ে। পরে সে কোকেইন স্মাগলিং গুরু করে এবং এক পর্যায়ে বিশ্বের কোকেন বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ১৯৮০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রতি সপ্তাহে ৪২০ মিলিয়ন ডলার ছিল তার আয়। এতে করে সে-ই হয়ে যায় বিশ্বের কোকেন সম্রাট। আর সেই সাথে আমেরিকার মাথা ব্যথার কারণও।
পাবলো এসকোবার এক পর্যায়ে কলম্বিয়ান সরকারকে তাকে দায়মুক্তি দেবার বিনিময়ে সেই দেশের বৈদেশিক যত ঋণ আছে তা সে পরিশোধ করে দেবে বলে প্রস্তাব করেছিলো। এতেই বুঝা যায় কত সম্পদ সে গড়েছিলো। লুকিয়ে থাকার সময় একবার এসকোবারের মেয়ের খুবই ঠাণ্ডা লাগে। এ সময় এসকোবার ঘর গরম করতে তার সঙ্গে থাকা টাকা জ্বালানো শুরু করেন এবং দুই মিলিয়ন ডলারের ব্যাংকনোট আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন।
ম্যাজিক রিয়েলিজম সর্ম্পকে একটা কথা আছে। ঘটনা সত্য হলেও বাস্তবে তা বিশ্বাস করতে কষ্ঠ হয়। মনে হয় এটা বুঝি অবাস্তব, সত্য নয় যেনো ম্যাজিক। কিন্তু এটাই সত্য, এটাই রিয়েল; এটাই ম্যাজিক রিয়েলিজম বা জাদু বাস্তবতা। তাই হয়তো গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস এর হাতে এই কলম্বিয়াতেই ম্যাজিক রিয়েলিজমের সূত্রপাত হয়েছিলো।
NARCOS (নারকোস মানে চোরাকারবারী/ড্রাগডিলার) সিরিজটা বর্ণিত হয়েছে পাবলো এসকোবারের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে কিন্তু ধারা বর্ণনায় ছিলেন ইউএসএ এর DEA এজেন্ট স্টিভ মারফি। স্টিভ মারফি চরিত্রে অভিনয় করেছেন Boyd Holbrook
এই সিরিজে এজেন্ট মারফি যেমন নেপথ্যে কণ্ঠ দিয়েছেন তেমনি সিরিজেও তার সক্রিয় ভূমিকা ছিলো। মূলত এসকোবার বিরোধী আমেরিকা এবং কলম্বিয়ান সরকারের যৌথ অভিযান পরিচালনায় নেত্রীত্বে ছিলেন এই এজেন্ট মারফি।
তাই সিরিজের শুরুতে যখন বলেন, ‘আজকাল আমেরিকান সরকার আপনি যা কিছু বলছেন তা শুনতে পারে, তারা জানে আপনি কোথায় এবং তারা এও জানে আপনি কে? এবং বিশ্বাস করুন তারা জানে আজ রাতে কে হবে আপনার শয্যাসঙ্গি!
কিন্তু আশির দশকের মাঝামাঝিতে প্রযুক্তি এতোটা এগোয়নি। কিন্তু কলম্বিয়াতে স্যাটেলাইট টেলিফোন ছিলো তখন। কেবল রাজনীতিবীদ বড় ব্যবসায়ী আর ধণীরাই তা ব্যবহার করতে পারতো। আর পাবলো এসকোবার ছিলো রাজনীতিবীদ থেকেও উপরে, ধণীদের থেকেও ধণী। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় বিশ্বের বিলিয়নেয়ারদের মাঝে পর পর সাত বছর স্থান লাভ করে সে। ১৯৮৯ সালে পাবলো এসকোবার বিশ্বের সপ্তম ধনী ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পান।
NARCOS এর দুইটা সিজন আছে। প্রতি সিজনে ১০টা পর্ব। প্রতিটা পর্ব ৫০ থেকে ৬০ মিনিটের। সচেতন যে কেউ নেট ঘাটলেই দেখার লিংক পেয়ে যাবেন। আর যারা লোডে বিশ্বাসী তাদের জন্য তো টরেন্ট আছেই। সঙ্গত কারণেই এখানে লিংক দেয়া গেলো না।
ইংলিশ এবং স্প্যানিস ভাষার ব্যবহার হয়েছে সিরিজটিতে। তবে যেখানে স্প্যানিস সেখানে সাবটাইটেল রয়েছে। আর অবশ্যই ১৮+
সুতরাং নিজ দায়িত্বে দেখতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৫০