পৃথিবীর যে কয়েকটি রহস্য অমীমাংসিত রয়েছে তার মধ্যে মনে হয় Stonehenge একটি। দেশি বিদেশী হাজার হাজার পর্যটক প্রতিবছর ছুটে আসে কেবল এই রহস্যটাকে নিজ চোখে দেখার জন্যে, গত বছরের এক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে দেড় মিলিয়ন পর্যটক ছুটে এসেছিল কেবল এই Stonehenge দেখার জন্যে। কারো মতে এটি ছিল পবিত্র উপ্সনালয় কিংবা মন্দির, কেউ বিশ্বাস করে এখানে রয়েছে হাজারো মানুষের মরদেহ,কারো মতে সূর্যের গতি বিধি এর উপর নজর রাখতেই এই স্থাপনা তৈরি করা হয়েছিল, কেউ আবার বলে অশুভ শক্তির হাতে থেকে নিজেদের বাঁচাতে সেকালের মানুশগুলো গড়ে তুলেছিল এই Stonehenge।
যদিও Stonehenge এর উৎপত্তি সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যায় না তবুও ধারণা করা হয় প্রায় ৫ হাজার বছর আগে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ছিল। Stonehenge এর নির্মাণকাজ কয়েক ধাপে করা হয়েছিল প্রথম ধাপ শুরু হয়েছিল প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০ সাল আগে, গোড়াপত্তনের পর এই স্থাপনাকে এভাবেই প্রায় হাজার বছর ফেলে রাখা হয়। দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ২১৫০ সালে, ঐ সময় ২২৫ মাইল দুরের সাউথ ওয়েলস থেকে প্রায় ৮২টি পাথর টেনে নিয়ে আনা হয় Stonehenge তৈরি করার জন্যে, ভাবতেই অবাক লাগে আজ থেকে ৪হাজার বছর আগে এটা কিভাবে সম্ভব হয়েছিলো। ধারণা করা হয় ৪টন ওজনের পাথরগুলো খুব সম্ভবত দড়ি দিয়ে টেনে আনা হয়েছিলো, এই পাথরগুলোকে Bluestones বলা হয়ে থাকে। এই প্রসঙ্গে একটি কথা বলতেই হয় যে,Stonehenge মুলত দুই ধরনের পাথর দিয়ে তৈরি তন্মধে বড় পাথরগুলোকে Sarsens (এগুলো প্রায় ৩০ ফিট লম্বা এবং ওজনে ২৫ ফিট) বলা হয়ে থাকে আর ছোটগুলোকে বলা হয় Bluestones। তৃতীয় ধাপের কাজ শুরু হয়েছিল প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সালে, তখন Stonehenge এর ২৫ মাইল উত্তর এর শহর Marlborough Downs থেকে Sarsens গুলোকে নিয়ে আসা হয়েছিল। শেষ ধাপে খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ হাজার বছর আগে এই পাথরগুলোকে পুনর্বিন্যাস করে বর্তমানের বৃত্তাকৃতি তে আনা হয়। English Heritage এর মতে Stonehenge এর প্রবেশদ্বার ছিল দুইটি, একটি ছিল উত্তর পূর্বে আর অন্যটি দক্ষিণে। Stonehenge এ প্রায় ৫৬টি বড় বড় গর্ত পাওয়া গিয়েছিল যেগুলো কিনা ১৬৬৬ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল, এই গর্তগুলো Aubrey Holes নামে পরিচিত। ধারণা করা হয় এই গর্তগুলতেও একসময় পাথর ছিল। যাই হোক, এবারের ইতিহাসের পালা শেষ করে আসি ঘুরফেরার পালায়।
লন্ডন আসার পর থেকে এক ধরনের স্বপ্ন লালন করেছিলাম এই জায়গাটি তে যাব কিন্তু কোন ভাবেই সুযোগ করে উঠতে পারছিলাম না। অবশেষে রোজার আগে দিলাম ছুট। লন্ডন থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টার ড্রাইভ Stonehenge। সকালে নাস্তা সেরেই দিলাম ছুট, গিয়ে পৌঁছেছিলাম বেলা সাড়ে ৩ টায়, পথিমধ্যে গোলাম ভাই কিছু কাজে ব্যস্ত ছিলেন সেই কাজ সারতেই একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। গিয়ে দেখি অসংখ্য মানুষের ভিড় সেখানে, চাইনিজ পর্যটক ছিল চোখে পড়ার মত।
ঐ তো দূর থেকে দেখা যায় Stonehenge।
চলে আসলাম Stonehenge।
Stonehenge এর প্রবেশমূল্য এর তালিকা।
আমরা টিকেট কেটে সাঁটল বাসে করে রওয়ানা দিলাম Stonehenge এর দিকে, সবার মধ্যেই এক ধরনের উৎসব আমেজ ছিল লক্ষণীয়।
মোবাইল দিয়ে তোলা Stonehenge, যতই কাছে যাচ্ছিলাম ততই স্থাপনাটা পরিস্কার হচ্ছিলো।
পথিমধ্যে যব খেত, রাস্তার দুই পাশেই এই ক্ষেত দেখা যায়।
আহ, একেবারে চলে এলাম মনে হয়।
টিকেট চেকার টিকেট চেক করে অবশেষে ঢুকতে দিল।
অনেকক্ষণ হাটার পরেই মিলে এই রহস্যের দেখা।
অবশেষে পেলাম হাতের কাছে।
আহ, কি রহস্যই না আবৃত করে রেখেছে এই Stonehenge কে।
খুব কাছ থেকে দেখতে লাগলাম এই ৫০০০ বছর আগের এই স্থাপনা কে।
কি কারণে তখনকার মানুষগুলো এই পাথরগুলো এক জায়গায় জড়ো করেছিল সেই প্রশ্ন মনের ভেতর কেবলই উঁকি দিতে লাগলো।
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম bluestones এবং sarsens গুলো কে।
বলা বাহুল্য যে, Stonehenge এর খুব কাছা কাছি আপনি যেতে পারবেন কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত, পাথরগুলোকে কেউ স্পর্শ করতে পারে না। একটা সময় ছিল তখন মানুষ রাতে এখানে থেকে ভোরের সূর্যোদয় দেখত কিন্তু এখন সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরে যেতে হয়।
কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে Stonehenge।
অবশেষে নিজের একখান সেলফি।
আমি এবং গোলাম ভাই।
ভিজিটর সেন্টারের পাশেই দেখেছিলাম এই ঘরগুলোকে, মনে হয় ঐ সময়ের মানুশগুলোর বাড়ি এমনই ছিল।
দেখতে অনেকটাই আমাদের দেশের মাটির ঘরের মতো।
দেখলাম একটি sarsens, এটি মাটিতে শুয়ানো ছিল।
এবার বাড়ি ফেরার পালা।
সব শেষে নিজের এক খান ছবি
অনেক সুন্দর একটি দিন কাটিয়েছিলাম সেদিন, মনে রাখার মতো দিন। ভালো থাকবেন সবাই, দোয়া করবেন আমার জন্যে। শুভকামনা রইলো।