
মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে যে ৮ টি মামলা হয়েছে তার একটি হলো , ব্লগারদের লেখা প্রকাশ করা।
ব্লগারদের লেখা সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায়। ইনকিলাবের মালিক পক্ষের সাথে সরকারের সখ্যতার কথা আমরা সবাই জানি। সুতরাং তার বিরুদ্ধে মামলা হলো না, মামলা হলো আমার দেশ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। এই একটি তথ্যই তো বলে দেয় কি হচ্ছে এদেশে।
মাহমুদুর রহমানকে যখন অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে গ্রেফতার করা হয়, তখন সেই ঘটনার ছবি পর্যন্ত কাউকে তুলতে দেয়া হয়নি। কেন???
পুলিশ কি সেখানে চুরি করতে গিয়েছিল?
এই সরকার যদি এতই স্বচ্ছ হয় তবে এত লুকোছাপা কেন?
আজকে ব্লগে এসে দেখলাম , একশ্রেনীর দলান্ধরা মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারে হাততালি দিচ্ছেন। এদের সেই হাততালি যে কেন , তাও আমরা জানি।
সমস্যা হলো এরা নিজেরাই নিজেদের অপমানিত করছে। আমি স্পষ্টই বলি এ বিশ্ব মাহমুদুর রহমানের মত সাহসী সম্পাদককেই মনে রাখবে , শেখ হাসিনাকে না।
যেমনটি অরুন্ধতি রায় বা হামিদ মীরকে বিশ্ব মনে রাখবে , মনমোহন বা জারদারিকে না।
এগুলো বুঝতে হলে বোঝার মত মন থাকতে হয়। আজ যখন সরকারবান্ধব সাংবাদিকরা আমাদের বস্তাপচা নিউজ খাওয়াচ্ছে, মাত্র ১০০ লোকের সমাবেশের কাভারেজ দিয়ে যাচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা, ঠিক তখনই সরকারের মুক্ত সমালোচনাকারী একমাত্র পত্রিকার সম্পাদককে যেভাবে অপমান করে , টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়া হলো, তা আমাদের আবারো ৭৪/৭৫ কে মনে করিয়ে দেয়।
সেই সাথে একটি স্বতঃস্ফূর্ত গনজাগরনের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে একটি শ্রেনী এখন জাগরন নিয়ে ব্যবসা করছে। তারা স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের উপরে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে।
অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার পরে একটা দেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। সেই স্বাধীনতা আমরা নিজেদের হাতে এভাবে লুন্ঠিত হতে দিতে পারি না।
আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সরকার আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চায়। আর সেই চাওয়ার প্রয়োজনে তারা সংবাদকর্মীদের উপর বার বার আঘাত করে। কিন্তু শত ঝড় ঝাপটায়ও সংবাদমাধ্যম সবসময় একত্রে থেকেছে। আজ সেই অবস্থাও পরিবর্তন হয়েছে। সরকারের চামচামী করতে গিয়ে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বা মোজাম্মের বাবুরা ভুলে গেছে যে তাদের আসল পরিচয় চামচামী না, সাংবাদিকতা।

কুকুরের মাংসও তো কুকুরে খায় না। আমরা কি কুকুরের চাইতেও অধম???
তো অধমবৃন্দ, আজ মাহমুদুর রহমানকে ধরেছে, কাল সরকার পরিবর্তনের পরে যখন আপনাকে ধরবে, তথন কি করবেন?
