আবারো একপেশে আচরনের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেল কতগুলো পেইড মিডিয়া। আমি সবাইকে আমন্ত্রন জানাচ্ছি এসব একপেশে মিডিয়ার খবর বর্জন করতে। কারন , সাধারন মানুষ তো প্রকৃত খবরটি দেখতে চায়। কোনো দালাল মিডিয়ার খবর দেখতে চায় না।
আমি সামুকে অনুরোধ করবো কোনোভাবেই এই পোষ্টটি সরিয়ে দিবেন না। আমি পেশাগত কারনে খবর সংগ্রহের জন্য পল্টনে ছিলাম । সেখানে বিএনপির সমাবেশে কিভাবে নির্বিচারে পুলিশ হামলা করেছে তাও দেখেছি। কিন্তু দেশের প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলোতে এই ঘটনার উল্টা ব্যাখ্যা ও প্রচারনা আমার জীবনের সবথেকে আশ্চর্য্য বিষয়গুলোর একটি হয়ে থাকবে।
আমি জানি এখনই সংবাদটি বিশ্লেষনের সময় আসেনি। কারন ঘটনা এখোনো চলমান। তারপরেও আর একটু পরেই যেহেতু বিএনপির নিরস্ত্র আহত নেতাকর্মীদের নামে পুলিশ মামলা করবে তাই আমার বক্তব্য ও বিভিন্ন মিডিয়ার খবর বিশ্লেষন করা জরুরী মনে করছি।
বিএনপির মিছিলে আজ যে ঘটনা ঘটলো তাকে নতুনবার্তা কিভাবে লিখেছে দেখেন,
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশ গুলি চালিয়ে কর্মসূচি পণ্ড করে দিয়েছে। সমাবেশস্থলের পাশে বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এর পরপরই পুলিশ মারমুখী হয়ে গুলি চালাতে থাকে। পণ্ড হয়ে যায় বিক্ষোভ সমাবেশ। রাজধানীর কাকরাইল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে পল্টন পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে বিএনপির কর্মীদের সংঘর্ষ চলে।
গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তিনি ছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ফকিরাপুল মোড় থেকে সমাবেশস্থল লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
Click This Link
ঘটনা বিশ্লেষন করলে আমার বোল্ট করা লাইনগুলি দেখেন। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশ গুলি চালিয়ে কর্মসূচি পণ্ড করে দিয়েছে।
এই একটা লাইনই তো বলে দেয় যে আসলে সরকার কি করতে চাচ্ছে। পুরো ঘটনায় উস্কানী বলতে দুটি ককটেল বিস্ফোরন। এখন তো অহরহ , এখানে সেখানে ককটেল বিস্ফোরিত হয়। আমরা জানি ককটেল বিস্ফোরনে কেউ আহতও হয় না। কিছুই হয় না, জাষ্ট একটু শব্দ হয়। তারপরেও যে বা যারা ককটেল বিস্ফোরন ঘটিয়েছে তা শাস্তিযোগ্য। কিন্তু সেই দোহাই দিয়ে তো পুলিশ একদল জনতার উপরে গুলি করতে পারে না। এখানে নির্বিচারে গুলি শব্দটিও ব্যবহার করলাম না। কারন সেখানে হাজার হাজার জনতা ছিলেন। তারা তো কোনো দোষ করেনি। দেশের সবথেকে বড় ও জনসমর্থিত দলটির পক্ষে মিছিল করতে গেছেন। তাহলে অনেক দুরের একটি রাস্তা থেকে যুদ্ধ যুদ্ধ স্টাইলে পুলিশ কেন সেই শান্ত জনতার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষন করবে? এটা কি কোনো সভ্য দেশ?
এই ঘটনায় আমার তো জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের কথা মনে পড়ে গেল। জানিনা কে কি মত দিবেন। কিছু পেইড ভাদা আছেন যারা চিরকালই উল্টা বোঝেন। তারা মনে মনে গালি দিবেন , দেন। কিন্তু নিরীহ সাধারন জনগন এর কাছে আমার প্রশ্ন এটা কি ধরনের আচরন?
