প্যারিসবাসী হওয়ার কারণে বন্ধু/বান্ধব, আত্নীয়-স্বজন, পরিচিত কিংবা পরিচিতের পরিচিত কেউ আসলে ঘুরাঘুরির জন্য সময় দিতে হয় অন্যথায় দিক নির্দেশনা দিতে হয়। যেহেতু এই কাজটা এখন প্রায় নির্ধারিতই হয়ে গেছে, তাহলেেএর একটা স্থায়ী সমাধাণের দিকে যেতে পারলে ভালো হয়। তাই চেষ্ঠা করছি একটা গাইড লাইনের মতো করে কিছু একটা করার। আপাতত মাথার ভিতরে এবং হাতের আশেপাশে যা আছে তা নিয়েই পোস্টটা করছি।
তবে, আস্তে-ধীরে আরো তথ্য-উপাত্তের সমাগম ঘটানো হবে।
নির্দেশনামূলক
প্যারিস ভ্রমনের পূর্বে কিছু সাধারণ বিষয় জেনে রাখলে ভ্রমণটা নিজের এলাকা ভ্রমণের মতোই মনে হবে।
[*] আপনি ফরাসি জানার প্রয়োজন নেই।
শুধু একটি লাইন শিখুনঃ
জ্য ন পা পারলে ফ্রঁসে = আমি ফরাসি বলতে পারি না।
Do you speak English? = পারলে ভো অংলে?
এতে ফরাসিদের কাছে আপনার অন্য রকম এক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হবে। সে বুঝতে পারবে আপনি অন্তত তার ভাষায় কথা বলার চেষ্ঠা করেছেন।
• খাওয়া শেষ করার আগেই বিল না চাওয়া। সময় নিয়ে খান এবং ধীরে সুস্থীরে বিল চান।
• কোনো কিছু কিনতে গেলে বিশেষ করে কফি, অর্ডার করলে সাথে ‘সিলভুপ্লে (প্লিজ) বলুন। মনে রাখবেন ফরাসিদের নিয়ে কৌতুক আছে যে, 'এক কাপ কপি = ৩ ইউরো' আর
'প্লিজ এক কাপ কপি = ১ ইউরো ৫০ সেন্ট!'
• আপনি শুধু কফি পান করতে চাইলে তা দোকানে অন্যান্যের মতো দাঁড়িয়েই পান করুন। মনে রাখবেন বসে কফি পান করলে প্রতিটা কফির সাথে ১ ইউরো অতিরিক্ত মাসুল গুনতে হবে!
• ফরাসিরা যেমন রাস্তার ডান দিকে চলে তেমনি চলন্ত সিড়ির ডান দিকে দাঁড়ায় যেনো কারো তাড়া থাকলে সে বাম দিকে হেটে যেতে পারে।
• প্যারিসে যে সব কিছুই ব্যয় বহুল তা কিন্তু নয়। তবে আপনি একটু কৌশল নিয়ে চললে অল্প দামে জিনিসপত্রও কিনতে পারবেন। যেমন এক বোতল পানি কিনতে চাচ্ছেন। কখনোই রাস্তার মুদি দোকান থেকে কিনলে যার দাম পড়বে ২ ইউরো তা-ই ৫০/৬০ সেন্ট এ পাবেন চেইন শপগুলোতে।
প্যারিসের কিছু চেইন গ্রুসারি শপঃ
Carrefour, Auchan, Franprix, E. LeClerc, Lidl, Supermarche Match, Canal Bio, Monoprix, Franprix, Leader Price, Carrefour Market, Marché Plus, Casino, Géant, Franprix, G20, Inno, Daily Monop, Vival, Intermarché ইত্যাদি।
আপনার পাশের এই দোকান কোথায় এবং কখন খোলা তা জানতে এই সাইটে খোঁজ করতে পারেন।
View this link
• পাবলিক টয়লেট কিন্তু প্যারিসের সব জায়গায় পাওয়া যায় না এবং যেকোনো রেল স্টেশনে তা খুঁজে বের করতে রীতিমতো গুলকধাঁধার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো টাকা দিয়ে ব্যবহার করতে হয়। সেই ক্ষেত্রে আপনি যা করবে তা হলো, যেকোনো ক্যাফে বার (কফি শপ) এ প্রবেশ করে একটা কফির অডার্র করুন এবং আস্তে করে জিজ্ঞেস করুন আপনাদের টয়লেটটা কোন দিকে। তখন সে আপনাকে দেখিয়ে দিবে অথবা চাবি দিবে। ফ্রান্সে খাবার দোকানে টয়লেট থাকা বাধ্যতামূলক।
