একটা কাজে বগুড়া যাচ্ছিলাম গত বৃহষ্পতিবারে।সারারাত নাইট ডিউটি করে শরীরটা অনেক ক্লান্ত।টি.আর পরিবহনের একটি বাসের প্রথমসারির সিটে ড্রাইভারের পিছনের সীটেই আমার অবস্থান।পাশে কেও বসে নেই,কিন্তু হর্ণের আওয়াজে ঘুমাতে পারছিলামনা।এমনি করে পৌছে গেলাম বগুড়ার কাছাকাছি।
শেরপুর বাজারটা ছাড়িয়ে কিছুদুর যেতেই দেখি রাস্তার ধারে বেশ কিছু মানুষের জটলা।রাস্তাটা ফাঁকাই ছিলো।কিন্তু আমাদের বাসটাকে দেখে লোকজন তেড়ে এলো।বুঝলাম কোন অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।রাস্তার ধারে দোমড়ানো মোচড়ানো একটা সি.এন.জি।সেখানে মানুষের ঢল।জানা গেলো মাত্র কিছুক্ষন আগে টি.আর পরিবহনের আরেকটি বাস চাপা দিয়ে পালিয়ে গেছে।তিনজন লোক স্পটডেড।দূর্ভাগ্যক্রমে তখনই আমাদের বাসটি বিপরীত দিক দিয়ে আসতেছিলো।ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসছিলো।প্রায় শ'খানেক লোক আমাদের বাসটাকে ঘিরে ধরলো।আমাদের ড্রাইভার একবার বলার চেষ্টা করলো যে আমাদের বাসটা বিপরীত দিক থেকে আসছে,তার আগেই ৩/৪ জন তার শার্টটা টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেললো।বেচারা গরীব ড্রাইভারটা ভয়ে কাঁদোকাঁদো।
আমি ড্রাইভারের ঠিক পিছনে বসে ছিলাম।এমন সময় দেখলাম উত্তেজিত একজন একটা বাঁশ নিয়ে আসতেছে।জনতার মধ্যে কয়েকজন মিনমিন করে বলার চেষ্টা করলো যে যাত্রীদের নামতে দেয়া হোক।কিন্তু তার আগেই মহাউল্লাসে তারা বাসটার কাঁচ ভাংতে লাগলো।আমি জানালার পাশেই বসে ছিলাম,অথচ তারা ধরাম করে আমার পাশের কাঁচে আঘাত করলো।কাঁচের গুড়া ছিটকে পড়তেছিলো।আমার সাথে কোন লাগেজ না থাকায় আমি দৌড়ে বাস থেকে নেমে গেলাম।তখনও কাঁচের গুড়া ছিটকে পড়ছিলো গায়ে। ছোটছোট বাচ্চাকে নিয়ে মায়েরা বাসের করিডোরে মাথা নিচু করে বসে পড়েছিলো ,আর আচঁল দিয়ে বাচ্চাকে ঢেকে রাখছিলো।
ভাগ্যক্রমে কাছাকাছি আমার শ্বশুরবাড়ী হওয়ায় আমি একটা রিকশা নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেলাম।এতো ভয় মনে হয় আমি জীবনে খুব কম পাইছি।তিনজন মানুষ মারা গেছে ,খুবই দুঃখজনক ঘটনা।কিন্তু এটার জন্য সাধারন মানুষের প্রতি মানুষের এই হিংস্রতার কারন কি?? যদি কোনভাবে একটি কাচেঁর টুকরা কারো চোখে পড়তো,সারাজীবনের জন্য যদি চোখ অন্ধ হয়ে যেতো,কিংবা ছোট্ট বাচ্চাটির গায়ে আঘাত লাগতো,এর দ্বায়িত্বটা কে নিতো??ঐ বাসে তো তাদের মা-বোন বা ভাইটি থাকতে পারতো......
আমরা মানুষগুলো এতো হিংস্র কেনো???হিংস্রতার প্রতিশোধ কেনো আমরা হিংস্রভাবে নেই??
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১০:০৮