somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাই স্পীড ফটোগ্রাফি: থমকে যাওয়া সময়ের চমকে দেওয়া প্রতিচ্ছবি

১৩ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ওপরের ছবিটি দেখুন। বিস্ফোরণে ভেংগে চুরমার হয়ে গেছে একটি ফুলদানির নিচের অংশ। কিন্তু ওপরের অংশটি সটান দাঁড়িয়ে আছে–কাত হয়ে পড়ে যায়নি। এমনকি এতে রাখা ফুলপাতাও অক্ষত। সময় যেন থমকে আছে এখানে। আসলে ফুলদানির নিচের অংশ ঠিক যখন বিস্ফোরিত হয়েছে, সময়ের সেই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মুহূর্তে ছবিটি তোলা হয়েছে–এর ওপরের অংশটি কাত হয়ে পড়ে যাওয়ার আগেই। যে প্রযুক্তিতে এই ছবিটি তোলা হয়েছে, তার নাম উচ্চ গতির চিত্রগ্রহণ বা হাই স্পীড ফটোগ্রাফি।
সময়ের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশে, এক সেকেন্ডের শত কিংবা সহস্রতম ভগ্নাংশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, যা খালি চোখে ধরা পড়ে না–এরকম ঘটনার ছবি তোলাই হাই স্পীড ফটোগ্রাফির কাজ। উচ্চ গতির ছবি তোলার এই ধারণাটি নতুন নয়। বরং আলোকচিত্রশিল্পের প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই এর চর্চা শুরু হয়েছিল। ১৮৭৮ সালে এডওয়ার্ড মব্রিজ নামে একজন ইংরেজ চিত্রগ্রাহক সর্বপ্রথম পর পর কয়েকটি ক্যামেরা বসিয়ে দ্রুত ধাবমান ঘোড়ার ছবি তোলার পরীক্ষা চালান। ঘোড়া দ্রুত ছুটে চলার সময় কখনও এর চারটি পা-ই মাটি ছেড়ে শুণ্যে উঠে যায় কিনা–এটি বের করাই ছিল তাঁর পরীক্ষার উদ্দেশ্য। দিনে দিনে উচ্চ গতির ছবি তোলার প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে এবং আলাদা হাই স্পীড ক্যামেরা ও আনুষাংগিক যন্ত্রপাতি তৈরি হয়েছে। মব্রিজের তোলা সেই কালজয়ী প্রথম ছবিটি দেখুন নিচে:


হাই স্পীড ফটোগ্রাফির মৌলিক বিষয় হচ্ছে, ক্যামেরার উচ্চতর শাটার স্পীড। শাটার স্পীড বেশি হলে ছবির মানও ভাল হবে। এছাড়া আলোর অবস্থা (স্ট্রোব লাইটিং), ক্যামেরার এপারচার সাইজ এবং আইএসও স্পীডও ভাল ছবি তোলার ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। আরও কিছু কারিগরি বিষয় রয়েছে, যার আলোচনা এখানে প্রাসংগিক নয়। কেউ বিস্তারিত জানতে চাইলে দেখতে পারেন এখানে
এবার দেখা যাক, হাই স্পীড ফটোগ্রাফির বিষয়বস্তু কী কী। অতি উচ্চ গতিবিশিষ্ট বুলেট বা গুলির গতিপথ চিত্রায়ন করা এই ফটোগ্রাফির একটি জনপ্রিয় বিষয়। বন্দুকের ছুটন্ত গুলি খালি চোখে দেখা অসম্ভব হলেও হাই স্পীড ক্যামেরায় তা সহজেই ধরা পড়ে। নিচে দেখুন একটি পিস্তলের গুলি কীভাবে একটি তাসকে দ্বিখণ্ডিত করে বেরিয়ে গেছে। অথচ তাসের ওপরের অংশটি তখনও পড়ে যাওয়ার সময় পায়নি!