এবার আসি মিডিয়ার বিশ্লেষনে। খবরটি কারা কিভাবে দিয়েছে তা দেখা যাক্। পুলিশের মধ্যে গোপালগঞ্জি পুলিশরাই এখন ঢাকার সর্বেসর্বা । তারা অতিরিক্ত আওয়ামী লীগ। ক্ষেত্রবিশেষে শেখ হাসিনার থেকেও বেশি আওয়ামী লীগ।
জাতি যখন আজ একটি ক্রান্তিলগ্নে আছে, যেখানে আজ ব্যবসায়ীরা বলছে যে দুই নেত্রীকে আলোচনায় বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে তারা। সেইখানে এ ধরনের পুলিশি অ্যাকশন কোনো ভাবেই মিলনের সুর নয়।
সংবাদটি মানবজমিনে কিভাবে এসেছে দেখেন,
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে পুলিশ গুলি বর্ষণ করেছে। এতে বিএনপি নেতা এমকে আনোয়ার, নজরুল ইসলাম খান, আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালামসহ অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এসময় নয়াপল্টন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ সমাবেশটি পণ্ড হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশ চলাকালে বিজয়নগর মোড়ে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। এসময় সমাবেশ মঞ্চে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান বক্তব্য রাখছিলেন। একপর্যায়ে নয়াপল্টন কার্যালয়ের পশ্চিম দিক থেকে পুলিশ গুলি বর্ষণ শুরু করে।
এখানে বোল্ট করা লাইনগুলো দেখেন, সব জায়গায়ই দেখবেন পুলিশ গুলি বর্ষন করছে। এখানে উস্কানি বলতে বিজয়নগর মোড়ে বিশ্রিঙ্খলা শুরু হয় লেখা হয়েছে। বাস্তবেও সেটাই হয়েছে। বিশৃঙ্খলা কি? একটা বড় সমাবেশে একটু আধটু বিশৃঙ্খলা তো হয়ই। দলীয় নেতাকর্মীরা সেখানে থাকেন, তারাই মিটমাট করেন। আর না পারলে পুলিশও সেটা মিউচুয়ালের চেষ্টা করেন। কোনো অবস্থাতেই পুলিশের উপরে কোনো ইটপাটকেল ছোড়েনি। এমনকি চরম একপেশে নিউজ যারা দিচ্ছে সেই বাংলানিউজও লেখেনি যে কেউ ইটপাটকেল ছুড়েছে।
এখন এক জায়গায় হাজার হাজার জনতা , আর সেখানে এক কোনায় ধরেন একটু বিশৃঙ্খলা হলই, তো পুলিশ তো সেটা গিয়ে মিটিয়ে দিবে। অথবা নেতারা সেখানে ছিলেন, তারাই ব্যবস্থা করতো। কেন সেই মাস পিপলকে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি ছুড়বে? পুলিশ তো সেই রাস্তায় ই ছিল না। তারা অন্য প্রান্ত থেকে প্রানপনে গুলি ছুড়তে থাকবে কেন?
এখন দেখেন খবরটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি, ৭১ , বা মাছরাঙারা প্রচার করছে যে বিএনপির সাথে পুলিশের সংর্ঘর্ষ হয়েছে, নয়াপল্টন রনক্ষেত্র। আসলে কি বিষযটি এই খবরে কিছু বোঝা গেল? মুল খবরটি হল বিএনপির মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষন। সেখান থেকে সরে এসে এই মিডিয়াগুলি কাকে বাঁচাতে চাচ্ছে??? তারা কি একটি হাজার হাজার জনতার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে নির্বিচারে গুলি করাকে সমর্থন দিতে চাচ্ছে? কি উদ্দেশ্যে তারা এ আচরন করছে? আর কত নিচে নামবে মিডিয়া? দেশে কি তারা চায় যে আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো দলই আর না থাকুক? ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যান ঠিক আছে, কিন্তু ৭২ এর মত শুধু আওয়ামী লীগ ও পরবর্তীতে বাকশাল থাকবে আর একমাত্র বামরাই এদেশে বিরোধি দল ধাকবে , এমন একটি স্বপ্ন নিয়ে কি এগিয়ে যাচ্ছে এসব মিডিয়া? তাহলে তো জাতির ভবিষ্যত আজ অন্ধকার।
নিউজটি বাংলানিউজে দেখেন, কতটা একপেশে হলে এমন ম্যাড়মেড়ে আচরন তারা করতে পারে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালেয় সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ৮/১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
Click This Link
বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিরোধী দল। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছোড়ে।
