তাওহীদ
আজ সারা সন্ধ্যা আপার পাঠানো তোর ডাইরীর পাতার ফটোকপি পড়লাম।কারো ডাইরী তার অবর্তমানে পড়া ভীষণ অন্যায়.....অথচ এই অন্যায়টা হচ্ছে অহরহ।তুই নেই বলে..........।কি বেদনার কি ভীষণ কষ্টের কথা,আপার বুকের ছেলেটা আজ দু'বছর পৃথিবীর কোথাও নেই।২৩ বছরের দারুণ ছেলেটা ভালোবাসা ভালোবাসা করে চলে গেলি........।একটা মেয়ে ভালোবাসায় মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় অভিমান করে চলে গেলি।মায়ের মমতা,বাবার আদর,বোনের ভালোবাসা.....।আমাদের স্নেহ সব..সব কিছু তুচ্ছ হয়ে গেলো তোর কাছে। ছোট্ট বুকের কষ্ট একা একা নিয়ে কোন খানে যে হারালি
৪জুন'২০০৬ এ খবরটা যখন এলো.........মনে হচ্ছিল ভুল কিছু শুনলাম।
যার কাছে ফোন দেই সবাই বলে কথাটা সত্যি।তুই চলে গেছিস।
কেনো চলে যাবে ছেলেটা?
মনে হচ্ছিল সবাই ভুল কথা বলছে।
আপার কত্ত আদরের একটা মাত্র ছেলে.......
এক পলকে কোথায় হারালি?
তুই যেদিন জন্মালি,তোর মুখটা দেখতে এত গোল ছিলো।আমি বলেছিলাম বাঘের বাচ্চা।সেই বাঘের বাচ্চা তুই এভাবে হেরে গেলি।
একটা মানুষ ভালোবাসা থেকে মুখ না হয় ফিরিয়ে নিলো..........এইজন্য সব ছেড়ে ,সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলি?......তোর প্রিয় মামনি যে তো পড়ালেখা শেষ হ'বার জন্য দিন গুনছিলো।আর মাত্র ২ মাস বাকি চিলো তোর ইন্জিনিয়ারিং ফাইনাল পরীক্ষার।
তোর বোনটা স্বপ্ন দেখছিলো তোকে বাইরে পড়াতে নিয়ে আসবে।
আমার সাথে তোর প্রায়ই কথা হতো হটমেইল মেসেন্জারে।
কত মজার মজার গল্প করতি।
আমার জন্মদিনে মনে করে মেইল পাঠাতি।
আর কথা হলেই জানতে চাইতি কবে দেশে ফিরবো।
খুব জানতে ইচ্ছে করে কোন সে আকাশে তুই ঘুরে বেড়াস?
নিজের কাছে হেরে যাবার একটু আগে কি মনে পড়েনি মামনিকে?
তুই জানিস আজোবধি তোর মামনি তো মামনি রাতের পর রাত জেগে বসে থাকে,তোর কম্পিউটার এর ডেস্কটপ্ এর ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে।
তোর পান্জাবীর পকেটের টিসুটা বারবার নাকের কাছে নেয়?
যেই মোবাইল টায় কথা বলতে বলতে তুই চলে গেছিলি.......।সেই ফোনটা মেঝেতে পড়েছিলো ..ভাংগা।ফোনের ওপারের সেইজন কি তোর কষ্ট বুঝেছিলো?যার সাথে রাগ করলেই তুই নাকি চলে যাবার কথা বলতি.......।সে কি জানতো সেই কথাটা সত্যি হবে?
জানিস তাওহীদ ......তুই চলে যাবার পর কোন সুখ আর সুখ মনে হয়না।
শুধু যদি জানতাম পৃথিবীর কোথাও তুই আছিস!
আমার বোনটার যে কি কষ্ট!
আপাকে ফোন করলে শুধু কান্না.........
দুইটা বছর চলে গেলো,ওর চোখের জল দিনে দিনে বাড়ছে শুধু।
কিছু দুঃখ থাকে সময়ে সয়ে যায়.......
তোর জীবনটার দায় তো তোর মার ও ছিলো।কি করে তুই এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলি একা?
তুই চলে যাবার পর তোর ২ টা জন্মদিন গেলো।
তোর বাবা নাকি কেক এনেছিল।শুধু তুই ছিলিনা।
তোকে আমি ডাকতাম গুট্টু.....।আরো কত কিযে ডাকতাম।তোরা যখন ছোট ছিলি....বাড়ীর ছোট হওয়াতে আমি খুব তাড়াতারি খালা,ফুপু হয়েছিলাম।
কি ভালো যে লাগতো আমার।
তাওহীদ........এইটুকুন ছেলে তুই।একটা ভুল ভালোবাসার দমকে হারিয়ে গেলি।তুই চলে গেছিস এই খবর জানবার ২ দিন পর হটমেইল মেসেন্জারে দেখি তোর নাম এ কে যেনো সাইন ইন হলো।জানতে চাইলাম কে ওপাশ থেকে লিখলো আমি তাওহীদ.............