জানি , আপনাদের অনেকেই এখন মাহমুদুর রহমানের এই দোষ সেই দোষ বলতে চলে আসবে। এসব ল্যাদানো অন্য যায়গায় গিয়ে ল্যাদাবেন। এখানে না। আমরা জানি এবং বিশ্বাস করি , একমাত্র সরকারের সমালোচনার কারনেই তাকে জেলে যেতে হয়েছে। আর কোনো কারন নেই। মাহবুবুল আলম হানিফ মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে যেসব গালগল্প প্রচার করেছে, তা এ জাতি বিশ্বাস করে না।
একটা কথা স্পষ্ট করা দরকার, আমার দেশ অন্যান্য দলিয় পত্রিকার মত না। এটা জনকন্ঠ, সংগ্রাম বা দিনকাল এর মত না। এই কারনেই আমার দেশের কাটতি এত ব্যাপক। যেখানে প্রথম আলো ভুল সংবাদ ছাপে। অহরহ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির নেতা বলেন, এ রকম উদ্ধৃতি দিয়ে উল্টাপাল্টা নিউজ করেই যাচ্ছে। আমি সে রকম হাজারটা উদাহরন দিতে পারবো। যেখানে বিটিভি সহ মেইনষ্ট্রিম সব মিডিয়াকে দলীয়করন করা হয়েছে। সেখানে একমাত্র আমার দেশই তাদের সাংবাদিক হিসেবে যা দায়িত্ব তা পালন করার চেষ্টা করেছে।
অনেকে আছেন , এ সরকার যে পুরোপুরি মহা গনতান্ত্রিক, দেশে মত প্রকাশের পুরো স্বাধীনতা দিয়েছে , ইত্যাদি বলতে আসবেন। আমার পোষ্টের পরবর্তী অংশে তাদের জন্য কিছু পরিসংখ্যান দেই। সেই সাথে বিশ্বের কোন কোন দেশে কিভাবে ও কেন সাংবাদিক নির্যাতন করা হয় তা দেখানোর চেষ্টা করছি।
বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী গত ৫ বছরে সারা বিশ্বে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজারের অধিক। শুধু বাংলাদেশে ৬ শতাধিক সাংবাদিক মামলা হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এছাড়া খুন হয়েছে অনেক প্রতিথযশা সাংবাদিক। ২০১২ সাল ছিল সাংবাদিকদের জন্য অতি দুঃসময়। যদিও ২০১৩ সালে সাংবাদিক নির্যাতনের পরিমান একেবারে কম নয়।
২০১২ সাল ও চলতি ২০১৩ সালে সাংবাদিক নির্যাতনের পরিমাণ হিসাব করলে দেখা যাবে ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও সাংবাদিক নির্যাতন বেড়েছে উদ্বেগজনকভাবে।
বিভিন্ন পত্রিকার তথ্য মতে শুধু মাত্র ২০১২ সালে বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যতনের শিকার হয়েছে ৩ শতাধিক। মহাজোট সরকারের চলতি শাসনাআমলে সরকার কিংবা প্রশাসনের দুর্নীতি বা অনিয়ম বা রাজনৈতিক ভ্রষ্টাচার নিয়ে রিপোর্টিং ও মত প্রকাশ করায় অনেক সাংবাদিককে জেল জরিমানা ও লাঞ্ছনার শিকার হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
Click This Link
সম্প্রতি শাহবাগ চত্বরে নারীজাগরণ সমাবেশের সংবাদ কাভার করার সময় নতুন বার্তা ডটকমের দু’সাংবাদিক কাজী মুস্তাফিজ ও ইমদাদুল হককে বিনা কারণে ধরে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের কেন ধরে নেয়া হয়েছে তাও তাদের জানানো হয়নি। এমনকি নিয়মানুযায়ী আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের কোর্টে হাজির করার কথা থাকলেও তাদের ক্ষেত্রে এ আইনটিও মানেনি পুলিশ। ২৪ ঘণ্টা পরে ইমদাদুল হককে ছেড়ে দেয়া হলেও কাজী মুস্তাফিজকে ‘ভুয়া’ মামলায় আটক দেখিয়ে কোর্টে হাজির করে।
Click This Link
নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের গুলীতে আহত হয়েছেন পাঁচ সাংবাদিক।
রাজশাহীতে হাতে ও পেটে গুলীবিদ্ধ হয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন বাংলাভিশনের সাংবাদিক আবু সাঈদ। মাথায় রাবার বুলেট লেগে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন চ্যানেল-২৪-এর সাংবাদিক রাসেল মাহমুদ এবং স্থানীয় একটি দৈনিকের সাংবাদিক আবদুস সামাদ খান। আন্দোলনকারী ও পুলিশের পিটুনিতে রংপুরে আহত হয়েছেন ৮ সাংবাদিক। তাদের মধ্যে আছেন চ্যানেল আই’র শাহনেওয়াজ জনি, দৈনিক করতোয়ার ফটো সাংবাদিক আলী হায়দার রনি, সময় টিভি’র আরিফিন আহমেদ ও মোহনা টিভি’র শফিক আহমেদ।
