(সামহোয়ারইন এ আমি নতুন নই।গত দুই বছর ধরে আমি এর একনিষ্ঠ পাঠক।কিন্তু কখনো লেখার সাহস হয়নি।আজ সাহস করে লিখলাম।আশা করি ভাষা ও বানানঘটিত দুর্বলতাগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

১৯৯৭ সাল এর ১২ই জানুয়ারি।তখন ক্লাস নাইন এ পড়ি।বার্ষিক পরিক্ষার পরে সব খালাতো ভাই-বোনেরা মিলে নানীর বাড়ি গিয়েছি।আমার আম্মুরা পাঁচ বোন আর এক ভাই।সেই সুবাদে আমাদের একটা মাত্র মামা।মামা সবার ছোট।আমরা যখন স্কুল লেভেলে পড়ি,তখন মামার বয়স ২৪-২৫।তো পাঁচ খালার মধ্যে তিন খালার আমরা সাতজন ছেলে-মেয়ে।সব কাজিনরা একসাথে হলে তো কথাই নেই।বান্দরের দল আমরা আর সাথে মামা।
যাই হোক,একদিন রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে মামা বললো ,"চল,তোদেরকে আজ স্পেশাল পান খাওয়াবো"।আমরাতো সব হৈ হৈ করে উঠলাম।লাফাতে লাফাতে সবাই হাঁটতে হাঁটতে একটু দুরে পান এর দোকানের দিকে চললাম।পানওয়ালা পান কেমন বানিয়েছিলো মনে নেই,কিন্তু সবাই মিলে খাবার সময় সেই পান অমৃত মনে হছ্ছিলো।
পান খাওয়া শেষে মামা দ্বিগুন উৎসাহে বললো,"চল আমরা লালদিঘীটা একবার চক্কর দিয়ে আসি।"আমরা তো দাঁতের সবগুলো পাটি বের করে সাঁয় দিলাম

আমরা হাঁটা ধরলাম।আমাদের সাথে যোগ দিলো একটা কুকুর।আমার এক কাজিন এর নাম আকা।সেই কুকুর তো আকা ভাইয়ার পিছু ছাড়েনা।আমরা আকা ভাইয়ার নামের সাথে মিল রেখে কুকুরের নাম দিলাম বাকা।তখন আবার জেমস এর "আঁকা-বাকা মেঠোপথ ধরে" গানটা খুব হিট।আমরা গানটা গাইতে গাইতে আকা ভাইয়াকে জ্বালাইতেছিলাম। বাকা-কে এক দোকান থেকে বিস্কুটও কিনে দেয়া হলো।
এভাবে হাঁটতে হাঁটতে এক সময় পুরো দিঘীটা চক্কর দেয়া হয়ে গেলো।আমরা বিজয়ীর হাসি নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলাম।সবার মনে ফূর্তি।বাসার কাছাকাছি আসতেই সবাই রেলগাড়ির মতো একজনের ঘাড়ে আরেকজন হাত দিয়ে গান গাইতে শুরু করলাম "দিনে নবী মোস্তফায়,রাস্তা দিয়া হাইট্টা যায়****"।
বাসায় ঢুকে দেখি সব থমথমে।এই সময় ঘড়ির দিকে খেয়াল হলো।তখন রাত সাড়ে বারোটা পার হয়ে গিয়েছে।রেলগাড়ির পিছনে তাকিয়ে দেখা গেলো শ্রদ্ধেয় মামুজান আমাদের পিছনে নেই।কখন তিনি চম্পট দিয়েছেন কেও দেখেনি।জানা গেলো আব্বু আর খালুরা সবাই আমাদের খুঁজতে বের হয়েছে অনেক আগে।আমার আম্মুকে দেখলাম খাটের কর্নারে বসে কাঁদতেছে।ভয়ে আমাদের আত্মারাম খাঁচাছাড়া।আমার এক কাজিনের আবার সাহস একটু বেশি।সে কি যেন একটা বলতে যাচ্ছিলো,তার আগেই আমার নানা কোথা থেকে ঊদয় হয়ে তার দিকে একটা আন্গুল ঊঁচিয়ে বললেন "তুমি অপরাধী"।সেই রাতে ঐ কথাটা আমাদের রক্তের মধ্যে একটা হিমশীতল স্রোত বইয়ে দিয়েছিলো।আব্বুরা বাসায় ফিরে আসবার পরে তারা কিছু বলার আগেই একজন কেঁদে দিলো।ফলে সেই যাত্রা আমরা রক্ষা পেয়ে গেলাম


পরের দিন অবশ্য মামা সন্ধ্যার আগে বাড়িমুখো হয়নি।আর যখন ফিরেছিলো ,তখন



এরপরে আমরা বেশ ক'বছর এইদিনটিতে সবাই সবাইকে চিঠি দিতাম।দিনটিকে ঐতিহাসিক ১২ই জানুয়ারী হিসেবে পালন করা হতো।তারপর ধীরেধীরে একসময় চিঠি লেখা আর হতো না কাওকে


আজ নানা বেঁচে নেই।কিন্তু এখনও কেও কোনো অন্যায় করলে আমরা নানার মতো এখনো আন্গুল তুলে বলি "তুমি অপরাধী"

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১:২৯