পাবলিক টয়লেট খোঁজার জন্য স্মার্টফোনগুলোর রয়েছে বিভিন্ন এপস। এগুলোর মাধ্যমে জিপিএস অন থাকলে আপনি সহজে খুঁজে বের করতে পারবেন প্যারিসের পাবলিক টয়লেটগুলো।
বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটা দেখতে পারেন।
View this link
আইফোনের জন্য
View this link
এন্ড্রোয়েট ফোনের জন্য
View this link
• প্যারিস ভ্রমনের সময় চেষ্ঠা করবেন জুলাই অথবা জানুয়ারী মাসে আসতে। কারণ তখন ফ্রান্সে SOLDES মানে মূল্যহ্রাস চলে। অকল্পনীয় সস্তা দামে আপনার পছন্দের জিনিস পেয়ে যেতে পারেন। এখান থেকে ডেট চেক করে নিতে পারেন।
View this link
• মনে রাখবেন প্যারিস টেক্সি ব্যয়বহুল। এবং প্যারিস থেকে প্যারিসের বাহিরের দিকে যেতে মানে শহরতলীর দিকে যাকে এখানে বলে ইল দ্য ফ্রঁস (Île-de-France) তারও ভাড়ার ট্যারিফ ভিন্ন। রাতের জন্য রয়েছে আরো একটু বাড়তি ভাড়ার ট্যারিফ।
ট্যাক্সি এপস আইফোনের জন্য
ট্যাক্সি এপস গুগল প্লে'র জন্য
View this link
View this link
• আপনার ভোল্টেজ কনভার্টার এবং এডাপটার আনতে ভুলবেন না কখনো।
(ছবি) এই ধরনের ইলেকট্রিক সকেট ব্যবহৃত হয় ফ্রান্সের সর্বত্র।
মনে রাখবেন, কোনো কারণে প্লাগ এডজাস্ট না হলে আপনার মোবাইল যদি আইফোন অথবা যেকোনো ইউএসবি চার্জার ব্যবহার করার জন্য উপযুক্ত হয় তাহলে আপনার হোটেল রুমের টিভিতে ইউএসবি পোর্ট থাকলে টিভি অন করে চার্জ করতে পারবেন।
প্যারিস ভ্রমণ গাইড
থাকার ব্যবস্থাঃ
আপনি নিশ্চয় প্যারিস আসার আগে থাকায় বিষয়টা নিশ্চিত করেই আসতে চাইবেন। যদি কারো আতিথেয়তা গ্রহন না করেন তাহলে নিজেকেই সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আর যে বাঙালিরা প্যারিস বেড়াতে আসেন তারা আর যাই করেন থাকার জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে চান না। কিন্তু না চাইলে কি হবে, তা হয়েই যায়। কারণ প্যারিস হচ্ছে দুনিয়ার ব্যয়বহুল নগরীর অন্যতম। তবে কিছু বিষয় মাথায় রাখলে ভালোই সাশ্রয় করা যায়।
আপনার বয়স যদি ২৫ থেকে ৩৫ এর মধ্যে হয়ে থাকে তাহলে হোটেলের পরিবর্ততে হোস্টেল বেছে নিতে পারেন। মনে রাখবেন হোস্টেল মানে হোস্টেলই। আমাদের হোস্টেলগুলোর মতোই অন্যের সাথে রুম শেয়ার করতে হয়। আপনার রুমমেট ছেলে অথবা মেয়ে যে কেউ হতে পারে যারা আপনার মতোই তরুণ এবং ভ্রমণ করতেই এসেছে হয়তো।
সর্বনিম্ন রেট (কখনো ১৫ ইউরো) এক মাত্র হোস্টেলেই পাওয়া সম্ভব। এই লিঙ্কগুলো থেকে আপনি আপনার সুবিধা মতো সময়ে এবং স্থানে বুকিং দিতে পারেন।
View this link
View this link
আর যারা একটু ভালো ভাবে থাকতে চান মানে টাকা পয়সা তেমন ব্যাপার না তারা হোটেলে উঠতে পারেন। তবে সাধারণত এই সকল সাইটগুলো থেকে সস্তায় হোটেল পাওয়া যায়। যার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে বুকিং ডট কম। মনে রাখবেন ফ্লাইট কিংবা হোটেল যা-ই বুকিং দেন রাতে দেয়া ভালো। কারণ অনেক কোম্পানি রাতেই তাদের রেট পরিবর্তন করে থাকে।
View this link