অতি উচ্চ গতিবিশিষ্ট গুলির আরও কিছু ছবি দেখুন নিচেঃ







ছলকে ওঠা তরলের ছবি উচ্চ গতির চিত্রগ্রহণের আরেকটি জনপ্রিয় বিষয়। নিচে দেখুন ছলকে ওঠা পানির ফোঁটা আবার মিলিয়ে যাওয়ার আগেই কীভাবে ধরা পড়েছে হাই স্পীড ক্যামেরায়।


কফিতে ঢেলে দেওয়া দুধ মিশে যাওয়ার আগে শিল্পিত রূপ নিয়েছে নিচের ছবিতেঃ


তারপর দেখুন ছলকে ওঠা রঙিন তরলের শিল্পিত সৌন্দর্য:


নিচের অসাধারণ ছবিটিতে দেখুন, শাওয়ারের পানি লোকটির মাথায় পড়ার পর সারা গায়ে ছড়িয়ে পড়ার ঠিক আগে কেমন ছাতার আকার নিয়েছে।


বিভিন্ন বস্তুর বিস্ফোরিত হওয়ার বা ভেংগে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার মুহূর্তও চিত্রায়িত করে থাকে হাই স্পীড ফটোগ্রাফাররা। যেমন, ভেংগে চুরমার হয়ে যাওয়া গবলেটের টুকরোগুলো ছড়িয়ে পড়ার ঠিক আগের মুহূর্তটি দেখুন নিচের ছবিতে।


নিচের ছবিতে হাওয়ায় ভেসে থাকা বুদবুদ আঙুলের খোঁচায় ভেংগে মিলিয়ে যাওয়ার ফুরসত পায়নি তখনও:


ভেংগে যাওয়া বস্তুর আরও কিছু ছবি দেখুন:





ফেটে যাওয়া পানিভর্তি বেলুন হাই স্পীড ফটোগ্রাফারদের আরেকটি প্রিয় বিষয়। নিচে অসাধারণ কিছু ছবি দেখুন। প্রথম ছবিতে সুপারসনিক গতিবিশিষ্ট একটি গুলি পানিভর্তি বেলুনে আঘাত করার মুহূর্তটি ধরা হয়েছে:


গুলিটি বেলুনের একদিক দিয়ে ঢুকে অন্যদিক দিয়ে বের হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তটি ধরা পড়েছে পরের ছবিতে। বেলুনটি পুরোপুরি ফেটে গিয়ে ভেতরের পানি তখনও ছড়িয়ে পড়তে পারেনি।


পরের ছবিটি আরও অসাধারণ। সুঁইয়ের খোঁচায় বেলুন ফেটে গেছে, কিন্তু ভেতরের পানি তখনও পড়ে যায়নি, বরং বেলুনের আকৃতি ধরে রেখেছে।


নিচের ছবিটির কোন তুলনা হয় না। ফেটে যাওয়া বেলুনের আর কোন অস্তিত্বই নেই, কিন্তু ভেতরের রঙিন পানি তখনও এর আকৃতি ধরে রেখেছে–ছড়িয়ে পড়ার আগেই ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।


বিভিন্ন ক্ষেত্রে হাই স্পীড ফটোগ্রাফির প্রয়োগ রয়েছে। বিশেষ করে, ভৌত গবেষণায়, সমরাস্ত্র গবেষণা ও নির্মাণে, বিজ্ঞাপনচিত্র তৈরিতে এবং ক্রীড়া সাংবাদিকতায় এটি বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। আর শিল্পমাধ্যম হিসেবেও আলোকচিত্রীদের কাছে এর বেশ কদর রয়েছে–ওপরের বেশির ভাগ ছবিই তার প্রমাণ।
ফুলের ছবি দিয়ে শুরু করেছিলাম। আবার ফুলের ছবি দিয়েই শেষ করছি:


এই হল হাই স্পীড ফটোগ্রাফি বা উচ্চ গতির চিত্রগ্রহণের একটি সচিত্র বিবরণ। আশা করি সবার কাছে ভাল লাগবে।

তথ্যসূত্র : টেকটিউনস।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৫২
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×