এরপরেও কি বাংলানিউজ বর্জন না করার কোনো কারন আছে? খোদ বাংলানিউজের ফটো সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন বাদল ভাইকে সবার সামনে বুকে পা দিয়ে পুলিশ পেটালো। সাথে আরো অন্তত দশজন সাংবাদিককে পিটিয়েছে পুলিশ। আশ্চর্য্যজনভাবে সরকারপক্ষের মিডিয়ার সাংবাদিকরাই এই পুলিশি পিটুনির শিকার হয়েছেন।
পূর্বে সাংবাদিকের গায়ে পুলিশ হাত দেয়ার কথা চিন্তাও করতো না। এখন ধরে বুকে পা দিয়ে পিটায়। অথচ এই যারা মার খেল তারা কেউ নতুন সাংবাদিক না কিন্তু। তাদের পল্টন থানা পুলিশও ভাল করে চেনে। সকাল বিকাল দেখা হয়।
এই ঘটনা কোনো নিরপেক্ষ হাউজের সাংবাদিকের উপরে হলে নিন্দার ঝড় বযে যেত। কিন্তু আজ দেখেন সাংবাদিকদের জীবনের নিরাপত্তা বরতে কিছু নাই। সংবাদপত্রের ও চ্যানেলের মালিকের ইচ্ছা অনুযায়ী নিউজ দিতে হয়। এই যে সাংবাদিকদের পুলিশ সবার সামনে বেদম পেটালো এর কোনো প্রতিকার নেই। প্রতিকার নেই কারন সরকারী পুলিশের কোনো দোষ লিখে সরকারকে চটাবে না এসব মিডিয়ার মালিকরা।
এর কারন কয়েকটি,
সরকারকে চটালে বিজ্ঞাপন ( সরকারী বিজ্ঞাপন) পাওয়া যাবে না।
আগামীতে যারা আওয়ামী নমিনেশন চান তাদের সমস্যায় পড়তে হবে।
চ্যানেল বন্ধের হুমকীতে থাকতে হবে।
আর এগুলো লিখলেই তাকে মাহমুদুর রহমানের মত রাজাকার উপাধি পেতে হবে, সেই সাথে গালাগালি , শাহবাগের আল্টিমেটাম তো আছেই।
এখন কথা হল একজন সাংবাদিক মার খেলে সেই মিডিয়ার মালিকের কিছু যায় আসে না। সাংবাদিকদের ই প্রতিবাদ করতে হবে। কিন্তু ইকবাল সোবাহানের মত সরকারের চামচা শ্রেনীর সাংবাদিকরা যখন সাংবাদিক নেতা হন , তখন তো সেই আশা করাই বৃথা।
দেশ কি তবে সাংবাদিকদের এই একপেশে নীতির ফলে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিনত হবে? আমাদের দেশের ভয়াবহ বিপর্যয় কি উস্কে দিচ্ছে কিছু মিডিয়া? আমরা কি দিন দিন পরাধীনতার দিকে যাচ্ছি? আমরা কি মিছিল করার ক্ষমতাও হারাচ্ছি? যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে এদেশে কি সকল অবৈধ প্রকৃয়ার বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে? আমরা কি সত্যিই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই , নাকি কোনো দলিয় এজেন্ডার বাস্তবায়নই আসল উদ্দেশ্য?
জনগন এত বোকা না, তারা এ প্রশ্ন করবেই। কেন আজ সুস্থভাবে মিছিল করতে দেয়া হল না? কেন আবারো হরতাল ডাকতে বাধ্য করা হল বিএনপিকে? যদি দেশের প্রধান একটি দলেও মিছিলে পুলিশ এভাবে গুলিবর্ষন করে, তবে তো তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনেই তাদের হরতাল দিতে হয়।
এর জন্য দায়ি পুলিশের কি কোনোদিন কোনো বিচার হবে না? পুলিশের পেছনের লোকগুলির কি কোনো বিচার হবে না? যেখানে পুলিশ তাদের উপরে ইট ছুড়েছে বলে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করলো তার কি কোনো বিচার হবে না?
একটি মিছিল একটি রাস্তায় না হয় কতক্ষন চলতই , তাতে দেশের কোনো ক্ষতি হত না। কিন্তু এখন তো আগামী কাল হরতাল ডেকেছে। দেশের সব রাস্তাই ১২ ঘন্টা বন্ধ থাকবে। কোনটি ভাল হলো জাতির জন্য? যদি হরতালই ভাল হয় তো খুশিতে মিষ্টি খাইতে পারেন। আর যদি ভাল না হয়, তবে পুলিশের এমন বর্বর আচরন কেন হয়েছে , তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া যেমন দরকার তেমনি আশু পানিশমেন্ট হিসেবে সবগুলো পুলিশ ক্লজ করা দরকার।
আর যেহেতু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, তাই পুলিশকে যিনি নির্দেশ দিবেন, তার তো আর বিচার হবে না। সেই বিচারের ভার মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের উপরে ছেড়ে দেয়া ছাড়া জাতির আর কিছু করার আছে বলে তো মনে করি না।
আর মিডিয়াগুলি যেহেতু একটি মিশন নিয়ে নেমেছে, এখন জাতিই ঠিক করুক তারা সেই মিশনে অন্তর্ভূক্ত হবে , নাকি এইসব মিডিয়া বর্জন করে কিছুটা হলেও প্রতিরোধ গড়ে তুলবে!!!!