এ যাবতকালে সারাদেশে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছেন- যশোরের শামছুর রহমান কেবল, সাইফুল আলম মুকুল, খুলনার মানিক সাহা, হুমায়ুন কবির বালু, বেলাল হোসেন, ঢাকার সাগর-রুনীসহ প্রথিতযশা সাংবাদিক। ২৯ মে ঢাকায় বিডি নিউজের সাংবাদিকরা হামলার শিকার হয়, গত ১৯ মে মিথ্যা মামলার শিকার হয় সাপ্তাহিক খুলনা বার্তা ও বার্তাসংস্থা ডি এন এর সম্পাদক খালিশপুর প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম, তা ছাড়া সাতক্ষিরার দৈনিক আলোর পরশের তালা থানা প্রতিনিধি ও দণি অঞ্চল সাংবাদিক ইউনিয়নের তালা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামকে অহেতুকভাবে পুলিশ আটক করে, গত ২২সেপ্টম্বরে মিথ্যামামলা ও রাজনৈতিকভাবে আটক করে সাপ্তাহিক খুলনা বার্তা ও সাংবাদ সংস্থা ডি এন এর ভারপ্রাপ্ত সম্পদক এবং দৈনিক ডিটেকটিভ নিউজ অনলাইনের প্রকাশক ও সম্পাদক ডাঃ আওরঙ্গজেব কামাল।
৪ এপ্রিল নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার শিকার হয় অনলাইন দৈনিক ডিটেকটিভ নিউজ ও আমাদের অধিকারের ঠাকুরগাও প্রতিনিধি নারগীস সুলতানা, গত ৬ এপ্রিল দুস্কৃতকারীদের হামলার শিকার হয় একুশে টেলিভিনের রিপোর্টার নাদিয়া শারমিন, একইদিন দৈনিক দিনকাল ও ইসলামিক টিভির রাঙামাটি প্রতিনিধি এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তালাইভ ২৪ ডটকমের স্টাফ রিপোর্টার আলমগীর মানিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গণজাগরণ নেতাদের রোষাণলে পড়েন।
অভিযোগ রয়েছে, রাজশাহীর ‘সংবাদ’ প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম আকাশ নির্যাতিত হয়েছেন এলিট ফোর্স ‘র্যাব’ কর্তৃক।
হুমকির ও জেলজুলুমের শিকার হয়েছেন কপিলমুনির সাংবাদিক পিন্টু, পাইকগাছার কুদ্দুস, কয়রার সিরাজুদৌল্লা লিংকন। রাজনীতিবিদদের নষ্ট মানসিকতা ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সম্প্রসারণ সাংবাদিকদের পেশাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। সাংবাদিকদের গ্রেফতারের ঘটনা ১৯৯০ সালের পর ২০১২ সালে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। কমিটি ফর প্রোটেক্ট জার্নালিস্টের বাৎসরিক রিপোর্টে এ তথ্য বেরিয়ে আসে। ১৯৯০ সাল থেকে এই কমিটি ফর প্রটেক্ট জার্নালিস্ট প্রতিবছর বিশ্বে সাংবাদিক গ্রেফতার, নির্যাতন ও হয়রানীর ঘটনার বিস্তারিত বিবরণসহ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে।
২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কমিটি ফর প্রটেক্ট জার্নালিস্টের বাৎসরিক রিপোর্টে বলা হয়, ঐ সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট ২৩২ জন সাংবাদিক জেলে অবস্থান করছেন। এ সংখ্যা সাংবাদিক গ্রেফতারের ক্ষেত্রে একটি রেকর্ড। এর আগে ১৯৯৬ সালে বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ ১৮৫ জন সাংবাদিককে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছিল।
কোনো ভিন্নমতে সাংবাদিক নির্যাতনকে বিশ্ব মিডিয়া খুব একটা ভাল চোখে দেখে না। সেটা যে দেশেই হোক। সুতরাং এভাবে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের ব্যাপক ও ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্বে আমাদের সম্মান তো যাবেই, সেই সাথে বিষয়টি নিয়ে এত বেশি নাড়াচাড়া হবে যে গত তিন মাসে আমাদের দেশে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি গেল তাও হয়তো অনেক এলাকায় সংবাদমাধ্যমে আসেনি। কিন্তু শুধু এই গ্রেফতারের ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের দিকে অনেকে আলাদাভাবে নজর দিবে। সত্যি কথা বলতে কি সাংবাদিক আটক করে বা নির্যাতন করে নির্যাতনকারীদের আসলে কিছুই উপকার হয় না। সবটুকুই ক্ষতি হয়। এভাবে তারা যা লুকাতে চায়, তা বরং প্রকাশিত হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে ইতিহাস এবং বর্তমান, দুটোই একই কথা বলে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:২৩