আমি খুব অবাক হলাম।কি নিষ্ঠুরতা!
যার জন্য তুই ভালোবাসার পরীক্ষা দিতে জীবনটা দিলি...।সে তোকে অশরীরী কিছু প্রমান করতে চাইছে।আমি তো জানতাম এই ঠিকানা তোর সেই জন ব্যবহার করতো যাকে তুই জীবনের চেয়ে বেশী ভালোবাসতি।কত টুকু নিষ্ঠুর হলেমানুষ এভাবে বলতে পারে।
পাগলের মত কাঁদছিলাম আর লিখেছিলাম ...........তোমার এই নিষ্ঠুরতায় আমাদের প্রিয় একজনকে হারালাম।
সেই জন তোর মার কাছে ফোন করে অনেক কথা বলেছে।
অনেক ভাবে প্রমান করতে চেয়েছে তোকে ও কোন কথা দেয়নি।
ও জানেনা তোর লেখা অনেকগুলো চিঠি আর ডাইরী তোর মা পেয়েছে......যেখানে তোদের ভালোবাসার কথা লেখা আছে।
সেই জনের অবহেলার কথা লেখা আছে।
কেন যে তুই বারবার সেই অবহেলার দিকেই ছুটলি!
হারিয়ে গেলো অসময়ে।
আমাদের পুরো পরিবারের সমস্ত আনন্দগুলোকে ম্লান করে দিয়ে কোথায় যে হারালি।যাবার আগে তুই নিজেই ডাইরীতে সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চেয়েছিস তাঁর সবচেয়ে অপ্রিয় কাজটা করবার জন্য।তবু প্রতিদিন তোর জন্য প্রার্থণা করি।আজীবন করতে হবে।
আল্লাহ যেনো তোকে শান্তিতে রাখেন।অনেকদিন পুরানো আ্যালবাম দেখিনা,দেশের ভিডিও দেখিনা......তোর আদুরে মুখটাকে খুব মিস্ করি বাবা।
তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে বাবাটা।
..............
..............
আমাদের পরিবারের অপূরনীয় একটা ক্ষতি তাওহীদের চলে যাওয়া।
ও যদি পরিবারের কারো সাথে একটু শেয়ার করতো।ও চলে যাবার পর ওর বন্ধুরা বলেছিলো ও নাকি রাগ করলেই এই চলে যাবার কথা বলতো।
ও মানসিক দূর্বলতায় ভুগছিলো।একটু কথা,একটু সাহস দিলে ও হয়টো এমন মুখ ফিরিয়ে চলে যেতোনা।একটা মানুষের ভালোবাসা কি বেঁচে থাকার চেয়েও বড় হতে পারে?
আমরা যারা অভিমান করি,দুঃখ পাই...........
যার কাছে পাই।
সব বয়ে নিতে পারি যেনো।নাহলে আর মানুষ কেনো?
জীবনটা কে তুচ্ছ মনে হবার কারণ নেই।
আমার বোনের মুখোমুখি হবার কথা মনে হলে দেশে যেতে ইচ্ছে করেনা।
কি হাসিখুশী বোনটা আমার পৃথিবীর বিশাল এক দুঃখ বয়ে নিয়ে বেড়ায়।বলে কিছুতেই আনন্দ লাগেনা আর.........ওর ছবি দেখলে খুব অবাক লাগে।মনে হয় ওর ছেলেটা ওর সমস্ত হাসি নিয়ে চলে গেছে।
আমার এই লেখাটার কারণ হলো নিজে কিছুটা হালকা হওয়া।বুকের গভীরের জমে থাকা কষ্টের একটু লাঘব।আর তাদেরকে মনে করিয়ে দেয়া বেঁচে থাকাটা খুব প্রয়োজন..........যারা নিজেদেরকে অপ্রয়োজনীয় ভাবে।নিজের জন্য না হলেও প্রিয়জনদের জন্য বেঁচে থাকা জরুরী।আমরা সবাই সবাইকে যেনো একটু বুঝতে চেষ্টা করি।একটু যত্ন নেই একে অপরের।আমার বড় বোন আর তা পরিবারের জন্য সবাই দোয়া রাখবেন।তাওহীদের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করবেন সবাই।আল্লাহ যেনো ওকে মাফ করেন ,ওর আত্মাকে শান্তি দেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০০৮ রাত ১১:২২