View this link
তবে বাঙালিদের জন্য সুবিধা হয় যদি র্গা-দ্য-নো (Gare du Nord) এর আশেপাশে হোটেল পাওয়া যায়। কারণ এই জায়গাটায় বাঙালি এবং বাঙালি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রচুর।
এই লিঙ্ক থেকে সেই হোটেলগুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন।
View this link
খাওয়াঃ
আপনি যদি খাওয়ার ক্ষেত্রেও বাঙালিয়ানা মেনে চলতে চান তাহলে প্যারিসে আপনার কাছে তিনটা চয়েজ আছে। বাঙালি, ইন্ডিয়ান এবং শ্রীলঙ্কান রেস্টুরেন্ট। বাঙালি রেষ্টুরেন্ট পেতে হলে আপনাকে আসতে হবে র্গা-দ্য-নো (Gare du Nord) তে অথবা কেতসীমা (Quatre Chemin)। এই সাইট থেকে কিছু বাঙালি খাবারের দোকানের ঠিকানাও পেতে পারেন।
View this link
অথবা আপনি আপনার পছন্দ মতো রেষ্টুরেন্ট পছন্দ করতে পারেন এই সাইটগুলো থেকে।
View this link
View this link
কখনো কখনো হয়তো বাহিরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না বা রুমেই খাবার আনাতে ইচ্ছে হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় হোম ডেলিভারী সাইট হচ্ছে আলুরেস্তু।
হোম ডেলিভারির জন্য
প্যারিসে থাকা হলো খাওয়া ও হলো এখন তাহলে যাতায়াত বা পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
যাতায়াতঃ
যাতায়াত করতে হলে প্রথমেই যা লাগবে তা হলো টিকেট। আর প্যারিসে টিকেটের দাম নির্ভর করে জোনের উপর। পুরো প্যারিস তথা ইল দ্য ফ্রঁস কে ৫টা জোনে ভাগ করা হয়েছে পরিবহন সেক্টরের জন্য। সুতরাং জোন ১ থেকে ২ এর টিকেটের আর জোন ১ থেকে ৩ এর দাম সমান নয়। আপনার ভ্রমন তালিকা করার পূর্বে দেখে নিন দর্শনীয় স্থানগুলো কত নাম্বার জোনে পড়েছে এবং সেই মোতাবেকই টিকেট কাটুন। তবে কয়েকটা ছাড়া সাধারণত বেশীর ভাগ দর্শনীয় স্থানের অবস্থানই ১ থেকে ৩ এর মধ্যে। আপনার পছন্দ মতো ট্যারিফ বেছে নিতে পারেন এখান থেকে।
View this link
আপনি প্যারিসের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে হলে এই সাইটটার সাহায্য নিতে পারেন। আপনি যেখানে আছেন সেই জায়গার এড্রেস আর কোথায় যেতে চান সেই জায়গার এড্রেস দিলেই দেখিয়ে দিবে কিভাবে কতক্ষণে কত টাকা ব্যয়ে পৌঁছুতে পারবেন।
View this link
আপনার যাতায়াত কে আরো সহজ করতে আপনার স্মার্টফোনে কিছু এপস ইন্সটল করে নিতে পারেন। সাথে অবশ্যই প্যারিসের একটা ম্যাপ রাখবেন। কিছু প্রয়োজনীয় এপ্লিকেশন এর নাম দেওয়া হলো। এই ধারা ফলো করে আপনি হয়তো আরো অনেক এপসই খুঁজে পাবেন।
Visit Paris by Metro - RATP
Paris Map and Walks
View this link
কিন্তু এইসব এপ্লিকেশন চালানোর জন্য ইন্টারনেট প্রয়োজন আর প্যারিসে বহিরাগতদের জন্য নেট ব্যবহার করা বেশ ব্যয় বহুল। সেখানে যদি ফ্রি নেট পাওয়া যায় তাহলে মন্দ হয় না। তাহলে দেখে নেন প্যারিসের কোথায় ফ্রি ওয়াইফাই পাবেন।
View this link
ম্যাপঃ wifi
এখান থেকে দেখেন প্যারিসের কোথায় কোথায় ফ্রি ওয়াইফাই আছে তার ম্যাপ
...চলবে।